somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছয়টি অনুগল্প ও একটি অসমাপ্ত গল্প

২৩ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক

-হুম শুনছো ?
-হুম ! বল !
-এই তুমি কিভাবে চিনলা আমাকে ? আমি তো নতুন ফোন থেকে ফোন দিছি !
-বারে, তোমার কন্ঠস্বর আমি চিনবো না ? তুমি আমার কে বল তো ?
-হুম ! হয়েছে ! আচ্ছা শুনো আমি বসুন্ধরায় !
-তাই নাকি ? ভাল তো !
-তুমি আসতে পারবে ?
-এখন ?
-হুম !
-এখন তো সম্ভব না !
-তাহলে ?
-তাহলে কি ?
-তাহলে আমি একা একাই কিনে নিলাম !
-কি কিনে নিলে ?
-বারে গতকাল কে দেখলাম না ! মনে নেই ! তুমি তো রাজিই হচ্ছ না !
-আচ্ছা কিনে নেও !
-সত্যি ?
-হুম !
-কোন টা কিনবো ?
-কোন টা কিনবে চাও ?
-ঐ যে ঐ টা !
-ঐ টা কোন টা ?
-আরে বেশি দামের টা !
-কত যেন ছিল ?
-বেশি না, মাত্র সাড়ে তিন লাখ !
-সাড়ে তিন লাখ ! এতো টাকা আছে কাছে ?
-হুম ! বাসায় যা ছিল নিয়ে এসেছি । আর তোমার ক্রেটিড কার্ড টাও সকালে তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন বের করে নিয়েছি !
-আচ্ছা ! কি আর করা ! কিনে নাও !
-লাভ ইউ সোনা ! আজকে বাসায় আসো তোমাকে ইস্পেশাল গিফট দিবো !
আমি ফোন রেখে দেখি রফিক ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । ফোন রাখতেই বলল
-সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে গিফট ! কাকে ?
-কি জানি কাকে !
-মানে কি ?
-রং নাম্বার ছিল ! মেয়েটা বেশি শপিংয়ের নেশায় উত্তেজিত ছিল তাই ঠিক ধরতে পারে নাই যে রং নাম্বার !
স্বামী ব্যাচারার জন্য একটু মায়ায় লাগছে । ৩.৫ লাখের ধাক্কা কিভাবে সামলাবে তাই ভাবছি ! তবে কেবল বাড়ির স্পেশাল গিফট টা আমি পাবো না দেখে একটু মন খারাপ হল !


দুই

কয়েক দিন যে নিতির ছটফটানী একদম কমে গেছে সেটা সবাই টের পেয়ে গেল । ক্লাসের যে মেয়েটা সব সময় সবাইকে মাতিয়ে রাখছে সেই মেয়ে ক্লাসে আসে একদম চুপ করে মাথা নীচ করে । কারো সাথে কোন কথা বলে না । অনেকে অনেক কথাই জানতে চাইলো কিন্তু নিতি কাউকে কিছু বলল না ।

কেউ না জানুক আমি তো ঠিকই জানি ওর জীবনে কি বল একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে যেটা মেয়েটাকে একদম নিশ্চুপ করে দিয়েছে । আসলে সেদিন আমার নিজের ভেতরে কি হয়েছিল আমি নিজেই জানি না । কিভাবে কাজ টা করে ফেললাম কি ঘোরের ভেতরে কাজ টা করেছি এখন বুঝতে পারছি । প্রথম দিন তো আমি ভয়েই বাঁচি না । যদি নিতি থানায় রিপোর্ট করে কিংবা ক্লাসের সবার কাছে বলে দেয় তখন ?

কিন্তু পরপর দিন দিনেও যখন কিছু হল না তখন ভয়ের বদলে মনের ভেতরে এক অদ্ভুদ পাপা বোধ কাজ করতে লাগলো । রাতে বেলা কিছুতেই ঘুমাতে পারলাম না । ঘুমাতে গেলেই কেবল নিতির চেহারাটা ভেসে আসছিল ।
যখন নিতির সাথে ক্লাস রুমে দেখা হত ও কেমন মাথা নিচু করে আমার সামনে থেকে চলে যেত । আমার বুকে যেন পাপ বোধ টা আরও একটু বাড়িয়ে দিত সেটা । আমি আর নিজের ভেতরে থাকতে না পেরে একদিন একটা কঠিন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম !
ক্লাস শেষে নিতি মাথা নচু করে সেটে যাচ্ছিল হলের দিকে । আমি বাইক নিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম । আমার এভাবে দাড়াতে দেখে ও বেশ ভয় পেয়ে গেল । তবে সামলে নিলো একটু পরেই । ওকে বললাম
-বাইকে ওঠো !
-কেন ?
-উঠতে বলছি ওঠো !
একটু যেন ধমকের সুরেই । নিতি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-যা করার তো করেছো ! আবারও !
-নিতি প্লিজ বাইকে ওঠো !

নিতি আর কোন কথা না বলে বাইকের পেছনে উঠে বসলো । ওকে সোজা টেনে নিয়ে মগবাজার কাজী অফিসের সামনে দাড়ালাম । যখন ওকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম নিতিকে বেশ স্বাভাবিক দেখলাম । যেন ও এটাই আশা করেছিল । খুব স্বাভবিক ভাবেই ও কাবিনে সই করলো !
বিয়ে শেষে যখন ওকে আবার হলের গেটে নামিয়ে দিলাম তখন ওর চেহারাটায় কোন পরিবর্তন দেখলাম না ! আমি ওকে বললাম
-আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম । সেটা ঠিক করার চেষ্টা করলাম ! কি পরিমান পাপ বোধ নিয়ে এই দিন গুলো পার করছিলাম আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা !
নিতি আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বলল
-তুমি কি ভেবেছো তুমি যা করেছো তাতে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব ? কোন দিন ক্ষমা করবো না !

নিতি আমাকে রেখেই হলের গেটের দিকে রওনা দিল । আমি চেয়ে রইলাম ওর দিকে । তবে কেন জানি আগের দিনের মত অতখানি খারাপ লাগছিল না ! মনে হচ্ছিল নিতি এক সময় ঠিকই আমাকে ক্ষমা করে দিবে ।
এর পর থেকে আরেকটা অদ্ভুদ পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । কেন জানি নিতিকে বার বার দেখতে ইচ্ছে করতো । আসলে বিয়ে করা বউ বলে কথা । দেখতে তো ইচ্ছে করবেই । কিন্তু নিতি আমাকে ঠিকই উপেক্ষা করে চলেছে । আগে তো আমাকে দেখে মুখ টা নিচু করে চলে যেতে কিন্তু এখন আমাকে দেখে মুখ শক্ত করে ফেলে ।

আমি প্রতিদিন বিকেলে ওর হলের সামনে দাড়াতাম । ওকে ফোন করে নিচে নামতে বলতাম । ও নামতো না । অনেকেই মনে করলো আমি মনে হয় ওর পিছে পিছে ঘুরছি । কিন্তু তাকে যে বিয়ে করেছি এটা কেউ জানলো না !
একদিন সকাল বেলা নিতি আমার বাসায় এসে হাজির ব্যাগ নিয়ে । আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিতি বলল
-হলে থাকতে সমস্যা হচ্ছে ! আমি কটা দিন এখানে থাকতে চাই !
-হ্যা ! কোন সমস্যা নেই । কটা দিন কেন ? সারাটা জীবন এখানে থাকো !
নিতি আমার দিকে এমন চোখে তাকালো যেন আমি খুব উদ্ভট কোন কথা বলে ফেলেছি ।
নিতি বলল
-আমি তোমার ঘরে ঘুমাবো ! তুমি অন্য কোথাও দেখো !

