somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ২ টাকার আত্মকাহিনী।:|:|:|

১২ ই মার্চ, ২০১০ ভোর ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্সিটিতে আমাদের ৭ জনের একটি গ্রুপ আছে। আমরা এই ৭ জন একসাথেই ঘুরে ফিরে বেড়াই আর মজা করি। গত বছর মার্চে আমাদের ৪র্থ সেমিস্টার ফাইনাল শেষে আমরা ঠিক করলাম বগুড়া যাবো বেড়াতে, মহস্থানগড় সহ অন্যান্য জায়গা দেখতে। থাকব বন্ধু তমালের বাসায়। পরীক্ষার পরদিন (২রা মার্চ) সকালে রওয়ানা দিলাম বগুড়ার উদ্দেশ্যে। সেদিন সারাদিন বগুড়া শহরে ঘুরলাম আর মজা করলাম(বগুড়া শহর এত উন্নত হবে আমি আশা করিনি)। হাড্ডিপট্টির চা এর স্বাদ এখনও ভুলিনি। B-)

পরদিন গেলাম মহস্থানগড় ঘুরতে, আমরা ৭ জন আর তমালের দুই বন্ধু মিলে মোট ৯ জনের দল। মহস্থানগড় ঘুরে, এর সংলগ্ন জাদুঘর এবং গোবিন্দ ভিটা ঘুরে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। এরপর যাবো বেহুলার বাসরঘরে, ৯ জন অবিবাহিত ছেলে, বাসর ঘরে ঘুরে যদি ভাগ্য খোলে কিছুটা! ;)। মহস্থানগড় এর জাদুঘরের সামনে থেকে ভ্যান ঠিক করতে গেলে চাইলো ১০ টাকা প্রতিজন। আমাদের সাথে বগুড়ার যারা ছিল তারা বললো না, জন প্রতি ৮ টাকা। কোনো ভ্যান ওয়ালাই রাজি হল না। আমরাও ১০ টাকা দিবো না, তারাও কমাবে না। পুরোপুরি অচলাবস্থা /:)। এমন সময় কোনো ১ জন প্রস্তাব দিলো যে ভ্যান ওয়ালা যখন মাত্র ১০ টাকা চাচ্ছে তখন নিশ্চয় খুব বেশী দুরের রাস্তা নয়, চল হেঁটেই যাই। সাথে সাথে বিপুল ভোটে প্রস্তাব গৃহীত! আরেকটি প্রস্তাব এলো যে মহস্থানগড়ের দেয়াল ঘেঁষেই তো বেহুলার বাসরঘর, আমরা রাস্তা দিয়ে না যেয়ে দেয়ালের উপর দিয়ে হেঁটে যাবো। বলাবাহুল্য যে এটিও গৃহীত!

শুরু করলাম আমাদের যাত্রা। প্রথম প্রথম ভালোই লাগছিল, নিজেদের বেশ হাইকার হাইকার মনে হচ্ছিল :D। কিছুদুর যাওয়ার পর দেখি কাহিনি অন্যরকম। যে সব জায়গায় সচরাচর দর্শনার্থীরা যায় না, সে সব জায়গায় কিছুদুর পর পর ই দেয়াল ভাঙ্গা। বারবার নেমে যেতে হচ্ছিল দেয়াল ছেড়ে। এভাবে দেড় ঘন্টা হাঁটার পর ও দেখি দেয়ালের উপরেই আছি, বাসর ঘরের কোনো খবর ই নেই। শুরু করলাম বগুড়ার ছেলে তিন জনকে প্রশ্ন, ”আর কত দূর?”। “কি জানি, কখন ও দেয়ালের উপর দিয়ে আসি নাই!” দুপুর রোদের মাঝে খালি পেটে এভাবে হাঁটতে আর কত ভালোলাগে। মহস্থানগড়ে বেড়ানোর আনন্দ ততক্ষণে গায়েব।অবস্থা কেরোসিন। আরো আধা ঘন্টা হাঁটার পর মেইন রোডের ধারে পৌঁছালাম। দেয়াল থেকে নেমে শুরু করলাম রাস্তা দিয়ে হাঁটা। একটি চায়ের দোকান দেখে যেন মরুভুমিতে পানি পাওয়ার মত অবস্থা। যাকেই জিজ্ঞেস করি, কতদুর। “ আর একটু সামনেই”, সবার জবাব। সেই আশায় আরো আধা ঘন্টা হাঁটলাম আর বগুড়ার ভ্যান ওয়ালাদের চরিত্রের গুণকীর্তন করতে লাগলাম, “এত দুরের রাস্তা এত কম টাকায় আস্তে চাইছিল জন্যে”। “শালারা ভাড়া ১০ টাকা চেয়েই তো ঝামেলা করছে, ২০ টাকা চাইল না কেন, ২০ টাকা চাইলেই বুঝতাম যে অনেক দূর, ভ্যান এ করেই যাই!X((” আমাদের সবার উপলব্ধি। অবশেষে আর যখন পা চলে না তখন ২ টা খালি ভ্যান দেখলাম। ওখান থেকে জন প্রতি ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে গিয়ে পৌঁছালাম বাসরঘরে!
সেদিন ওখান থেকে ফিরে সবার অবস্থা শেষ। মাত্র ২ টাকার জন্য একেবারে জানের উপর দিয়ে তুলে দিছি! তখন মানিব্যাগ এ একটি মাত্র ২টাকার নোট ছিল, ওটা আজও রেখে দিছি!
বাসায় এসে যখন গল্প করলাম তখন থেকে শুরু আরেক বিপত্তি, কিপটা তকমা গায়ে লেগে গেছে। কথায় কথায় বাবার খোঁচা, “তুই তো ২ টাকা বাঁচাতে ৩ ঘন্টা হাঁটিস, তুই আর কি খরচ করবি :((।”
এই সেমিস্টার শেষে আবার সিলেট যাওয়ার প্ল্যান আছে। দেখি ওখানে আবার কি হয়!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×