somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনন্দ বেদনার কাব্য

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাবতলীতে নেমে রিক্সা ঠিক করছি এই সময়ে নিশির এস এম এস এসে হাজির ।
"চলে এসেছ ?"

আমি মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারি না এই মেয়েটার আচরনে । এই মেয়েটাকে কখনও কিছু বলতে হয় না । কিভাবে জানি সব কিছু টের পেয়ে যায় ।
প্রতিদিন সকাল বেলা যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে ঠিক তখনই নিশির গুডমর্নিং এসে হাজির হয় । এমন না যে প্রতিদিন আমার ঘুম একই সময় ভাঙ্গত । কোন দিন ছয়টায় আবার কোন দিন নটায় কিন্তু গুডমর্নিং মেসেজ ঘুম ভাঙ্গার ঠিক পরপরই এসে হাজির হত ।
এমন কোন দিন হয় নি যে আমার ঘুম ভাঙ্গার পরপরই নিশির কোন এসএমএস আসে নি ।
রিপ্লে তে একটা স্মাইলি পাঠিয়ে দিলাম কেবল ।
নিশি আবার পাঠাল
"আমার সাথে একটু দেখা করবে ? তোমাকে কত দিন দেখি না ।"

কথা সত্য নিশির সাথে প্রায় ৭ দিন দেখা হয় নি । ঈদের ছুটিতে বাসায় গেছিলাম সেই কবে । কিন্তু এখন নিশির সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছে না । বাসায় গিয়ে একটা গোছল দেওয়াটা খুব বেশি দরকার । লিখে পাঠালাম
"এখন না প্লিজ"
"প্লিজ এক বার । অল্প একটু সময়ের জন্য !"

আমি মনে মনে হাসলাম । নিশির একটু সময় মানে ঘন্টা পার হয়ে যাবে । এখন যদি ওর সাথে দেখা করতে যাই তাহলে আমাকে সহজে ছাড়বে না ও ।
আমি লিখে পাঠালাম
"এখন না" ।
একটু পর ওর মেসেজ আসল ।
এতো গুলো রাগের ইমো ।
নিচে লেখা
"এখন আমার সাথে আর দেখা করতে ভাল লাগবে না । বাসা থেকে তোর টিয়ার সাথে দেখা করে এসেছিস ! এখন আর আমার দরকার কি ? তুই আর কখন আমার কাছে ফোন দিবি না !"

আমি নিশির ছেলেমানুষী দেখে হাসি মনে মনে । মেয়েটা চট করে এমন রেগে যায় ! আর রেগে গেলেই তুই তোকারী শুরু করে দেয় ।
আমি খুব ভাল করে জানি নিশি একটু পরেই আবার ফোন দিবে ।
একটু কাঁদবে ।
সরি বলবে ।
মেয়েটা এমনই ।
রাগ যেমন চট করে ওঠে আবার চট করেই চলে যায় ।
কিন্তু টিয়া এমন না । টিয়া যদি একবার রেগে যেত তাহলে সেই রাগ ভাঙ্গাতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত !
এবার আসলেই টিয়ার সাথে দেখা হয়েছে । কতদিন পর টিয়াকে দেখলাম !
অবশ্য টিয়াকে প্রতিবার আমি বেশ সময় ব্যবধানেই দেখি । কিন্তু এবার দেখা হওয়াটা একটু অন্য রকম ছিল ।
প্রতিবারই যখন বাসায় যেতাম টিয়ার সাথে দেখা করার জন্য খুব অস্থির হয়ে যেতাম । কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম যে টিয়ার সাথে যেন দেখা না হয় !
এই জন্য আমি ঈদে বাসাও যেতে চাচ্ছিলাম না । কিন্তু বাড়িতে না গেলে কেমন হয় । দেখাটা হয়েছেও খুব অপ্রস্তুত ভাবে ।
বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম আড্ডা মারতে । বাড়ির সামনে বসে আড্ডা মারছিলাম ঠিক তখনই বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি হল । কেমন যেন । লিখে প্রকাশ করা যাবে না ।
কিন্তু প্রতিবার যখন টিয়ার সাথে দেখা হতে যায় ঠিক তখনই এই অনুভূতিটা আমার হয় । আজ এতো দিন পর এই রকম অনুভূতিটা হবে ভেবে একটু অবাকই হলাম ।
অনেক সময় অনুভূতিটা অমূলকও হয় । তবে আজ হল না । গলির ভিতর থেকে টিয়া বের হয়ে গেল । কোলে ওর ভাইয়ের মেয়ে । আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । টিয়া নিজেও অপ্রস্তুত হল ।
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল কেবল নিস্পল চোখে ।
আহা !
কতদিন এই চোখ দুটো দেখি না । ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন ঐ চোখ দেখবো না । আমি নিজেও চাচ্ছিলাম না ওর সাথে আমার আর দেখা হোক ।
কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে ?

