তাহার কথাঃ
"জাফর স্যার শেয়ার মার্কেট নিয়ে যা বলেছেন একদম ঠিক বলেছেন
উনি বলেছেন ঃ
"আমি আগেই বলে রাখি স্টক (শেয়ার) মার্কেট কীভাবে কাজ করে আমি সেটা জানি না। চেষ্টা করলে বিষয়টা যে বুঝতে পারব না তা নয়, কিন্তু আমার বোঝার কোন আগ্রহ নেই। বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে টাকা পয়সা রোজগার করে সংসার চালাতে হয় এবং সেজন্যে পরিশ্রম করতে হয়। কোনো পরিশ্রম না করে শুধু মাত্র টাকা পয়সা নাড়াচাড়া করে কেউ যদি টাকা উপার্জন করে তখন আমার কাছে মনে হয় এর মাঝে কিছু একটা গোলমাল আছে। যেহেতু সারা পৃথিবীই এই গোলমালকে মেনে নিয়ে চলছে কাজেই আমি স্বীকার করে নিচ্ছি সমস্যাটা পৃথিবীর নয়, সমস্যাটা আমার।"
ফিন্যান্সের ছাত্র আমি নিজেও। জাফর ইকবাল যেটা বলেছেন সেটা একদম ঠিক। উনার কথা থেকে একদম পরিষ্কার বোঝা যায় যে উনি স্টক এর সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে কথা বলেছেন, প্রাইমারি মার্কেট নয়। সেকেন্ডারি মার্কেটের অনেক রকম সমস্যা আর যেটা এক ধরনের জুয়া খেলার মতই।এ ধরনের মার্কেটে নীতিগতভাবেই কারো সাপোর্ট করা উচিত না। তবে প্রাইমারি মার্কেট নিয়ে সেরকম জুয়া খেলার মত কোন সমস্যা নেই।
শেয়ারের সেকেন্ডারি মার্কেটে আর কিছুই হচ্ছে না, শুধু একজনের পকেটের টাকা আরেকজনের পকেটে যাচ্ছে, অর্থনীতির লিকুইডিটি বা তারল্য সুবিধা ছাড়া আর কোন লাভ হচ্ছে না। সারা বিশ্বেই শেয়ারের সেকেন্ডারি মার্কেটে ৯০% মানুষ ধরা খায় আর তাদের পকেটের টাকা যায় বাকি ১০% সফল মানুষের পকেটে। সেকেন্ডারি মার্কেটে যারা সফল হয় তারা সবাই এক্সপার্ট মানুষ। আর বাকি ৯০% যারা সবসময় হারে, তারা সবসময়ই সাধারণ মানুষ। সুতরাং সাধারণ মানুষের উচিত এধরনের মার্কেট থেকে দুরে থাকা।
ভাই, সময় থাকতে যত তাড়াতাড়ি পারেন এ মার্কেট থেকে বের হয়ে আসেন। এটা আমার অনুরোধ। নিজের জীবন নিয়ে আর জুয়া খেলবেন না। যা লস হয়েছে হয়েছে, প্লিজ, আর দরকার নাই।"
আমার মন্তব্যঃ
জাফর স্যারের কথা বলেই কি কথাটা ঠিক বলে দিলেন??? নাকি নিজের জানার পরিধিটার সাথে ঐ কথা গুলো মিলে গেছে বলে ধরে নিয়েছেন যে কথাটা ঠিক। এখানে কথাগুলো ঠিক না বলে বলা উচিত "কথাগুলো মজার"। কারন জাফর স্যার নিজেই প্রথমে স্বীকার করে নিয়েছেন যে তিনি শেয়ার বাজার সম্পর্কে অত জানেন না। জাফর স্যারের সবচেয়ে কৃতিত্ব এখানে যে উনি উনার যে কোন কথাকে গুছিয়ে মজা করে বলার চেষ্টা করেন। উনার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি ইদানিং উনি কিছুটা হলেও উনার এই গুনটা দিয়ে কিছু কিছু গোষ্ঠীর পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন; যারা চাক্ষুস ভাবে আমাদের সর্বনাশ করে চলেছে। এটা খুবই হতাশাজনক। তার মত একজন মানুষকে এভাবে একপাক্ষিক হয়ে যাওয়াটা একেবারেই কাম্য নয়। যা হোক এটা তার ব্যাপার। এ নিয়ে আবার কথা বললে অনেকে আবার অন্যকিছু মনে করতে পারে। আসলে আমরা হুজুগে বাঙ্গালীরা চোখধাঁধানো এডভারটাইজ দেখে সহজেই গলে যাই তো...! শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটেছে। আমিও এ অদ্ভুত বাজার সম্পর্কে খুব ধারনা রাখি না। তবে বেশ কিছু টাঁকা ধরা খেয়ে এখনো বসে আছি শেষ দেখব বলে। ধৈর্য্যের পরীক্ষাটা ভালই দিচ্ছি মনে হচ্ছে। তো আমি কেন শেয়ারবাজারে প্রবেশ করলাম? এ প্রশ্ন থেকেই এই মন্তব্য লিখছি। আমি কি হুজুগে? আমার ধারনা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা। তবে উদ্দেশ্যটার মাঝে কিছুটা ভিন্নতা ছিল। যাহোক এবার আমার একটা যুক্তিতে আসি। আমি শেয়ারবাজারটাকে একটা বাজার ভেবেই ঢুকেছিলাম। যেখানে লাভ ক্ষতি থাকবে। কেনা-বিক্রয় থাকবে। যদিও এখন আমারও ধারনা পাল্টেছে। তবে তা আমাদের সরকারই পাল্টাতে বাধ্য করেছে। আর এটা বাংলাদেশ বলেই আমি বাধ্য হয়েছি মানতে যে এটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাজার না; মানুষকয়ে ডেকে এনে বোকা বানানোর একটা যন্ত্র। আর কিছু আঙ্গুলের কলাগাছ আর কিছু কলাগাছের বটগাছ হওয়ার ফসলি জমি। তবে আমার ধারনা ছিল অনেকটা এরকম-