একে বলেই নিজের বাড়িতেই ভাড়াটিয়া ! এই জন্যই জনৈক মনীষী বলেছেন যে বিবাহ হচ্ছে সেই ঘটনা যেই ঘটনা যেখানে বাড়ির মালিক নিজের বাড়িতেই নিজেকে ভাড়াটিয়া ভাবতে শুরু করে । আমার ক্ষেত্রেও তাই হতে শুরু করলো । নিতির প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হতে লাগলো মানে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হচ্ছিল তবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেল । আমার সাথে বিশেষ কথা বললেও নিতি স্ত্রীর হওয়ার অন্যান্য কাজ গুলো ভাল ভাবেই করতো । আগে বুয়া রান্না করলেও আস্তে নিতি নিজেও রান্না করতে শুরু করলো । বাড়ি ঘর গোছানো থেকে শুরু করে বাকি অন্যান্য কাজ গুলোও করতো আপন মনেই ।

আমি ওর কাছাকাছি যেতে চেষ্টা করতাম কিন্তু নিতি আমাকে কাছেই আসতে দিতো না । বারবার আমাকে সেই আপরাধের কথাটা মনে করিয়ে দিত ! তবে একদিন আমি আমার আর স হ্য হল না ! নিজের বউকে যদি ঠিক মত চুম খেতে না পারি তাহলে কেমন হয় ?
নিতি সেই কঠিক ভাবেই আমাকে উপেক্ষা করতে লাগলো ! আমি ওর হাত ধরতে গেলে নিতি বলল
-তুমি কি চাও ? যদি আবারও আগের মত কিছু করতে চাও করতে পারো ! আমি বাধা দেব না ! তবে মনে রেখো সারা জীবন তোমাকে আমি ক্ষমা করবো না ।

আমি ওর হাত ছেড়ে দিলাম । নিতি রুমে চলে গেল । সন্ধ্যা বলে বেশ বৃষ্টি নামলো । সারা দিনের গরমের পর বৃষ্টিতে সারা শহরে শান্তি নেমে এল । কিন্তু আমার মনে শান্তি এল না । সন্ধ্যার সময়ে নিতি ভুনা খিচুরী রান্না করলো । সন্ধ্যার সময়ে আমার সামনে এনে রাখতেই আমি বললাম
-খাবো না !
-কেন ?
-এমনি !

নিতি আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে চলে গেল । রাতের বেলাও যখন খাবার টেবিলে খাবার দেওয়া হল আমি বসলাম না খেতে । নিতি আবারও আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে খেতে বসলো । আমি ঠিক করলাম আর খাবোই না । পরদিন সকাল বেলাতেও যখন আমি কিছু খেলাম না তখন নিতির মধ্যে একটু পরিবর্তন দেখতে পেলাম । বিকেলের দিকে নিতি খাবার এনে আমার সামনে রেখে বলল
-এখন আমার সামনে খাবে তুমি ! না হলে আমি এখনই চলে যাবো !
-যাবে ? যাও ! আমার কথা ভাবতে হবে না ! যাও !

আমার কন্ঠে দৃঢ়তা দেখে নিতি কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । রাত পার হয়ে গেল । পরের দিনও আমি এক ফোটা পানিও খেলাম না । না খেতে পেরে শরীর টা বেশ ক্লান্ত হয়ে পরেছে । বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পরলাম । ঘুম ভাঙ্গলো নিতির ডাকে ।
নিতি আমার দিকে তাকিয়ে সঙ্কিত কন্ঠে বলল
কতক্ষন ধরে ডাকছি !
কি হয়েছে !
-খাবে না ?
-না !
নিতি বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি হার মানছি ! বল কি করলে খাবে ?
-আগে চুম খাবো ! তারপর কিছু খাবো !
নিতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি যে কাজ করেছো তাতে......
কথাটা শেষ করলো না ! চুপ করে রইলো কিছুটা সময়ে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ঠিক আছে ! কিন্তু একবার !
মনে মনে বললাম আগে একবারই হোক না কেন !! তারপর দেখা যাবে !



তিন

আমি তো ভেবেছিলাম আজকে কপালে আমার দুঃখই আছে বিশেষ করে ভাইয়া যখন ক্ষনে ক্ষনে আমার দিকে তেড়ে আসছিল তখন মনে হচ্ছিল এই মনে হয় রাম থাবড়া খেলাম বুঝি !

কিন্তু প্রতিবারই মাঝ পথেই আব্বার জন্য আটকে যাচ্ছিলো ! রুমে আরও কয়েক জন বসে ছিল । সবার মুখই থমথমে ।
আমার বিচার বসেছে । অবস্থা গুরুতর ! আমার অপরাধ আমি একটি মেয়ের সাথে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করেছি । এই বয়সে একটু ঘোরাঘুরি করাই যায় কোন মেয়ের সাথে সেটা কোন সমস্যার ভিতর পড়ার কথা না । কিন্তু আসল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে আমি যে মেয়েটার সাথে ঘুরছিলাম, পার্কে বসে বাদাম চিবুচ্ছিলাম সেটা আর কেউই না আমজাদ সাহেবের মেয়ে । আমার বাবার রাইভাল টিমের সর্দার !
বাবা আমার দিকে ঠান্ডা কন্ঠে তাকিয়ে বলল
-তুই আর মানুষ পেলি না ?

এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায় আব্বা ভালবাসা কি এতো দেখে শুনে হয় ? ভাল লেগে গেল কি করবো ? আপনি জানেন না এই মেয়েকে পটাতে আমার জান বের হয়ে গেছে । কত এই মেয়ের পিছে ঘুরেছি কেউ টেরও পাই নাই আর শেষে যখন রাজি হল তখন ধরা খেলাম !
কিন্তু এই কথা বলার কোন উপায় নেই । তাই চুপ করে রইলাম ! আব্বা আবার বলল
-তোর মোবাইল কই ?
এই কথার বিপরীতে চুপ করে থাকাটা সমীচিন হবে না । আমি পকেট থেমে মোবাইল বের করে দিলাম ! বললাম
-এই যে !
আমার হাত থেকে মোবাইল টা বাবা নিয়ে নিলেন । তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন
-ওর ঘরের পিসি থেকে নেট নাইন খুলে রাখো ! আগামী সাত দিন যেন ও বাসা থেকে বের না হতে পারে ! এর একটা বিহিত হবে তারপর !

এতো জলদি বিচার সভা শেষ হয়ে গেল দেখে ভাইয়া মনে হল একটু আশা ভঙ্গ হল । বংশ পরাম্পরায় বাবার শত্রুতা ভাইয়ার উপর এসে ভর করেছে । ওদিকে নিশিরও একটা বড় ভাই আছে । সেও তার বাবার হয়ে এখন এই শত্রুতা বজায় রেখেছে ।
আমি চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এলাম । দেখলাম কিছু সময় পরে ভাইয়ে এসে নেট লাইন খুলে নিয়ে গেল ! বারান্দায় বসে নিশির কথা ভাবতে লাগলাম ! মেয়েটা এখন কি করছে কে জানে !

