somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী অধিকার লংঘন ও প্রতিকার: ফতোয়া

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামের ইতিহাস প্রথম

হযরত ওসমান (রা.)-এর খেলাফত আমলে মাজাল্লাতু আহকামিল-আদালিয়া নামক গ্রন্থের সংকলন ফতোয়ার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি৷কেননা, ১৩৮৬ হিজরি সনে চার মাযহাবের তাকলিদের গন্ডির ভেতর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ইবন শুবরূমা-এর মতবাদের আলোকে ফতোয়া প্রদানের এটাই সর্বপ্রথম ঘটনা৷অতঃপর ১ঌ২ঌ খৃ. ও ১ঌ৩৬ খৃ. মিসরে তাকলিদের বন্ধনমুক্ত হওয়ার প্রয়াসে চালানো হয় এবং তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মাসালিহ-ই মুরসালা অর্থাত্‍ জনকল্যাণ মূলক বিধান ও প্রগতিশীল ইসলামি জীবনযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে সকল মুসলিম ফিকহ শাস্ত্র পন্ডিতের অভিমতকেই ফতোয়া প্রদানের ভিত্তিরূপে গ্রহণ করা উচিত৷

উপমহাদেশে প্রথম

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ধর্মীয় বিধানাবলির আলোকে যে ফতোয়া প্রদান করা হয়েছিল তা সিদ্ধান্তটি ছিল নারী-সমাজের জন্য৷একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল যে অনেক স্ত্রীর স্বামীই অনেক সময় বছরের পর বছর নিরুদ্দেশ থাকেন, তাদের আর হদিশ পাওয়া যায় না৷ সে ক্ষেত্রে ঘরে স্ত্রীগণ বছরের পর, বছর কষ্ট করতে থাকেন৷এটা এক ধরনের নারী-নির্যাতন৷এই অবস্থায় নারীরা ছিল খুবই অসহায়৷ পুরুষরা বাধ্য করেছিল নারীদের এ অবস্থা মেনে নিতে৷ তারা অন্যত্র বিয়ে করতে পারতেন না৷উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শাফী দেওবন্দী তাঁর রচিত কিতাব 'আল-হীলাতুন-নাজিয়া' (করাচী) ফতোয়া গ্রন্থে সিদ্ধান্ত দেন যে, "যে স্ত্রীর স্বামী লাপাত্তা-নিরুদ্দেশ, সেই স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে৷" স্বাভাবিকভাবেই যুগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত পুরুষদের মনোবেদনার কারণ হয়েছিল৷ পুরুষদের ধারণা ছিল, তারা লাপাত্তা বা নিরুদ্দেশ যা-ই থাকুন, ঘরে তাদের স্ত্রী অটুট থাকবে৷ উপরিউক্ত ফতোয়ায় সামাজিক এই ধারণায় ছেদ ঘটায়৷

বাঙ্গালীর ইতিহাসে প্রথম

"ফতোয়া" বিষয়টি মুসলমানদের মনে হলেও ফতোয়াবাজির বিষয়টি শুধু মুসলমান সমাজে নয়৷আধিপত্য বিস্তার অথবা যে কোন রকম নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষমতালিপ্সুরা যুগে যুগে ধর্মের আবরণকে ব্যবহার করেছে৷

বাঙ্গালীর সমাজে ফতোয়াবাজির প্রথম ঘটনা ঘটে ৬০০ থেকে ৮০০ সালের দিকে, যখন সেই প্রাচীনকালে সেন বংশের রাজত্ব চলছিল এই বাংলায়৷সেনরা ছিল প্রবল মৌলবাদী৷ বর্ণবাদ প্রথাও বাংলার সমাজে চালু করেছিল সেন শাসকরাই৷সেনরা বাঙ্গালি জাতিকে জাত-পাতের ফতোয়া দিয়ে কম করে হলেও ছত্রিশটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছিল৷বিভিন্ন ছোঁয়া ও স্পর্শ এবং নিয়মের নামে সামাজিক জীবনে ধর্মীয় তত্ত্বকে সেন রাজারা ব্যবহার করে ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালি জাতিকে প্রথমবারের মতো বিভক্ত করে৷

