-আজকে তোর বাবা তোর পাশে ঘুমাক ?
আমি পিসিতে একটা মুভি দেখবো ভাবছিলাম ! খুজছিলাম কোন মুভিটা দেখা যায়, তখনই মা রুমে এসে কথাটা বলল
আমি বললাম
-কিসের জন্য ?
-এমন করে কেন বলছিস ?
-না মা ! কোন লাভ তো হচ্ছে না ! লাভ হলে আমি তো নিজেই বলতাম !
-কিন্তু তাই বলে এমন করবি ? না ঘুমিয়ে থাকবি ?
মায়ের চেহারা দেখে মনে হল মা একটু কষ্টেই আছে ।
কষ্টে কেন থাকবে না ?
একমাত্র ছেলে যদি রাতের বেলা ঠিক মত ঘুমাতে না পারে তাহলে যে কোন মা বাবাই কষ্টে থাকবে !
মা বলল
-কাল একবার যাবি ?
-কোথায় যাবো ?
-তোকে বলেছিলাম না, দরবার বাড়ির পীর সাহেবের কাছে !
-কোন লাভ হবে না মা ! এর আগেও তো গেছি ! কোন কিছুই হয় নি !
-এবার হবে ! উনি খুব কামেল মানুষ ! একটা কিছু ঠিকই বের করে ফেলবে !
আমি অনিচ্ছা সত্তেও বললাম
-আচ্ছা দেখা যাবে ! যাও তো এখন ! আমি মুভি দেখবো !
মা যাওয়ার সময় আমার মাথায় দোয়া পড়ে ফু দিয়ে গেলেন ! তারপর বললেন
-কিছু হলেই ডাক দিবি ! আমি আছি তোর পাশেই ! আর দরজা বন্ধ করবি না !
-আচ্ছা মা !
মা চলে গেল ! একবার মনে হল মাকে বলি বাবাকে পাঠিয়ে দিতে ! কিন্তু বললাম না ! এতো বড় ছেলে যদি বাবা-মায়ের সাথে ঘুমায় তাহলে মানুষ শুনলে কি বলবে ! আমার বন্ধুরা শুনলে তো হাসাহাসি করবে !
অবশ্য হাসাহাসি করারই কথা !
এই যুগে কেউ যদি শুনে আমি রাতের বেলা একা একা ঘুমাতে ভয় পাই তাও আবার ভুতের ভয় তাহলে মানুষ জন কি বলবে ?
অবশ্য ঠিক ভুতের ভয় না !
আমি পিসির দিকে মন দেই ! সুমন কাছ থেকে গতকাল বেশ কিছু মুভি নিয়ে এসেছি ! দেখা যাক আজকে কোন টা দেখা যায় !
ঘরের ভেতর আলোয় ভরপুর ! এর আগেও আমি এই রকম লোকের কাছে এসেছি কিন্তু সব জায়গায় কেমন জানি ভন্ড মনে হয়েছে । এক লোকের গাছে গেছি ! মিরপুরের এক চিপায়া তার দরবার হল !
ঘরে ঢুকতেই কেমন একটা বাজে গন্ধ পেলাম ! বুঝতে কষ্ট হল না ওটা ছিল গাজা গন্ধ ! দয়াল বাবা গাজা খোর !
ভাল করে তাকিয়ে দেখি বেটা তখনই কেমন ঢুলছে ! আমি চলেই আসতাম কিন্তু বাবার কারনে আসতে পারলাম না ! আমার কোন কালেই এই সকল বাবার উপর বিশ্বাস ছিল না কিন্তু মা কোথা থেকে নাকি খোজ নিয়ে এসেছে এই বাবা নাকি খুব কাজের !
আমি কি বললাম কিছু শুনলো বলে মনে হল না ! বলল যে আমার বিষয়টা নিয়ে সে এখন চিন্তা করবে ! জীন দের দায়িত্ব দেবেন খোজ খবর নেওয়ার জন্য ! আমরা যেন আরও এক সপ্তাহ পরে আসবে ! এবং আসার সময় এক হাজার টাকা বাবার দান বাক্সে দিয়ে আসতে হল !
যত্তসব ভন্ডামী !
তারপর আর যাই নি ! কিন্তু এই লোকের কাছে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না ! লোকটা বেশ সাধারনই মনে হচ্ছে ! চেহারা সুরৎ বেশ ভাল ! গায়ের রং ফরসা ! চোখে সুরমা দেওয়া মুখে লম্বা দাড়ি !
মুখটা সব সময় হাসি হাসি !
তবে লোকটার চোখ বেশ তীক্ষ ! চোখ দিয়েই যেন অনেক কিছু সে বুঝে ফেলে !
লোকটার নাম কি যেন !
মা বলেছিল আমার ঠিক মনে নেই ! মা বলেছিল ইনি নাকি অনেক কামেল হুজুর ! এর আগেও অনেক জীন পেত্নী সারিয়েছেন !
