somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোস্তা - একটি ছেলের বৈচিত্রময় জীবন

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোস্তাফিজুর অথবা সংক্ষেপে মোস্তা। মোস্তাকে হক সাহেব ছোট থাকতে নিজের কাছে নিয়ে আসেন পালার জন্য। মোস্তা হক সাহেবের ছোট ভাইয়ের ছেলে। মোস্তার বাবা অনেক সন্তানের জনক। তাকে গ্রামের বাড়ীতে গেরস্তগীরি করতে হয়। তাই একজন সন্তান কমতি পড়লেও তার তেমন কিছু যাবে আসবে না। সেজন্য সে মোস্তাকে বড় ভাইয়ের কাছে দিয়ে দেয়। তার আশা শহরে বড় ভাইয়ের বাসায় থেকে মোস্তা লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে সংসারের উপকারে আসবে।

কিন্তু মোস্তা বড়ই দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে। পড়াশোনার দিকে তার মনযোগ নাই বললেই চলে। সে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় আর ক্যারামবোর্ড খেলে। তার প্রিয় খেলা ক্যারামবোর্ড। স্কুলের কথা বলে প্রতিদিন সে বাসা থেকে বের হয় অথচ স্কুলে না যেয়ে সে এলাকার বিখ্যাত ক্যারামবোর্ড খেলার দোকানে যেয়ে হাজির হয়। এক বোর্ড খেলতে এক টাকা লাগে। মোস্তাকে হক সাহেব হাত খরচের জন্য কোন টাকা পয়সা দেন না। কিন্তু তাতে মোস্তার কোন সমস্যা হয় না। সে এলাকার সবচেয়ে মস্তান ক্যারামবোর্ড খেলোয়াড়। তাকে কেউই হারাতে পারে না। একটা টাকাও খরচ না করে সে বোর্ডের পর বোর্ড খেলে যায়। তাকে কেউ হারাতে পারবে এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। তাই পকেটে একটা পয়সা না থাকলেও সে নিশ্চিন্তে খেলে যায়।

কিছুদিনের মধ্যেই হক সাহেব মোস্তার এই ক্যারামবোর্ডপ্রীতি সম্পর্কে অবগত হন। তিনি প্রথমে মোস্তাকে মারধোর করে সুপথে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু মোস্তা বড়ই কঠিন মানসিকতার ছেলে। সে আবার বিপথে চলে যায়। অগত্যা হক সাহেব বাসায় খেলার জন্য একটা ক্যারামবোর্ড কিনে আনেন। উদ্দেশ্য মোস্তা যেন অযথা স্কুল ফাকি দিয়ে ক্যারামবোর্ড না খেলে। এতে ফল হয় মোস্তার স্কুল পালিয়ে ক্যারামবোর্ড খেলার নেশা চলে যায়। কিন্তু সমস্যার শেষ এখানেই নয়। মোস্তার সমস্যা ক্যারামবোর্ড খেলায় নয়, তার সমস্যা হচ্ছে পড়াশোনায়। আসলে পড়াশোনা করতে তার ভাল লাগে না। স্কুলের পরীক্ষায় সে খারাপ ফলাফল করে। হক সাহেব রেগে যান তার এ ফলাফল দেখে। হক সাহেব আবার মোস্তাকে কড়া শাসন করা শুরু করেন। সারাদিন অংকের বই নিয়ে মোস্তাকে বসিয়ে রাখেন। একটার পর একটা ইংরেজী ট্রান্সলেশন দিয়ে দুর্বিষহ করে তোলেন মোস্তার জীবন। হক সাহেব নিজে ভাল ছাত্র ছিলেন সবসময়। তাই তার ইচ্ছা তার সন্তান সন্ততিরাও সব তার মত ভালো ছাত্র হবে। মোস্তাকে তিনি নিজের ছেলের হিসেবেই জানেন। মোস্তার প্রতি সন্তান স্নেহের কোন ঘাটতি তার ছিল না। মোস্তা তার নিজের সন্তানের মতই ছিল। কিন্তু পড়াশুনার এই জীবন মোস্তার ভাল লাগল না। সে কান্নাকাটি শুরু করল বাড়ী যাবে বলে। তার কান্নাকাটির চোটে হক সাহেব মোস্তার বাবাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন সব বিস্তারিত। মোস্তার বাবা সব শুনে মোস্তাকে দিলেন আরেক ধমক। কিন্তু মোস্তা আবার কান্নাকাটি শুরু করল। তার নাকি তার মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই সে মাকে দেখতে বাড়ী যেতে চায়। হক সাহেবের স্ত্রী মোস্তাকে মায়ের স্নেহ দিতে কোনদিন কার্পন্য করেন নি। নিজের ছেলের মতই মোস্তাকে মুখে তুলে খাইয়েছেন, বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছেন, মোস্তার জামা কাপড় ধুয়েছেন, হক সাহেবের মারের হাত থেকে মোস্তাকে বাচাতে নিজে হক সাহেবের ধমকা ধমকি সহ্য করেছেন। তাই আজ এতদিন পর মোস্তার হঠাৎ করে তার আসল মাকে দেখতে চাওয়ার কথায় তিনি মনে বড় কষ্ট পেলেন। কষ্ট পেলেন হক সাহেব নিজেও।