নিশ্চই খুব কান্না কাটি করছে । কান্নাকাটি টা আর কি বা কারতে পারে । সারা দিন কোন কাজ নেই কেবল প্যাঁচ প্যাঁচ করে কাঁদা !
আমার এখনও মনে আছে আমি প্রথম যেদিন নিশিকে ভালবাসার কথা বলেছিলাম ও কেঁদে দিয়েছিল ! ওর অশ্রু মেশানো চোখ দেখে আরও বেশি করে প্রেমে পড়ে গেলাম ! তারপর ওর পেছনে ঘুরতে ঘুরতে যখন ক্লান্ত হয়ে গেছি তখন ও হ্যা বলে দিল !
আমি অবশ্য প্রথম থেমেই একটু আশাবাদী ছিলাম কারন আমি যে ওর পেছন লেগেছি চাইলে ও ওর বড় ভাইকে বলে দিতে পারতো । হয়তো এর জের ধরে নিলয় ভাই আমার ঠ্যাংও ভেঙ্গে দেওয়ার একটা অযুহাত পেয়ে যেত কিন্তু নিশি কোন দিন বলে নি ।

আমি কচ্চপের দাতের মত আকড়ে ধরে রইলাম । তবে একটু সাবধানে ছিলাম যে অন্য কারো চোখ ব্যাপার টা না পড়ে । ঠিক যখন মনে হল মেয়েটা আর মনে হয় রাজি হবে না ঠিক তখনই নিশি রাজি হয়ে গেল !
আমি প্রায়ই ওর ক্যাম্পাসের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম । অপেক্ষা করতাম কখন ও বাইরে আসে ! তারপর ওর পেছন পেছন এলাকায় এসে হাজির হতাম !
রিক্সায় করে যখন আসতাম দেখতাম ও প্রায়ই রিক্সার পেছন দিক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখে একটা ভয় থাকতো সব সময় !

একদিন অন্য রকম একটা ঘটনা ঘটলো ! বলা চলে সেদিনের ঘটনার জন্যই নিশি রাজি হয়ে গেল !
ঐ নিশি গেট দিয়ে বেরিয়েই রিক্সা নিয়ে নিল । আমার দিকে আর চোখ তাকালো একবার ! আমি রিক্সা নেব কিন্তু কপাল খারাপ কোন রিক্সা নেই । যে কয়টা আছে সেগুলোর একটাও ওদিকে যাবে না ! এদিকে নিশির রিক্সা দুরে চলে যাচ্ছে !
আমি কিছুটা সময় অস হায়ের মত তাকিয়ে থেকে ওর রিক্সার পেছনে দৌড়াতে শুরু করলাম । কেন করলাম আমি নিজেই জানি না ! কিন্তু ততক্ষনে নিশির রিক্সা টা আমার চোখের আড়ালে চলে গেছে । সামনের সিগনালে এসে বদ নিয়ে লাগলাম হাটু ধরে ! বেশ খানিকটা পথ দৌড়েছি ! কিন্তু নিশির পিছু ধরতে পারি নি !

দম নিয়ে যখন একটু শান্ত হলাম তখন মাথা তুলে দেখি নিশি সিগনালের ওপাশে দাড়িয়ে আছে চোখ ছলছল জল নিয়ে ! আমাকে দেখছে । ব্যাগ টা কাধে ঝোলানো । তবুও বুকের কাছে একটা বই চেপে ধরে আছে !
আমি সিগনাল পার হয়ে ওর কাছে আসলাম ! বুকের ভেতরে কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছিল ! ও নিশ্চই দেখেছে আমি দৌড়ে আসতেছি ! তাই থেমে আবার ফিরে এসেছে ।

আমার জন্য ফিরে এসেছে ভাবতেই আনন্দে মন টা ভরে গেল !
তারপর আমরা টুকটুক করে প্রেম করতে শুরু করলাম । সারাদিন ফোন তো আছে আরও আছে ভাইবার ম্যাসেঞ্জার হোয়টসএপস আরও কত কিছু । কিন্তু তবুও দেখা না করলে কি চলে । দেখা করতাম লুকিয়ে লুকিয়ে ।
নিশি অবশ্য সারা সময় খুব ভয়ে ভয়ে থাকতো ! আর সাথে কান্না কাটি তো আছে !

দিন ভালই যাচ্ছিলো ঠিক তখনই ঝামেলা বাঁধলো ! আজকে সকালের পাড়তে যাওয়ার নাম করে ওর সাথে পার্কে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম ! কে জানি সেই দৃশ্য দেখে ফেলেছে । বদ বেটা কেবল দেখেই ফেলে নি নিজের মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে সেইটার ছবি তুলেছে তারপর সেইটা প্রিন্ট করে আমার আর নিশির বড় ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েছে । একবার যদি তার খোজ পাওয়া যেত তাহলে বেটা মোবাইলের ক্যামারা দিয়ে ছবি তোলার স্বাধ মিটিয়ে দিতাম !
কিন্তু সে সব চিন্তা পরে এখন নিশির একটু খোজ নেওয়া দরকার ! কিন্তু কিভাবে নেব ?
নিশির জন্য মনটা কেমন কেমন করতে লাগলো ! টানা দুইদিন বাসা থেকে বেরই হতে পারলাম না । তিন দিনের মাথায় বাড়ির পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে বাইরে বেরিয়ে এলাম লুকিয়ে ! যদিও মা বেরুতে দেখে ফেলল তবে তিনি কিছু বললেন না ! এখন কেবল ভাইয়া আর আব্বার চোখ না পড়লেই হল ।

কিছুটা সময় এদিক ওদিক ঘোরা ফেরা করে আমি নিশিদের বাসার দিকে হাটা দিলাম । যদিও ওদিকে যাওয়ার ভিতর বড় ধরনের মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে তবুও নিশিকে একটা বার না দেখলে কিছুতেই ভাল লাগছে না । যদি ও একটু সময়ের জন্যও বারান্দায় আসে তাতেই হবে । ওকে তো খুব ভাল করে চিনি । আমার থেকেও ওর অবস্থা আরও বেশি খারাপ হওয়ার কথা !
আমি টুক টুক করে ওদের বাড়ির সামনে কয়েকবার হাটাহাটি করলাম । কিন্তু এই দুপুর বেলা কাউকেই দেখলাম বারান্দায় ! কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! বেশি সময় থাকা আবার নিরাপদ নয় যদি নিলয় ভাই আমাকে দেখে ফেলে তাহলে আমার সত্যই খবর আছে বইকি !

মনে হয় জমের নাম নিছি আর জম এসে হাজির ! আমি সবে মাত্র ওদের বাড়িটা আরেকবার ক্রস করেছি তখনই নিলয় ভাই গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল ! এসেই আমাকে ডাক দিল !
কি কলরবো ঠিক বুঝতে পারলাম না !
এক বার মনে হল এক দৌড় দেই । উনি যত দুরে আছে দৌড় দিলে আমাকে ধরতে পারবে না ! তবুও দৌড় দিতে ইচ্ছে হল না ! আমি আস্তে করে ওনার দিকে হাটা দিলাম ! কাছে আসতেই নিলয় ভাই বলল
-কি এখানে ?
-কিছু না ! উত্তর পাড়ার দিকে যাচ্ছিলাম !
-তা যাও ! তা কয়বার চক্কর দেওয়া লাগে ?
বুঝলাম উনি আমাকে আগেই দেখেছে বাড়ির ভেতর থেকে ! আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম ! নিলয় ভাই আমার হাত ধরলেন !
বুঝলাম আজকে আমার খবরই আছে ! তিনি এক প্রকার জোর করেই আমাকে উনাকে বাসায় নিয়ে গেল !