মায়ের তো ধারনা আমাকে পেত্নীতে ধরেছে !
কামেল হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার নাম কি বাবা ?
গলার স্বরও বেশ মোলায়েম ! তীক্ষ চোখের সাথে এই মোলায়েল কন্ঠস্বর যায় না ! আমি বললাম
-জি আমার নাম তানভীর রহমান !
-তুমি ভাল আছো ?
আমার কেন জানি হাসি চলে এল ! মনে হল যেন আমি পিচ্চি এক ছেলে ! এক আঙ্কেলের বাড়িতে আমি বেড়াতে এসেছি আমি কেমন আছি তাই জানতে চাচ্ছে !
আমি হাসি আটকিয়ে বললাম
-জি ! আমি ভাল আছি !
মা পাশেই ছিল ! এতোক্ষন মা কিছু বলার জন্য আকুপাকু করছিল ! শেষে চুপ করে থাকতে না পেরে মা বলেই ফেলল
-কি বলিশ ? ভাল আছিস ?
তারপর হুজুর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল
-না হুজুর সাহেব ! আমার ছেলেটা একদম ভাল নেই ! কত দিন রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পারে না আপনাকে কি বলবো ! ওর সাথে সাথে আমার আর ওর বাবারও ঘুম নেই চোখে !
হুজুর শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমার কেন জানি মনে মনে একটু অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো ! হুজুর আবার হাসি মুখে বললেন
-আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দিন ! ঠিক আছে !
মা চুপ করলো !
হুজুর বললেন
-তুমি ঠিক কি দেখো বলতো ?
-জি কিছু দেখি না ! কেবল রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে এক পর্যায়ে আমি স্বপ্নে দেখি একটা মেয়ে আমার বুকের উপর বসে আসে ! তারপর সে আমার গলা চেপে ধরে ! আমি তার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি কিন্তু কিছুতেই পারি না ! যখন মনে হয় আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমি মারা যাচ্ছি তখন আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি !
-মেয়েটার চেহারা কেমন লক্ষ্য করেছ ?
আমি একটু মনে করার চেষ্টা করলাম ! পারলাম না !
-জি না ! আসলে আমি প্রতিবারই নিজেকে মেয়েটির হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে ব্যস্ত থাকি । মেয়ের চেহারার দিকে তাকানোর সময় পাই না । মনেও থাকে না ।
-হুম ! কত দিন ধরে এই সমস্যা ?
আমার বলার আগেই মা বলল
-প্রায় এক মাস । তার আগে থেকেই মনে হয় শুরু হয়েছে । আমাদের কে বলেছে একমাস আগে !
-আর কোথাও গিয়েছিলেন ?
-কোথায় যাই নি বলেন ? ডাক্টার কবিরাজ কিছু বাদ দেই নি ! কিন্তু কেউই সারাতে পারে নি !
আসলেই বেশ কয়েক জনের কাছে গিয়েছি ! কিন্তু কেউই স্বপ্ন টা আটকাতে পারে নি ! কতজন কত রকম পরামর্শ দিয়েছে কিন্তু কাজ হয় নি একটাতেও ! সেই মেয়ে কে ঠেকানো যায় নি ।
মা আরো কত কিছু বলতে লাগলো আর হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে সেই কথা গুলো শুনতে লাগলো আর কি যেন ভাবতে লাগল !
আরও আলোচলা হল ! বাবা চুপ করে শুনছিল সব !
হুজুর এক পর্যায়ে বলল
-বোঝা যাচ্ছে কোন মেয়ে জীন আপনার ছেলের পিছনে লেগেছে । আমি বলবো আপনার ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিন !
-বিয়ে ?
-বিয়ে ?
-বিয়ে ?
আমরা তিনজনই এক সাথে শব্দটা উচ্চারন করে উঠলো !
কদিন আগে আমার বিয়ে কথা বার্তা চলছিল ! ঠিক চলছিল বললে ভুল হবে নিশির বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল । আমি মা বাবাকে কয়েকবার বললাম নিশির বিয়ের কথা বললাম কিন্তু কেউ রাজি হল না !
বাবা তো আমাকে পরিস্কার বলে দিল সে কিছুতেই আমাকে বিয়ে দিবে না ! যতদিন না আমি নিজের পায়ে দাড়াচ্ছি !
হুজুর বলল
-আমার মনে হয় কোন মেয়ে জীনের নজর পরেছে আপনার ছেলের উপর ! যদি মেয়ে জীনটা আপনার ছেলের উপর আছর করতো তাহলে একটা ব্যাবস্থা হয় তো করা যেত । কিন্তু জীন টা কেবল স্বপনের ভিতরেই ওকে দেখা দিচ্ছে ! এই ক্ষেত্রে যাই করি না কেন খুব একটা কাজ হবে না !
