somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনরুজ্জীবনের প্রতিক ফিনিক্স - পৌরাণিক কাহিনী

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে পবিত্র অনলপ্রভা থেকে ফিনিক্স সৃষ্টি হয় । ফিনিসীয় পুরান (বর্তমান লেবানন, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, ইসরাইল) , চাইনীজ পুরানে এবং পরবর্তীতে হেলিওপোলিসে বসবাসকারী প্রাচীন মিশরীয়দের বর্ণনায় ফিনিক্স পাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। চীনের কিংবদন্তীতে ফিনিক্স হচ্ছে এক ধরণের উপকারী পাখি। চীনারা "সোনালী ফিনিক্সকে" দুরুহ পরিবেশে বড় হওয়া সেরা ধীশক্তির উপমা হিসেবে ব্যবহার করেন। মিশরীয় পুরান অনুসারে ফিনিক্স এর সাথে বেন্নু (Bennu) নামক পাখির সাযুজ্য রয়েছে। বেন্নুকে বলা হয় সুর্যদেবতা “রা” এর আত্মা । এছাড়া চাইনিজ এবং জাপানিজ ঐতিহ্যে ফেংহুয়াং (Fenghuang) পাখিকে ফিনিক্সের সমতুল ধরা হয় । এর শরীর কথা, মস্তক সদগুণ ও মেধার উত্কর্ষ, পাখা কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, পিঠ ভব্যতা ও মালিকানা, উদর প্রত্যয় ও বিশ্বাস এবং বক্ষস্থল ক্ষমা প্রবৃত্তির প্রতিক । প্রাচীন চীনে ফেংহুয়াং সার্বভৌমত্ব আর রাজমর্যাদাকে উপস্থাপিত করে । তাদের পরম্পরাগত মতবাদে শান্তি ও ঋদ্ধিলাভ কালে এর আবির্ভাব ঘটে এবং দুঃখ, কষ্ট আর বিশৃঙ্খলার সময় তা অন্তর্হিত হয় । পার্শিয়ান মীথলজিতে এর অভ্যুদয় সিমুরাহ নামে । ফ্লাভিয়াস ফিলস্ট্রাস তার রচিত জীবনচরিত “Life of Apollonius of Tyana” তে ফিনিক্সকে ভারতীয় পুরানে অস্তিত্বশীল পাখি হিসাবে অভিহিত করেন ।


ফিনিক্সের মনোমুগ্ধকারী পালকগুচ্ছ বর্ণময় ও উজ্জ্বল । লাল, গোলাপী ও নীল রঙের পালক দ্বারা আবৃত ময়ুর সদৃশ এই পাখি। এর পুচ্ছ-পাখনা রক্তচন্দন বা লাল মুনিয়ার মত । ফ্রেঞ্চ সাহিত্যিক ও দার্শনিক ভলটেয়ার ফিনিক্সের বর্ননা দিয়েছেন এভাবে “ফিনিক্সের আকৃতি ঈগলের মত বিশাল কিন্তু চোখগুলো নিষ্ঠুর, ও ভীতিকর নয়, নির্দয় ঈগলের তুলনায় নিরীহ ও সংবেদনশীল । ঠোঁট গুলো গোলাপের মত । এক দৃষ্টিকোন থেকে, ফরমোসান্তের মত সুন্দর মুখ । গ্রীবা ও ঘাড় রংধনু সদৃশ, বা এর থেকেও দীপ্তিমান । পালকগুচ্ছে খেলা করে স্বর্নালী ছায়াচ্ছন্নতা । বেগনি-লাল বা রুপালী তার পদযুগল” ।

