করিডোরে মিছিল করা না জায়েজ। ক্যাম্পাসের বড় বড় মাস্টাররা আগে থেকেই রুল জারি করে রেখেছে। বেয়াদবরা যাতে বান্দরামি করতে না পারে। নানান প্রশ্নের বাহাস ঠেকাতে নানান আয়োজন এই ক্যাম্পাসে জারি আছে। 'দেখো তোমরা নিশ্চয় জানো! করিডোরে স্লোগান দেয়া নিষিদ্ধ! বেয়াদব আবার মুখে মুখে তর্ক করে!'
সেই দিনের ঘটনা। সেমিস্টারের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিলাম আমরা। কী আর করা! মিছিল নিয়ে কলাভবন সাতপাক ঘুরলেও কর্তৃপক্ষের তন্দ্রা কাটে না। মিডিয়ার কর্মীরা সংবাদটা কাভার করলেও পরদিন তা খুঁজে পেতে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
আমরা জানতাম।
তাই ঠাপটা ভালো করে দিতে চাইলে নিষিদ্ধ জায়গায় ঢুকতে হবে বার বার। প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন ছাড়াই আমরা করিডোরে ঢুকলাম। দু'একটা বিভাগ পেরুতে না পেরুতেই মহামান্য প্রক্টর বাবাজি তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হাজির। ওরে আল্লা বাবাজির কী ঠাপ! বহিস্কার করবে! উল্টোপথেই সেদিন ফিরে এলাম।
বেয়াদবরা ভীত নয়।
তাই আবার ঢুকতে হবে সেখানে। সিদ্ধান্ত হলো অন্যায্য-পীড়ন ফি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঢুকতেই থাকবো। পরে আমাদের নিয়মিত বেয়াদবি কর্তৃপক্ষ সহ্য করতে পারে নাই।
একদিন মাস্টার প্রজাতির একটা দামড়া প্রাণি আমাকে ডেকে বলেছিল-'বড্ড পেকে গেছো...।'
একদিন এই পাকা-আধাপাকা বেয়াদবরাই আপনাদেরকে রাষ্ট্রীয় খাঁচা থেকে মুক্ত করে এনেছিল।আর আপনেরাই এখন রাষ্ট্রীয় চামচামির বড় দামড়া বনে গেছেন। আপনি মাস্টার বটে!
পাঠক, দূরত্বজনিত কারণে সেই মহামান্য প্রাণিটি আমাকে চড় মারতে পারেনি। এই কিসিমের মাস্টারদের ক্লাসে কি দাপট! খালি তত্ত্ব আওড়ান। গ্যালিলিও কোপারনিকাস থেকে ডারউইন হয়ে মার্কস-এঙ্গেলস পেরিয়ে শ্রেণিকক্ষে পুরদস্তুর সমাজতন্ত্র কায়েম করে ফেলেন! মিডিয়ার পর্দার আকর্ষণে কিংবা বায়বীয় কোনো কারণে কথাচক্রে অংশ নেন। তুমুল ঝড় তোলেন। শেষে নানা এনার্জীয়-কর্পোরেট ব্যক্তির পিট চাপড়ে বলেন-'ভয় নেই হে দেখা হবে রাডিশনে।'
আমরা ক্লান্ত হই।
এই সব বিপ্লব দেখে দেখে আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই। আমাদের ঘুম পায়। মাঝে মাঝে জল ছাড়াই এ্যাবোমিন গিলতে হয়। তবু বমি থামে না। পাকস্থলি খালি হয়ে যায়। কামুক কুত্তার মতো ভারী লালা মুখ চুইয়ে পড়তে থাকে।
আমাদের অধিকার আদায়ের পরদিন আর একটি দৃশ্যের অবতারণা ঘটল। এটা অধিকার আদায়ের পরের দৃশ্য। বেয়াদবরা জড়ো হয়েছিলাম মধুর ক্যান্টিনে। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ক্যান্টিন। বামগ্রস্থ পোস্টার। তাতে লেখা ছিল-' অবৈধ বেতন ফি কমাও, ছাত্রদের দাবি মেনে নাও।'
পোস্টারের প্রদর্শনী দেখে সব বেয়াদবরাই হেসে ওঠেছিল। অদ্ভূত সে হাসি। পৃথিবী সে হাসি মনে রেখেছে কিনা জানি না। মার্কস বেঁচে থাকলে ঠিকই টের পেতেন। আর বামগ্রস্থ বুদ্ধিজীবীরা! আহা বুদ্ধিজীবী! আহা মধুর ক্যান্টিন!
বি.দ্র: পাঠক, লেখাটিকে ফিকশন, গল্প-আগল্প, কবিতা-আকবিতা, প্রভৃতি হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। এটার চরিত্র অত্যন্ত মধ্যবৃত্তীয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



