আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ছাত্র আন্দোলনের ফলেই ১৯৫২, ৬৬,৬৯,৭১,৯০তে আমরা সাফল্য পেয়েছি। বিশ্বের মানচিত্রে রচিত হয়েছে লাল সবুজ পতাকা।
আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। লাখ শহীদের এই দেশে ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন হয়েছে। এই আন্দোলন গুলোর প্রাম্ভিক মজুদ হয়ত এই দেশের ছাত্র সমাজেরই অবদান। তবে কি তা ছিল ছাত্র এই অসুস্হ রাজনীতি? প্রশ্ন সকলের কাছে।
দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেবার লক্ষে যে ছাত্র রাজনীতির কথা বলেন নেতাগন তা কি আদৌ বলবৎ? শুধু যুদ্ধে নামাতে চান তারা ছাত্রদেরকে? আর নিজেদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করতঃ রাজনীতি মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোঁজেন। এটা কোন বিচার?প্রশ্ন আবারও সকলের কাছে।
“সারকারী মাল, দারিয়া মে ঢাল”!! এই মর্মে ক্ষমতা পেলেই সকল সরকারী হল তাদের দখল। তাহলে স্বায়িত্বশ্বাসিত ব্যপারটা আসলে কি? মানুষকে তার মৌলিক চাহিদাগুলো বুঝিয়ে দিতে হবে রাজনীতির এই কঠোর নীতি গুলোকি আন-রেজিষ্টার্ড? তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান মৌলিক চাহিদা কি? শিক্ষা নাকি রাজনীতি? আমি জানি না কি?
আমরা স্বাধীন জাতি, স্বাধীনতা আমাদের গৌরব। আসলে কি তাই? ছাত্র নেতা-নেত্রীদের কাছে প্রশ্ন: কখনো কোন সাধারন ছাত্র-ছাত্রীকে মন থেকে জিজ্ঞাসা করেছেন; যে "আমরা যা করি কোনটা তোমাদের পছন্দের আর কোনটা নয়?" তাহলে কি তারা আদৌ স্বাধীন?
যখন যে দল, হল গুলোও যেন তাদেরই দখল। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় দরিদ্র সীমানার নিচে আর তাদের ছেলেমেয়ে গুলোকেই তারা সম্পদ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার সাথে সাথে আয়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান মনে করে একটু ভাল শিক্ষার জন্য সরকারী-স্বায়িত্বশ্বাসিত বড়বড় বিদ্যাপিঠে পাঠায়। তাদের সকলের তো আর বড়লোক মামা খালু নেই তাই বাধ্য হয়ে শত কষ্টে হলগুলোকে সহায় করে নেয় তারা। একজনের বিছানায় দু’জন অথবা বিছানা বিহীন, অতিষ্ঠ গরম আর থরথরে শীত, মশাদের রাজত্ব; যেন তাজা রক্ত গেলার উৎসব। খাবারের কথাটা নাই বা বলল কেউ। তারপর ও মরার উপর খারার ঘাঁ। সেশনজট, অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ, জীবন ঝুঁকি আর রাজনীতি তো আছেই। যখন ছাত্র-ছাত্রীদের পেটে ভাল খাবার, লেখাপড়ার সরঞ্জামাদি ও পরীক্ষার ফি থাকে না তখন কই থাকে রাজ্য আর কই থাকে নীতি?
আমরা প্রায় সকলেই বলে থাকি “একদল অসাধু রাজনীতিবিদ ছাত্রসমাজকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে রণসাজে সাজিয়ে বায়োঁস্কোপ তৈরি করে” কিন্তু তারা কারা? সংখ্যায় কত? তা বলে না কেউই। আপনা ভাই এ লড়াই। কার সাথে কার লড়াই? কিসের জন্য এই লড়াই? কে জানে এর সঠিক উত্তর!! পড়াশোনার গায়ে দশ কেজি ওজনের তালা ঝুলিয়ে ছাত্ররা রাজপথে নামে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে।
মরণ যুদ্ধ করতে করতে জীবন যুদ্ধই করা হয় না অনেকের। এই একটু আগে রাজার যে প্রজা(ছাত্র)টি গুলি বিদ্ধ হল অথবা গুরুতর আহত হয়ে যে আর্ত চিত্কারটি দিল তা কি শুনতে পেয়েছে তারা?যাদের জন্যই এই আয়োজন। না শুনেনি। একটু ভাবুন তো আপনি দেখছেন আপনার ঠিক সামনেই আপনার কোন সন্তান অথবা ভাইটির রক্ত ঝরছে গলা কাটা গরুর মত। তাঁর হৃদয়ে স্পন্ধনের আর্তনাদ কি শোনতে পান?
আজকাল অনেক ছাত্রনেতারা আসল ছাত্রের বেশে থাকে।এর মানে জানেন? তাদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়ী, কেউ এলাকার প্রভাবশালীদের কেনা গোলাম অথবা পেশাদার খুনী।
লেখাটি পরতে পরতে অনেকেই হয়ত বলবেন ছাত্ররাজনীতির দরকার আছে। তাদেরকে বলছি মা আর মামী এক নয়।ঠিক তেমনি আন্দোলন ও রাজনীতি এক নয়।
দেশ ও দশের জন্য নীতি অবশ্যই থাকবে। রাজনীতি তার আপন গতিতে চলবে।
ছাত্ররাজনীতি নামের ভ্রান্ত শিক্ষা দিয়ে সুন্দর ছাত্র জীবনটাকে নষ্ট করবেন না। কলম আর খাতার বদলে অস্ত্র তুলে নিতে দিবেন না। কারন সবাই মানুষের জন্ম। ওদের কেউ আমার আপনার ভাই, স্বজন অথবা সন্তান।পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সাফল্যের প্রধান কারন রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। আসুন; দেশের ছাত্রসমাজকে কুলষ মুক্ত করি তাদের সু-শিক্ষায় প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করি, দেশ ও দশের ভাল এমনিতেই হবে।
মাঝে মাঝে যখন দেখি ছাত্র রাজনীতির নোংরা খেলায় কোন মায়ের ক্রন্দনরত মুখ অথবা বাবার বুকফাটা আর্তনাদ তখন নিজেকে ছাত্র পরিচয় দিতে ঘিন্না হয় । কলমের বদলে অস্ত্র দিয়ে প্রতাপক্ষকে আঘাত... এ আবার কেমন ছাত্র?? না!! এরা ছাত্র হতেই পারে না। ছাত্ররা কখনই এমন।।হয় নাহ।। কখনো না...
বিঃ দ্রঃ- এই লেখাটি কোন নির্দিষ্ট দল বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য, কটাক্ষ অথবা উষ্কানিমূলক নহে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




