somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার সন্তান আপনার হাতের পুতুল নয়

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাদল ও তরু আমার সহপাঠী। আমরা সবাই ক্লাস এইটে পড়ি। বাদল ও তরু প্রায় প্রতিদিন আমার কাছে আসে পড়া শেখার জন্য। যেহেতু আমরা একটি গরীব দেশের ধ্বজভঙ্গ স্কুলের ছাত্র তাই আমরা শ্রেণীকক্ষে সেইরকম শিক্ষা পেয়ে থাকি। জ্যামিতিক উপপাদ্য বাই ডিফল্ট ক্লাসের সকলে মুখস্ত করে থাকে। এখানে বোঝাবুঝির কিছু নাই। কিন্তু সকল স্কুলেই কিছু বেয়াড়া ছাত্র থাকে। বাদল, তরু, আমি এবং আরো কয়েকজন সেইরকম। আমি মাষ্টারি করতে পছন্দ করি। আমার জন্মগত অভ্যাস মাষ্টারি করা। কাউকে শিক্ষাদান করতে পারলে আমার খুব তৃপ্তি লাগে। আমি আমার ক্লাসের এই দুটি ছেলেকে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করার সংকল্প নিলাম। তাই ওরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমার বাসায় আসে। বাংলা, ইংরেজি, অংক সব আমি ওদের শিক্ষা দেই। আমি বই পড়ে প্রথমে নিজে বুঝি তারপর ওদেরকে বোঝাই। এতে আমার কিছু লাভ হয়। লাভটা হল, আমি নিজে ফাকিবাজ ছাত্র। কিন্তু ওদের পড়াতে গিয়ে আমার নিজেরও পড়া হয়ে যায়। তার উপর পাঠ্যবিষয়ে আমার একটা গবেষনার মতও হয়ে যায়। কিন্তু আমার নির্বোধ, হ্যা আমি নির্বোধ এবং বেকুবই বলব, গাধাও বলা যেতে পারে, যাই হোক আমার নির্বোধ কমবুদ্ধি পিতামাতার আমার এই সুখ সইল না। তারা ওদেরকে বিদায় করে দিলেন। আমাকে উপদেশ দিলেন নিজের পড়ার দিকে মনযোগ দিতে। আরে বাল আমি কি অন্যের পড়া পড়তেছিলাম নাকি? আমি তো নিজের পড়াই পড়তে ছিলাম, আমার সাথে সাথে আরো দুইটা ছেলের পড়াও হয়ে যাচ্ছিল। আরে বাল আমি কি কোন প্রাইভেট মাষ্টারের কাছ থেকে পড়া বুঝতাম নাকি স্কুলের কোন মাষ্টারের কাছ থেকে পড়া বুঝতাম? আমি নিজেই পড়া বুঝতাম আর ফাকতালে ওদেরকে বুঝিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি যেহেতু ক্লাস এইটে পড়ি সেহেতু আমার গর্দভ বাবা-মা গায়ের জোরে আমাকে বাধ্য করলেন আমার এই কর্মকান্ড বন্ধ করতে। আমি আশাহত হলাম।

আমি আমার প্রকৃতি জানতাম, আমার ভিতরের শক্তি জানতাম। আমি জানতাম আমি শুধু শিখতে পছন্দ করি না, শেখাতেও পছন্দ করি। কিন্তু আমার বাবা-মা সেটা জানতেন না। তারা গোঁয়ারের মত আমাকে একলা চলার পথে ঠেলে দিয়েছিলেন। তারা আমার মন বুঝেননি, বোঝার মত ঘিলু তাদের মাথাতেও ছিল না।

সব বাচ্চা এক রকম না। তাদের একেকজনের শেখার পদ্ধতি একেকরকম। তারা যেভাবে শিখে আনন্দ পায় তাদের সেভাবেই শিখতে দেওয়া উচিত। আমি আনন্দ পেতাম ছাত্র পড়ানোর মত করে শিখতে। আমি নিজেকে শিক্ষকের আসনে বসাতাম, এতে আমার অভ্যন্তরীণ আত্মবিশ্বাস অনেকগুন বেড়ে যেত, কারন আমার অবচেতন মনে ধারণা ছিল শিক্ষকরা ভালো জানেন, তাই আমি কোন বিষয় নিজে পড়ার বদলে অন্যকে পড়িয়ে ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারতাম।

কিন্তু আমার বাবা মা ছিল লোভী। তারা লোভ করেছিল। তারা মনে করেছিল আমি ওদের সময় না দিয়ে পুরো সময়টাই যদি নিজের জন্য দিই তাহলে পুরো লাভ হবে আমার, আমি আরো বেশী জানব, আরো বেশী, আরো, আরো, আরো............

