আফ্রিকা মহাদেশে ধর্ম
এবং ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েদের
ওপর চলে নানা ধরনের অমানুষিক
নির্যাতন৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদ তাদের
মধ্যে একটি৷ তবে মালিতে সম্প্রতি এর
বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন নারী ও
ধর্মীয় নেতারা৷
মেয়েরা যেন সহবাস উপভোগ
করতে না পারে বা সতীত্ব রক্ষার
নামে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের
দেশগুলোতে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম
করা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক
হিসেব অনুযায়ী, ঐ দুই মহাদেশের
২৯টি দেশের প্রায় ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন
নারী অমানবিক এই ঘটনার শিকার
হয়েছেন৷
ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের
কারণে তাদের শরীরে তাত্ক্ষণিক ও
দীর্ঘমেয়াদী নানান
সমস্যা দেখা দেয়৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই
অমানবিক কাজটি করানো হয় অনভিজ্ঞ লোক
দ্বারা৷ এছাড়া, কোনো ধরনের
অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই এ
কাজটি করা হয়ে বলে এতে যেমন প্রচুর
রক্তপাত হয় তেমন ব্যথাও হয় ভীষণ৷
বাচ্চা প্রসবের সময় এই
নারীরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেন
তা ভাষায় বলে বোঝানো মুশকিল৷ এর
ফলে অনেকে মা হবার ক্ষমতা পর্যন্ত
হারিয়ে ফেলেন৷ অনেকে অত্যধিক
রক্তক্ষরণে মারাও যায়৷
মালির অধিবাসী ডিকো অনগোয়িবা যখন ছোট
ছিলেন, তখন তাঁকেও এই পরিস্থিতির
মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এবং এ
বিষয়ে আলোচনা ছিল নিষিদ্ধ৷ এখন তাঁর বয়স
৪০ বছর৷ অথচ মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর
যৌনাঙ্গচ্ছেদ হয়েছে৷ নিজের প্রথম ৬ মেয়ের
ক্ষেত্রেও অনগোয়িবা এই কাজ করেছেন৷ কিন্তু
এখন তার উপলব্ধি হয়েছে, এর ফলে সন্তান
জন্মদানে বেশ কষ্ট হয় তাঁর৷ আর তাই
তার ছোট দুই মেয়ের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গচ্ছেদ
না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, এ
সিদ্ধান্ত খুব সহজ নয়, কেননা সমাজের
দ্বারা প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয়
থাকে৷ আর তিনি না করলেও সমাজের লোকজন
জোর করে তাদের করে দিতে পারে৷
বৃহস্পতিবার ছিল ‘জিরো টলারেন্স টু জেনিটাল
মিউটিলেশন' বা আন্তর্জাতিক যৌনাঙ্গচ্ছেদ
বিরোধী দিবস দিবস৷ মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের
বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে বেসরকারি সংস্থা টোস্তান
সেদিন মালির রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে৷ এই সংগঠনটিতে আফ্রিকার
আটটি দেশের ৭ হাজার কর্মী কাজ করেন৷
টোস্তানের
প্রতিষ্ঠাতা মলি মেলচিং জানান, এই
আয়োজনের ফলে অনেক মা তাদের সন্তানদের
এই অমানুষিক নির্যাতনের হাত
থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন৷
তবে তিনি বলেন, এ জন্য সমাজে নারীর
প্রতি সম্মান বাড়ানোটা খুব জরুরি৷ এমন
সমাজ
গড়ে তুলতে হবে যেখানে অভিভাবকরা তার
সন্তানটিকে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে দিবেন
না এবং যিনি ঐ নারীকে বিয়ে করবেন তিনিও
চাইবেন যে মেয়েটির যৌনাঙ্গচ্ছেদ
না করা হোক ৷
এদিন অনগোয়িবা ঐ যোগ দিয়েছিলেন৷
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মালির ৮৯
ভাগ নারী ও
মেয়ে শিশুরা যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷
ফান্তা করোমা নামে একজন
গৃহিণী জানান, ১৯৮২ সাল
থেকে তিনি এফজিএম এর বিরুদ্ধে কাজ
করে যাচ্ছেন৷ কেননা যৌনাঙ্গচ্ছেদের
কারণে এক মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি৷
দ্বিতীয় যে কন্যা সন্তানটি হয়েছে,
তারও জীবন সংশয় রয়েছে৷ বর্তমান
পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্বের অন্তত ৮
কোটি ৬০ লাখ নারী ২০৩০ সালের
মধ্যে এই পরিস্থিতির শিকার
হবে বলে জানিয়েছে ইউএনএফপিএ৷
অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালির বিভিন্ন
সম্প্রদায়ের নেতারাও৷
১৪টি সম্প্রদায়ের মুখপাত্র
মোসোকোরা সিদিবে অবশ্য জানান,
তারা তাদের সম্প্রদায়ে জোরপূর্বক
বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন এবং এফজিএম এর
ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন৷
এটিকে ধর্মীয়
প্রথা হিসেবে চালালেও
বর্তমানে কিছু ধর্মীয়
নেতারা বলেছেন, মুসলমানদের পবিত্র
ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফে নারীদের
যৌনাঙ্গচ্ছেদের কথা বলা নেই৷ এসব
নেতারা টোস্তানের সাথে তিন বছর
ধরে কাজ করছেন৷ তাদের
উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে বিষয়টি তুলে ধরা,
যাতে প্রতিটি সম্প্রদায় সমাজ
সচেতনে সোচ্চার হয় এবং যৌনাঙ্গচ্ছেদ
বন্ধ করে৷