somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ওদৃশ্য মানব
আমি আছি, আমি নেই। শত মানুষের ভিড়ে দৃশ্যমান থকেও যে অদৃশ্য আমি। ডুবে গেছি আপন বৃত্তে, মাঝে মাঝে তাই ডাক পেড়ে গল্প বলি। কারণ, আমাদের মৃত্যু সেদিনই হয় যেদিন আমরা গল্প বলা বন্ধ করে দেই। তা হোক সেটা আপনার সাথেই।

নতুন খোলসে- শিশুশ্রম!

১২ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"ভাই ৫ টা টেখা", কথাটা না শুনার ভান করেই চলে যাচ্ছিলাম ছেলেটি হাত ধরে বসল। "ও ভাই দিয়া যাও"। কিছুটা বিরক্ত হয়েই হাত সরিয়ে নিয়ে হাটা শুরু করলাম। টিলাগড় থেকে আম্বরখানা ১৫ টাকা ভাড়া। প্রায়শই ২০ টাকা দেওয়ার পর ৫ টাকা ফেরত আসে এবং সেটা হাতে পাওয়া মাত্রই কেউ একজন সেটার জন্য হাত পাতে। এটা প্রায় রোজকার ঘটনা। কখনো কোনো কথা না বলেই দ্রুত পায়ে হেটে যাই , ওরাও পেছন পেছন আসে। কিছুদুর আসার পর হাল ছেড়ে দেয়। কখনো খুব কঠোর হয়ে ঠান্ডা স্বরে বলি "তোমাকে তো আমি টাকা দিব না"। কেউ ২য় বার বলে, বেশিরভাগই আর বলে না হয়ত বুঝে যায় আদায় করা যাবে না।

