somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকাইয়া সুপারম্যান (স্টেজ থ্রি)

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাখালী রেলগেট !

বর্ষাকালে যেমন কুত্তা বিলাইয়ে (ক্যাটস এন্ড ডগস) বৃষ্টি নামে ঠিক তেমনি এই আজকে এইখানে সেই রকমই কুত্তা বিলাইয়ের জ্যাম লেগেছে । অবশ্য এই জায়গাটা এমনই একটা স্থান যেখানে প্রতিদিনই জ্যাম লাগে । কোন দিন-কাল নেই, সব সময়ই কঠিন জ্যাম লেগেই থাকে ।

গাড়ির সারি রেলগেটের এদিক থেকে ওপাশে চলে গেছে । যতদুর চোখ যায় কেবলই নিশ্চল গাড়ির সারি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না । গাড়ির ঢাকার সাথে যেন শিকড় গড়িয়েছে সেই কবে থেকে । আদিম যুগ থেকে কেবল গাড়ি গুলো দাড়িয়েই আছে । কোন প্রকার এগুনো কিংবা পেছানোর কোন নাম নিচ্ছে না ।

নীলার অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগছে না । পাশের মানুষটা থাকলে নীলা যে কোন পরিস্থিতিতে ভাল থাকতে পারে । আর জ্যামের কারনে একটা ভাল কাজ হয়েছে । নীলা আর সুমন যে বাসটাতে করে গুলশান যাচ্ছিলো ফার্মগেটের পর থেকেই সেটাতে বেশ ভীড় ছিল । এখন জ্যামের কারনে সেই ভীড়টা অনেকটাই কমে গেছে । অনেকেই বাস থেকে নেমে গেছে । সুমন অনেকটা সময় বিরক্ত মুখে বসে আছে । নীলার কানে হেড ফোন । মৃদু ভলিউমে গান শুনছে রেডিওতে আর মাঝে মাঝে সুমনের সাথে কথা বলছে ।

সুমন আবারও বলল
-চল নেমে যাই !
-কেন ? এখনও কতদুর জানিস ? আমি এতো দুর হাটতে পারবো না ।
-তাই বলে সারাজীবন বসে থাকবি এখানে ? আমার তো মনে হচ্ছে এই জ্যাম এই জীবনে আর ছাড়বে না !
-আরে বেশি সময় লাগবে না । বসে থাক না ! নাকি আমার পাশে বসে থাকতে তোর ভাল লাগছে না ?
-সে কথা বলি নি আমি । কিন্তু ফরমটা ...
-আরে রাখ, চারটা পর্যন্ত সময় । চুপচাপ বসে থাক তো ! ইচ্ছে করলে আমার হাত ধরেও বসে থাকতে পারিস !!

সুমন নীলার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন অপরিচিত একটা মানুষ ওর কথায় খুব অবাক হয়েছে । নীলা সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে বলল
-কি ব্যাপার এমন ভাবে তাকাচ্ছিস কেন ? শোন মেয়েদের একটা সহজাত সুপারপাওয়ার থাকে । তারা অনেক কিছু আগে থেকেই বুঝে ফেলে কিংবা না বলা অনেক কথাই বুঝতে পারে । বুঝেছিস ! এভাবে তাকাবি না !
সুমন আবারও কিছু না বলে কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলো । সেই অবাক হওয়ার জায়গায় এখন মৃদ্যু একটু হাসি দেখা যাচ্ছে !


নীলা ইচ্ছে করেই এবার সুমনের হাত ধরলো । অসম্ভব মোলায়েম কন্ঠে বলল
-ঐ দিন হাত ধরেছিলি মনে আছে । মনে হচ্ছিলো যে তোকে হয়তো আর কোন দিন দেখতে পাবো না !
-আচ্ছা বাদ দে । যা হয়েছে হয়েছে । কিন্তু এই জ্যামে আর কতক্ষন

কথা টা বলেই সুমন চুপ করে গেল কিছুটা সময় । নীলার কেবল মনে হল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । কোথাও কোন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । সুমনের উঠে দাড়ানোটা সেটা আরও বেশি করেই সেটা প্রমান করে দিল ।
নীলা বলল
-কি হয়েছে ?
-কিছু না । তুই এখানে বসে থাক । আমি আসছি !
-কোথায় যাচ্ছিস ?
-কোথাও না । তুই বসে থাক ।

এই বলেই সুমন হাটা দিল । কয়েক পা এগিয়ে আবার ফিরে এল । নীলার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোর কাছে ডাস্ট-মাস্ক আছে না ?
-হুম !
-দে দেখি !

নীলার ওর ব্যাগ থেকে ডাস্ট মাস্কটা বের করে সুমনের হাতে দিল । সুমন মাস্কটা হাতে নিয়ে বলল
-চিন্তা করিস না ! আমি ঠিক থাকবো ! ঠিক আছে !
নীলা কেবল হাসলো । নীলা জানে ও ঠিকই থাকবে । ওর কিছু হওয়ার নয় !