সম্ভবত আমার ধরে আটকে রাখবে বা অন্য কিছু করবে ! বাসায় বাবাকে তলব করতে পারে ।
না জানি কি কপালে আছে । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম তেমন কিছুই হল না । নিলয় ভাই আমাকে নিয়ে তাদের ড্রাইং রুমে বসালেন !
এমন টা হবার কথা ছিল না ! কিন্তু অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছালাম যখন একটু পরে বাটিতে কয়ে কয়েক পদের মিস্টি এসে হাজির হল !
মাইর দেওয়ার আগে মিষ্টি মুখ করানোর মানে কি ঠিক বুঝলাম না । শুভ কাজ করার আগে মিষ্টি মুখ করতে হয় সেই জন্য নাকি !
আমাকে একা রেখে নিলয় ভাই ঘরের ভেতরে চলে গেল । আমি একা একা মিষ্টি খেতে লাগলাম । কি হচ্ছে আমার সেদিকে খুব বেশি মাথা ব্যাথা নেই । এতো চিন্তা করার সময়ও নেই । মাইর তো খাবই তা মিষ্টি খেয়েই না হয় খাই ! মিষ্টি দিচ্ছে আগে খেয়ে নেই ।
আমি যখন বাটির মিষ্টি অর্ধেক টা শেষ করে দিয়েছি ঠিক তখনই অনুভব করলাম আমার বুকের ভেতর টা কেমন একটু করে উঠলো । বুঝতে অসুবিধা হল না যে নিশি আসছে । ওকে দেখলে কিংবা ও আসে পাশে থাকলেও আমার এরকম মনে হয় । ঠিক তার কয়েক সেকেন্ড পরই নিশি ঘরের ভেতর ঢুকলো !

ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মিষ্ট খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল ! চোখ ফুলে কি অবস্থা ! মেয়েটা নিশ্চই কান্না কাটি করে প্রশান্ত মহা সাগর বানিয়ে ফেলেছে ! আমি কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম !
নিশি সোফার উপর পেছনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানির ফেলতে লাগলো !
খুব ইচ্ছে হল ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি ! জড়িয়ে বলি
এই তো আমি চলে এসেছি ! আর কোন সমস্যা নেই !
কিন্তু এই কাজ করা যাবে না ! যে কোন সময় নিলয় ভাই ঘরে ঢুকতে পারে । এখনও তার মতি গতি কিছু বোঝা যাচ্ছে না ! তিনি কি করবেন কে জানে ?
-খাচ্ছো না কেন ?
-কি ?
-মিষ্টি ?
-আমি এখানে মিষ্টি খেতে এসেছি ?
-তাহলে কি করতে এসেছ ?
-সম্ভবত মাইর খেতে এসেছে ? তোমার ভাই আমাকে প্যাদানি দেওয়ার জন্য এখানে ধরে নিয়ে এসেছে !
নিশি বলল
-ধরে আনলে কেউ মিষ্টি খেতে দেয় ?
-হতে পারে আগে ভাল করে হালাল করে তারপর ?
-বলেছে তোমাকে ? আমার ভাইয়া এরকম না !
-যাক ভাল ! তুমি কি ওখানেই দাড়াবে নাকি এখানে এসে বসবে ? কত দিন তোমার হাত ধরি না হিসাব আছে ?
-ধরতে হবে না ! এই কয়দিন আমি কিভাবে ছিলাম একবারও হিসাব করেছো ?
আমার বুক টা হুহু করে উঠলো । আমি বললাম
-আমি কিভাবে ছিলাম সেটা বুঝতে পারো নি !
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি ! আমাকে একটা বার ফোন দিয়েছো ?
-উপায় ছিল না !
-হয়েছে । ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় !

নিশি আমার উপর অভিমানের চোখ তাকিয়ে রইলো । তবে আমার বেশ খানিকটা ভাল লাগছিল ! এভাবে ওদের বসার ঘরে বসে নিশির সাথে প্রেমি পিরিতের আলাম করতে পারবো ভাবি নি !
কিন্তু আমার মাথায় আসলেই ঢুকছে আসলে কি হচ্ছে । নিলয় ভাই গেল কোথায় ! আমাকে এভাবে এখানে রেখে চলে গেল কেন ! এভাবে নিশির সামনে রেখে !

দুপুরে নিশির বাবা বাসায় আসে না । তাই দেখা হল না । নিয়ল ভাইও বাসায় এল না আর । নিশি এক প্রকার জোর করেই আমাকে দুপুরের খাবার খাইয়ে ছাড়লো ! আন্টি মানে নিশির মায়ের সাথে কথা বলে নিলয় ভাইয়ের আচরন টা অনেক টা পরিস্কার হল !
ভাইয়া যতই রাগি হোক নিশি তার এক মাত্র আদরের বোন ! আমার ব্যাপার টা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে ও নাকি কান্না কাটি করেই চলেছে । এমন কি একটা দানা পানিও মুখে নেয় । বোনের এই অবস্থা দেখে নিলয় ভাই একটু নরম হয়ে এসেছে । আজকে আমাকে যখন রাস্তায় হাটতে দেখে তখনও আমাকে নিয়ে এসেছে । তবে সামনে আর আনবেন কি না এই নিয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই !
আমি খানিকটা নিশ্চিন্ত মনেই বাসায় ফিরে এলাম । না জানি এই ব্যাপার টা বাসায় জানতে পারলেই কি হবে ! থাক পরের টা পরে দেখা যাবে ।



চার

টিপটা জায়গা মত দিয়ে শোবার ঘর থেকে বাইরে এসেই নিশির মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে গেল ।
জাহিদ খাবার টেবিলে বসে আছে । সেখানে কাজের মেয়ে টুলির মা ভাত বাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । নিশির মনে হল টুলির মা কে একটা চড় লাগাতে । রান্না করার সময়ই নিশি ওকে নিষেধ করে দিয়েছিল ও ভাত না বাড়ে । সপ্তাহে একটা দিন দুপুরে দুজনের খাবার সময় পায় । সেই সময়ও যদি কাজের মানুষ ভাত বেড়ে দেয় তাহলে কেমন লাগে !

নিশি এগিয়ে গিয়ে টুলির মায়ের দিকে চোখ গরম করে তাকালো ! টুলির বুঝে গেল তার কি করা উচিৎ ! নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভাতের চামচ টা আবার যথা স্থানে রেখে রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল ! নিশির নিরব চোখকে সে বেশ ভাল করেই ভয় না !
নিশি এগিয়ে গিয়ে জাহিদের প্লেটে ভাত বেড়ে দিতে লাগলো ! জাহিদ বরাবরের মত চুপ । বসার ঘরের টিভিটা খাবার টেবিল থেকে ভাল করেই দেখা যায় । জাহিদের চোখ সেদিকে । টিভিটা চলছে ।

নিশি ভাত বেড়ে দিয়ে ওর পাশে বসলো চুপ করে । একটু আগেই নিশি গোসল করেছে । চুল এখনও বেশ খানিকটা ভেজা ! এমনিতেই বাসায় ও সেলোয়ার কামিজ পরে থাকলেও আজকে শাড়ি পরেছে । আর হালকা প্রসাধনী সাথে কলাপে টিপ !
প্রতিদিনকার মত আজকে নিশি আজকে চশমা পরে নি । তার বদলে পরেছে কনট্যাক্ট লেন্স ! কেবল সেটা জাহিদ লক্ষ্য করে কি না সেটা দেখার জন্য নিশির এতো আয়োজন !

