somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পগল্পঃ বাইশ শতকের বিয়ে !!

১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুমন মনের ভিতরে একটা আলাদা আনন্দ অনুভব করছে ! আজকে সে মিনিনকে বিয়ের জন্য অফিশিয়াল ভাবে প্রোপোজ করতে যাচ্ছে ! অনেক দিন তো ডেট হল ! এবার বিয়ের দিকে এগোনো যাক ! বিয়ের আগে এটাই মনে হয় সুমনের শেষ ডেট ! মনের ভিতর আনন্দের এটাই আসল কারন !

একটা সময় সুমন ধরেই নিয়েছিল যে ওর পছন্দের মত কাউকে পাওয়া যাবে না । ছোট বেলা থেকেই সুমন একটু অন্য রকম ! যদিও প্রত্যেকটা মানুষই একে অন্যের থেকে আলাদা তবুও কিছু বেসিক জিনিসে সবার মানষিক অবস্থা প্রায় একই রকম ! কিন্তু সুমনের সেই বস ক্ষেত্রে একেবারেই আালদা !

ও যেমন টা চিন্তা করে, যেমন টা চায় ঠিক তেমন কেউ ওর জীবন সঙ্গী হবে এটা যেন একটা স্বপ্ন মনে হচ্ছিল । এনবিএমকে এখন আসলেই একটা কাজের প্রতিষ্ঠান মনে হচ্ছে ওর কাছে !



বিকাল চারটার সময়ে মিনিনের সাথে দেখা করার কথা ! সুমন একটু আগে আগেই পৌছে গেল ! মোটামুট নিশ্চিত মিনিন কিভাবে আসবে কি সাজ দিয়ে আসবে এমন কি, কি পরে আসবে, এটাও সুমন খানিকটা অনুমান করতে পারে !! নিশ্চই ওর পছন্দের কোন পোষাক ! এনবিএম (NBM) থেকে সুমনকে জানানো হয়েছে ওদের সিএসএম (CSM) স্কোর ৮৯ ! ৯১ এর ভিতর ৮৯ ! ভাবা যায় ?
এর অর্থ হল সুমন আর মিনিনের চিন্তা ধারা প্রায় একই রকই ! অবশ্য দুই টা ক্ষেত্রে এক না ! না হোক ! মোটামুটি ৭০ পার হলেই ন্যাশনাল বিউরো ফর ম্যারেজ বিয়ে করার অনুমুতি দিয়ে দেয় ! আর যদি কোন ভাবে ৬০ এর নিচে স্কোর থাকে তাহলে তো কোন ভাবেই বিয়ে করার অনুমুতি পাওয়া যাবে না !


সুমন বসেছে রেস্টুরেন্টার ঠিক দক্ষিন পাশের একটা বড় জানালার কাছে । ১১০ তলা রেস্টুরেন্টটার এইটাই সব থেকে উচু এবং ছোট হল রুম ! মাত্র অল্প কয়েকজন মানুষ বসা তাদের প্রিয় জনদের নিয়ে ! এখানে বুকিং পাওয়াই খানিকটা কষ্টের বিষয় ! বিশেষ করে যে কেউ চাইলেই এখানে আসতে পারে না ! তবে নতুন বিয়ে হবে কিংবা হতে যাচ্ছে এমন সার্টিফিকেট দেখালে এই স্থানে বুকিং পাওয়া যায় ! যদিও পকেট থেকে বেশ মোটা অংকের অর্থ গায়েব হয়ে যায় ! তবুও প্রিয় মানুষটিকে খুশি করে এমন সকল কাজ করা যায় নির্দ্বিধায় !
প্রিয় মানুষ ?
আপন মনেই হেসে উঠল ও ?
আসলেই প্রিয় মানুষ !
নিজের পছন্দের প্রিয় মানুষ ! এই নিয়ে বেশ কয়েকবার মিনিনের সাথে ওর দেখা হয়েছে ! একে অন্যের অনেক কাছে চলে এসছে দুজনই !
এমন কি গত পরশুদিন মিনিনের ঠোটে খাওয়া চুমোটার স্বাধ যেন এখনও সুমনের ঠোটে লেগে আছে ! চুম খাওয়ার পরে মিনিনের ভেতর কেমন একটা অন্য রকম চাঞ্চল্য দেখেছিল ও ! সুমন নিশ্চিত এর আগে মেয়েটার আর কাউকে কোন দিন চুম খায় নি ! তাই তো একটু ওমন আচরন করছিল ! সুমনের মনটাই ভরে গিয়েছিল মিনিনের সেই ভাল লাগা মিশ্রিত অস্বস্তি আর লজ্জা ঘন মুখটার দিকে তাকিয়ে !
সুমন আবারও খানিকটা হেসে উঠলো আপন মনে !