প্রবল মৌলবাদী শক্তি সেন-ব্রাহ্মণরা ধর্মীয় তত্ত্বকে সামনে এনে তারা সৃষ্টিকর্তার মুখপাত্র হিসেবে নিজেদের জাহির করা শুরু করে৷ ঋকবেদ থেকে উদ্ধৃত করে তারা ফতোয়া প্রচার করে যে, তাঁরা দেবতার হয়ে কথা বলতে পারেন৷

মুসলমান সমাজের পীরবাদ এই তত্ত্ব দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছিল৷ একদল পীর এই ধারণার সৃষ্টি করে যে তাঁদের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ সম্ভব৷

প্রাচীন আমলে ব্রাহ্মণবাদী মৌলবাদ বাঙালির প্রাক-স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করে৷বাংলাভাষা, যা ছিল সাধারণ প্রাকৃতজনের ভাষা সে ভাষাও কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷বাংলাভাষাকে তাঁরা মনে করেছিলেন অপাঙক্তেয়, তাঁরা এই ভাষায় ধর্মকথা শোনাও মহাপাপ বলে ঘোষণা করেন৷এখানেই তারা থেমে থাকেননি৷সকল শ্রেণীর নাগরিকের জন্যেই বাংলা চর্চা ফতোয়া দ্বারা নিষিদ্ধ করে বলা হয়, যে এই ভাষায় ধর্ম-কথা শুনবে সে-ই "রৌরব" নামক নরকে (সবচেয়ে কঠিন দোজখে) যাবে৷বাঙালির জীবনে ফতোয়া-বাজদের প্রথম ফতোয়াটি হুবহু নিম্নরূপ:

অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতানি চ ৷

ভাষায়াং মানব; শ্রুত্বা রৌরবং নরকিং ব্রজেত্‍ ৷

পাকিস্তানের প্রথম


২৮ আগষ্ট ১ঌ৭০ মাওলানা মওদুদী বলেন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের কখনো ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের অভিপ্রায় ছিল না৷ তাঁরা হিন্দুদের সম্পত্তি এবং এমনকি পাকিস্তানে যেসব মেয়েদের ফেলে যাওয়া হয়েছে তাদের লুট করার কাজে নিয়োজিত ছিল৷তিনি বলেন, ১ঌ৪১ সালেই তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের ইসলামি রাষ্ট্র হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷পাকিস্তানের কাফিরানা সরকারের মোকাবেলা করাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত৷

মাওলানা মওদুদীর ধর্মরাজ্য ও ধনী-দরিদ্র

৩০ অক্টোবর ১ঌ৭০ মাওলানা মওদুদী লাহোরে ফতোয়া দেন, আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই দুনিয়ায় ধনী-দরিদ্র আছে৷সরকারি দৈনিক পাকিস্তান মাওলানা মওদুদীর উপরিউক্ত বক্তব্যের আলোকে "মাওলানা মওদুদীর ধর্মরাজ্য বনাম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান" শীর্ষক এক উপসম্পাদকীয় লেখে৷ এতে বলা হয় : মাওলানা মওদুদীর প্রস্তাবিত ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত৷কিন্তু তাদের কথাবার্তা এবং আচরণে মনে হয় মধ্যযুগীয় থিয়োক্র্যাসীই জামায়াত ইসলামীর সকল স্লোগানের সারকথা৷পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্যে একটি স্বতন্ত্র বাসভূমি প্রতিষ্ঠাই ছিল জিন্নাহর স্বপ্ন৷ এই সত্য তার অগোচরে ছিল না যে বিংশ শতাব্দীতে পুরোহিততন্ত্র বা মোল্লাতন্ত্র একেবারেই অচল৷

মাওলানা মওদুদীর ধর্মচিন্তা অথবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে একমত না হলেই তা ইসলামের খেলাপ হয়ে যাবে এই জবরদস্তি জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি৷

মুক্তিযুদ্ধে ফতোয়াবাজি

১ঌ৭১ সালে ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরের জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন বাঙালী মাওলানা লোকমান আহমেদ আমীমী৷ অকারণে আবেগে আজ অনেক আলেমই পাকিস্তানের প্রতি মোহগ্রস্ত৷ কিন্তু পাকিস্তানিরা এই বাঙালি আলেমদের সেদিন মুসলমান তো নয়ই, মানুষও মনে করেনি৷ঢাকার মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ বাঙালি ইমামের পিছনে নামাজ নাজায়েজ বলে ফতোয়া দেয়া হয়েছিল৷

