somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কগনিটিভ ফিলোসফী (কগনিটিভ সায়েন্স সিরিজ ২)

২৩ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কগনিটিভ সায়েন্স ১

চেতনা ও জ্ঞানের অন্বেষণই হলো ফিলোসফী বা দর্শনশাস্ত্র । ফিলোসফীকে ভেঙেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের জন্ম । ফিলোসফী দুই ধরণের : মেটাফিজিক্স বা পরাতত্ত্ব এবং এপিসটেমোলজী । মেটাফিজিক্স অধ্যাত্ম অনুসন্ধান করে, অন্যদিকে এপিসটেমোলজী জ্ঞান অনুসন্ধান করে ।

তো প্রশ্ন হলো, ফিলোসফীর সাথে কগনিটিভ সায়েন্সের সম্পর্ক কী ? কগনিটিভ সায়েন্সের মূল কাজই হলো আমাদের মন কিভাবে কাজ করে তা অনুসন্ধান করা । যেহেতু কগনিটিভ সায়েন্স মানুষের মন কিভাবে কাজ করে তা জেনে একটা বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেশিন (রোবট, সফ্ট-রোবট) তৈরীর লক্ষ্যে কাজ করে আর তাই আমাদের মন কিভাবে একটি সমস্যার সংজ্ঞা দেয়, একটি মডেলের সমালোচনা করে এবং সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দেয় তা উপলব্ধি করাটা অতি প্রয়োজনীয় । আর ফিলোসফী আমাদের সাহায্য করে সমস্যার সংজ্ঞা, সমালোচনা ও সমাধানের উপলব্ধি করতে । কগনিটিভ সায়েন্সে ফিলোসফীর ব্যবহারকেই মূলত কগনিটিভ ফিলোসফী বলা হয়ে থাকে ।

সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনীকগন মন ও চিন্তা সর্ম্পকে নতুন করে ভাবতে শিখলো । যার ফলে অনেকগুলো বিতর্কের জন্ম হয়, যার মধ্যে মাইন্ড - বডি ডিবেট অন্যতম ।



মাইন্ড বডি ডিবেট মনস্তাত্ত্বিক (সাইকোলজিকাল) ও শারীরিক গুনের মাঝে সম্পর্ক তৈরী করে । স্বভাবতই মাইন্ড বডি ডিবেট মেটাফিজিক্স অন্তর্ভূক্ত কারণ এটা জানতে চেষ্ঠা করে আমাদের মানসিক পৃথিবী কী জড়বাদী (মেটেরিয়ালিসটিক) পৃথিবী অন্তর্ভূক্ত । অন্যকথায় মন বা শরীর কে কাকে কন্ট্রোল করে এটা নিয়েই আমাদের ডিবেট ।

এক মতাদর্শে মনকে একটি শারীরসর্বস্ব জড়বাদী বস্তু হিসেবে দেখা যায় যার পদার্থগুলোকে বোঝা যায় এবং পরিমাপ করা যায়। অন্যদিকে মনকে একটি অশারীরিক আত্মা হিসেবে দেখে থাকে অন্যরা । আমরা আমাদের আত্মিক চেতনা যেমন বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তার সমীকরণ পার্থিব ব্রেইনের সাথে করতে পারিনা ।

ভাবতত্ত্ব অনূযায়ী বিভিন্ন মতাদর্শের দার্শনিকরা মনের প্রকৃতিকে দুভাগ করে থাকে : মোনিজম বা অদ্বৈতবাদ এবং ডুয়ালিজম বা দ্বৈতবাদ। অদ্বৈতবাদ মতানুসারে মহাবিশ্বে শুধুমাত্র একটি অবস্হা বা বস্তু আছে । গ্রীক দার্শনিক এরিস্টোটলের মতাদর্শও ছিল অদ্বৈতবাদ । ভাববাদী অদ্বৈতবাদ মতানুসারীরা শুধুমাত্র মানসিক বা আত্মিক চেতনায় বিশ্বাস করে । শরীরতাত্তিক অদ্বৈতবাদ মতানুসারীরা মনে করে শারীরিক বস্তু যেমন আমাদের ব্রেইনই আমাদের পরিচালনা করে ।