গতকালই মিনিনকে বিয়ে করার পারমিশন হাতে পেয়ে গেছে এনবিএম থেকে ! এখন চাইলেই যে কোন দিন ওকে বিয়ে করতে পারে ! এই সুসংবাদটাই দেওয়ার জন্য আজকে এই দেখা করা !


অথচ একটা সময় সুমনের মনে হচ্ছিল ওর বুঝি আর বিয়েই হবে না ! সুমনের সাথে সিএসএম বা ক্যারেকটার সিমিলিয়ারিটি ফর ম্যারেজ স্কোরে ৫০ এর আশে পাশে কোন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিল না ! কত শত মেয়ের খোজ পাওয়া যায় কিন্তু এনবিএম থেকে যখন রিপোর্ট আসে তখন পিছিয়ে যেতে হয় !


একুশ শতকের শেষের দিকেই এই নতুন নিয়ম টা প্রথম চালু হয় ! পৃথিবী অন্যান্য দেশের মত এদেশও তখন জ্ঞান বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে ! কৃত্রিম বোরট তৈরি করছে যার সাথে আসল মানুষের তেমন কোন পার্থক্যই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ! নিউক্লিয়ার শক্তির সুষ্ঠ ব্যবহার করে জ্বলানী সমস্যার সমাধান হয়েছে, পথে পথ চালু হয়েছে এয়ার বাস এয়ার কার ! খাদ্য সমস্যা সমাধান হয়েছে, তার উপর রোদ বৃষ্টিও খানিকটা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে ! আরও কত কিছু !

কিন্তু এতো উন্নতির পরেও একটা সমস্যা খুব ভাল দেখা দিল !
বিবাহিত নারী পুরুষের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যেতে লাগলো খুব হারে ! মানুষ বিয়ে করছে ঠিকই কিন্তু কোন বিয়ে চার মাস মাসের বেশি টিকানো দায় হয়ে যাচ্ছিল ! এমনিতেই এ আধুনিক যুগে এসে মানুষের বাচ্চা কাচ্চা নেওয়ার প্রতি আগ্রহ করে গিয়েছিল বিবাহ বিচ্ছেদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে বাচ্চা নেওয়ার হার কমে আগে আরও বেশি করে ! এর ফলে কয়েক বছরের ভিতর দেশে জনসংখ্যা কমে যেতে শুরু করলো আশংকা জনকভাবে !
বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে বের করলেন যে এই আধুনিক যুগে বিবাহ বিচ্ছেদএর প্রধান কারনটাই হল চারিত্রগত মিলের পার্থক্য ! আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন কোন আবেগ বোঝে না তেমনি আধুনিক জীবন যাত্রা কোন প্রকার আবেগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না ! নারী পুরুষ কেউ কাউকে একটুই ছাড় দিতে প্রস্তুত নয় ! যে আছে যার মত, কেউ কারো উপর নির্ভরশীল নয় সে কারনে কেউ কাউকে ছাড়ও দিতে প্রস্তুত নয়, এমন কি একটু মতে অমিল হলেই ঝগড়া বেধে যাচ্ছে ! একটু ঝগড়া থেকে ডিভোর্স !
আইন করে ডিভোর্স থামানোর চেষ্টা করার হলে মানুষ বিয়ে করাই বন্ধ করে দিচ্ছে ! তখন অনৈতিক সম্পর্ক বেশি গড়ে উঠছে !

সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই এনবিএম নতুন পদ্ধতি চালু করেছে ! মানব চরিত্রের মোট ৯১ টি দিকের উপর গবেষনা করে একটা মানদন্ড ঠিক করা হল । দেশের প্রত্যেকটি নারী এবং পুরুষের চরিত্র বৈশিষ্ট, ডিএনএ, ব্লাড সেম্পল আর প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে ডাটা বেজ তৈরি করা হল ! এর পর যারা বিয়ে করতে প্রস্তুত কিংবা বিয়ে করার ইচ্ছা করে তাদের চরিত্র বিশ্লেষনের তথ্য একে অন্যের সাথে মিল করে স্কোর তৈরি করা হয় ! ৯১ এর ভিতর অন্তত ৭৫ এর উপর মিল পাওয়া গেলেই কেবল বিয়ে করার অননুমুতি পাওয়া যায় ! নতুনবা নয় ! অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের জন্য যখন পছন্দ মত মেয়ে কিংবা ছেলে পাওয়া যায় না তখন এনবিএমকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ! তারাই মেয়ে খুজে দেয় !

সুমনের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন টা হয়েছিল ! যে কয়টা মেয়ে পছন্দ করা হয়েছিল তার একজনের সাথেও সিএসএম পয়েন্ট ৫০ পার হয় নি ! সবার শেষে যখন এনবিএমে এপ্লাই করা হল তখনও সেখান থেকে কোন আশানুরুপ খবর আসলো না !
ওরা বারবার বলছিল ওদের ডাটা বেজে ওরা খোজ চালাচ্ছে ! একটু সময় লাগবে !
সুমনের মনে হয়েছিল মেয়ে মনে হয় পাওয়া যাবে না ! কারন সুপার কম্পিউটার দিয়ে পুরো ডাটাবেজ টেক করতে খুব বেশি হলে একদিন সময় লাগার কথা ! তাহলে ?
তাহলে কি ওর মনের মত মেয়ে এই দেশেই নেই !
বাইরের দেশে গিয়ে খোজ করা লাগবে ?
যখন প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক তখনই এনবিএম থেকে খবর এল যে এমন এজনের খোজ পাওয়া গেছে ! মেয়েটির নাম মিনিন !

এনবিএম থেকেই ওদের মিটিং ঠিক করে দেওয়া হল ! আর কিছু বলা হয় নি ! আর কোন তথ্যও সরবারহ করা হয় নি ! অবশ্য সুমনের সে সব দিকে খুব একটা আগ্রহও ছিল না ! আগে মেয়েটির সাথে দেখা হোক, কথা বার্তা হোক, তারপর না হয় এসব খোজ খবর নেওয়া যাবে ।

প্রথম দেখা হওয়ার দিন টা কথা সুমনের এখনও বেশ পরিস্কার মনে আছে । এখনও যেন চোখের সামনে ভাসছে ! অফিসের কাছের একটা রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছিল সুমন ! সারাদিন অফিস করে একটু ক্লান্ত ছিল তারপরেও একটু দুরু দুরু বুক নিয়ে অপেক্ষা করছিল ও !
কেমন হবে মেয়েটি ? ওর পছন্দ হবে তো ? কিংবা মেয়েটি আবার ওকে বিয়ে করবে তো ?
কে জানে ?
দেখা যাবে পরিচয় হওয়ার পর দুজনের ভিতর অনেক কিছুতেই অমিল !

এমন ঘটনা ঘটছিল সুমন যখন কলেজে পড়তো ! একটা মেয়েকে খুব মনে ধরেছিল ! সাহস করে একদিন মেয়েটিকে মনের কথা বলেও ফেলল ! মেয়েটি রাজিও হয়ে গেল ! কিন্তু তারপর থেকেই সমস্যা দেখা দিল ! যত খানি মনে করেছিল মেয়েটি ওর মত আসলেই সেরকম কিছুই না !
শেষে বাধ্য হয়ে সম্পর্ক শেষ করতে হয় ! এবারও তেমন কিছু হবে কি না কে জানে !


