somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়িওয়ালার ভাতিজির সাথে আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প !

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আরেকবার হতাশ হয়ে এদিক ওদিক ওদিক তাকালাম ! এই নিয়ে মোট তিনবার আমি একই গলির ভিতরে যাওয়া আসা করতেছি ! পুরানো ঢাকার সব গলি গুলো দেখতে একই রকম কেন ?
এখন কি করি ?

গত দুই সপ্তাহ হয় আমরা এখানে এসেছি থাকার জন্য ! এখনও আমি ঠিক মত রাস্তা চিনতে পারলাম না ! সব কিছু ঠিক আছে কিন্তু এই রাস্তা আমি কিছুতেই চিনতে পারছি না ! এদিক দিয়ে যাওয়ার কথা আমি যাই অন্য দিক দিয়ে !

আমি হতাশ হয়ে চিপা গলির মাঝ খানে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষন ! মাকে ফোন দিবো কি না বুঝতে পারছি না ! অবশ্য মাকে ফোন দিয়েও লাভ নেই ! মা এই সময় আমাকে নিতে আসতে পারবে না ! আব্বা এখন অফিসে !
এখন ?
আব্বা আসা পর্যন্ত আমি এখানে বসে দাড়িয়ে থাকবো ?

ভাবছি কি করবো তখনই বাড়িওয়ালার ভাতিজিকে দেখতে পেলাম ! নীল রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে এদিকেই হেটে আসছে !
ঠিক বুঝতে পারলাম না আমি তার সাথে কথা বলবো কি না নাকি কেবল তার পেছন পেছন যাবো ?

পেছন পেছন যাওয়াটা কেমন দেখায় ! ঠিক করলাম মেয়েটার সাথে কথা বলা যাক ! কিন্তু আমি কথা বলার আগেই মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-রাস্তা খুজে পাচ্ছেন না ?
আমি বোকার মত হেসে বললাম
-হুম !
-সব গলিই এক রকম মনে হয় তাই না ?
-হুম !
-গত দিনও আপনাকে এদিক ওদিক হাটতে দেখেছি !
এই বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো ! বেশ চমৎকার হাসি !
-আসুন আামর সাথে !

পুরান ঢাকার মেয়েরা ঠিক যেমন হয় এই মেয়েটি ঠিক তেমন না ! এবং সব থেকে বড় কথা মেয়েটি পুরান ঢাকার মত কথা বলে না ! অবশ্য মেয়েদের মুখে পুরানো ঢাকার কথা শুনতে বেশ মজাই লাগে ! এখানে আসার পর থেকে বেশ আসে পাশে শুনছি !

হাটতে হাটতে মেয়েটি বলল
-আপনি ঢাবি তে পড়েন, তাই না ?
-হুম !
-তা হঠাৎ এই পুরান ঢাকায় থাকতে এলেন যে ?
-আসলে আমি ঠিক জানি না ! আমার আব্বার সাথে আপনার চাচার কোন একটা চুক্তি হয়েছে মনে হয় ! সেই জন্যই আমরা এখানে থাকতে এসেছি !
-হুম ! তাই হবে হয় তো !
মেয়েটি বলল
-এই দেখুন ! লাল বিল্ডিংটা ! এখান থেকে বায়ে মোড় নিবেন ! মনে থাকবে ?
-হুম !

হাটতে হাটতে চলে এলাম !
এমনিতে এলাকাটা বেশ ভাল ! তবে সব কিছুই পুরানো ! ঘর বাড়ি রাস্তা সব কিছু ! প্রথম যখন এলাম তখন মনে হচ্ছিল এখানে থাকতেই পারবো না কিন্তু এই দুই সপ্তাহে বেশ মানিয়ে নিয়েছি !

ক্লাসে যাই ! বিকেল বেলা হলে ছাদে উঠি ! চারিপাশের মানুষ দেখি ! এই ভাবেই সময় কেটে যায় !

