somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ মাঝরাতের একা মেয়েটি (শেষ পর্ব)

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাতের একা মেয়েটি (১ম পর্ব)
বাসায় আসলাম কিভাবে আমি ঠিক বলতে পারবো না ! কেবল মনে হচ্ছিল মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড বুঝি এখনই আমার পিছনে ছুটে আসবে । যেভাবে মেয়েটির গলায় ছুরি চালিয়েছে ঠিক তেমন ভাবে আমার গলায় ছুরি চালাবে !
আর একবার মনে হল এই বুঝ পুলিশ চলে আসলো ! আমার দিকে বন্দুক তুলে বলবে
-হাত তুলে সামনে আসুন !
আমি বলব
-আমি কিছু করি নি ! আমার কোন দোষ নাই !
-হাত উচু করুন ! আপনাকে গ্রেপ্তার করা হল ।
আমি আর কিছু চিন্তা করতে পারছি না । ভাগ্য ভাল যে ১২ নাম্বার পেয়ে গেছিলাম পরীবাগের কাছে এসেই ।
যখন বাসায় নিজের বিছানায় এসে হাজির হলাম তখনই জানে যেন পানি এল । ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি খেলাম । যদিও শীত কাল ! আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঠিক হয় নি ওখানে ! আসলেই ঠিক হয় নি !
এতক্ষনে নিশ্চই পুলিশ চলে গেছে ওখানে । ডিবি অফিসের একদম কাছেই খুনটা হয়েছে ! খবর তো পাওয়ারই কথা ! টিভিতেও নিশ্চই দেখাবে !
এই কথাটা মনে হতেই আমি তাড়াতাড়ি করে টিভি অন করলাম !
আজকাল কার নিউজ চ্যানেল গুলা খুব ফার্ষ্ট ! যেখানেই ক্রাইম হোক না কেন সেখানে পৌছে যায় ঠিক সময় মত !
আমি সব গুলো নিউজ চ্যানেল ঘুরে দেখলাম !
নাহ !
এখনও যায় নাই !
আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে লাগলাম !
বারবার সেই মেয়েটির চেহারা ভেসে উঠছিল ! মেয়েটার চোখ কেমন খোলা ছিল ! যদিও আলো খুব একটা আলো ছিল না কিন্তু মেয়েটির খোলা চোখ দেখা যাচ্ছিল পরিস্কার !
আমি আরো দুই ঘন্টা অপেক্ষা করলাম টিভির সামনে মেয়েটির মৃত্যু সংবাদ দেখার জন্য । কিন্তু মেয়েটির কোন খোজ পাওয়া গেল না টিভি পর্দায় !
শেষ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েই পড়লাম !

সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে ! আমি মুখ না ধুয়েই টিভি অন করলাম ! কিন্তু এইবারও আমাকে হতাশ হল । কোন চ্যানলেই মেয়েটার খুনের কোন সংবাদ পেলাম না !
আশ্চর্য ! এমন তো হবার কথা না !
টিভি বাদ রেখে পিসি চালু করলাম ! নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে নিশ্চই পাওয়া যাবে !
কিন্তু সেখানেও কিছু পেলাম না ! আশ্চার্য ব্যাপার ! এমন তো হবার কথা না ! একটা মেয়েকে এভাবে জবাই করে খুন করে ফেলল অথচ কেউ জানলো না ! এটা হতে পারে নাকি ?
মেয়টার লাশটা রাস্তার পাশে এমন করে পরে রইলো অথচ একটা মানুষের চোখে পড়লো না ? এটা কেমন করে হয় ?
আচ্ছা এমন কি হতে পারে যে আমি চলে আসার পর ছেলেটা আবার ফিরে গেছে সেখানে ! মেয়েটার লাশ নিয়ে কেটে পরেছে !
কিন্তু রক্ত ?
ঐটার কি হবে ?
সব রক্তের দাগও কি মুছে ফেলতে পারবে নিমিশেই ?
একটা মানুষে চোখে পরবে না ? এটা কেমন হয় ?
এটা কেমন করে হয় ?