এনবিএম থেকে আর কিছুই জানানো হয় নি ! মেয়ে কে ? দেখতে কেমন কোথায় থাকে এসব কিছুই জাননো হয় নি । কেবল নাম টা বলা হয়েছে ওকে ।
মিনিন !
নামটা শুনেই কেমন যেন পছন্দ হয়ে গেল !
মিনিন !
অদ্ভুদ নাম ! অদ্ভুদ সুন্দর নাম !

সুমন সেদিন এমন একটা জায়গায় বসেছিল যেখান থেকে প্রবেশের দরজাটা দেখা যায় ! মিনিন আসার আগে একটু অস্থির বোধ করছিল । কেমন হবে কে জানে এইটা নিয়ে !
কখন আসবে কখন আসবে এমন করছে ঠিক তখনই সুমনের চোখ গেল প্রবেশ পথটার দিকে । কাঁচে ঘেরা দরজা ঠেলে মেয়েটা প্রবেশ করছে রেস্টুরেন্টে !
চেহারাটা গোলগাল তবে চোখ দুটো বেশ ঘন ! দরজা দিয়ে ঢুকেই এদিক ওদিন কাউকে যেন খুজছে মেয়েটি !
কালো মসৃন লম্বা চুল পিছনে একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো ! আর সামনে এক গাছি চুল চেহারার সামনে বারবার চলে আসছে ! মেয়েটি বারবার হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিচ্ছে !
হঠাৎ সুমনের দিকে চোখ পড়তেই মেয়েটি ওর দিকে হাটতে লাগলো ! মেয়েটি পরনে রয়েছে ধবদবে সাদা রংয়ের একটা কামজি সাথে সাদা ল্যাগিংস !
সুমনের কেন জানি মনে হল এই মেয়েটিই মিনিন ! ও নিজে একটা মেয়ের ভিতর যা যা পছন্দ করে মেয়েটির তার সব কিছু বিদ্যামান ! একেবারে কাটায় কাটায় বিদ্যামান !
মেয়েটি আস্তে আস্তে সুমনের কাছে এসে লজ্জা মিশ্রিত চোখে বলল
-আমি মিনিন ! আপনি সুমন, তাই না ?
সেদিন কেবল অবাক ভাল লাগার চোখে মিনিনের দিকে সুমন তাকিয়েই ছিল ! কোন কথা যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না ! একই ভাবে মিনিনেরও একই অবস্থা !
কোন কথা না বলে কেবল লজ্জা মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে ছিল একে অপরের দিকে ! কখন যে সময় চলে গেল কেউ বলতে পারবেন না !

বাসায় ফেরার পর সুমন তখনই মিনিন কে ফোন দিল !
-বলুন !
-আমাকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি নেই তো ?
খানিক্ষন নিরবতা !
তারপর মিনিন বলল
-আপত্তি থাকলে তো দেখা করতে যেতাম না । তাই না ?
-আচ্ছা ! তাহলে আমি কাজগ পত্র রেডি করি ?
-আচ্ছা !!

দেখতে দিন পার হাতে লাগলো ! একে ওপরের সাথে দেখা হতে লাগলো ! সুমন যতই মিনিনের সাথে মিশতে লাগলো ততই অবাক হতে লাগলো ! বারবার কেবল একটা কথাই মনে হতে লাগলো যে একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের এতো মিল কেমন করে হতে পারে !
মিনিনের সাথে কথা বলার সময় সুমনে মনে হত যেন ও ওর নিজের সাথেই কথা বলছে ! কখন ওর মনে চাচ্ছে মিনিনের কথা শুনলে মনে হত যেন এই কথাটাই ও বলতে চেয়েছিল কিংবা এই ও শুনতে চেয়েছিল ! বারবার মনে হয়েছে যে মিনিন কেবল ওর জন্যই সৃষ্টি হয়েছে !



সুমন মিনিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ! ও জানে কিছুক্ষনের ভিতরেই ও চলে আসবে ! তারপর ... নিজের পকেটের রাখা আংটিটার অস্তিত্ব টা অনুভর করলো নিজের মনের ভিতরেই ! মনের ভিতরে আপনা থেকেই একটা খুশির ঢেউ বয়ে গেল !
মিনিনও নিশ্চই খুব খুশি হবে !