পরদিন ঠিক একই ভাবেই আমি রাস্তা হারিয়ে ফেললাম ! এবং বাড়িয়ালার ভাতিজি এসে আবার আমাকে উদ্ধার করলো ! টুকটাক কথা বলতে বলতে বলতে জনাতে পারলাম মেয়েটির নাম আলিয়া ! আমাদের বাড়িয়ালার বড় ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে ! তবে মেয়েটিকে দেখে ঠিক পুরান ঢাকার মেয়েদের মত মনে হয় না ! মানে কথা বার্তা চাল চলন কোন কিছুই না যেন !

পরের দিন রাস্তা মনে থাকলেও আমি ইচ্ছা করেই দাড়িয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষন ! কিন্তু আলিয়ার দেখা নেই ! যখন মনে হল আলিয়া আর আজকে আসবে না তখন আমি নিজেই বাসায় চলে এলাম ! যদিও মনে মনে ইচ্ছা করছিল মেয়েটির সাথে একটু কথা বলি কিন্তু কিছু করার নেই !

সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে অবশ্য আলিয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল ! দুতলার সিড়িটা ঠিক ওদের একটা রুমের ভিতর দিয়ে ! উঠতে গিয়ে ওদের ঘরের অনেক কিছুই দেখা হয়ে যায় !
আলিয়া মনে হয় তখন সবে মাত্র গোসল করে বের হয়েছে ! মাথায় তখনও তোয়ালে জড়ানো ! চেহারায় একটা অন্য রকম সিগ্ধতা জড়ানো রয়েছে ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আলিয়ার দিকে !
আমাকে আলিয়া কেবল একটু হেসে ভেতরে চলে গেল !

আমার আলিয়ার সাথে কথা বলার আগ্রটা আরও একটু বেড়ে গেল ! বারবার উপরে নিচে করতে লাগলাম এই আশায় যে আলিয়ার সাথে দেখা হবে ! দু একটা কথা হবে ! কিন্তু আলিয়া সাথে একটা বারের জন্যও দেখা হল না ! মনের ভিতরে একটা হা হুতাস চলতেই লাগলো !


আলিয়ার সাথে দেখা হল পরদিন বিকেল বেলা ! ছাদের ! আমি হাওয়া খেতে উঠেছি, আসেপাশের ছাদের ওঠা মানুষ গুলোকে দেখছি কেউ কেউ এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে টাংকি মারছে !

একটা আমার পাশের ছাদেই দেখলাম একটা মেয়ে লম্বা চুলের একটা ছেলের সাথে হাসাহাসি করছে ! আমি কিছুক্ষন হাসাহাসি দেখলাম ! ঠিক তখনই আলিয়ার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম !

-আপনি এই সময় ছাদে আসেন ?
-আপনি ?
আলিয়া কে একটু শান্তি পেলাম ! যাক মেয়েটা নিজ থেকেই তাহলে কথা বলতে এসেছে !
-হ্যা ! আসি ! এখানে এখনও কোন বন্ধু হয়ে ওঠে নি তো তাই !
-আপনার এদের সাথে জমবে না !
-হুম ! আমারও তাই মনে হচ্ছে ! জমবে না ! তবে ...।
-তবে ?
আলিয়া আমার দিকে তাকালো ! আমি কথা টা বলতে গিয়েও বললাম না ! আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম যে ওদের সাথে না জমলেও আপনার সাথে জমতে পারবে !

কিন্তু এই কথা চাইলেই তো আর বলা যায় না ! আমি আলিয়া কে বললাম
-আচ্ছা আপনাকে দেখে ঠিক মনে হয় না যে আপনি এখানে বড় হয়েছেন !
-হুম ! ছোট বেলা থেকে আমি এখানে ছিলাম না !
-কোথায় ছিলেন ?
-আমি সিলেটে বড় হয়েছি ! আমার বাবাও ওখানে থাকে ! ইন্টার পাশের পরে এখানে এসেছি !
-তাই নাকি ?
-হুম !
-তা হঠাৎ এখানে ?

এই কথাটার উত্তর দিতে গিয়ে আলিয়া দিল না ! কিছু একটা ভাবলো যেন ! তারপর বলল
-লম্বা ইতিহাস !

দেখলাম আলিয়ার মুড অফ হয়েগেল ! ঠিক বুঝলাম ! আলিয়া আর কথা না বলে নিচে নেমে গেল !