বুকে কষ্ট চেপে নিয়ে তারা মোস্তার বাবাকে বললেন, যাক ওর মাকে দেখে আসুক কিছুদিন। মোস্তা তারা বাবার সাথে বাড়ী রওয়ানা হল। কিন্তু মোস্তার মনে ছিল অন্য ইচ্ছা। মাকে দেখার কোন ইচ্ছাই তার ছিলনা আসলে। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল হক সাহেবের কাছ থেকে পলায়ন করা। সে আর পড়াশোনা করতে চাইছিল না। তার পরিকল্পনা ছিল বাড়ী গিয়ে সে আর ফেরত আসবে না। বাড়ীতেই সে কোন কাজে লেগে যাবে। পড়াশোনা করতে তার ইচ্ছে করে না।

মোস্তা বাড়ী গেল। সেখানে কিছুদিন কাটালো। বাড়ীর সবার কাছে হক সাহেব আর তার স্ত্রী তার উপর কত নির্যাতন করেছে তার সরেস বর্ণনা দিল এবং বলল আমি আর ঐখানে ফিরে যেতে যাইনা। সবাই মিলে হক সাহেবের উপর একচোট নিল। কারণ ভাইদের মধ্যে হক সাহেবেই সবচেয়ে ধনী, শিক্ষিত, শহরে থাকে এবং জমিতে হাল দেয় না। তাই মনে মনে সবাই হক সাহেবকে হিংসা করে, যদিও হক সাহেব তার জ্ঞাতীগোষ্ঠির উপকারের জন্য সর্বদাই নিয়োজিত। মোস্তার বাবা মোস্তাকে বললেন, "ঠিক আছে তাইলে বাড়ীতই থাক, গেরস্থালীর কাম শিখ।" মোস্তা মহানন্দে রাজী হল।

পরদিন খুব ভোরে মোস্তার বাবা যখন মোস্তাকে ঘুম থেকে উঠাল গরুর খাবার দেওয়ার জন্য, মোস্তা তখন একটু বিরক্তই হল। এরপর মোস্তা আরো বিরক্ত হল গরুগুলোকে খাওয়াতে গিয়ে, গোয়াল ঘর সাফ করতে গিয়ে। গোবরের গন্ধে মোস্তার বমি এসে যাচ্ছিল। আরাম আয়শের জীবনে অভ্যস্ত মোস্তা একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়ল গরু সামলাতে গিয়ে। ঐদিকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেন, কারন সে নিজেই গতকাল হক সাহেবের বাসায় তার কষ্টকর জীবনের বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। দুপুরের রোদে মাঠে কাজ করতে গিয়ে মোস্তা অসুস্থ হয়ে পড়ল, জ্বরে পড়ে গেল। মোস্তা উপলব্ধি করতে পারলে সে কথায় এসেছে আর কোথায় ছিল। মাথা ঘুরিয়ে সে ক্ষেতের আইলে বসে পড়ল। তার বাবা তাকে জিজ্ঞাসা করল,"কি হইছে?" মোস্তা বলল, "মাথা ঘুরাইতাছে, জ্বর আইছে মনে হইতাছে।" তার বাবা তাকে বাড়ী পাঠিয়ে দিল ক্ষেত থেকে। মোস্তা কয়েকদিন জ্বরে ভুগল। দুইদিন সে বিছানায় পড়ে থাকল। আগেও সে জ্বরে ভুগেছিল। সে সময় তার চাচী, হক সাহেবের স্ত্রী সারারাত তার মাথায় পানি ঢেলেছেন, হক সাহেব বাসায় ডাক্তার ডেকে এনেছেন, তার চাচী তাকে ওষুধ মুখে তুলে খাইয়েছে, মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। কিন্তু এবার কোন ডাক্তারও আসল না, কেউ তারা মাথায় পানিও ঢালল না। মোস্তার বাবা বললেন "গা গরম হইছে এমনেই যাইবগা"। মোস্তার মা তার বিশাল সংসার সামলাতে ব্যাস্ত। তার পুত্র কণ্যা সর্বমোট নয়জন। মোস্তার প্রতি আলাদা ভালাবাসা দেখাতে গেলে উঠোনে ছড়ান ধান নাড়াচাড়া করার অথবা কামলাদের খাবার রান্না করার কেউ থাকবে না। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্ন দেখাবার সময় তার নাই। মোস্তার খাবারটা তাই তার ছোটবোন একটা প্লেটে করে বিছানার পাশে দিয়ে যায়, মোস্তাকে নিজেই তা মাখিয়ে খেতে হয়। মোস্তার জন্য আলাদা কোন রান্নাও হয় না অথবা কেউ তাকে মুখে তুলে খাওয়াও না।

(পরবর্তীতে বাকীটুকু লেখা হবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:৫৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×