দেখতে দেখতে তিনটি বসন্ত কেটে গেল জার্মানির ডর্টমুন্ডে । আর এর মাঝে যে কতগুলো ঈদ চলে গেছে হিসেব রাখিনি । বেয়ারা মন হয়তো হিসেবের খাতায় ঈদগুলো জমাই করেনি । মনের আর কি দোষ, এখানে সবকটা সাধারন দিনের মাঝে ঈদকে যে আলাদা করে চেনা যায় না । প্রাণের শহর ঢাকায় ঈদের নামাজের জন্য আমাকে সব সময়ই দৌড়াতে হতো । আর এখানে ঈদের জামাত যে কাজের চাপে কি করে পালিয়ে বেরায় ভেবেই পাইনা ।
এক বন্ধু থেকে জানতে পারলাম কাল আমাদের ঈদ । সত্যি বলছি খবরটা আমাকে একফোঁটাও শিহরিত করেনি । শিহরিত হবই বা কেন, এখানে তো আর বন্ধুরা চাঁদ রাতের উৎসবে আমন্ত্রণ করবে না । মহল্লাটা হাই ভলিউম মিউজিকে গমগম করবে না । ছাঁদে উঠে ভাই বোনেরা চাঁদ খুঁজবে না । ঈদের সকালে একরাশ ঘুম ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে রাট হাউজে যেতে হবে । একগাদা চাইনিজদের সাথে কিউয়ে অপেক্ষা করে কাজ শেষ করতেই তো বেলা গড়িয়ে দুপুর হবে । তারপরও কি একটু অবসর ? মোটেও না । মেনজাতে অখাদ্য খেয়ে ঈদের দুপুর গড়াবে । মাঝে মায়ের হাতের মধুর খাবারগুলোর কথা মনে হয়তো হতেও পারে । কিন্তু ঈদের নামাজ শেষ করে ঘরে ফিরে মায়ের কোমল পা ছোঁয়ে সালাম করে লক্ষ্যকোটি আশীর্বাদ হতে বন্চিত হয়ে অবশ্যই চোঁখে অশ্রুধারা যে টলমল করবে এতে কোন ভূল নেই ।
তারপর অশ্রুসজল চোখের অশ্রুধারা লুকিয়েই সোজা ইউনিভার্সিটিতে থিসিস সুপারভাইজারের সাথে দেখা করে কাজের মাঝেই ডুবে যাব । এক সপ্তাহ দেখা না দেয়া সূর্যিমামার অগোচরেই হয়তো বিকেল হয়ে যাবে । গোঁধুলীর লালচে রং আমার আর আমার প্রিয়াকেতো রাঙাবে না । রাজ্যের হতাশা আসবে কুয়াশা হয়ে আমাদের আকাশে ।
সন্ধে হলেই এক বন্ধুর বাসায় একটু হয়তো আড্ডা হবে । ঈদের রাতের ইত্যাদি তো ফ্যামিলির সবার সাথে বসে দেখা হবে না । আর রাতের খাবার টেবিলের প্রাণোচ্ছল হাসিতে মুখরিত হবে না আমার ডর্মের রুমটা । মন খারাপ করেই হয়তো নিদ্রায় তলিয়ে যাব ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