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু, ভয়ংকর ক্লোরিন গ্যাসে মৃত্যু। ( কোন এক অখ্যাত লেখকের বই থেকে উদ্ধৃত করলাম, এক ছেলে সেখানে চোর ধরতে ক্লোরিন গ্যাস বানায় মামাকে নিয়ে )

আমি আবার ফাকিবাজ হয়ে গেলাম। পড়াশোনা করে যদি মজাই না পেলাম তাহলে কিসের বালের পড়াশোনা। গুষ্টি ুি পড়াশোনার। কে করে এইসব আজাইরা পড়াশোনা।

তারপরে আমি বিকালে ঘোরার কথা বলে ওদের বাসায় যেয়ে পড়াতাম। ওরা জানতে চাইত, আমাকে প্রশ্ন করত, প্রশ্নের পর প্রশ্ন...... আমি ওদের প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতাম। ক্লাসের শিক্ষকরা যে অংক ওদের বোঝাতে পারত না, আমি ওদের সেই অংক বোঝাতাম। হ্যা এটাই সত্যি। কারন শিক্ষকরা জানতেন না ছাত্রদের দুর্বলতা কোথায়, জানার চেষ্টাও তারা করতেন না, তারা যা করতেন তা হল স্রেফ পেট চালনোর চাকরি। কিন্তু আমি ওদের দুর্বলতা জানতাম। আমি নিজেও ওদের মত ছাত্র, আমি ওদের দুর্বলতা জানব না তো কি কোন হরিদাস পাল জানবে??

আমি আবারও বলছি, আমি কোন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তাম না, সব নিজে নিজে করতাম। 'পেন্সিল ও সর্বকর্মার' মত "সবই করি নিজে নিজে, নিজে নিজে, নিজে নিজে, বিশ্বাস নেই আজব চীজে, সবই করি নিজে নিজে"। আমি স্কুলেও কোন শিক্ষকের কাছ থেকে কিছুই শিখি নাই। কারন আগেই বলেছি আমার স্কুল একটা গরীব দেশের একটা ধ্বজভঙ্গ স্কুল, এখানে ছাত্ররা ক্লাসে যাওয়া আসা করে শুধু, কিছুই শিখে না। তাই আমি ওদের পিছনে আমার এই সময় নষ্টের জন্য কারো কাছে দায়বদ্ধ নই। এটা ছিল আমার প্রয়োজন, আমার নিজের জন্য প্রয়োজন, এ ছাড়া আমি পড়াশোনায় উৎসাহ পেতাম না। শুধু পরীক্ষায় খাতায় লেখার জন্য আমি কোন কিছু করতে কোন কালেও আগ্রহ পাই নাই। আমি সবচেয়ে আনন্দ পাই তখন যখন আমি নিজে কোন কিছু বুঝলে, অন্যকেও সেটা বোঝাতে পারি। অন্য কাউকে যখন আমি কোন কিছু বোঝাতে পারি, আমার মনটা এক অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে এবং আমার আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে যায়, আমি আরো বেশী জানার, আরো বেশী পরিশ্রম করার উৎসাহ পাই।

তাই আমার নিজের খাতিরেই ওদেরকে পড়ানোর দরকার ছিল। কিন্তু আমার কপালেও এই সুখও বেশীদিন সইল না।

আমার বয়স ছিল কম?? আমার বাবা-মায়ের বয়স ছিল বেশী??

হ্যা তাই ছিল।, তাই আমি যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলাম।

আমি নিজের টাকায় খেতাম না, নিজের বাড়ীতে থাকতাম না, আমি আমার পিতামাতার বাড়ীতে থাকতাম এই কারনে আমার শিক্ষাপদ্ধতি আমার বেছে নেওয়ার অধিকার নেই, অতিরিক্ত দুইটা শিক্ষাবঞ্চিত ছেলেকে শেখানোর অধিকার আমার নেই, তাই তো??

হ্যা তাই।

আমার বয়স ছিল কম, তাই আমার মতামত গ্রহনযগ্য নয় তাই তো?

হ্যা তাই।

আপনার সন্তানকে তার মত করে শিখতে দিন। আনন্দময় করে তুলুন তার শিক্ষার পরিবেশ। তাকে বাধা দেবেন না। তাকে তার মত করে বেড়ে উঠতে দিন। আপনাদের বড় মানুষদের এইসব বালছাল মানসিকতা দেখলে থুতু দিতে ইচ্ছা হয়। দয়া করে এইসব আবালীয় মানসিকতা দেখাবে না। আপনি নিজের টাকায় সন্তানকে মানুষ করেন বলেই এই না যে আপনার সন্তান আপনার হাতের পুতুল। দয়া করে সন্তানকে লোভীর হিসেবে গড়ে তুলবেন না। তাকে দলবদ্ধ করে করে তুলুন, একজন যেন আরেকজনের পাশে এসে দাঁড়ায়। অসুস্থ প্রতিযোগীতায় কেবল বালছালই উৎপাদন করতে পারে, এর বেশী কিছু নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:২২
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×