somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা বৈশাখ স্মৃতি ও বর্তমান

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পহেলা বৈশাখে আমার কোন স্মৃতি নাই। আমার জন্ম পৈত্রিক নিবাসে একটি জেলা শহরে। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকায় ওঠা। ঢাকায় আসার আগে পহেলা বৈশাখে আমরা 'হালখাতা' পালন করতাম। আমাদের জেলা শহরে চৈত্রের শেষ দিন থেকেই তোড়জোড় চলত 'হালখাতা' এর জন্য। নতুন হিসেবের খাতা আনা হত। পুরোনো খাতাগুলোর হিসেব সম্পন্ন করা হত। খরিদদারদের বাড়িতে আমন্ত্রন কার্ড দেয়া হত।
ভোরবেলা কর্মচারীরা নতুন জামা পড়ে সকাল সকাল দোকানে আসত। আগরবাতি জ্বলিয়ে গোলাপজল ছিটাতো। একটা মোহনীয় ঘ্রাণে দোকানটা ভরে থাকত। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হুজুর আসত। সমস্ত দোকানিরা একসাথ হত। কার দোকানে আগে মিলাদ হবে তা নিয়ে শালা-পরামর্শ হত। প্রথম যার দোকানে মিলাদ হবে সবাই তার দোকানে যেত। হুজুর সুমিষ্ট কন্ঠে মিলাদ পড়াতেন। তারপর দোয়া করতেন। তখনও আবার নতুন করে আগরবাতি জ্বালানো হত আর উপস্থিত সকলের গায়ে গোলাপজল ছিটিয়ে দেয়া হত। মিলাদ শেষে সবাই তাবারকের প্যাকেট নিয়ে পরবর্তী দোকানে যেত। কর্মচারীদের আনন্দের শেষ থাকত না। বাকির টাকা পরিশোধের সময় তাদেরও কিছু বকশিস দিত।

সারাদিনের জন্য কিছু প্যাকেট রেখে দেয়া হত। খরিদদাররা আসত, হিসেব-নিকেশ পরিশোধ শেষে তাবারক নিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিত।সারাদিন মনোগ্রাহী ব্যস্ততায় কাটত কর্মচারীদের। বাসায় সুন্দর রান্না হত। ভরপেট খাওয়া দাওয়া হত। দিন শেষে কর্মচারীরা তাদের পাওয়া বকশিস ভাগ করে পরিকল্পনা করত। কেউ কেউ বরিশাল যাবার চিন্তা করত সিনেমা দেখতে। কেউ বলত ঝালকাঠীতেই দেখবে। মান্নার নতুন ছবি আইছে। সন্ধ্যের পরে তারা কোথায় যে উধাও হত কোন খোঁজ থাকত না।

বিকেলের দিকে বন্ধুর বাবার পত্রিকার দোকানে যেতাম পত্রিকা পড়তে। 'হালখাতার' দিন তাবারক পেতাম। তারপর প্রথম আলো, নয়াদগিন্ত সহ সবগুলো পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে দেখতাম। রমনার বটমূল, চারুকলা, মঙ্গল শোভা যাত্রায় হাতির পিঠে বাচ্চা বসে আছে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের বৈশাখী সাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। কলামগুলো পড়তাম। বৈশাখ উপলক্ষ্যে সাহিত্য পাতায় নতুন গল্প দিত। সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকা দেখতাম।



২০১৩ তে প্রথম ঢাকায় আসা। পহেলা বৈশাখে রমনায় যাবার উত্তেজনায় ঘুমোতে পারিনি। কিন্তু যাওয়া হয়নি। সারাদিন মন খারাপ করে হোস্টেলে শুয়ে ছিলাম। আলিমের দুই বছরে আর যাওয়া হয়নি। ২০১৬ তে কবি নজরুলে ভর্তি হলাম। আলিমে থাকতে একাবার আমি আরেক বন্ধু মিলে রমনায় গেছিলাম। যেয়ে দেখি কি সুন্দর প্রকৃতির আলয়। মুগ্ধ হয়ে দু'জন লেকের পার দিয়ে হাটি । কিছুটা সামনে এগুলে অনেক প্রাতচারীদের দেখতে পাই। একটা গাছের গোড়ায় অনেকজন প্রবীন, মধ্যবয়স্ক মানুষের দেখা পাই। গাছের ডালে একটি নেমপ্লেট দেখতে পাই। লেখা "ক্ষণিকের আলয়"। আমরা গাছের একটু সামনে লেকের পাড়ে থাকা একটি গাছের শেকড়ে বসি। তখন একটি কোকিল কুহু কুহু স্বরে ডেকে ওঠে। আমরা মুগ্ধ হয়ে ডালে ডালে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলাম কোকিলটিকে দেখার জন্যে। আমরা জানতে পারি ফাল্গুনের প্রথম দিন। সেই থেকে প্রতি বছর আমি পহেলা ফাল্গুনে রমনায় যাই।

কলেজে ভর্তি হবার পর প্রথম বারের মত পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি একটি শুভ্র আনন্দ নিয়ে। সকালে উঠে রমনায় যাই ততক্ষণে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ। রমনায় তিল পরিমান ঠাই নাই। পরে ব্যর্থ হয়ে চারুকলায় যাই। সুন্দর আল্পনা আর কাগজ কেটে বানানো প্রতিমূর্তি গুলো দেখি। হরিণ ছানার মত সারাদিন ছুটোছুটি করে কাটাই। রাতে মেসে এসে ঘুম যাই। এরপর থেকে ঢাকার এক ঘেয়েমিটা জেঁকে বসে। পরের বৈশাখ গুলোতে বন্ধুবান্ধব একসাথে বিকেলে বের হই। শাড়ি পড়া সবথেকে সুন্দর মেয়েটিকে খুঁজি বাহাদুর শাহ পার্কের আনাচে কানাচে। সমস্ত লক্ষীবাজার জুড়ে শাড়ি আর পাঞ্জাবীর ঢল। আমরা সিগারেট খাই আর মেয়দের দেখি। কোন মেয়েটাকে কতটা সুন্দর লাগল তা নিয়ে মজে থাকি। আর কিছুদিন পরে সেটাও থাকবে না। তখন হয়ত অফিসের একদিনের ছুটি পেয়ে দেদারসে ঘুমানো হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৩২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×