somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষীতিশদার ভোগাকাংখা

১০ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষীতিশদা বহুদিন চায়ের দোকান চালিয়েছেন। তার বেচাবিক্রি খারাপ ছিল না। সারাদিনই তার চায়ের দোকানে ভীড় লেগে থাকত। তার চায়ের দোকানকে ঠিক চায়ের দোকানও বলা যায় না, অনেকটা ষ্টেশনারী দোকানের মত। এই দোকান দিয়েই ক্ষীতিশদা অনেক কিছু করে ফেললেন। জমি কিনলেন, ঘর উঠালেন।

ক্ষীতিশদার বহু আগেই বিয়ে করেছেন। তার একটা ছেলেও আছে। ছেলেটার বয়স ১৪ বছর। আর দশটা সাধারণ মানুষের মত তিনিও কামাই রোজগার করেন, সংসার পালেন।

মানুষ সর্বদাই প্রবৃত্তকামী। তার অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি তাকে কখনও শান্তিতে থাকতে দেয় না। সে তার বিভিন্ন রিপুর তাড়নায় অস্থির হয়ে ওঠে জীবনকে আরো বেশী করে ভোগ করার জন্য।

বেতাল পঞ্চবিংশতিঃ

এক ব্রাহ্মণ মৃত্যুপথযাত্রী। আর কিছুক্ষণ পরেই সে মারা যাবে। তার পরিবার তাকে নিয়ে শ্মশানযাত্রা শুরু করল। শ্মশানে পৌছে তিনি দেখলেন আরেকটি পরিবার এক মৃত একটি যুবককে নিয়ে শ্মশানে এসেছে। ব্রাহ্মণের মনে চিন্তার উদয় হল। সে ভাবল, আমি সারা জীবনই ভোগ বিলাসকে তুচ্ছ করে সাধনা করে গেলাম। এ জীবনে কিছুই আর ভোগ করা হল না। আমি আমার এই জীর্ণ দেহটাকে ত্যাগ করে ঐ যুবকের দেহ কেন ধারণ করি না?! উল্লেখ্য ব্রাহ্মণ পরদেহধারণ বিদ্যা জানতেন। ব্রাহ্মণ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি তার এই প্রাণের ভার সইতে না পারা দেহটাকে পরিত্যাগ করে ঐ যুবকের দেহে আশ্রয় নেবেন। জগতের ভোগ বিলাসের প্রতি তিনি আকর্ষণ বোধ করলেন। ব্রাহ্মণ তার দেহ ত্যাগ করলেন। ব্রাহ্মণের পরিবার কেদে উঠল আর ঐদিকে ঐ যুবকের পরিবার হেসে উঠল। যদিও ঐ যুবকের পিতা নিজেও পরদেহধারণ বিদ্যা জানার ফলে কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলেন এই যুবক সেই যুবক না তবে সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় না। আমাদের আলোচ্য বিষয় মানুষের ভোগাসক্তি।

ক্ষীতিশদার স্ত্রী সুন্দরী নন। তাছাড়া তার বয়সও হয়েছে বেশ। ক্ষীতিশদা তাই ভোগে আনন্দ পান না। তার নিজের বয়সও অনেইক হয়েছে, তার ১৪ বছরের একটা ছেলেও আছে কিন্তু তার ভোগাকাংখা এখনো কম নয়। মৃত্যুপথযাত্রী জ্ঞানী ব্রাহ্মণ যদি নিজেকে সংবরণ করতে না পারেন, সেখানে ক্ষীতিশদা তো কোন চেটের বাল। তিনিও ভোগাকাংখা সংবরণ করতে পারেন নাই। যেহেতু তার দেহ এখনও বেশ সতেজ এবং যেহেতু তিনি পরদেহধারণ বিদ্যা জানেন না সেহেতু তিনি এখনই কাজে নেমে গিয়েছেন। তার ভোগাকাংখার তিনি পুরোপুরি মিটিয়ে চলছেন।

ক্ষীতিশদা অনেকদিন হল চায়ের দোকান ছেড়ে একটা সেলুন দিয়েছেন। এসি সেলুন। গরমের মধ্যেও সেখানে শীতল সুবাতাস পাওয়া যায়। ভোগাকাংখীরা সেখানে আরাম ভোগ করে করে চুল কাটার জন্য কয়েকগুন বেশী দামেই চুল কাটতে যায়। নাপিতের কাছে চুল কাটতে গেলে সে আপনাকে একটা ছোট পিড়িতে বসিয়ে, মাথা হেট করে হাটুতে ঠেকিয়ে, ঘাড় ব্যাথা করে চুল কাটাবে। সাধারণ সেলুনে গেলে আপনি চেয়ারে বসতে পারবেন ঠিকই কিন্তু গরমে আপনার ঘাড় চুলকাবে। তাই আপনার দরকার পরিপূর্ণ ভোগ। এসি সেলুনে তাই পয়সাওয়ালা অথবা ভোগাকাংখী মোটামুটি পয়সাওয়ালাদের বেশ আনাগোনা।