সুমন আবার ঘড়ির দিকে তাকালো !
সময়ের আধা ঘন্টা ইতি মধ্যে পার হয়ে গেছে ! মিনিনের কোন দেখা নেই !
কোথায় গেল ? কোন সমস্যা হল নাকি ?

কয়েকবার ফোন করেও মিনিনের সেলফোন টা বন্ধ পাওয়া গেল ! ঠিক মত কিছু বুঝে উঠতে পারলো না ! এমন তো কিছুইতই হওয়ার কথা না ! এটা তো ওর চরিত্রের সাথে যায় না ! এই কদিনে যতবার ওদের দেখা হয়েছে ততবার মিনিন একেবারে ঠিক সময়েই এসে হাজির হয়েছে । বলতে গেলে একেবারে সঠিক সময়ে । কোন কোন সময়ে সময়ের চেয়ে একটু যেন আগেই এসে গেছে !
তাহলে আজকে কি হল ?
তবুও সুমন বসে রইলো ! বারবার মনে হতে লাগলো মিনিন চমে আসবে ! কোন সমস্যা হয়েছে নিশ্চই । চলে আসবে ! ওকে যে আস্তেই হবে !

কিন্তু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত মিনিনের দেখা পাওয়া গেল না ! বিষন্ন মন নিয়েই সুমন নিজের বাসার দিকে রওনা দিন ! শেস বারের মত ফোন করে দেখলো মিনিন কে !
নাহ ! ফোন বন্ধ !

সুমনের মনে হয়েছিল মিনিনের ফোন যে কোন সময়েই এসে হাজির হতে পারে । নিশ্চই বড় কোন ধরেনর বিপদ হয়েছে ! ফোন করে গড়গড় আগে মিনিন ওকে সেই কথা বলবে তারপর হাজারবার সরি বলবে !
কিন্তু দেখতে দেখতে আরও সাত দিনেও মিনিনের কোন খোজ পাওয়া গেল না ! একেবারে যেন গায়েব হয়ে গেল !
এনবিএমে খোজ নিয়েও মিনিনের বাসার কোন ঠিকান পাওয়া গেল না ! সেখানে যে ঠিকানা টা দেওয়া আছে সেই জায়গাটা বেশ কদিন আগেই তাহলে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছে সরকার !

সুমন কিছুই বুঝতে পারছিল না ! এমন তো কিছুতে হওয়ার নয় ! সুমনের মাথায় কিছুতেই ব্যাপারটা ঢুকছিল না ! প্রথমে ওর জন্য কোন মেয়েই পাওয়া যাচ্ছিল না তার পর একজন কে পাওয়া গেল যে কিনা একেবারে তার মত ! কদিন তার সাথে মেলা মেশা ! বিয়ের আগেই তাকে ভালবেসে ফেলা ! এবং সুমন নিজেও মেয়েটি চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছে । সেখানে সে ওর জন্য অফুরন্ত ভালবাসা দেখতে পেয়েছে !
তারপরপ যে দিন সুমন মিনিনকে বিয়ের জন্য অফিসালি প্রোপোজ করতে যাবে তখনই মেয়েটা গায়েব !
গায়েব বলতে একেবারেই গায়েব ! কোন খোজ নেই !
যেন মেয়েটি শুন্যে মিলিয়ে গেল ! কোথায় কোন রেকর্ড নেই !

এনবিএম অবশ্য ওকে আশ্বাস দিয়েছে সামনে ওর জন্য এর থেকেও ভাল মেয়ে খুজে দেওয়া হবে ! একটু যেন অপেক্ষা করে ! কিন্তু সুমনের আর কিছু ভাল লাগছে না ! বারবার কেবল ওর মিনিনের কথাটাই মনে হচ্ছে ! ওর চেহেরাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে । এই অবস্থায় অন্য কাউকে বিয়ে করা সুমনের পক্ষে সম্ভব না ! তার উপর কাউকেখুজে পাওয়া যাবে কি না কে জানে !