এটা এমন একটা বাজার (সেকেন্ডারীর কথাই বলছি) যেখানে পন্য হল বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার। কমন হয়ে গেল কথাটা না? আচ্ছা ধরুন কয়েকজন মিলে একটা কোম্পানী দিল। সবাই ১০০০/= টাঁকা দিল যখন ওটা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তখন। এরপর বছর দুই পরে ঐ কোম্পানীটা খুব ভাল একটা অবস্থানে চলে গেল। প্রথমে যারা টাঁকা দিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের তখন লাভ সহ টাকার পরিমান ৫০০০/= আর কোম্পানীটির যা অবস্থা তাতে আর দুবছরে তা ১৫০০০/= ঠেকবে তাতে সন্দেহ নেই। এখন এদের মধ্যে একজন বের হতে চাইল। তখন একজন তাকে প্রস্তাব দিল যে তোমার শেয়ার গুলো আমাকে দাও, আমি তোমাকে এখন ৮০০০/= টাঁকা দেব। লক্ষ্য করুন, এটা কি জুয়া? ধরুন একজন স্বর্নকার ১০ ভরি স্বর্ন কিনেছিল যখন ভরি ছিল ৫০০০/= এটা কিন্তু খুব আগের কথা না। ১৫ বছর আগেই কিন্তু সোনার দাম অনেকটা এমন ছিল। আর এখন তা দাড়িয়েছে প্রতি ভরি ৬০০০০/= এর বেশি। প্রায় বার গুন। এখন যদি সে ওগুলো বিক্রি করে তাহলে সে যা লাভ করবে তা কি জুয়া? অন্তত আমার মনে হয়না। আমার ধারনাটা অনেকটা এরকমই ছিল। আচ্ছা এখানে আমি যা করছি তা কি একেবারেই পরিশ্রম ছাড়া? তাহলে তো বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই অনেককে পরিশ্রম ছাড়াই টাঁকা দেয়। ব্যাংকগুলোয় পরিশ্রম ছাড়াই ব্যবসা করে।
একটা উদাহরন দেয়া যাক। আমরা জানি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ার ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তার মেধা দিয়েই তিনি এটা তৈরী করেছেন। অথচ জানেন প্রথম অবস্থায় এই ফেসবুকের টাকার সংস্থান করেছেন অন্য একজন। তিনি ফেসবুক এর সহ - প্রতিষ্ঠাতা এডুআর্ডো সাভেরি। তিনি প্রাথমিক অবস্থায় ফেসবুকের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডারদের একজন ছিলেন। আচ্ছা এখানে মার্কের পুজি বা শেয়ারের মূল্য ছিল তার তুখোড় মেধা। আর সাভেরি কিন্তু ফেসবুকের প্রোগ্রামিং-এ অবদান না রাখলেও ফেসবুকের আজকের এই অবস্থান কিন্তু তার দেওয়া প্রাথমিক ঐ টাকার বদৌলতেই। এখন সাভেরি ফেসবুকের মাধ্যমে যে টাঁকা আয় করেছেন তা কি বিনা পরিশ্রমেই? অন্তত জাফর স্যারের কথায় তো তাই মনে হয়। শেয়ার মার্কেটের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য হল সাধারনের কাছ থেকে কোন কোম্পানীর পুজিঁ সংগ্রহ করা (যারা তাদের অংশীদার ছিল না); আর দেশের উৎপাদন খাতে সাধারনের অংশগ্রহণ। আমার তাই ধারনা ছিল। এখন কেউ যদি জোর করে বা ইচ্ছা করে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এর বিকৃত সাধন করে তাহলে কি আমরাও তাই মনে করব?? জাফর স্যার এবং তাকে যারা নির্ভুল মনে করে তারা তো এক্ষেত্রে তাই করছে বলে মনে হয়। যদিও এটাও আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। যে দেশের ইতিহাস ক্ষণে ক্ষনে বদল হয়। মুক্তিযুদ্ধে আসলেই কার অবদান কি ছিল তাই যদি ভুল বা বানোয়াট শেখানো হয়। বা আদৌ কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা নিয়ে ধাঁধায় রাখা হয় এবং তা গিলে খেতে বাধ্য করা হয়। এবং আমরাও সুবোধের মত বাধ্য হই। সেক্ষেত্রে এগুলো মামুলি ব্যাপারই বটে...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ১২:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