আমি খানিকক্ষন কেবল ঝিম মেরে বসে রইলাম ঘরের ভিতর । প্রথমে মনে করেছিলাম যে আজকে আর টিউশনিতে যাবো না । কিন্তু বিকাল পর্যন্ত টিভির সামনে বসে থাকার পরেও যখন মেয়েটির মৃত্যুর কোন খবর আমি পেলাম না তখন নিজের কৌতুহল আর ধরে রাখতে পারলাম না ।
যদিও মনে হচ্ছিল যে কাজটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু নিজের কৌতুহল কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছিলাম না । আমি একটু আগে আগেই বেরিয়ে পড়লাম । সন্ধ্যার বেশ আগেই মিন্টু রোডে পৌছে গেলাম । আমার মোটামুটি স্পষ্টই মনে আছে যে ঠিক মিন্টু রোডটাতে ঢুকতেই একটু গিয়েই মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম ।
আমি খানিকটা কাঁপা পায়েই সেদিকে হাটা দিলাম । কিন্তু ঠিক জায়গাটা আমি খুজে পেলাম না । বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে গেলেও আম কোন লাশ কেন রক্তের এক বিন্দুরও খোজ পেলাম না ।
লাশ পাবো না সেটা তো বুঝতেই পারছিলাম কিন্তু তাই বলে একটুও রক্তের চিহ্ন পাবো না ?
মানলাম মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড একটু পরে এসে মেয়েটির লাশ নিয়ে গেছে কিন্তু রাস্তায় যে রক্ত পড়েছিল সেটার কি হবে ?
যত ভাল করেই রক্তের দাগটা মেটানোর চেষ্টা করা হোক না কেন কিছু না কিছু চিহ্ন রয়ে যাবেই ।
আমার ঘাড়ে কেমন যেন ভুত চাপলো । আমি খানিকটা রাস্তার উপর উবু হয়ে রাস্তা পরীক্ষা করা শুরু করলাম । রক্ত আমাকে পেতেই হবে ।
-এই যে ব্রাদার কি করেন ?
আমি মাথা উচু করে দেখি ট্রাফিক পুলিশ । একটু বয়স কম মনে হল । তা না হলে আমাকে আবার ব্রাদার ডাকবে কেন ? যাই হোক আমি বললাম
-আসলে আমার একটা আংটি হারিয়ে গেছে এই খানে । সেইটা খুজছে ।
-কবে হারিয়েছে ?
গত কাল বলতে গিয়েও বললাম
-গত পরশু দিন ।
পুলিশ লোকটা বলল
-খামোখা সময় নষ্ট করে লাভ নাই । পাবেন না ।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
-দেখি !
তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলাম । আরো মিনিট বিশেক পরে মনে হল আসলেই কোন লাভ না । কোন রক্তের চিহ্ন আমি পাবো না ।

আমি আরো আসে পাশে দেখার চেষ্টা করি ! কিন্তু কোন লাভ হয় না ! আসে পাশে এমন কিছু নাই যেটা গত কালকের ঘটনার সাক্ষী বহন করে ! তাহলে ?
এখন ?

আমি মোটামুটি হতাশ হয়েই চলে যাচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে আমাকে একজন ডাক দিল ! প্রথমে ভেবেছিলাম সেই পুলিশ কিন্তু তাকিয়ে দেখি পুলিশ না ! একজন বুড়ো মত লোক !
-জি বলেন !
-আপনে কি খুজতাছিলেন ?
-এই তো আমার হারিয়ে যাওয়া আংটি !
-আংটি ? নাকি অন্য কিছু ?
আমি খানিকটা চমকালাম ! কি বলতে চাচ্ছে এই লোক ! আমি ঠিক মত বুঝতে না পেরে বললাম
-আমি আংটিই খুজতেছি !
বুড়ো লোকটা আর কিছু না বলে চলে গেল । কিন্তু আমার মনে শান্তি লাগলো না । কেন জানি মনে হল বুড়ো লোকটা কিছু জানে ?
আসলেই কি জানে নাকি !