.
এই ঘটনাবলী খুবই নির্দয় মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। এক মুহুর্তের ভাবনায় আমাকে খারাপও ভাবতে পারেন। কিন্তু এ ঘটনা শুধু আমার নয়।এটি শহরের প্রায় প্রতিটি মানুষের গল্প। রাস্তা ঘাটে, পার্কে এরকম হাজার পথশিশুতে আজ পূর্ণ। একটুখানি জায়গা যাওয়ার পর এরকম একটি শিশুর সাথে আপনার দেখা হবে। খুবই মলিন মুখে আপনার কাছে এসে যখন হাত পাতে আপনি হয়ত না করতে পারেন না, কিংবা আমার মত নির্দয় হয়ে হয়ত সরে যান। অনেকেই আবার ধমক দিয়ে বিদায় করে দেয়।
.
শিশুশ্রম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে নানান ছবি। কিন্তু এই বাচ্ছা গুলোর কথা, তাদের হাত পাতার কথা কতজনের মনে আসে? এদের সবাই কি আসলেই অভাবের পীড়নে আজ পথে? ভেবে দেখেছেন কখনো?
.
বিষয়টা অনেকটা 'অপেন সিক্রেট' এর মতন। আমরা সবাই জানি বা বুঝি কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলি না বা বললেও সেটাকে কেউ বিশেষ 'পাত্তা' দিতে দেখা যায় না। নেই প্রশাসনের ও বিশেষ কোনো নজর। কি মনে হয় আপনার, কত ভাগ শিশু কোনো উপায় না পেয়ে নিজের পরিবারের জন্য এই পথে? ১০ শতাংশ? পনের শতাংশ? জরিপ করলে হয়ত আসল অঙ্কটা পাওয়া যাবে। কিন্তু এই জরিপটা করবে কে? খোজ নিয়ে দেখেন এই শিশুগুলোকে কখনো নিজের বাবা-মা'ই এ কাজে নামিয়ে দিচ্ছে কখনো সে স্বীকার অন্য একটি বড় চক্রের। এদের কারো কারো হয়ত ঘরে উপার্জনের কেউ নেই, বা যিনি ছিলেন তিনি অক্ষম । কিন্তু এর সংখ্যা খুব বেশি একটা হওয়ার কথা না। বাচ্ছা গুলোকে অনেকটা জোর করেই নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
.
একবার রাস্তায় দাড়িয়ে কিছু খাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে পেছন কে যেন শার্ট ধরে টান দিল, পেছনে ফিরে দেখি ছোট্ট একটা মেয়ে মলিন মুখে হাত পেতে দাড়িয়ে আছে। টাকা চেয়েছিল, কিন্তু টাকা তো আমি দেইনা। টাকা দেইনি, বললাম, চানাচুর খেতে পারো। টাকা তো পাবেনা চানাচুরই সই, তাই হয়ত সেও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল। কি কি জানি কথা বলছিলাম ওর সাথে, একটা কথা মনে আছে এখনো। “ভাই টেখা না নিয়া গেলে মারবা”। কে মারবে জানতে চাইলে, উত্তর পাইনি। চুপ করে ছিল। আর কি বলব ভেবে না পেয়ে প্রস্থান করেছিলাম। চিন্তা করলে অনেক কিছুই মাথায় আসে। কে হতে পারে? বাবা? মা? নাকি অন্য কেউ? কোনো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী?
.
একবার এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করব বলে ঠিক করেছিলাম।একজন শ্রদ্ধাভাজনের সাথে কথা প্রসঙ্গে এ বিষয়ে আলাপও হয়েছিল। ব্যাপারটা বেশ উল্লেখযোগ্য কাজ হবে বলে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও পরের কথাটি-- "দেখ আবার বিপদে না পড়" -- যেন পেছনে ঠেলে দিল। তাও ভেবেছিলাম করব, কিন্তু বিবিধ কারণে আর করা হয়নি। কিন্তু বিপদ কেন হবে?
.
এতক্ষণে এর উত্তর হয়ত আপনারাও পেয়ে গেছেন। এক 'অদৃশ্য শক্তি ' এদের দিয়ে এই কাজ গুলো করিয়ে নিচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতন যেন কেউ নেই। কারা এই মানুষ গুলো? এদের চিহ্নিত করা কি খুবই কষ্টের। আইনের ঠিকমতন ব্যাবহার করে এগুলো কি বন্ধ করা যায় না? আমাদের দেশে অনেক আইনের ন্যায় শিশুশ্রম নিয়েও আইন আছে যার প্রয়োগ দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'ভাইরাল' হওয়া কিছু ঘটনার সময়। কিন্তু এই যে এদের দিয়ে এভাবে এসব কাজ করানো হচ্ছে আর তা ধীরে ধীরে আরো ভয়ঙ্কর রুপ নিচ্ছে এর বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যাবস্থা নেয়া যায় না? দরকার প্রসাশনের একটু নজরদারির। ততদিন পর্যন্ত আমাদের কে নাহয় একটু অন্য পন্থা অবম্বন করতে হবে। অনেকেই বাচ্ছা গুলোকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এভাবে ধমক না দেওয়াটাই ভালো। খুব ঠান্ডা স্বরে শক্ত ভাবে না করে দিন। বলে দিন সারাদিন জপলেও দিবেন না। ওরা চলে যাবে, এক সময় হয়ত এই রাস্তা ছেড়ে দিবে বা ওদের এই রাস্তায় নামানোটা থেমে যাবে।
.
ওদের টাকা দিয়ে যে দরদটা আপনি দেখাতে চাচ্ছেন সেটা যেনো আরো কয়েকটা শিশুর এই রাস্তায় নামার কারণ না হয়ে যায় । কয়টা টাকা হাতে দিয়ে নয়, পারলে এই শিশুটাকে যাতে অন্যের কাছে আবার হাত পাততে না হয় সে ব্যবস্থাটা করেন। ভেবে দেখবেন।
.
'Children shouldn't work in fields, but on dreams'-- theme, World Day Against Child Labour 2019.

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:৩২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×