আলবদর হচ্ছে সাক্ষাত্‍ আজরাইল

আজরাইল আল্লাহর একজন ফেরেস্তা৷ তার কাজ-মানুষের প্রাণ সংহার এবং একমাত্র আল্লাহর নির্দেশেই তা ঘটানো হয়৷কিন্তু ১ঌ৭১ সালে জামায়াতে ইসলামের আলেমরা তাদের প্রতিষ্ঠিত আলবদল বাহিনীকে নিজেরাই আল্লাহর ফেরেস্তার সাথে তুলনা করে ফতোয়া দেয়৷এটা ছিল নিশ্চিত এক 'শেরেক' যা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দাঁড় করায়৷

বাংলাদেশ আমল ফতোয়াবাজদের উত্থান

১ঌ৭৫ সালের মার্চ মাসে 'দৈনিক সংবাদ' পত্রিকার সাহিত্য পাতায় কবি দাউদ হায়দার-এর 'কালো সূর্যের কালো জ্যোত্স্নায় কালো বন্যায়' নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়৷ কবিতাটির বিষয়-ছিল ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী৷ এই ইস্যুকে সামনে এনে এই প্রথম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দেশে তাদের শক্তি প্রদর্শন করে এবং বায়তুল মোকররম মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়৷কবি দাউদ হায়দার মোল্লাবাদী ফতোয়াবাজদের দ্বারা 'মুরতাদ' ঘোষিত হন৷সেই থেকে অদ্যবধি কবি দেশ ছাড়া৷

সামরিক শাসন আমল

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশে সামরিক শাসকরা পাকিস্তানি কায়দায় ক্ষমতা দখলের পর সর্বপ্রথম তারা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সিরাত মাহফিল আয়োজনের নামে বাংলাদেশকে মোল্লাবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার শপথ নেয়৷ বিমান বাহিনীর তত্কালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি তাওয়াব এত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মৌলবাদীদের প্রতি রাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন দেন৷এরপর একের পর এক বিভিন্ন সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে জেনারেলরা বাংলাদেশকে সামরিক-ফতোয়ার দেশে পরিণত করেন৷দেশের দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংগ্রামী পটভূমির সঙ্গে সম্পর্কহীন এই সামরিক শাসকরা দেশকে ফতোয়াবাজদের আস্তানায় পরিণত করতে অপচেষ্টা চালায়৷

শহীদ মিনারে আল্পনা আঁকা ইসলাম বিরোধী


১৪ জানুয়ারী ১ঌ৮৫ ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা বলে, শহীদ মিনারে আল্পনা অাঁকা ও ফুল দেওয়া মুসলমানের জন্য নাজায়েজ৷মৌলবাদী গোষ্ঠীরা এই ফতোয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়৷

নব্বই দশক

নব্বই দশকের শুরুতে ফতোয়ার রাজনীতি ঘুরপাক খায় যেসব বিষয় নিয়ে তার মধ্যে প্রধান প্রধান ঘটনা ছিল:

* জামায়াত নেতা গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রশ্ন৷

*সমন্বয় কমিটি ও ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলত প্রশ্ন৷

* মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধ-অপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ৷

* ড. আহমদ শরীফ ও প্রফেসর কবীর চৌধুরীর দুটি মন্তব্য৷

* ভারতের বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনা৷

*ড. আহমদ শরীফ ও কবীর চৌধুরী মুরতাদ ঘোষিত

ড. আহমদ শরীফের একটি বক্তব্য নিয়ে নব্বই দশকের প্রথম দিকের সময়টায় বেশ বিতর্কের উত্তাপ থাকে৷ ধর্মপন্থী উগ্র দলগুলো দাবি করে ড. শরীফ একটি সেমিনারে বলেছেন, "আস্তিকের চেয়ে নাস্তিক ভালো"৷

এই কথা নিয়ে সারাদেশে তুলকালাম কান্ড ঘটে যায়৷ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিন মিছিল, সভা চলতেই থাকে৷ এক ধরনের ধর্মীয় উণ্মাদনায় সমগ্র দেশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে৷ বায়তুল মোকাররমের খতিবও এই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন৷