সঠিক কারন টা কিছুতেই বুঝতে পারলাম না ! এমন কি জিজ্ঞাসা করলাম ?

এভাবেই দিন যেতে লাগলো ! মেয়েটির সাথে ঠিক মত কথা বলে শান্তি পাচ্ছিলাম না ! বারবার মনে হচ্ছিল আলিয়া কিছু যেন একটা লুকাচ্ছে কিংবা বলতে চাইছে না ! আর আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি যে আমি ওকে জোর করবো !
কিন্তু এদিক দিয়ে মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য সারাটা দিন আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকি ! বুঝতে দেরি হল না যে আমি আলিয়া কে আমার ভাল লাগতে শুরু করেছে !

একদিন অনেক দ্বিধা নিয়ে আলিয়া কথা টা বলতেই আলিয়া আমার দিকে খানিকটা সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! তারপর আমাকে কিছু না বলে চলে গেল ! বলতে গেলে আমাকে একেবারে এড়িয়ে চলা শুরু করলো ! আমি যেদিকে যাই মেয়েটা যায় অন্য দিকে ! আমাকে যেন চেনেই না এমন একটা ভাব !


একদিন বিকেলে আবার ওকে ধরলাম !
-আপনি আমাকে পছন্দ করেন না ?
-হঠাৎ এই কথা কেন ?
-তাহলে ?
আলিয়া আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-তাহলে কি........ মানে ?
-তাহলে কেন আমাকে এভোয়েড করছেন ?
-দেখুন ! আপনি আমার এমন কেউ না যে সব সময় আপনার সাথে আমার কথা বলতে হবে !
কথা সত্য ! এমন কোন সম্পর্ক আসলেই আলিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক হয়য় নি ! এই কথা বলার অধিকার আমার নেই ! আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললাম
-ও ! তা অবশ্য ঠিক ! আই এম সরি !
আমি আর কথা বাড়ালাম না ! চলে আসতে চাইলাম ! খানিকটা অপমানিত মনে হইলো ! আলিয়া বলল
-দেখুন আমি ঐ টা মিন করি নি !
-তাহলে ? আপনার আমার পছন্দ না এটা বললেই হয় !
-সেইটা না ! আসলে ....... আসলে...।
-কি আসলে ?
আলিয়া বেশ কিছুটা সময় ইতস্তর করলো কথাটা বলল
-আসলে আমি বিবাহিত !
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! মেয়ে বলে কি ?
বিবাহিত !
বিবাহিত ! সিরিয়াস লি ?

আলিয়া বলল
-আপনাকে বলেছিলাম না আমি এখানে বড় হইনি ! আমি সিলেতে বড় হয়েছি ! আসলে !
-আসলে ?
-আসলে এটা নিয়ে আমাদের পরিবারের অনেক ধামেলা হচ্ছে ! এই জন্যই আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে ! আমি এই জন্য এখানে আছি ! আমার এখানে থাকতে ভাল লাগে না ! বুঝেছেন !
আলিয়া এই কথা বলে নিচে নেমে গেল !

তখনও বাইরের সন্ধ্যা নামে নি ! আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ! কেন জানি সুন্দর এই বিকাল টা বড় বিষন্ন মনে হল ! কিছু একটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হল ! নিচে নামতে যাবো ঠিক তখনই পাশের ছাদের কেউ আমার দিকে লক্ষ্য করে কিছু একটা বলল !

অন্য মনস্ক ছিলাম বলে ঠিক মত শুনতে পেলাম না ! তাকিয়ে দেখি পাশের ছাদের সেই মেয়েটি ! সেদিন চুল লম্বা ছেলেটার সাথে হাসাহাসি করছিল !

আমি বললাম
-কি বললেন ?
মেয়েটি একটা হাসি দিয়ে বলল
-ও ! কিছু হুনেন নাই ! ভালা ! কম কম হুনবেন ! তাইলেই হইবো !
এই বলে মেয়েটি হাসতেই থাকলো !

আমিও অবাক হয়ে মেয়েটির হাসি দেখতে লাগলাম !
আশ্চর্য !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×