আরও একটু খোলাসা করে বলতে গেলে ভাববাদী অদ্বৈতবাদীরা নিজের মনের মাঝে একটি স্বতন্ত্র পৃথিবী গড়ে তোলে । কিন্ত একজনের মনের পৃথিবীতেই এত্তগুলো মহাবিশ্ব হয়ে যায় যে কোনটা ঠিক তা বের করাটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা । ভাববাদী অদ্বৈতবাদীরা ধর্মের সাথে মতাদর্শকে গুলিয়ে ফেলে বলে একে বিজ্ঞানসম্মত বলা যায় না ।

শরীরতাত্তিক অদ্বৈতবাদীদের অবস্থান ভাববাদী অদ্বৈতবাদীদের ঠিক অপরপ্রান্তে । তারা মনে করে মহাবিশ্বের সকলকিছুর মূলেই শরীর, যেমন : মনের সব কর্মের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ব্রেইন । সমালোচকদের মতে শারীরিক অবস্থা মানসিক অবস্থাকে ঠাহর করতে পারলেও কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারেনা ।

দ্বৈতবাদীরা মন এবং শরীরের সহাবস্থানে বিশ্বাস করলেও মন শরীরের সাথে কিংবা শরীর মনের সাথে কিভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে তাতে ভিন্নমত পোষন করে থাকে । গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর মতাদর্শও ছিল দ্বৈতবাদ । প্লেটোর মতে জ্ঞানের অবস্থান অবস্তুবাদী জগতে, অপরদিকে শরীরের অবস্থান বস্তুবাদী জগতে । মন শরীরের সাথে কিংবা শরীর মনের সাথে কিভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে এটার উপর ভিত্তি করে চার ধরণের দ্বৈতবাদী মতাদর্শ গড়ে উঠেছে যার মধ্যে কর্মবাদী অন্যতম ।

কর্মবাদী তত্ত বোঝার জন্য যেকোন কিছুকে কর্ম এবং শরীর অনুযায়ি বিভক্ত করার উপায় জানতে হবে । শরীরিক শ্রেণী অনুযায়ি পদার্থের গঠন বা মিশ্রণকে বিবেচনা করা হয়, যেমন : জেলীফিস ও কার্পেট আলাদা কারণ ওদের গঠন ভিন্ন । অন্যদিকে কিছুকে ক্রিয়া অনূযায়ীও বিভক্ত করা যায় যেমন, যে কোন ধরনের যানবাহনই এক কারণ যাত্রী বা মালপত্তর পরিবহনই হলো ওদের মূল কাজ ।

ব্যাপারটা আরও চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে যখন আমরা ধরে নেই যে মনের একটা শরীরিক রূপ আছে কারণ তখন মনকে ব্রেইন থেকে আলাদা করা সম্ভব হয় না । কর্মবাদী তত্তের মূল ধারণাটা হলো আমাদের মানসিক অবস্থা শরীরিক এবং ক্রিয়াশীল এবং প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে তৈরী করা যায়।

এখন দেখা যাক কিভাবে কগনিটিভ ফিলোসফীকে ব্যবহার করা যায় কম্পিউটেশনালী । ধরা যাক আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি রোবট তৈরী করলাম । এখন রোবটির বুদ্ধিমত্তায় যদি কগনিটিভ ফিলোসফী থাকে তাহলে তা একটি সমস্যাকে ব্যাখ্যা করতে পারবে এবং সমস্যা অনূযায়ী অঙ্গভঙ্গির মাঝে কিছু ভাব প্রকাশ করতে পারবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:৪৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×