পরিশিষ্টঃ
এনবিএমের পরিচালক মুছা-বিন-আসলাম নিজের অফিস রুমে বসে ত্রিমাত্রিক পিসি মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন ! একটা রিপোর্ট পড়ছেন আর আনমনে নিজের সামনে রাখা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন !
পড়তে পড়তে হঠাৎ হঠাৎই তিনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে উঠলো !
বিরক্ত নিয়ে ইন্টারকমে নিজের চীপ এক্সিকিউটিভ অফিসার জবেদ মোস্তফাকে আসতে বললেন !
কিছুক্ষন পরেই জাবেদ এসে হাজির !
বিরক্ত কন্ঠেই পরিচালক বললেন
-প্রজেক্ট ৮৯৫৮৪৭ এর কি খবর ? এটা ফেইল কেন করলো ?
নিজের হাতের ট্যাবের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জাবেদ বলল
-আসলে স্যার ! ওটার পোডাক্ট ফেইল করেছে !
-কিভাবে ?
-সাবজেক্টের সিএসএম এর অনুযায়ী আমরা কাউকে খুজে পাই নি ! আসলে কাউকে খুজে পাওয়া সম্ভব না ! তার মেন্টালিটি সম্পুর্নই আলাদা ! বলতে পারেন পুরা জগতে ওয়ান পিচ !
-তো ? এর জন্য তো আমাদের ব্যাক আপ প্রোজেক্ট আছে ! তাই না ?
-আছে স্যার ! আমরা সে অনুপাতে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম ! সাবজেক্টের মেন্টালিটি অনুযারী একটা নবম মাত্রার রোবো মানবী৬৯৫ তৈরি করেছিলাম !
-তারপর ?
-সাবজেক্টের সাথে দেখা করানো হয় ! কদিন ডেটও হয় ! সব কিছু ঠিকই চলছিল ! কিন্তু ...
-কিন্তু কি ?
-ঐ যে বলেছিলাম ! সাবজেক্টের মেন্টালিটি একেবারেই আলাদা ! আমরা সে অনুপাতেই রোবো৬৯৫ এর ব্রেন তৈরি করেছিলাম ! কিন্তু সেটা টিকে নি ! এতো জটিল জিনিস বেচারী রোব৬৯৫ সহ্য করতে পারে নি ! ক্রাস করেছে ! বিশেষ করে যেদিন ক্রাস করে তার আগের দিন সবজেক্ট রোবো৬৯৫কে চুম খেয়েছিল ! এটাই বলা চলে ক্রাসের অন্যতম কারন ! এতোটা ইমোশন সহ্য করার জন্য রোবো৬৯৫ তৈরি ছিল না ! শেষে আমরা বাধ্য হয়ে তাকে সরিয়ে ফেলেছি !

পরিচালক একটু বিরক্ত সাথে সাথে হতাশ হলেন ! নবম মাত্রার রোবট হচ্ছে সব চেয়ে আধুনিক এবং মানব গুন ক্ষমতা সম্পন্ন রোবট ! সে রোবট যখন টেকে নি তাহলে অন্য কোন রোবটও টিকবে না ! ভাগ্য ভাল যে বিয়ের আগেই এমন টা হয়েছে । বিয়ের পরে এমন কিছু হলে তার নিজের ক্যারিয়ার তো বরবাদ হয়ে যেত ! সাবজেক্ট যদি কেস করে দিত তাহলে জেলে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল ! এর আগে বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রে এমন রোবো দেওয়া হয়েছে । সেগুলো মোটামুটি কোন ঝামেলা ছাড়াই এতোদিন পার হয়ে এসেছে । আর এটা একেবারে গেলই না !
পরিচালক বললেন
-আচ্ছা যাও ! দেখো সামনে কি করা যায় ! সাবজেক্টকের জন্য আর রোব প্রজেক্ট নেওয়া দরকার নেই ! আসল মানুষ খুজতে থাকো ! ঠিক আছে ?
-জি আচ্ছা !


২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×