রাজা আগমেমনন । ট্রয় যুদ্ধের বিজয়ী নৃপতি। ট্রয় বিজয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই তাকে স্বগৃহে প্রাণ দিতে হয় । তাকে হত্যা করে তার স্ত্রী ক্লাইতেমেনস্ত্রা। কিন্তু,কেন এই হত্যাযজ্ঞ?
এই হত্যার পিছনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য আছে। ট্রয় যুদ্ধের জন্য আপন কন্যাকে বলি দেয় আগামেমনন। ট্রয় যুদ্ধর জন্য সজ্জিত রণতরীগুলো প্রয়োজনীয় বাতাসের অভাবে যাত্রা করতে পারছিল না। দৈববাণী আগমেমননকে তার মেয়ে ইফিজিনিয়াকে বলি দিতে বলে। তবেই রণতরীগুলো প্রয়োজনীয় বাতাস পাবে। ক্লাইতেমেনস্ত্রার কাছে বার্তা পাঠান আগমেমনন। মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, এই কথা বলে ইফিজিনিয়াকে পিতার কাছে পাঠাতে বলে যুদ্ধের নেশায় উন্মাদ নৃপতি। ইফিজিনিয়া এলে পিতার আদেশে তাকে বলি দেওয়া হয়।
মায়ের মন ক্লাইতেমেনস্ত্রার। এই বলিদান সে সহজে মেনে নিতে পারেনি । সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিতে সে সংকল্পবদ্ধ হয়। এই প্রতিশোধের কাহিনী নিয়ে নাটক লেখেন (AESCHYLUS)। তার অমর কর্ম ট্রিলজির একটি আগামেমনন।
নাটকে কোরাসের ব্যবহার করেছেন এস্কিলাস অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। আয়রনি ছড়িয়ে রয়েছে নাটকের সর্বত্র। পেঙ্গুইন ক্লাসিকসের ইংরেজী ভার্শনে ফিলিপ ভেলাকট বেশ দক্ষতার সাথেই ইংরেজীতে আয়রনিগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন।
নাটকের প্রথম অংকেই রয়েছে আয়রনি, যেখানে বলা হয়েছে:
To speak from Troy and utter one word, 'Victory!'-
Great news for Clytemnestra,
আসলেই কি আগমেমননের জয় চেয়েছে রাণী ক্লাইতেমেনস্ত্রা? কন্যা-হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উন্মুখ সে। প্রহরী যে-অর্থে বলেছে সে-অর্থে রাজার আগমনের প্রতীক্ষায় নয় সে। প্রতিশোধের নেশায় সে রয়েছে আগামমননের আগমণ প্রতীক্ষায়।
রাজ্যজয়ের নেশায় পাগল রাজা আগমেমনন। প্যারিস হেলেনকে ভাগিয়ে নেয়ায় ট্রয় জয়ের সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাননি। সমুদ্রদেবতাকে খুশী করতে আপন কন্যাকে বলি দিতে হাত কাঁপেনি তার। আপনারা যারা "ট্রয়" ছবি দেখেছেন তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। সিনেমায় আগামেমননের লোলুপতার পরিচয় পাওয়া যায় এচিলিসের সাথে তার দ্বন্দের দৃশ্যে।
এই নাটকের আরেকটি চরিত্র ভবিষ্যদবক্তা কাসাণ্ড্রা। আগামেমননের হত্যা এবং রক্তক্ষরণ সে দিব্যচক্ষে আগেই দেখতে পায়। কিন্তু কিছু করার নেই তার। কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনা। এপোলো যদিও তাকে ভবিষ্যত বলার ক্ষমতা দেয়, কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনা। এপেলো যদিও তাকে ভবিষ্যত বলার ক্ষমতা বর হিসেবে প্রদান করে, কিন্তু তার কাছে কাসাণ্ড্রা নিজেকে সমর্পণ না করায় শাপ দেয়। শাপের ফলস্বরূপ কাসাণ্ড্রার ভবিষ্যদবাণী কেউ বিশ্বাস করেনা। আগামেমনন নাটকে লোকজন তাকে পাগল ঠাউরায়।
গ্রীক ট্রেজেডীর অন্যতম প্রধান থিম হচ্ছে প্রতিশোধের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। "The killer will be killed"-হত্যাকারীকে হত্যার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মন্ত্রে দিক্ষিত ক্লাইতেমেনস্ত্রা। এজন্য এজিসতাসের সাথে হাত মেলায সে। স্বামীকে হত্যার মাধ্যমে ক্লাইতেমেনস্ত্রা কন্যার হত্যার বদলা নেবার পথে আগামেমনন যেন দেবতাদের রোষের শিকার হয় তার ক্ষেত্রও প্রস্তুত করে সে! এজন্য যুদ্ধজয়ী বীরের জন্য দেবোচিত অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করে ক্লাইতেমেনস্ত্রা।
প্রথমে এধরণের দেবোচিত সংবধ্র্না গ্রহণে আগামেমনন অসম্মত ছিল। কিন্তু ক্লাইতেমনেস্ত্রার পীড়াপিড়িতে সে রাজি হয়। হয়তো কাসাণ্ড্রাকে উপপত্নি হিসেবে গ্রহণের কারণে তার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। দেবোচিত সংবধ্র্না গ্রহণের মাধ্যমে সে দেবতাদের রোষানলে পতিত হয় এবং তার পতন নিশ্চিত হয়।
আগামেমননের সাথে কাসাণ্ড্রাকেও হত্যা করা হয়। অবশ্য পরে ক্লাইতেমনেস্ত্রাকে এই হত্যাযজ্ঞের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় নিজের প্রাণ দিয়ে। সে আরেক কাহিনী।
ওলি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী
[email protected]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