জাহিদ অবশ্য কিছু বলল না । কেবল নিরবে খেতে শুরু করলো ! মাঝে মাঝে টিভির দিকে তাকাতে লাগলো ! নিশি যে ওর পাশে বসে আছে এটা যেন ঠিক মত দেখছেই না । হঠাৎ করেই নিশির কেন জানি খুব কান্না আসতে লাগলো । মানুষ টা এমন কেন ? তার জন্য যে এতো আয়জন করে সাজানো হয়েছে, এটা কি একটুও লক্ষ করলো না !
খাবার অর্ধেক রেখেই নিশি উঠে পড়লো !

জাহিদ সেটাও যেন লক্ষ্য করলো না । তার চোখ এখনও টিভির দিকে । খাবার সময় কয়েকবার তাকালেও ব্যাপার টা ধরতে পারে নি ! ধরটে পারে নি যে নিশি আজকে নীল রংয়ের কনট্যাক্ট লেন্স পরেছে ।
এই গত সপ্তাহের কথা । রাতে শোবার সময় জাহিদ হঠাৎ করেই নিশিকে বলল
-তোমার কনট্যাক্ট লেন্সের রং টা হোয়াইট !
নিশি ঠিক বুঝতে পারলো না হঠাৎ জাহিদ এই ব্যাপারে জানতে চাইলো কেন ? নিশি বলল
-হুম ! কেন ?
-ও !
-কেন বল !
-না মানে ......

জাহিদ যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল ! কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না ! তারপর বলল
-না সেদিন আমাদের অফিসের এক কলিগ দেখলাম নীল রংয়ের কনট্যাক্ট লেন্স পরেছে । এই জন্য বললাম আর কি !
জাহিদ আর কিছু বলে নি । কিন্তু নিশির মনের ভেতরেই অনেক কিছুই ঘুরতে লাগলো । পরদিনই নীল রংয়ের কনট্যাক্ট লেন্সের অর্ডায় দেয় সে । এতো দিন সময় পায় নি বলে পরে নি । তাছাড়া আজকে ছুটির দিকে জাহিদ বাসায় থাকে । তাই ভেবেছিল ওর সামনে নীল রংয়ের কনট্যাক্ট লেন্স পরে যাবে । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ও নিশ্চই অবাক হবে । সেই অবাক করা চোখটাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল । কিন্তু কোথায় কি ?

তার যদি এই ব্যাপার কোন খেয়াল থাকে । নিজের শোবার ঘরে চুপ চাপ শুয়ে পড়লো !
কতক্ষন ছিল না একটু পরে টুলির মা এসে তাকে একটা কাজল ধরিয়ে দিল ! বলল
-ভাইজান দিছে !

বেশ খানিকটা অবাক হলেও নিশি ভাজ করা কাগজ টা খুলে দেখলো সেখানে কয়েকটা লাইন লেখা !
"ভেব না, তোমার দিকে তাকাতে দেখো নি বলে আমি তোমার দিকে তাকাই না ! নীল চোখে তোমাকে অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে কিন্তু বেশি তাকালে না আবা নজর লেগে যায় তাই নিজেকে বারবার নিয়ন্ত্রন করি"
লেখা পড়ার পর নিশি আরও কিছুটা সময় চুপ করে বসে রইলো । তারপর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখলো খাওয়ার পর জাহিদ টিভি দেখছে । এমন একটা ভাব যেন কিছুই হয় নি !
নিশি জাহিদের পাশে বসে খুব সাহস নিয়ে বলল
-এই আমার দিকে তাকাও !
-কি !!
জাহিদ খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো নিশির দিকে ।
নিশি বলল
-আমার দিকে তাকাও ! আজকে সারাদিন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে ! অন্য কোন দিকে তাকাবে না !
-কিহহহ !!
জাহিদ হেসে ফেলল ! নিশির কেন জানি জাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছে । অনেক বেশি ভাল লাগছে !


পাঁচ

-আওয়াজ কিসের ?
সাহেদ কিছুক্ষন কি বলবে কিছু বুঝতে পারলো না । চারিদিকে এতো আওয়াজ । তার উপর পাশের জন্যও ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে । কিন্তু এতো জোরে বলছে সাহেদের ইচ্ছে হল বলে ভাই ফোন ব্যবহার করার কি দরকার আপনি এতো জোরে বলছেন জানলা দিয়ে মুখ বের করে বলেন ওপাশ থেকে এমনিতেই শুনতে পাবে !

সাহেদ ফোনের কাছে একটা হাত নিয়ে যথা সম্ভব মুখ ঢেকে বলল
এই তো বাইরে আছি তো তাই !
-ও আচ্ছা অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছেন বুঝি !
-তুমিও তো যাচ্ছো, তাই না ?
-কিভাবে বুঝলেন ?

এই প্রশ্নের চট করে উত্তর সাহেদ দিতে পারলো না ! কেবল বাসের মহিলা সিটের একেবারে কোনায় বসা ফোন কানে মেয়েটার দিকে আরেকবার তাকালো । সাহেদ এমন জায়গায় বসেছে যেখান থেকে মেয়েটাকে পরিস্কার দেখা যায় কিন্তু মেয়েটা চট করেই চাইলেই তাকে দেখতে পারবে না !
সাহেদ তবুও একটু আমতা আমতা করে বলল
-না মানে এখন তো তোমার অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় তাই না ?
-হুম ! ঠিক ধরেছেন ! কোথায় আছে এখন ?
-এখন .....উমমম ! এখন .......
-বুঝতে পারছেন না এখন কোথায় আছেন ?
-এই কাটাবনের কাছে ।
-কাটাবন ? আপনি না খিলগাওয়ের দিকে থাকেন !
-ও হ্যা ! কাটাবন না ! কাকরাইল !
-তাই !!

সাহেদের নিজে কে একটা চড় মারতে ইচ্ছে হল । ঠিক মত একটা মিথ্যা কথাও বলতে পারে না !
সাহেদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই বাস টা ব্রেক করলো ! ফোনের ওপাশ থেকে মিমি বলল
-আচ্ছা আমার স্টপেজ চলে এসেছে । আমি নেমে পড়বো !
সাহেদ প্রায় বলেই ফেলেছিল যে তোমার বাসাতো মোহাম্মাদ পুর ! এখনও তো আসে নাই কিন্তু শেষ মুহুর্তে নিজেকে আটকে নিল !
-আচ্ছা

এই বলে ফোন টা রেখে দিল ! তাকিয়ে দেখলো সামনের বসা মিমি বাসের সামনের গেট দিয়ে নেমে পড়লো ।
সাহেদ নেমে পড়লো এরেকটু পরেই । তাকিয়ে দেখে মিমি ততক্ষনে পনের নাম্বারের গলির দিকে হাটা শুরু করেছে ।
কি ব্যাপার মিমি আজকে এখানে নামলো কেন ?
আর ওকে মিথ্যাই বা বলল কেন ?