প্রাচীন গ্রীক পূরা কাহিনী অনুসারে ফিনিক্স হল পবিত্র ‘অগ্নি-পাখি’ যার জীবনচক্র আবর্তিত হয় হাজার বছর ধরে। জন্ম-জন্মান্তরের মধ্যদিয়ে এই পাখি একটি একটি করে আসে। কখনই দুটি আসে না এবং এক জন্মে আয়ুস্কাল হয় পাঁচশ থেকে এক হাজার বছর। ফিনিক্সের প্রকৃত অর্থে কোন মৃত্যু নেই। হাজার বছর পূর্তি অর্থাৎ যমদূত আসার ঠিক আগেই মৃত্যুর আগমুহূর্তে এই পাখি আরবদেশে চলে যায় এবং সেখানে গিয়ে দারুচিনি দিয়ে দিয়ে একটি বড় বাসা তৈরী করে। এরপর ফিনিক্সপাখি সেই বাসায় অগ্নিসংযোগ করে। আগুন বাড়ানোর জন্য নিজের পাখা ঝাপটিয়ে বাতাস দিতে থাকে। তখন এর কণ্ঠ থেকে এক কষ্টের সুর ঝরে পড়ে। আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে তখন সে তাতে আত্মাহুতি দেয়।

আর নির্মমভাবে দগ্ধীভূত এই পাখি ও তার বাসার ভস্ম থেকেই জন্ম নেয় নতুন ফিনিক্সের অথবা ফিনিক্সের ডিম্বের । সুর্গন্ধি নির্যাসবিশেষ থেকে এর ডিমের সৃষ্টি । প্রাণ পায় নব জীবনের, শুরু হয় আবারো জাতিশ্বর ফিনিক্সের অবিনাশী যাত্রা। বেঁচে থাকে পূর্ব জনমের আয়ুস্কালের মতই। দেহপুড়ে ছাই হলে; সেই ছাই থেকে নতুন আর একটি ফিনিক্সপাখির জন্ম হয়। এ ভাবেই আবর্তিত হতে থাকে ফিনিক্সপাখির জন্ম এবং মৃত্যু পরিক্রমা।

ফিনিশীয় সভ্যতায় ফিনিক্সের আবাসস্থল থাকতো কোন ঝরনা বা কূপের পাশে । ভোরে গোসল করার সময় ফিনিক্সের গাওয়া গান শোনার জন্য গ্রীক সুর্যদেবতা হেলিয়োস রথ থামাত । অমরত্ব আর পুনরুজ্জীবনের প্রতিক ফিনিক্স মৃত্যর পূর্বে হেলিওপোলিসে গমন করত ।

কাহিনীমতে, ফিনিক্স পাখিকে হিংসুকেরা আঘাত করলে এর পালক থেকেও জন্ম নেয় নতুন প্রাণ।এদের চোখের পানিও বদলে দিতে পারে কারো জীবন। অগ্নি ও পবিত্রতার বদৌলতে এরা মৃত্যু পথযাত্রীদেরও সাময়িক জীবন দেয়ার ক্ষমতা রাখে। আরেকটা কিংবদন্তিতে বলা হয়েছে, ফিনিক্স যখন মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে, তার চোখ থেকে জল গড়ায়, তার স্পর্শে মানুষ হয়ে ওঠে মৃত্যুঞ্জয়ী।


জনপ্রিয় শহুরে সভ্যতা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে একটি ফিনিক্স স্থায়ী রূপকার্থক প্রতীক । ফিনিক্স নবচেতনার উন্মেষ, পুনর্যোজন বা নবজীবনসঞ্চার কে প্রতীকায়িত আদর্শস্বরূপ বা বিশিষ্ট দৃষ্টান্তস্বরূপ উপস্থাপন করে ।


************************************************************************

কানাডিয়ান প্রোগ্রেসিভ মেটাল ব্যান্ড অ্যানিহিলেটর এর “লাইক এ ফিনিক্স রাইজিং” ডাউনলোড লিংক এবং লিরিক্সঃ


Day by day, watching you disappear
Wishing that you were still here beside me
On my own, swimming against the tide
There's nobody on my side but your memory
Then you'll rise right before my eyes
On wings that fill the sky
Like a phoenix rising, Like a phoenix rising

Wings on fire, tearing into the night
Screaming into the light of another day
Carry me out the hurricane
Into the smoke and flame and we'll fly away
And we'll rise right before their eyes
On wings that fill the sky
Like a phoenix rising, Like a phoenix rising

Higher, higher, hear the thunder roar from above
Fire, fire, fire makes me whole
Into the smoke and flame and we'll fly away
And we'll rise right before their eyes
On wings that fill the sky
Like a phoenix rising, Like a phoenix rising
Wings on fire, tearing in to the night
And we'll fly away


*********************************************************************

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:২৯
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×