ক্ষীতিশদার সেলুনের সামনের রাস্তায় রাত্রিবেলা জনপদ বধূ বা কঠিন ভাষায় পতিতাদের অনেক দেখা মেলে। ক্ষীতিশদার জন্য তারা রাজ্যের ভোগ নিয়ে হাজির হয়। ক্ষীতিশদার বাড়িতে স্ত্রীর বিছানায় ভোগাকাংখা মেটে না। স্ত্রীর বয়ষ্ক শরীর তার বিরক্তির উদ্রেক করে। স্ত্রীর উচু দাত তার বমির উদ্রেক করে। স্ত্রীর হাতে হলুদ মরিচ তরকারীর গন্ধ তার পরিপাকের সমস্যা ঘটায়। তাই তার জন্য দরকার পতিতা। পারলে তিনি তার এই স্ত্রীকে ছেড়ে আরেকটা যৌবনবতী কমবয়সী মেয়েকে বিয়ে করতেন, কিন্তু ১৪ বছরের ছেলেটাই সকল সমস্যার মূল। নয়তো বহু আগেই তিনি স্থায়ী ভোগাকাংখা মেটানোর একটা ব্যাবস্থা করে ফেলতেন। যেহেতু এখন তা সম্ভব নয়, সমাজে তার অবস্থান একজন সেলুনওয়ালা, সেহেতু জোরপূর্বক কিছু করতে গেলে তার অবস্থা বেশী একটা ভাল হবে না। কি দরকার এত ঝামেলার! এর থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়েদের মাধ্যমে ভোগাকাংখা মেটানোই উত্তম। তাই ক্ষীতিশদা যেইদিন নিম্নাঞ্চলে বেশ চাপ অনুভব করেন, সেইদিন আর রাত্রে বাড়ী যান না, সেলুনেই থেকে যান। তার সেলুনটা যে মার্কেটে তার উপরতলায় একটা চিকন-মোটার ঔষধ বিক্রি করার দাওয়াখানা আছে। ঐ দাওয়াখানাতেই তিনি তার ভোগাকাংখা মেটান। দাওয়াখানার মালিকের সাথে তার ভাল সম্পর্ক, তাকে মাঝে মাঝে এটা সেটা খাওয়ান তাই এতে আর সমস্যা হয় না। বরং দাওয়াখানার মালিক ক্ষীতিশদাকে তার ভোগকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তার দাওয়াখানার মেঝেতে পাটি বিছিয়ে দেন।


বিভিন্ন ধরনের মেয়েরা আসে ক্ষীতিশদার কাছে। মাঝে মাঝে এদের কাউকে ক্ষীতিশদার বেশ ভাল লেগে যায়। সেক্ষেত্রে ক্ষীতিশদা ঐ মেয়েটার একজন নিয়মিত গ্রাহকে পরিণত হন। মাঝে মাঝে তিনি টাকা বাকীও রাখেন। মেয়েরা এসে বসে থাকে তার সেলুনের সামনে বাকী টাকার জন্য। ক্ষীতিশদা পাওনাদারের মত তাদেরকে ঘোরান। মেয়েরাও ঘোরে, মাঝে মাঝে কোন মেয়ে আর আসে না, কোথাও হয়তো হারিয়ে যায় বা চলে যায়। কে রাখে এই হতভাগীদের খবর। রাতের ভোগী ক্ষীতিশদা দিনের বেলা আন্তরিকতার সাথে তার গ্রাহকদের চুল কাটেন। মাথার চুল কাটলে দেখা যায়। কিন্তু নীচতলার চুল কাটা না আকাটা তা দেখা সম্ভব নয়। ক্ষীতিশদারা দিন দিন যেভাবে ভোগাকাংখী থেকে আরো বেশী ভোগাকাংখী হয়ে ওঠেন তাতে ক্ষৌরকার ক্ষীতিশদের নীচতলার চুলের অবস্থা তাদের স্ত্রীরাও জানেন কিনা সন্দেহ!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:৫৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×