সাহেদ অনিশ্চিত পায়ে মিমির পেছন পেছন হাটতে লাগলো ! মিমির সাথে সপ্তাহ খানেক আগে বিয়ে হয়েছে । ঠিক ধুমধাম করে বিয়ে না । কেবল কলমা পড়িয়ে রাখা হয়েছে । আরও কিছু দিন পরে উঠিয়ে আনা হবে !
কিন্তু এই কদিনেই মিমির উপর একটা অদ্ভুদ মায়া জন্মে গেছে । বাসররাতে যখন মিমি ওর পাশে ঘুমাচ্ছিল অদ্ভুদ একটা বুক ধড়ফড়ানী কাজ করছিল ওর ভেতর । রাতের ডিম লাইট জ্বালানো ছিল । উঠে গিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ।

আশ্চার্য হয়ে গেল এইটা দেখে যে মেয়েটাকে সপ্তাহে খানেক আগে ঠিক মত চিনতোও না । আজকে মনে হচ্ছে যেন কত দিনের চেনা !
তারপর গত কয়েক দিন থেকে সাহেদ একটা অদ্ভুদ কাজ করা শুরু করেছে । অফিস ছুটির পরেই মিমির অফিসের সামনে চলে যায় । সেখানে ওর জন্য অপেক্ষা করে । তারপর মিমি যখন বের হয় ওর পিছ নেয় । কেন ও নিজেই জানে না । সামনে হেটে যাওয়া মেয়েটি ওর নিজের বউ অথচ ও ওকে ডাকতে পারে না । কেবল পেছন পেছন ওর বাড়ি পর্যন্ত আছে । তারপর চলে যায় ! মাঝে মাঝে পথেই মাঝেই ওকে ফোন দেয় । অল্প কয়েকটা কথা বলে ফোন রেখে দেয় !

আরও কথা বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু একটু সংকোচ হয় ! ও আবার কি না কি ভেবে বসবে ! আজকেও তেমন টাই পিছু নিয়েছিল । অফিসে পর ও যেই বাসে উঠেছিল সেই বাসের পেছনের দরজা দিয়ে ও উঠে পেছনের দিকে বসে ওকে দেখছিল !
কিন্তু আজকে মেয়েটা এতো তাড়াতাড়ি নেমে গেল কেন ?
কোন বন্ধুর বাসায় যাবে ?
হয়তো ?

সাহেদ হাটতে লাগলো ! মিমি সামনের একটা গলির ভেতরে আড়ালো হয়ে গেল আবার ! সাহেদ আরও দ্রুত পা বাড়ালো ! ঠিক যখন গলির মাথায় পৌছে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই ওকে অবাক করে দিয়ে মিমি বেরিয়ে এল ।
একেবারে ওর মুখোমুখি !
সাহেদ কি বলবে বুঝতে পারলো না । কেবল অপ্রস্তুতের মত তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে !
-আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন ?
-না মানে....
সাহেদ কি বলবে ঠিক খুজে পেল না । কিছু বলার মত কোন কথা নেইও ওর সাথে । ওর পিছু পিছু আসতে যে ওর ভাল লাগার অনুভুতিটা সেটা সে কোন ভাবেই মিমিকে বোঝাতে পারবে না !
মিমি বলল
-আপনি কালকেও এসেছিলেন ! তাই না ?
-হুম !
-কেন ?
-জানি না ! কেবল তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হল তাই !
-তা আমাকে বলা যেত না ? সরাসরি আমাকে ফোন করলে কি সমস্যা ছিল শুনি ?
সাহেদ কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না !
মিমি বলল
-আজকে যে বাসে দৌড়ে উঠতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন সেটা যদি বড় কিছু হত তখন ?
সাহেদ অবাক হয়ে গেল । মিমি তাহলে তাকে ভাল করেই দেখেছে !
-তুমি দেখেছো ?
-নিজেকে কি মনে করেন ? সিআইএর এজেন্ট ? হ্যাবলার মত ফলো করলে মানুষ তো দেখে ফেলবেই !

সাহেদ আবারও বোকার মত তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে । ধরা পরে ওর মোটেই খারাপ লাগছে না । বরং খানিকটা ভালই লাগছে ।
মিমি খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলল
-এর পর থেকে আমাকে সরাসরি ফোন দিবে ! বাসে পিছনে না পাশাপাশি বসে যাবো ঠিক আছে !
-আচ্ছা !
-আচ্ছা এখন চল আমাকে বাসায় পৌছে দাও ! তোমার সাথে রিক্সা করে যাবো বলে একটু আগেই নেমে পড়েছি ।
সাহেদ লক্ষ্য করলো মিমি ওকে তুমি করে বলা শুরু করেছে । যখন ওদের রিক্সা চলতে শুরু করলো মিমি যেন একটা ওয়াকিং রেডিও হয়ে গেল ! কত কথা ননস্টপ বলে চলেছে । সাহেদ কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! ওর সারা মন জুড়ে একটা অদ্ভুদ ভাল লাগা কাজ করছিল !


ছয়

খুব জোরে মেঘ ডেকে উঠলো । সাথে সাথে মিমির বুকের ভেতরেও একটা কু ডেকে উঠলো । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ইতিমধ্যে সাড়ে দশটা পার হয়ে গেছে, অথচ এখনও মহাখালির পার হতে পারে নি । তাদের অফিসের গাড়িটা এখনও নিশ্চল হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাস্তার ভেতর অন্যান্য গাড়ির মত ।

মিমি কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । এখন বাসায় পৌছাতে পৌছাতে কতক্ষন লাগবে কে জানে ! বাসা নিয়ে কোন সমস্যা নেই কিন্তু বাসস্ট্যান্ড থেকে মিমিদের বাসাটা আরও একটু ভেতরে । রাত হয়ে গেলে এই পথটুকু বেশ ঝামেলার হয়ে যায় । বিশেষ করে ওর মত একা একটা মেয়ের জন্য তো আরও বিপদের কথা ।

এরই ভেতর মায়ের দুবার ফোন দেওয়া হয়ে গেছে । কিন্তু মিমি জানে এতো চিন্তা করেও কোন ভাল নেই । মায়ের পক্ষে একা একা এতো রাতে বাস স্ট্যান্ডে আসা সম্ভব না । আর তাদের বাসায় আর কেউ নাই ও যে মিমিকে নিতে আসবে । মিমি চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে । তার উপর আকাশে খুব বেশি মেঘ করেছে । ক্ষনে ক্ষনে বিদ্যুৎ চমকে উঠছে । বৃষ্টি নামলে কি হবে কে জানে ?

এরমন সময় ফোন বেজে উঠলো । মিমি ভেবেছিল মা ফোন দিয়েছে । কিন্তু তাকিয়ে দেখে দীপ ফোন দিয়েছে । একটু যেন বিরক্ত হল । ছেলেটা ওকে সেই কখন থেকে বিরক্ত করছে । মন মেজার ভাল না থাকলে মিমি সবার ফোন পেয়েই বিরক্ত হয়ে ওঠে !
বিরক্ত হয়েই মিমি ফোন ধরলো !
-কোথায় তুমি এখন ?
-কেন ?
-বল না ! আমার টেনশন হচ্ছে !
-টেনশন হলে তুমি কি করবে ? কিছু করতে পারবে ? শুনো আমি তোমাকে বলেছিলাম আমাদের ভেতর এমন কিছু এখনও হয় নি যে তুমি এতো সিরিয়াস হবে ! এতো টেনশন করার কিছু নেই ঠিক আছে ! এখন ফোন রাখ ! আর ফোন দিবা না এখন !
মিমি ফোন রেখে দিল । তবে ফোন রাখার পরে একটু যেন ওর মন খারাপ হল । ছেলেটার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার না করলেও হত । ছেলেটাও ওকে নিয়ে চিন্তা করছে । ও অবশ্য কোন দিনই এসব সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি চিন্তুত হয় নি । টুকটাক কথা ফোনে আর কয়েকবার দেখা এই ! এসবের জন্য এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই । কিন্তু দীপ ছেলেটা যেন একটু বেশি চিন্তিত হয়ে পরেছে ওকে নিয়ে । ব্যাপার টা নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে হবে ! এমন সময় আবারও জোরে মেঘ ডেকে উঠলো । মিমির চিন্তা টা আরও একটু যেন বাড়িয়ে দিয়ে গেল ।