আমি ভেবেছিলাম টিয়া আমার সাথে কথা বলবে না । এর আগে যতবার দেখা হয়েছে আমরা চাইলেও কথা বলতে পারতাম না । ওর সাথে আমার একটা পরিচয় আছে কাউকে বুঝতে দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না ।
টিয়া কেবল আমার দিকে তাকিয়েই রইল চুপ করে । ওর মুখটা দেখে আমি আমার বুকের ভিতর কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । কেমন একটা কষ্টের কাঁপন !
এই মানুষটাকে দেখার জন্য একটা সময় আমি কি পরিমান অস্থির হয়ে থাকতাম আর এখন কি যে একটা কষ্ট হচ্ছে না এখানে আর থাকা যাবে না । থাকলেই কেবল কষ্ট বাড়বে ।
কেবলই বারবে ।
বন্ধুর কাছে বিদায় নিয়ে হাটা দিলাম ।

আবার ফোন বাজছে । নিশি ফোন দিয়েছে । আমি মনে মনে হাসলাম । মেয়েটা পাঁচ মিনিটও রাগ ধরে রাখতে পারে নি ।
-কি হল ? ফোন দিবা না বলে ?
আমি হাসি ।
-একটু আসলে কি হবে ? আমি নিচে নামবো না । বারান্দা দাড়িয়ে দেখবো ।
এই মেয়েটার পাগলামো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।
আমি ফোন রেখে দিলাম । সারাটা রাত একদম ঘুম হয়নি । এখন একটা শান্তির ঘুম খুবই দরকার ।

আমি রিক্সায় উঠে পড়লাম । শরীর খুব বিশ্রাম চাইছে কিন্তু মন ?
মন বলছে নিশির সাথে একটু দেখা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ?
ঐ দিনও আমি মনের কথাটাই শুনেছিলাম । যখন ফিরে আসছিলাম খুব চাইলাম যে টিয়ার দিকে ফিরে চাইবো না ।
কিছুতেই চাইবো না ।
কিন্তু না তাকিয়ে পারলাম না । ফিরে চাইতেই হল । টিয়া আমার দিকেই তাকিয়েই ছিল ।
ওর চোখের দিকে তকিয়ে কেমল কষ্টের ফোয়ারাটা আর একটু জোরে বইতে শুরু করল ।
আর কিছু না ।
ঐ দিন যেমন কষ্ট বাড়লেও আমার মন বলছিল ফিরে তাকাতে তাই তাকিয়েছিলাম ।
আজও মনের কথাটাই শুনলাম ।
নিশির বাড়ির সামনে গিয়ে ফোন দিলাম ওকে ।
-আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ?
-আবার তুই ?
-তুই ফোন কেন দিয়েছিস কেন ? যা তুই বাসায় যা । বাসায় গিয়ে ঘুমাগা যা ।
-চলে যাবো ? তোমার বাসার সামনে এসেছিলাম । আচ্ছা যাই !
-সত্যি ?
-হুম । বারান্দায় আসো । দেখতে চেয়েছিলা । দেখো ।
আমি রিক্সায় বসে নিশির বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই নিশির দেখা পেলাম । তবে বারান্দায় না গেটে ।
ও এতো জলদি নিচে নেমে এল কিভাবে ?
নিশি আমার সামনে এসে দাড়াল । আমার হাত ধরে বলল
-চল ।
-কোথায় যাবো ?
-বাসায় চল ।
-এই জন্য কিন্তু আমি আসতে চাই নি ।
-এসেছ কেন ? কে আসতে বলেছে ?
-নিশি !
নিশি বলল চোখ
-রাঙ্গিয়ে লাভ নাই । চল ।
-একটু বোঝার চেষ্টা কর । এভাবে বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না ।
-না হলে না ।
-দেখো আমি খুব ক্লান্ত । আমার ঘুমানো খুব দরকার ।
-আমার বাসায় বিছানা নাই ?
আমি আর কোন যুক্তি দেখাতে পারলাম না । আর নিশি যখন একবার বলেছে আমাকে ওর বাসায় না নিয়ে শুনবে না । যেতেই হল । নিশি বলল
-তুমি শাওয়ার নিয়ে আসো আমি তোমার জন্য খাওয়া রেডি করি ।
-এতো সকালে কি করবা ?
-তুমি যাও তো আমি দেখছি ।

বেশ সময় নিয়ে গোছল করলাম । বাথরুম থেকে বের হয়ে কাপড় পড়লাম । খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি টেবিলে ধোয়া ওঠা ভাত ।
পাশে আলু ভর্তা ।
এতো জলদি ভাত রাধলো কিভাবে মেয়েটা ?
আমি টেবিলে বসতে বসতে নিশি ডিম ভাজা নিয়ে এল । বলল
-আপাতত এই টুকু খেয়ে ঘুম দেও । দুপুরে অনেক কিছু খাওয়াব ।

আমি যখন খাচ্ছিলাম নিশি আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে ছিল । মুখে ভাতের নলা নেওয়ার সময় কি মনে হল বললাম
-খাবে ?
-খাইয়ে দিলে খাবো ।
আমি হাসলাম । ভাতের নলা টুকু ওর মুখে তুলে দিলাম । আর একবার ভাত মাখিয়ে ভাত মুখে তুলে দেবো দেখি ওর চোখে পানি ।
এই মেয়েটা এমন কথায় কথায় কেঁদে ওঠে কেন ? বললাম
-এখানে কাঁন্নার কি হল ?
চোখ ভরা জল নিয়ে নিশি বলল
-কিছু হয় নি ।
তারপর হাসল । কি অদ্ভুদ সুন্দর সেই হাসি । আমি কেবল তাকিয়ে থাকি ।


টিয়ার যেদিন বিয়ে হয় মনে হয়েছিল বেঁচে থাকার বোধহয় আর কোন কারনই নেই । কিন্তু এখন এই মেয়েটা আমাকে কি ভালবাসাতেই না জড়িয়ে রেখেছে । কি আশ্চার্য ভাবে !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×