.jpg)
কগনিটিভ সায়েন্স ১
চেতনা ও জ্ঞানের অন্বেষণই হলো ফিলোসফী বা দর্শনশাস্ত্র । ফিলোসফীকে ভেঙেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের জন্ম । ফিলোসফী দুই ধরণের : মেটাফিজিক্স বা পরাতত্ত্ব এবং এপিসটেমোলজী । মেটাফিজিক্স অধ্যাত্ম অনুসন্ধান করে, অন্যদিকে এপিসটেমোলজী জ্ঞান অনুসন্ধান করে ।
তো প্রশ্ন হলো, ফিলোসফীর সাথে কগনিটিভ সায়েন্সের সম্পর্ক কী ? কগনিটিভ সায়েন্সের মূল কাজই হলো আমাদের মন কিভাবে কাজ করে তা অনুসন্ধান করা । যেহেতু কগনিটিভ সায়েন্স মানুষের মন কিভাবে কাজ করে তা জেনে একটা বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেশিন (রোবট, সফ্ট-রোবট) তৈরীর লক্ষ্যে কাজ করে আর তাই আমাদের মন কিভাবে একটি সমস্যার সংজ্ঞা দেয়, একটি মডেলের সমালোচনা করে এবং সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দেয় তা উপলব্ধি করাটা অতি প্রয়োজনীয় । আর ফিলোসফী আমাদের সাহায্য করে সমস্যার সংজ্ঞা, সমালোচনা ও সমাধানের উপলব্ধি করতে । কগনিটিভ সায়েন্সে ফিলোসফীর ব্যবহারকেই মূলত কগনিটিভ ফিলোসফী বলা হয়ে থাকে ।
সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনীকগন মন ও চিন্তা সর্ম্পকে নতুন করে ভাবতে শিখলো । যার ফলে অনেকগুলো বিতর্কের জন্ম হয়, যার মধ্যে মাইন্ড - বডি ডিবেট অন্যতম ।

মাইন্ড বডি ডিবেট মনস্তাত্ত্বিক (সাইকোলজিকাল) ও শারীরিক গুনের মাঝে সম্পর্ক তৈরী করে । স্বভাবতই মাইন্ড বডি ডিবেট মেটাফিজিক্স অন্তর্ভূক্ত কারণ এটা জানতে চেষ্ঠা করে আমাদের মানসিক পৃথিবী কী জড়বাদী (মেটেরিয়ালিসটিক) পৃথিবী অন্তর্ভূক্ত । অন্যকথায় মন বা শরীর কে কাকে কন্ট্রোল করে এটা নিয়েই আমাদের ডিবেট ।
এক মতাদর্শে মনকে একটি শারীরসর্বস্ব জড়বাদী বস্তু হিসেবে দেখা যায় যার পদার্থগুলোকে বোঝা যায় এবং পরিমাপ করা যায়। অন্যদিকে মনকে একটি অশারীরিক আত্মা হিসেবে দেখে থাকে অন্যরা । আমরা আমাদের আত্মিক চেতনা যেমন বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তার সমীকরণ পার্থিব ব্রেইনের সাথে করতে পারিনা ।
ভাবতত্ত্ব অনূযায়ী বিভিন্ন মতাদর্শের দার্শনিকরা মনের প্রকৃতিকে দুভাগ করে থাকে : মোনিজম বা অদ্বৈতবাদ এবং ডুয়ালিজম বা দ্বৈতবাদ। অদ্বৈতবাদ মতানুসারে মহাবিশ্বে শুধুমাত্র একটি অবস্হা বা বস্তু আছে । গ্রীক দার্শনিক এরিস্টোটলের মতাদর্শও ছিল অদ্বৈতবাদ । ভাববাদী অদ্বৈতবাদ মতানুসারীরা শুধুমাত্র মানসিক বা আত্মিক চেতনায় বিশ্বাস করে । শরীরতাত্তিক অদ্বৈতবাদ মতানুসারীরা মনে করে শারীরিক বস্তু যেমন আমাদের ব্রেইনই আমাদের পরিচালনা করে ।
আরও একটু খোলাসা করে বলতে গেলে ভাববাদী অদ্বৈতবাদীরা নিজের মনের মাঝে একটি স্বতন্ত্র পৃথিবী গড়ে তোলে । কিন্ত একজনের মনের পৃথিবীতেই এত্তগুলো মহাবিশ্ব হয়ে যায় যে কোনটা ঠিক তা বের করাটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা । ভাববাদী অদ্বৈতবাদীরা ধর্মের সাথে মতাদর্শকে গুলিয়ে ফেলে বলে একে বিজ্ঞানসম্মত বলা যায় না ।
শরীরতাত্তিক অদ্বৈতবাদীদের অবস্থান ভাববাদী অদ্বৈতবাদীদের ঠিক অপরপ্রান্তে । তারা মনে করে মহাবিশ্বের সকলকিছুর মূলেই শরীর, যেমন : মনের সব কর্মের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ব্রেইন । সমালোচকদের মতে শারীরিক অবস্থা মানসিক অবস্থাকে ঠাহর করতে পারলেও কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারেনা ।
দ্বৈতবাদীরা মন এবং শরীরের সহাবস্থানে বিশ্বাস করলেও মন শরীরের সাথে কিংবা শরীর মনের সাথে কিভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে তাতে ভিন্নমত পোষন করে থাকে । গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর মতাদর্শও ছিল দ্বৈতবাদ । প্লেটোর মতে জ্ঞানের অবস্থান অবস্তুবাদী জগতে, অপরদিকে শরীরের অবস্থান বস্তুবাদী জগতে । মন শরীরের সাথে কিংবা শরীর মনের সাথে কিভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে এটার উপর ভিত্তি করে চার ধরণের দ্বৈতবাদী মতাদর্শ গড়ে উঠেছে যার মধ্যে কর্মবাদী অন্যতম ।
কর্মবাদী তত্ত বোঝার জন্য যেকোন কিছুকে কর্ম এবং শরীর অনুযায়ি বিভক্ত করার উপায় জানতে হবে । শরীরিক শ্রেণী অনুযায়ি পদার্থের গঠন বা মিশ্রণকে বিবেচনা করা হয়, যেমন : জেলীফিস ও কার্পেট আলাদা কারণ ওদের গঠন ভিন্ন । অন্যদিকে কিছুকে ক্রিয়া অনূযায়ীও বিভক্ত করা যায় যেমন, যে কোন ধরনের যানবাহনই এক কারণ যাত্রী বা মালপত্তর পরিবহনই হলো ওদের মূল কাজ ।
ব্যাপারটা আরও চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে যখন আমরা ধরে নেই যে মনের একটা শরীরিক রূপ আছে কারণ তখন মনকে ব্রেইন থেকে আলাদা করা সম্ভব হয় না । কর্মবাদী তত্তের মূল ধারণাটা হলো আমাদের মানসিক অবস্থা শরীরিক এবং ক্রিয়াশীল এবং প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে তৈরী করা যায়।
এখন দেখা যাক কিভাবে কগনিটিভ ফিলোসফীকে ব্যবহার করা যায় কম্পিউটেশনালী । ধরা যাক আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি রোবট তৈরী করলাম । এখন রোবটির বুদ্ধিমত্তায় যদি কগনিটিভ ফিলোসফী থাকে তাহলে তা একটি সমস্যাকে ব্যাখ্যা করতে পারবে এবং সমস্যা অনূযায়ী অঙ্গভঙ্গির মাঝে কিছু ভাব প্রকাশ করতে পারবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