যখন মিমি অফিসের বাস থেকে মোহাম্মাদপুর বাস স্টপে নামলো তখন ঘড়িতে সাড়ে এগারো টা । এর ভেতর বাস স্টপ টা প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে । মিমি রিক্সার জন্য এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো । নিজেকে খানিকটা অসহায় মনে হল । একটু যেন ভয়ভয় করছে । আকাশের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে । যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে যেতে পারে । মিমি চারিদিকে তাকাতে তাকাতে অদ্ভুদ একটা দৃশ্য দেখলো । প্রথমে মনে হল ও যেন দৃষ্টি ভ্রম হচ্ছে । কিন্তু দীপ যখন একেবারে ওর কাছে এসে হাজির হল তখন মনে যেন ও ভুল দেখছে । দীপের বাসা ধারে কাছে না । সেই চাঙ্খারপুলের দিকে ! ছেলেটা এখানে কি করছে ?
ওর জন্য এসেছে !
মিমি কেবল বলল
-তুমি ?

প্রশ্নটা শুনে দীপ যেন একটু বিব্রত হল । কি বলবে ঠিক বুঝলো না ! ছেলেটা সব সময়ই একটু লাজুক প্রকৃতির । এর আগে যতবারই ওর সাথে মিমির দেখা হয়েছে ততবারই ছেলেটা কেমন লাজুক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকেছে । মিমি আবার বলল
-সত্যি কি তুমি ?
-তুমি একা একা এতোদুর যাবে, ভাবতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না ! তাই.....
-তাই বলে এভাবে চলে আসবে ?
একটু রাগ ঝাড়লেও মিমি ভেতরে ভেতরে এতো আনন্দিত হল যে কিছুতেই বোঝাতে পারবে না ! ইচ্ছে হল দীপ জড়িয়ে ধরে !
রিক্সায় উঠে হুড তুলে দিলো । দীপ কেবল রিক্সাওয়ালাকে বলল যে যেই ডাকুক কারো ডাকে যেন কানে না দেয় এবং রিক্সা যেন না থামায় !

পুরা নির্জন রাস্তা দিয়ে রিক্সা ছুটে চলেছে । মিমি দীপ হাত ধরে চুপ করে বসে আছে । বারবার মনে র ভেতর একটা কাজ করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু একটু যেন সংকোচ হচ্ছে । একটা সময় সংকোচ কাটিয়ে হঠাৎ করে দীপের গালে ছোট্ট করে একটা চুম খেলো । তারপর আস্তে করে বলল
-থ্যাঙ্কিউ ফর বিং দেয়ার ফর মি !
দীপ কিছুটা সময় মিমির দিকে তাকিয়ে বলল
-যেখানে তোমার দরকার আমি সেখানে থাকবো তোমার জন্য ।
এবার চুমুটা মিমি দীপের ঠোঁটে খেলো । একটু আগেও যে ভয়টা ওর করছিল এমন কি দীপের সাথে রিক্সায় ওঠার পরেও একটু যে ভয় করছিল না তা না কিন্তু এখন সেইটা আর করছে না । কেবল মনে হচ্ছে এই ছেলেটা তার পাশে থাকলে তার কোন ক্ষতি হবে না ! কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না !

যখন মিমি নিজের ঠোঁট সরালো ততখন রিক্সা পৌছে গেছে । রিক্সা থেকে নেমেও আরও কিছুটা পথ হেটে যেতে হয় ওদের বাড়ির ভেতরে । গলির ভেতরে রিক্সা যায় না । দীপ যখন রিক্সা ভাড়া দিয়ে ওর পেছন পেছন আসতে গেল মিমি বলল
-তুমি এই রিক্সা নিয়ে চলে যাও ! গলির ভেতরে আসার দরকার নেই !
-না ! তোমাকে বাড়ির গেট পর্যন্ত না ঢুকতে দেখলে আমার শান্তি লাগবে না ! এতো দুর এসেছি ! এই টুকুও আসি ! প্লিজ ! তারপর না হয় চলে আসবো !
এতো ভাল লাগলো কথা শুনে ! হেসে বলল
-এসো !

কিন্তু ওদের ভাগ্যে মনে হয় অন্য কিছু ছিল । গলির ভেতরে নামতেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নেমে গেল ! দুজন মিলেই মিমিদের বাসার গেটে রকাছে আসতেই অর্ধেক ভিজে গেল ! ওকে গেট দিয়ে ভেতরে দিয়ে দিয়ে দীপ বেরিয়ে গেল বৃষ্টির ভেতরে । মিমির দিকে তাকিয়ে বলল -এবার আমি যেতে পারবো ভাল করে !
মিমি তাকিয়ে দেখে এরই ভেতরে দীপ বেশ খানিকটা ভিজে গেছে । এক টান দিয়ে ওকে গেটের ভেতরে নিয়ে এল ! বলল
-ভিজে যাচ্ছো তো !
-সমস্যা নেই !
-সমস্যা আছে ! এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে না ! বৃষ্টি থামুম তারপর যেও !
-এই বৃষ্টি আর থামবে না ! আমি যাই !
-না !
-আরে অনেক রাত হয়েছে ।
-বলছি না, না !

মিমি কিছুক্ষন ভাবলো ! একবার মনে হল মা নিশ্চই খুব রাগ করবে ! তারপর মনে হল না করবে না ! শেষে মনে হল করলে করুক ! দীপের জন্য একটু চোখ রাঙানী সহ্য করে নিবে !
মিমি দীপের দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো তুমি আমার অফিসে আমার সাথে চাকরি কর! থাকো এই কাছেই । সংকরে । আমি একা একা আসছি দেখে আামকে এগিয়ে দিতে এসেছো ! ঠিক আছে ?
-মানে কি !
-কোন মানে নেই । আমি যা বলছি এটাই সত্যি ! এবার এসো আমার সাথে !
দীপ কেবল অবাক হয়ে দেখলো মিমি ওর হাত ধরে ওকে সিড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছে ! দীপের বুকটা কেমন যেন একটু করতে লাগলো ! সাথে সাথে একটা ভাল লাগার অনুভুতিও প্রবাহিত হতে লাগলো ওর মন জুড়ে !


সাত

মানকি বিজনেসে একটা কথা ছিল । কিছু কিছু হাসি দেখলে বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা মোচড় দিয়ে উঠে । আমি কথা আরও একটু ঘুরি যদি বলি । কিছু কিছু চেহারা দেখলে বুকের ভেতরে একটা ধাক্কা লাগে ! ব হুদিন সেই ধাক্কাটা বুকের ভেতরে লেগে থাকে ।
ঠিক তেমনই ধাক্কা লাগা চেহারার একজন ঠিক আমার সামনে দাড়িয়ে আছে । আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । আমি কিভাবে এটো সাহস যুগিয়ে তার সামনে চলে এলাম আমি নিজেই বলতে পারবো না । হয়তো এমন একটা সময়ের প্রয়োজনে হয়েছে ।
মেয়েটি আমার দিকে খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-আপনার কথা বুঝতে পারলাম না !
-আমি তো বাংলা ভাষায়ই বলেছি । না বোঝার তো কিছু নেই !
মেয়েটার চেহারায় একটু হালকা বিরক্তি ভাব ফুটে উঠলো ।
-দেখুন....।
মেয়েটা কথা শেষ করার আগেই তাকে হাত তুলে থামিয়ে দিলাম !
-আমি খুব বেশি সময় নিবো না ! দুই মিনিট ! তারপর চলে যাবো ! বলবো ?
মেয়েটি কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-আচ্ছা !
আমি মেয়েটির সামনে আরেকটটু ঘুরে দাড়ালাম ।
-আজকে আসলে বসুন্ধরায় আসার কোন ইচ্ছে ছিল না । কিন্তু যদি না আসতাম হয়তো জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা টা থেকে বেঁচে যেতাম !