টিউশনীর দেরী হয়ে যাচ্ছিল তাই আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না ।
ফেরার পথে যখন আসছিলাম বারবারে মনে হচ্ছিল আজকেও বুঝি মেয়েটাকে দেখতে পাবো ! যখন সেই জায়গা টা পার হলাম যেখানে কাল মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল সেখানে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষন ! কিছুই হল না !
কিছু হবে না, জানতাম ।
কিন্তু যখন ফেরার পথে পা বাড়ালাম খানিকটা চমকে উঠলাম । দেখলাম সেই বুড়া লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ।
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম
-আপনি হাসছেন কেন ?
-এমনি !
আমি চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন । তারপর বললাম
-আপনি কিভাবে জানেন যে আমি ওখানে আমার আংটি খুজছিলাম না ?
লোকটা তবুও কিছু না বলে চুপ করে রইলো ।
-বলবেন প্লিজ ।
আবারও খানিক্ষন চুপ করে থেকে লোকটা বলল
-কাইল রাইতে একটা মাইয়া রে দেখছেন এই হানে ?
-হুম !
-অনেকেই দেহে !
-তারপর ?
-তার আর পর নাই । এই সব নিয়া না ভাবাই ভালা ।
-মানে কি ? আমি কাল রাতে মেয়েটিকে ....
লোকটা আমাকে হাত দিয়ে থামায়ে দিল । তারপর বলল
-আমি জানি । আমি নিজেও দেখছি ! কিন্তুক, সেই গুলা হাচা না !
-মানে কি ? আমি তো পরিষ্কার দেখলাম !
লোকটা বলল
-এতো কিছু ভাইবেন না , যা দেখছেন ভুইলা যান । এডি এই জগতের কিছু না । বাড়িত যান । যায়া একটা ঘুম দেন !

লোকটা আর দাড়ালো না ! আমি কয়েকবার ডেকেও লোকটার কোন সারা শব্দ পেলাম না ।
লোকটাও যখন দেখেছে বলল তার মানে কিছু একটা হয়েছে । আমি ভুল দেখি নি । কিন্তু কথা হল লোকটা কেন বলল যে এই সব এই দুনিয়ার কছু না । যা দেখেছি তা ভুলে যেতে এই কথা বলার মানে কি ?

বাসায় এসে আবার পিপিলিকায় সার্চ দিলাম । আমাদের নিজেদের সার্চ ইঞ্জিন ! কেন পরের টা আর ব্যবহার করবো ? লিখলাম মিন্টু রোডে তরুনী খুন ।
একদম প্রথম নিউজটাতেই আমার নজর আটকে গেল ।
প্রথম আলোর একটা খবর !
নিউজটার শিরোনামটা এই রকম: মিন্টু রোডের তরুনীর জবাই করা লাশ । নিউজটা তে লেখা
গতকাল ঢাকার মিন্টুরোড থেকে এক তরুণী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ শুক্রবার সকাল বেলা লাশটি উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদনে-র জন্য দিএমসি হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে । রমনা থানার ওসি (তদন্ত) আবু জিহাদ জানান, পথচারীর সংবাদ ভিত্তিতে.......... পুলিশ ধারণা করছে................. পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ উক্ত স্থানে ফেলে গেছে। তবে পুলিশ এ নিহত তরুনীর কোনো পরিচয় সনাক্ত করতে পারেন.......
সংবাদ পড়া শেষে তারিখের দিকে তাকাতেই আমার চোখ চড়ক গাছ । সংবাদটা আজকের না । সংবাদটা ২০০০ সালের ২১ শে মার্চের !

আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না । কালকে রাতে ওখানে কিছু হয় নি এটা নিশ্চিত । তবে আমি কিছু একটা দেখেছি এটাও নিশ্চিত । আর আমি যে ভুল কিছু দেখি নি তা ঐ বুড়ো লোকটার কথাতেই প্রমান হয় ।
তাহলে আমি কি দেখলাম ?
আর কেনই বা দেখলাম !


facebook
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×