জামায়তকে ইসলামি ও অন্যান্য দলের ধর্মপন্থীরা ড. আহমদ শরীফকে "মুরতাদ" ঘোষণা করে তাকে মৃতু্যদন্ডও দেয়৷ এর আগে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করেও অনুরূপ "মুরতাদ" ফতোয়া দেওয়া হয়৷ ধর্মীয় রাজনীতিকরা দাবি করেন, "কবীর চৌধুরী বলেছেন, আজানের শব্দ ভালো লাগে না"৷ এরপর একে একে কবি সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান, তসলিমা নাসরিনকেও মুরতাদ আখ্যায়িত করা হয়৷

লেখক হুমায়ুন আহমদও মুরতাদ ঘোষিত

জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমদও ১০ ডিসেম্বর ১ঌঌ৪ মোল্লাবাদী ফতোয়াবাজদের দ্বারা মুরতাদ ঘোষিত৷ হুমায়ন তাঁর "শ্রাবন মেঘের দিন" নামক উপস্যাসে উল্লিখিত একটি বক্তব্যের কারণে এই ফতোয়ার শিকার হন৷

ফতোয়ার কবলে বেসরকারি সংস্থা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানারকম আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত হলেও এই প্রথম তারা দেশের রাজনীতি-নির্ভর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়৷সুনির্দিষ্ট কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনতে পারলেও ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠী ব্রাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পে বাধার সৃষ্টি করে নানারকম ফতোয়া দেয়৷

এনজিও বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিতে তারা সরাসরি মসজিদকেও ব্যবহার করেন৷ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খুত্‍বা পড়ানোর সময় খতিব তাঁর ভাষায়, জাতিদ্রোহী এনজিওদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান, জানিয়ে বলেন, নীরব থাকলে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মতো এদেশের মুসলমানদেরও ধ্বংস করা হবে৷ তখন আর কিছুই করার থাকবে না৷

সর্বশেষ

নওগাঁ জেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের আতিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সহিদা বেগম৷একবার সাইফুল সহিদাকে উদ্দেশ্য করে রাগের মাথায় তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে৷এরপর গ্রাম্য মাতব্বর হাজী আজিজুল হক ফতোয়া দেন, সাইফুল-সহিদার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে৷তিনি সাইফুলের মামাতো ভাই শাসসুলের সঙ্গে জোর করে সহিদার বিয়েও দিয়ে দেন৷ কিন্তু সাইফুল বা সহিদা কেউই বিচ্ছেদে আগ্রহী নয়৷ খবরটি সংবাদটি প্রকাশিত হলে বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী এবং বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে এই ফতোয়ার সম্পর্কে মামলা হয়৷ গত ১৪ ও ৩১ ডিসেম্বর ২০০০ মামলার শুনানীর পর গত ১ জানুয়ারী ২০০১ রায়ে ফতোয়ার ক্ষতিগ্রস্তদের দাম্পত্য জীবন অক্ষুণ্ন রাখা ও ফতোয়াদানকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়৷বিরুদ্ধে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মধ্যস্থতায় ডঃ কামাল হোসেন ও ব্যারিষ্টার তানিয়া আমির মামলা পরিচালনা করেন৷

পীরবাদ

বাংলাদেশে ফতোয়াবাজদের পাশাপাশি পীরদের একটি ঐতিহাসিক অবস্থান ছিল৷ মধ্যযুগে লোকজ মানুষের সংস্কৃতিতে "সত্যপীর" (হিন্দুদের মধ্যে সত্য নারায়ন) বলে একটা বিষয় বেশ জনপ্রিয় ছিল৷ কিন্তু উনিশতম আশির দশকে বাংলাদেশে পীরবাদ একটি ব্যবসায় পরিণত হয়৷ দেশের একজন বিশিষ্ট গবেষক এই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছেন: ইসলামে পীর বলে কিছু নেই, তবুও এদের উদ্ভব ঘটেছিল এবং এরা একসময় শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিল দারিদ্রজনের, কিন্তু এখন পীরেরা সবাই ধনপতিও তাদের উত্তরাধিকারীরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, পাজেরোবাহিত৷ এদের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই৷অধিকাংশ পীরের জীবনী সংগ্রহ করলে দেখা যাবে, তাদের অতীত ও বর্তমান জীবন কুত্‍সিত, কলন্কিত; কিন্তু তারা চাতুরিপূর্ণ প্রতারণাশক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে নিজেদের৷
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×