মেয়েটির মুখে এবার বিরক্তির বদলে একটা সুক্ষ বিশ্ময় বোধ জেগে উঠলো ! আমি বললাম
-আসলে আমার বন্ধরা ওখানে লাঞ্চ করছে । আমারও ওখানে লাঞ্চ করছিলাম ঠিক তখনই আপনাকে দেখলাম । সত্যি বলতে কি জীবনে কারো চেহারা দেখে আমি কিংবা আমার মন টা এতো আন্দোলিত হয় নি ! সামনে হবে কি না আমি বলতে পারছি না !
কিছুক্ষন নিরবতা । তারপর আবার বলা শুরু করলাম !
-হয়তো আপনার সাথে এর পরে আর কোন দেখা হবে না ! তাই আপনি যখন ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য টেবিল থেকে উঠলেন আমি আপনা আপনি উঠে গেলাম ! মনে হল আপনার সাথে যদি কথা না বলতে পারি তাহলে হয় তো আজকের পর থেকে কোন রাত আমি ঘুমাতে পারবো না !

আমার কন্ঠে হয়তো কিছু একটা ছিল দেখলাম মেয়েটার চেহারার াভব পরিবর্তিত হয়ে গেল ! আমার দিকে কেবল অবাক হয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো !
আমি আবার বললাম
-একটা রিকোয়েস্ট কি করবো আমি ?
মেয়েটি ছোট্ট করে বলল
-বলুন !
-আপনার একটা ছবি তুলতে পারি ? প্লিজ !
মেয়েটা কিছু বলল না !
আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে মেয়েটার বেশ কয়েক টা ছবি তুললাম ! মেয়েটা তখনও এক ভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । কিছু একটা খুজছে যেন !
আমি বললাম
-থেঙ্কিউ ! আসি কেমন !
চলে যাবো ঠিক তার আগে মেয়েটার দিকে ঘুরে আবারও বললাম
-আমি জানি হয়তো এর পরে আর কোন দিন আপনার সাথে আমার দেখা হবে না ! তবে চাইলে মানে যদি আপনি চান তাহলে আপনি আমার খোজ বের করতে পারেন ! আমার ফেসবুক ইউজার নেম এসবিডাট তানভীর ! আসি ! আর দাড়ালাম না ! আবারও নিজের জায়গায় চলে এলাম । লিজা আর লিপি তখনও লাঞ্চ করার ব্যস্ত !
আমি আসতেই আমার দিকে তাকিয়ে লিজা বলল
-কি ব্যাপার কই গেছিলা ?

আমি উদাস হয়ে কিছুক্ষন তাদের দিকে থেকে আবারও খাওয়ার দিকে মনযোগ দিলাম । তারাও আর খুব বেশি কথা বাড়ালো না !
আজকে আসলেই এখানে আসার কথা ছিল না । কথা ছিল আগে হাতে টাকা আসবে তারপর ট্যাব টা কিনবো । কিন্তু প্রেজন্টেশন শেষে লিজা বলল তার কাছে টাকা আছে চাইলে আমি নিতে পারি । আর আমাকে পায় কে । সোজাসুজি বসুন্ধরায় এসে হাজির হলাম !
ট্যাব কিনে আট তলায় এসে কেবল এক চামচ ফ্রাইড রাইস মুখে নিয়েছি ঠিক তখনই মেয়েটার দিকে চোখ গেল । চোখ গেল বলতে চোখ যাওয়ার পর থেকে আমার সব কিছু যেন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল । আমি কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলাম না । মুখে কিছু দিতে পারলাম না । কেবল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটার চেহারার বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয় । আমি কেবল মেয়েটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।

বাসায় এসে মেয়েটাকে মনের ভেতর থেকে বের করতে পারলাম না । ভেবেছিলাম মন থেকে বের করতে পারবো । কিন্তু কিছুতেই বের করতে পারলাম না । বারবার মোবাইল থেকে বের করে মেয়েটার ছবি দেখতে লাগলাম । আর বুকের ব্যাথাটা বারবার অনুভব করতে পারছিলাম । মেয়েটার সাথে আর কোন দিন দেখা হবে না এই কথা ভেবে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছিল ।

কোন কারন নেই । অহেতুক একটা কাজ তবুও কেন যেন আমি কাজ টা করা থেকে কিছুতেই বিরত থাকতে পারলাম না ।
আরেক টা অদ্ভুদ কাজ করা শুরু করলাম । যেই আমি সব সময় বসুন্ধরা সিটি থেকে দুরে দুরে থাকতাম সেই আমি প্রায় প্রতিদিনই সেখানে যেতে থাকলাম । একটাই লক্ষ্য যে মেয়েটাকে আবার দেখা । যেহেতু মেয়েটা সেখানে এসেছে সেহেতু আবারও আসতে পারে । আবার দেখা হলেও হতে পারে । সেই ডাকাইয়া সামনেই বসে থাকতাম । দুপুর হলে লাঞ্চ করতাম । সন্ধ্যার নাস্তায় আর রাতের ডিনার করেই বাসায় আসতাম । নিজের কাছেই ব্যাপার টা হাস্যকর লাগছিল । আমার বন্ধুরাও হাসাহাসি করতো । লিজা তো রীতিমত আমাকে ঝাড়ি দিতে লাগলো !
তারপর .....

সত্যি সত্যি মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়ে গেল । সেদিন সবে মাত্র লাঞ্চ শুরু করেছি ঠিক তখনই পেছন থেকে কন্ঠ টা বলে উঠলো
-তাহলে আপনি আসলেি চাপা মারেন নি ?
আমি ফিরে তাকাতে আমার বুকের ভেতরে আবার সেই ধাক্কাটা লাগলো ! সেদিন মেয়েটা একটা কলা পাতার রংয়ের সেলোয়াজ কামিজ পরে ছিল আর আজকে পরে আছে নীল রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ !
মেয়েটা আমার টেবিলেই এসে বসে পড়লো খুব স্বাভাবিক ভাবেই !
আমার মুখে তখনও কোন কথা নেই । আমি কেবল মেয়েটার দিকে তাকিয়েই আছি !
খাচ্ছেন না কেন ? ঠান্ডা হয়ে যাবে তো ?
আমি কোন রকমে বললাম
-সত্যিই আপনি তো ?
-কি মনে হচ্ছে ?
-জানি না । মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি !......
(গল্পটা এখনও শুরু হয় নি । কালকে সারা দিন ভেবেছি কি কি লিখবো অথচ লেখা শুরুর পর আর লিখতে ইচ্ছে করছে না )



গল্প লিখি আমি সময় কাটানোর জন্য । নিজের কল্পনা টা লিখে রাখতে ভাল লাগে । সারা দিন কত কল্পনা আসে মনে । সেই গুলোর কিছু লিখে রাখি । এটা কোন সাহিত্য গুন বিচার করে লেখা না । আমার মনের সময় কাটানোর একটা খোরাক মাত্র
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×