বিশ্বকাপ শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই ব্রাজিল-আজেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে একমত যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে । কার দল থেকে কার দল ভাল এই নিয়ে প্রায়ই দেখা যায় ঝগড়াঝাটি, মারামারি। এমনকি খেলাচলাকালিন অবস্থায় এমনও রেকর্ড আছে যে, প্রিয় দল ভাল না করায় দুর্বলচিত্তের কঠিন সমর্থক হার্টফেল করে মারা যান আবার কেউ কেউ আত্নহত্যাও করে ফেলেন।
বাংলাদেশ ফুটবল বিশ্বকাপে না যাওয়ার একটা আফসুস থাকলেও আমাদের ফুটবল খেলার প্রতি ভালবাসার কমতি নেই। একেবারে অজপাড়া গাঁয়ের মানুষ থেকে শুরু করে শহরের মানুষদেরও ফুটবলের প্রতি টানের, ভালবাসার কমতি নেই। আমাদের ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে খেলে, আমাদের দলের সাথে খেলার আগে বিশ্বকাপ জয়ী দলকেও আমাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবতে হয়, সমিহ করতে হয়। অথচ আমাদের ফুটবলের দৌড় সার্কভুক্ত দেশ পর্যন্ত । সার্কের বাইরে এশিয়ার বিশ্বকাপ খেলোড়ে দেশের সাথে খেলার যোগ্যতা পর্যন্ত আমাদের নেই। অথচ ভালবাসার দিক দিয়ে ফুটবলের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের ভালবাসা ক্রিকেটের চেয়ে কোন অংশে কমতো নয়ই বরঞ্চ একটু বেশীই। অনেকেই আছেন যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা না হলে খেলার তেমন একটা খবর রাখেননা অথচ ফুটবল খেলা যেকোন দলেরই হলে আর কোন কথাই নেই খেলা দেখতে হবে। এর একমাত্র কারণ ফুটবলের দৃষ্টিনন্দন শিল্প। আর দৃষ্টি নন্দন ফুটবল শৈলি দিয়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ দর্শককেই পাগল করে রেখেছে ব্রাজিল এবং আর্জেটিনা। আর তাইতো আমাদের দেশের চারিদিকে শুধু আর্জেন্টিনা – ব্রাজিলের জয়গান।
প্রতি বিশ্বকাপের মত এবারকার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্টিত ফিফা বিশ্বকাপ ২০১০ নিয়েও আমাদের মধ্যে অধির আগ্রহ। সবাই অতি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি বিশ্বকাপে বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড়দের জাদু দেখার জন্য। কিন্তু যাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশী দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের আশা করা হয় সেই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের মধ্যে ব্রাজিলের খেলা সম্পর্কে 32 eQi eqসী অধিনায়ক লুসিওর কথা শুনলে হতাশ হতে হয় বৈকি।
পত্রিকা সুত্রে পাওয়া খবর আমারদেশ পত্রিকা থেকে তুলে দিলাম নিচে:
ব্রাজিল রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জিতবে কিনা, সেটি এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। তবে ব্রাজিলের সেই চিরচেনা ফুটবল শিল্প যে এবারও দেখা যাবে না—সেটি নিশ্চিত করে দিলেন অধিনায়ক লুসিও। যে কথা আগে বলেছিলেন কোচ কার্লোস ডুঙ্গা। দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের জন্য সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তায় সবার চেয়ে আগে যে দল, সেই ব্রাজিলের অধিনায়ক লুসিও বলেছেন, ‘চোখ ধাঁধানো ফুটবল, দেখনদারি ফুটবল খেলার চেয়ে জেতাটাই আসল। দর্শক মনোরঞ্জনের সময় নেই বিশ্বকাপে। তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলো দলকে ট্রফি এনে দেয়া।’ ইন্টার মিলানের হয়ে ইতালিও ক্লাবের এক নম্বর ব্রাজিলিয়ান স্টপার এ মৌসুমে ত্রিমুকুট জিতেছেন। লুসিও চান সেই জয়ের ধারা বিশ্বকাপে দেশের জার্সি গায়েও অব্যাহত রাখতে।
ব্রাজিল অধিনায়কের সাফ কথা, ‘আমাদের কোচ ডুঙ্গার ইচ্ছেকেই আমি বিশ্বকাপের মাঠে সফল করে তুলতে চাই।’ কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাঠে কালে-ভদ্রে আবেগ দেখান লুসিও। মিডিয়াকে তেমন আমলে আনেন না তিনি। মোদ্দা কথা—কাঠখোট্টা ডিফেন্ডার তিনি।
গতবছর দক্ষিণ আফ্রিকায় কনফেডারেশন কাপের ফাইনালে তার হেডের গোলেই ব্রাজিল ৩-২ গোলে যুক্তরাষ্ট্র্রকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর থেকেই ৩২ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার ব্রাজিলে নায়কের মর্যাদায় আসীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বকাপে লুসিওর ওপর ব্রাজিলের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে। কারণ এবারের ব্রাজিল রক্ষণ সামলে তারপর আক্রমণে যাবে।
তবে লুসিও নিজে তেমনটা মনে করেন না। এমনকি অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে বাকিদের চেয়ে আলাদাও মনে করেন না তিনি। বলেছেন, ‘আমার কনুইয়ের ওপরে বাঁধা আর্মব্যান্ডটার অর্থ এই নয় যে, আমি ব্রাজিলের বাকি দশজনের চেয়ে ভালো ফুটবলার বা বিশেষ ফুটবলার। বিশ্বকাপে দেশের হয়ে লড়াই করতে মাঠে নামা ব্রাজিলের এগারজন ফুটবলারের মধ্যে আমিও একজন। অনেকে বলেন ডুঙ্গার খেলোয়াড়ী মানসিকতার সঙ্গে আমার অনেক মিল। এটা হতেই পারে। আমরা দু’জনেই জার্মান লীগে খেলেছি। দেশেও আমরা এক দলে খেলেছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা দু’জনেই পরিশ্রম, শৃঙ্খলা এবং নিয়মানুবর্তিতায় বিশ্বাস করি। আশা করি বিশ্বকাপেও আমাদের দু’জনের সম্মিলিত মানসিকতা এবং প্রয়াস ব্রাজিলকে আরও একবার সেরার সম্মান এনে দেবে।’
নি:সন্দেহে এইরকম খবর আমাদেরকে হতাশই করে কারণ আমরা দৃষ্টিনন্দন খেলা দেখতে চাই। কাপ যেখানেই যায়না কেন তাতে আমাদের আনন্দ পাওয়ার কিছু নাই আমাদের আনন্দ দৃষ্টিনন্দন খেলা দেখে । তবে লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ ফুটবল শিল্পের জাদুকর ম্যারাডোনার দল আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের আশা করা যায়। কারণ এই দলের কোচ হিসাবে আছেন ম্যারাডোনার মত ফুটবল জাদুকর এবং দলে আছে বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড়েরা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৫৯