somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজ্ঞ বালক
আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

সে এক বিশাল ইতিহাস - ০১

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"জঙ্গি সন্দেহে ছয় যুবক আটকঃ জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য"

টেনশনের কিছু নাই। এটা শুধুই হেডিং। আজকালকার অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর মতন। আসল ঘটনা হলো, যতবারই গুগল ম্যাপ দেখি ততবারই বহু পুরাতন এক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ঘটনাটা ২০০১ সালের। তখন নাইন-এ পড়ি। আমরা সেন্ট্রাল গভঃমেন্টের একগাদা ছেলে একসাথে ভর্তি হলাম জেনেসিস কোচিং সেন্টারে। সে এক অসাধারণ সময়। পুরো বাসাবো মনে হয় চিনতো আমাদের, এমনই ছিলো আমাদের কাজকর্ম। তো আমাদের ক্লাসে এক অদ্ভুত ছেলে ছিল, বায়েজীদ। তাকে কখনো ক্লাসে দেখা যায় নি, কিন্তু যেইদিন ক্লাস টেস্ট সেদিন সে ঠিক ঠিক হাজির। পরীক্ষার ফলাফলও ছিল তাক লাগানো। সে যাই হোক, তার সাথে বন্ধুত্ব অন্য কারনে। আমরা একই রকম বইয়ের পোকা। তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, কুয়াশা, ওয়েস্টার্ন একেবারে সকাল বিকাল গুলে খাই। এই বইয়ের বিশাল ভান্ডার বায়েজীদের বাসায়। কাজেই তার বাসায় কম-বেশী যাওয়া হতোই।

একদিন গোপন খবরে জানা গেলো, বায়েজীদ বাসা পাল্টেছে। আর এমন অবস্থা, ঐ দিনই কোচিং ছুটি হয়ে গেলো এক ক্লাস হয়েই। কাজেই আমরা জেনেসিসের ছয় পাগল ভাবলাম, বায়েজীদের নতুন বাসায় যাওয়া যাক। তা, আমরা কি কেউ চিনি নতুন বাসা? কেউ কি আগে গিয়েছি? নাহ, তা না। তবে, আমাদের কাছে আছে এক দারুন তথ্য, বায়েজীদরা একটা ছয়তলা বাড়িতে উঠেছে। কাজেই কিশোর পাশার মতন ভেবে বের করলাম, "একটা এলাকায় কয়টা ছয়তলা বাড়ি থাকতে পারে? আর তার মধ্যে কয়টা বাড়িতেই বা এবার নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে?" আর সমস্যা থাকলে বায়েজীদকে ফোন দিলেই হবে। তা, একজন মাসুদ রানা বলে উঠলো, " আরেহ, ফোন দিমু কেমনে? ওর ল্যান্ড লাইন না?" ইয়ে, এত কিছু ভাবার সময় কই! আমরা রওয়ানা দিলাম।



ঐ দিন শাহাজাহানপুর এলাকার প্রতিটা ছয়তলা বাড়ি আমরা খুঁজে খুঁজে দেখেছিলাম। প্রতিটা বাড়িতে নক করে করে, দোতালা-তিনতালা থেকে মানুষকে ডেকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "বায়েজীদরা কি এই বাসায় উঠেছে?" এই সাড়ে তিন ঘন্টা আমার জীবনের সবচাইতে মজাদার ও অসাধারণ সময়ের একটা। হোয়াট এ টাইম দ্যাট ওয়াজ।

যাই হউক, এখনকার পরিস্থিতিতে নিশ্চিত ভাবেই এই কাজ করলে পরদিন খবরের কাগজে উপরের হেডলাইন দেখা যেত :D

.................................................................................................

৯৯% দাবাড়ু, শুধু ১%


আজ দাবা খেলতে গিয়ে অনেক পুরানো কথা মনে পড়ে গেল। আরও অসংখ্য ভালো গুণের মতন এই গুণটাও আমার বোনের থেকে পাওয়া। তার কাছেই নৌকা-বোড়ে-ঘোড়ার কারসাজি শেখা। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেলো গুরুমারা পন্ডিত হয়ে গেছি। খেললাম ভাইয়ের সাথে, বড় মামার সাথে, একটা সময় খালাতো ভাই বাবুর সাথে; পরিবর্তন আসলো কলেজে ওঠার পর। তখন মাত্র কালীবাড়ির বাসায় উঠেছি। কাঠের পুলের আমাদের যেই সার্কেল সেখানে আমরা দাবা টুর্নামেন্ট ছাড়লাম। আমি, সানী, মহসিন, তার বড় ভাই রাজু, ক্যানি, পাপ্পু, পরাগ আরো অনেকে। এবং আমার মাথায় ঢুকে গেলো দাবা। রানি হামিদ-এর বই কিনে এনে প্রতি পাতা অনুসরণ করে অনুশীলন করতাম। কম্পিউটারে একটা গেমই চালাতাম - চেসমাস্টার ৪০০০। নোকিয়ার মোবাইলে দাবা খেলার এপ নামানো ছিল।

একটা পর্যায়ে এলাকার কম্পিটিশনে নাম লেখালাম। সবাইকে হারালেও বাদ রইলো এক পুলিশম্যান আর এক মাছওয়ালা। বেশ কয়েকবার হারার পর যেদিন আমি জিতলাম, মনে হলো বিদ্যার্জন সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার ডুব দেয়ার পালা। হাজির হলাম ফেডারেশনে। দাবা ফেডারেশনে তখন প্রতি শুক্রবার র‍্যাপিড চেস টুর্নামেন্ট (এক খেলা সর্বোচ্চ একঘন্টা ও এক চাল সর্বোচ্চ এক মিনিট) হয়। নাম লেখালাম। এখনো মনে আছে, প্রথম খেলা ছিল বছর দশেকের একটা বাচ্চার সাথে। তীব্র তাচ্ছিল্য নিয়ে খেলা শুরু করলাম এবং তীব্র বিস্ময়ের সাথে হেরে গেলাম। পরে জেনেছিলাম, ঐ বছরের জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন ছিল ন্যাশনালে।



পরের খেলায় এক লোক পান চিবাতে চিবাতে হাজির। চুন একটু মুখে ঢুকিয়ে বাকিটা টেবিলে মুছে বললো, 'আহেন খেলাই'। এবারও হার। বুঝলাম শুধু নুড়ি কুড়িয়ে গিয়েছি, জ্ঞানার্জন বহু বাকি। কিন্তু, তখন আমাকে একটা তীব্র জেদ চালাতো। সেই জেদের কারনে দিনের পর দিন গেলাম, দিনের পর দিন হারলাম এবং একটা সময় কানে আসলো কেউ কেউ বলছে, 'এই ছেলেটা লেগে থাকলে হবে।' কিন্তু, ঐ যে লিখেছি উপরে। সবই ছিলো আমার। মগজাস্ত্র ছিলো, সহজেই খেলার ধাঁচ বোঝার ক্ষমতা, দূরদৃষ্টি, ইচ্ছা, জেদ - সবই। ১% যা ছিলো না তা হল, ধৈর্য। আর এই এক জিনিস না থাকলে দাবাড়ু আর হাবাড়ু একই জিনিস। :(
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৫৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×