বাবা এবং মা দুজনেই চুপ করে শুনতে লাগলো কামেল হুজুরের কথা ! হুজুর আবার বলল
-রাতের বেলা ওকে এক পায় বলেই মেয়ে জীন টা এমন করে !
মা বলল
-কিন্তু আমি অথবা ওর বাবা তো ওর সাথে ঘুমিয়ে দেখেছি । কিন্তু কোন কাজ তো হয় নি !
-হওয়ার কথাও না ! আপনারা তো ওর বাবা মা ! আপনাদের কে তো আর ঐ জীনটা ঈর্ষা করবে না ! কিন্তু যদি ওর বউ থাকে তাহলে মেয়েজীন টা আসবে না ! জগতে সব মেয়ে প্রজাতিট স্বভাব একই রকমের হয় !
আরও আলোচনা হতে লাগো !
হুজুরের কাছ থেকে ফিরে এসে দেখি বাবা মা দুজনেই খানিকটা বিষন্ন ছিল ! রাতের বেলা খাওয়ার সময় মা বলল
-তোর ঐ বন্ধুটার কি বিয়ে হয়ে গেছে ?
-কার কথা বলছো মা ?
-ঐ যে ! নিশি না কি যেন নাম !
-কেন ?
-দেখ প্রতি রাতে তোর এই ভয় পাওয়া আমাদের আর ভাল লাগছে না ! আমরা আর নিতে পারছি না ! সব কিছুতেই তো করে দেখলাম কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হল না ! এটাও শেষ চেষ্টা হিসাবে করে দেখি ! আমি আর তোর বাবা মিলে ঠিক করেছি তোকে বিয়েই দিয়ে দিবো !
-কিন্তু মা আমি তো এখনও কিছু করি না !
-এখন করিস না পরে করবি ! তুই তো সারা জীবন বসে থাকবি না ! আর তোর বাবার তো কম নেই ! তাই ঠিক করলাম বিয়ে যখন করবি তোর পছন্দ টা কেই আগে প্রাধান্য দেই ! হয়েছে বিয়ে ?
-না ! এখনও হয় নি ! সামনের সপ্তাহে নাকি নিশিকে দেখতে আসবে বলে শুনেছিলাম !
তারপর খুব দ্রুতই সব কিছু হতে লাগলো ! বাবা আর মা কিভাবে নিশির বাবাকে রাজি করিয়ে ফেলল কে জানে ? তবে না রাজি হওয়ার মত কোন কারনও ছিল না !
বাবা চাইছিলেন আগে বিয়ে টা হয়ে যাক ! দুজনের পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতা করা যাবে ! দুসপ্তাহয়ের ভিতর আমাদের বিয়ে হয়ে গেল !
বাসর রাতে ঢুকার সময়ও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আসলেই নিশির সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে ! কেমন যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল !
বাসর ঘরে ঢুকে দেখি ঘর আলো করে আমার বউ বিছানার উপর বসে আছে ! আমি ঘরে ঢুকতেই আমার দিকে মাথা তুলে একটু হাসলো !
বসতে বসতে বললাম
-সত্যিই তাহলে তুমি আমার হয়ে গেলে ?
নিশি হেসে বলল
-কি জানি ! তোমার পেত্নী যদি আবার এসে হাজির হয় ! তখন ?
-পেত্নী আসবে কেমন ? পেত্নী তো আমার সামনেই বসে আছে !
-এই খবরদার বলছি ! আমাকে পেত্নী বলেছো তো ?
-বলবো না ! এমন শয়তানি বুদ্ধি তুমি কিভাবে দিলে বল তো ? এবং কিভাবে বুদ্ধিতে কাজও হয়ে গেল !
নিশি মুচকি হেসে বলল
-আমার সাথে থাকো আরও জানতে পারবা ! আস্তে আস্তে !
-তাই না ! দাড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা ! আমার সাথে হ্যাঙ্কিফ্যাঙ্কি করলে.....
এই বলে আমি নিশির দিকে এগিয়ে যাই !
-এই খবরদার বলছি ! কাছে আসবে না !
-কাছে আসবো না ! দাড়াও.....
আসলে যখন নিশিকে যখন বিয়ে করতে চাইলাম বাবা কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না ! সব শেষে আর উপায় নাদেখে নিশি এই বুদ্ধিটা দিল ! ভাবতেই পারি নি স্বপ্নের এই বুদ্ধিটা কাজ করে যাবে ।
প্রাপ্তি স্বীকার
গল্পঃ একটি দুঃস্বপ্ন এবং একটি বিবাহের ইতি কথা !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তুই পাগল তোর বাপে পাগল
রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।
ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন
যত দোষ নন্দ ঘোষ...
"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....
বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়
চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।
খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আরও একটি কবর খোঁড়া
গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন