somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রস্তাব ও চুক্তি-১

০৬ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসপাতাল
--------------------
সবকিছুর শুরুটা হয়েছিল আমার হাসপাতালে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। আমি ঠিক কি কারনে হাসপাতালে গিয়েছিলাম মনে নেই। সুস্থ হওয়ার পর দেখলাম আমি আমার কেবিনের অন্যান্য শয্যাশায়ী রোগীদের কাউকেই চিনতে পারছি না অথচ তারা আমার সাথে দীর্ঘ পরিচয়ের অন্তরঙ্গতা নিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। আমি বিষয়টা নিয়ে নির্লিপ্ত হতে চাইলাম এবং হাসপাতালের খাবারের দোকানটি থেকে এক কাপ কালো কফি কিনলাম। আমি কালো কফির কাপ প্রায় খালি করে আমার কেবিনে ফেরত এসে দেখি, আমার চাচাত ভাই এসে হাজির। তবে দর্শনার্থী হিসেবে আমার জন্য শুভাকাংখা নিয়ে নয় বরং রোগী হিসেবে অসুস্থ হয়ে। সে আমার বিছানার এক বিছানা পরেই শুয়ে রয়েছে। তাকে আমি ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলাম এবং তার সাথে কথা বলার কোন আগ্রহ বোধ করলাম না। আমার অন্যান্য কক্ষসঙ্গীরা বলল, "বলেছিলাম না এক সপ্তাহের ভিতর আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন! দেখলেনতো সুস্থ হয়ে গেছেন।" আমি একটা ভদ্রতার হাসি দিয়ে কেবিনের একমাত্র খালি বিছানাটার দিকে তাকালাম। আমি আসলে খুজতে ছিলাম আমি কোন বিছানায় এই কয়দিন শুয়ে ছিলাম। কোন কিছু মনে না পড়লেও এই কয়দিন যে আমি বাইরের জগতের সকল জটিলতা থেকে মুক্ত ছিলাম এবং আমাকে যে আবার বাইরের জগতের জটিলতায় ফিরে যেতে হবে, এই ভেবে বেশ হতাশা বোধ করছিলাম। কি দোষ ছিল আরও কয়েকটা দিন অসুস্থ থাকলে।

রাস্তা ও অনুরূপ উতসব
--------------------------------
আমার পরনে ছিল একটি নীলের মাঝে সাদা ও অন্যান্য হালকা রংয়ের চেক ছাপার একটি লুঙ্গি এবং সাদা একটি শার্ট যারা বুকের কাছের দুইটি বোতাম আমি খোলা রেখেছিলাম। আমি কফির প্রায় খালি গ্লাসটা নিয়ে হাসপাতালের ভবনটি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসলাম। বেশ কিছুদুর হেটে যাবার পর রাস্তাটি উপর থেকে আমার যাত্রার দিকে ঢালু হয়ে গেছে। একটা সাইকেল থাকলে এই ঢালু ব্যাবহার করে নেমে আসার সময় বেশ কিছু অতিরিক্ত গতি অর্জন করা যেত। তবে ঢালু বেয়ে উপরে উঠতে বেশ কষ্ট হবে। আমি কিছুটা কষ্ট করে আপাতত পায়ে হেটে ঢালুটা পার হলাম। আরো কিছুদুর হেটে যাবার পর আমি দেখলাম অনেক লোক আমার হাসপাতালের দিকে যাওয়া শুরু করেছে এবং তারা বিভিন্ন রুপে সজ্জিত। কেউ বিখ্যত চিত্রকর, কেউ বিখ্যাত সুরকার, কেউবা বিখ্যাত বিজ্ঞানী। একই চেহারার একাধিকজনকে দেখতে পেলাম। সকলের মাঝে বেশ উতসব উতসব ভাব। আমি বুঝতে পারলাম সামনে হয়ত কোথাও উতসব হচ্ছে অথবা আজ দিনটাই উতসবের দিন। আমি বিভিন্ন বিজ্ঞানীকে খোজা শুরু করলাম। আমি পারমানবিক শক্তির পেছনে দায়ীদের পেলাম, তাড়িত কৌশলের পেছনে দায়ীদের পেলাম, মহামারীর প্রতিষেধকের পিছনে দায়ীদের পেলাম, এভাবে অনেককে পেলাম। অনেককে আবার একাধিকবার পেলাম। কিন্তু আমি বিবর্তনের পিছনে দায়ী ব্যাক্তিটিকে কিছুতেই পেলাম না। সে কোথায়? আমার বেশ রোখ চেপে গেল। আমি তাকে খুজতে শুরু করলাম। এর মাঝে কখন যেন আমি নিজেই কোন এক বিখ্যাত ব্যাক্তির রুপ ধারন করেছি। কারণঃ আমি একজায়গায় কোন এক বিখ্যাত ব্যাক্তি, যাকে আমি চিনি না, তার তিনজন রুপধারনকারীকে দেখতে পেলাম। তাদের মধ্যে দুজন বেশ নম্র এবং একজন বেশ উগ্র। সে এই উতসব নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করল। সে আমাকে ভর্তসনা করল, কেন আমি বিখ্যাত ব্যাক্তির রুপ ধারন করলাম। তারপর সে বলল সে কোন প্রতিরুপ ধারনকারী নয়, সে নিজেই আসল ব্যাক্তি। তার রুপধারনকারী দুজনকে সে পরিচয় করিয়ে দিল এবং বলল আমি চাইলে তার রুপ ধারন করতে পারি। আমি যদিও নিশ্চিত ছিলাম না আমার রুপটি কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির হয়েছিল, তবে আমি এই নাম না জানা বিখ্যাত ব্যাক্তিটির রুপ ধারন করতে সম্মত হলাম না। আমি তাকে তার প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিবর্তনের পেছনে দায়ী বিখ্যত ব্যাক্তিটিকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু আমি কিছুতেই তাকে খুজে পেলাম না। আমি ঠিক করলাম, যেভাবেই হোক আমাকে তাকে খুজে বের করতে হবে।

দুই তলা বাড়ীর ছাদ
-------------------------------
আমি উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটতে শুরু করলাম। আমি মহাসড়কের একপাশ ধরে হাটতে থাকলাম। উতসবের দিন বলে মহাসড়কে যানবাহনের অনুপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মহাসড়কের দুপাশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে। তারপরে হয় জঙ্গল, নতুবা নোংরা পানি বা বর্জ্য পদার্থের ডোবা অথবা ইট ভাঙ্গা সুরকীর স্তুপ। তখন আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নেমে আসছিল। আমি মহাসড়কের ছেড়ে ঢালু বেয়ে নীচে নেমে হাটা শুরু করলাম। জঙ্গল পেরিয়ে একটি পাকা রাস্তা পেলাম। রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে আমি একটি দোতলা বাড়ীর সম্মুখীন হলাম। আশেপাশে আর কোন বাড়ী দেখতে পেলাম না। জায়গাটা সম্পূর্ণ জনমানবশূণ্য বলে মনে হল। আমি বাড়ীটির কাছে যেয়ে সকল জানালা বন্ধ দেখতে পেলাম এবং টোকা দেয়ার মত কোন দরজা খুজে পেলাম না। আমি বাড়িটির দোতলার ছাদ থেকে নেমে আসা নির্মান কাজের সময় ব্যাবহৃত একটি লম্বা মই পেলাম। দুইতলা লম্বা কোন মই এর আগে আমি দেখিনি। বিশাল এই মইটি আসলে দুটি একতলা মইয়ের দড়ি দিয়ে বাধা সংযোগ। আমি মইটির উপর বিশ্বাস রাখতে পারলাম না। আমি অবিশ্বাস নিয়েই মইটি বেয়ে ছাদে উঠা শুরু করলাম। একেবারে শেষ মূহুর্তে যখন আমি প্রায় ছাদে পৌছে গেছি, ঠিক তখনই মইটি ভেঙ্গে পড়ল। আমি আমার জন্মগত আত্মরক্ষার প্রবৃত্তির প্রতি সম্মান জানিয়ে ছাদের কার্ণিশ ধরে ঝুলে পড়লাম এবং উপলব্ধি করলাম, উপরে ওঠাটা সবসময় নিরাপদ নয় যদিও তাতে আশেপাশের দৃষ্টিসীমার উপর কর্তৃত্ব করা যায়, এর থেকে মাটির পৃথিবী তার দৃষ্টিসীমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেকটাই নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও আনন্দময়। আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে ছাদে উঠলাম এবং চারপাশে তাকালাম। জঙ্গল ছাড়া আর কিছু দেখলাম না। এমনকি যে মহাসড়কটি থেকে আমি এসেছি সেটাও কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে। সূর্য প্রায় ডুবে গেছে, আপাতত সন্ধ্যা বলা চলে। আমি চারপাশের সবুজ জঙ্গলের কালো অন্ধকারের সাথে কালো রং ধারন করা দেখলে লাগলাম। দুই তলার ছাদ পুরোটাই খালি। পুরো ছাদ ঘুরে যা বুঝলাম তা হল, নীচে নামার পথ আমার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। জনমানবশূণ্য এই এলাকায় সাহায্য করার মতও কেউ নেই। তবে আমি আমার ভবিষ্যত নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। আমি বিবর্তনের পেছনে দায়ী ব্যাক্তিটিকে খুজছি। চারপাশে সমতল এবং এই সমতলের মাঝে এই দুই তলা বাড়ির ছাদ থেকে চারপাশটা ভালই দেখা যায়। আমি ঠিক করলাম ভাল করে চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে একটু চেষ্টা করি, বিবর্তনের পেছনে দায়ী ব্যাক্তিটিকে খুজে পাওয়া যায় কিনা। আমি খুজতে খুজতে একসময় সন্ধ্যার অন্ধকার গাড় হবার আগমূহুর্তে এসে পৌছলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম, আপাতত কিছুক্ষণ চিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকা যাক।

চলবে.........
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×