দুই

সার্জেন্ট হাফিজের সকাল থেকেই মনে হচ্ছিলো আজকে দিন টা তার ভাল যাবে না । কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটবেই ঠিক ঠিক । তার চাকরীর জীবনে তিনি যেই যেই দিন সকালে এমন টা মনে হয়েছে ঠিক সেই সেই দিন এমন কোন না কোন ঝামেলা ঠিকই বেঁধেছে । শেষ যখন মনে হয়েছি সেদিন তিনি পায়ে গুলি খেয়েছিলো । যদিও খুব একটা বড় ক্ষতি হয় নি কিন্তু একটু ক্ষুড়িয়ে চলতে হয় । এবং তারপরই তার পোস্টিং তারপর এই ট্রাফিক বিভাগে হয়েছে । অবশ্য এতে তিনি খুব একটা অখুশি নন । আগের থেকে এখন বলতে গেছে ভালই আছেন ।

আজকে সকাল থেকেই এই রেলক্রসিং রয়েছেন এবং এর আসে পাশের সব জায়গায় অসম্ভব জ্যাম লেগে আছে । কিছুতেই ছুটছে চাচ্ছে না । গাড়ি এগোচ্ছে না, এক জাগয়াই দাড়িয়ে আছে তো আছেই । যদিও চলতে মাঝে মাঝে তাও শামুকের গতিতে । একটু দুরে গিয়ে আবারও থেমে যাচ্ছে ।

সার্জেন্ট হাফিজ এবং তার সাথের আরও সাত জন ট্রাফিক পুলিশ এই এলাকায় রয়েছে । তারাও কেবল অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । শত চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না । জ্যাম যে ছুটতেই চাইছে না । সার্জেন্ট হাফিজের কেবল মনে হচ্ছে আজকে যেন ঢাকা শহরের সব গাড়ি এই রাস্তায় এসে পরেছে । তাদের কেবল এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে । অন্য সব পথ আটকে দেওয়া হয়েছে ।

অবশ্য ঢাকা শহরে এই জ্যামটা নতুন কোন ব্যাপার না । এটা মানুষের গাঁ সয়া হয়ে গেছে । সবাই এটা মেনেই নেয় । কোন সমস্যা নেই এমন একটা ভাব করে বসে থাকে । সেই হিসাবে সার্জেন্ট হাফিজের খুব একটা চিন্তা করার কথা না । কিন্তু তার চিন্তা হচ্ছে অন্য কারনে । ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন বারবার ।

অলরেডি তিনি ওদিকটার রেলগেট তিনি ফেলে দিয়েছেন । কিন্তু এদিকটার গেট এখনও ফেলতে পারেন নি । অবশ্য না ফেলেও খুব একটা লাভ নেই । আগে যাওয়ার জন্য কয়েকটা গাড়ি এখানে এসে ভিড় করে আছে । জ্যামটা আরও বেশি আকারে বেঁধে গেছে সেখানে । কিন্তু সব থেকে সমস্যার কথা হচ্ছে এখনও একটা বাস ঠিক রেল লাইনেই উপরে দাড়িয়ে আছে । সামনে এগুলোতে পারছেন না কারন এর আগেও একটা কার গাড়ি দাড়িয়ে আছে । পেছন দিকেও আসতে পারছে না ঠিক একই কারনে !

এদেরও দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই । সামনের পুরো রাস্তাটা আটকে আছে । এক চুল সামনে এগোনোর কোন উপায় নেই । সার্জেন্ট তার অধিন্যাস্তের দিকে তাকালো । ব্যাচারা এরই ভেতরে ঘেমে একাকার হয়ে হয়ে গেছে । কিন্তু এখনও একটা গাড়িকে সরাতে পারছে না । সার্জেন্ট আরেকবার ঘড়ি দেখতে যাবেন তখনই ট্রেনের হুইসেল শুনতে পেলেন । ঘুরে গেলেন সাথে সাথেই । দুরে থেকে আওয়াজটা আসছে ।

ট্রেন আসছে ।

এখানে পৌছাতে আর খুব বেশি হলে মিনিট দুইয়েক কিংবা তার থেকে কিছু বেশি সময় লাগবে ।
সার্জেন্ট তাকিয়ে দেখলো এখনওলাইনের উপর দুইটা গাড়ি আছে । একটা বড় বাস আর একটা কার । যদি এভাবেও ট্রেনটা আসে তাহলে কার গাড়িটাটা হালকা ধাক্কা দিলেও বাস টা কে সরাসরি ধাক্কা মারবে । তিনি দৌড়ে পেছনে চলে গেলেব বাসটার । সেখানে এমন জায়গা নেই যে বাস টা পেছনে সরবে । এদিকে সামনেও যাবার মত কোন অবস্থা নেই ।

এখন কি করবেন তিনি ।

ততক্ষনে বাস থেকে যাত্রীরা সব নামতে শুরু করে দিয়েছে । চিৎকার চেঁচামিচিও শুরু হয়ে গেছে চারিদিকে । সবাই বুঝতে পারছে সামনে বড় রকমের একটা দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । সার্জেন্ট কেবল কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । বাসের যাত্রী হিসেব করে দেখলেন তিনি । ট্রেন টা যে গড়িতে এগিয়ে আসছে কোন ভাবেই বাসের সব যাত্রী নামতে পারবে না । একটা মাত্র গেট দিয়ে সবাই বের হতে গিয়েই সমস্যা বেঁধে যাচ্ছে । কেউ ঠিক মত বের হতে পারছে না ।

সার্জেন্ট মনে মনে প্রার্থনা করলেন । এটা ছাড়া তার এখন আর কোন কিছুই করার নেই । এদিকে তার অধিন্যাস্ত হাবিলদার তার হাতের রুল লাঠিটা দিয়ে বাসের গায়ে বাড়ি মেরেই যাচ্ছে । সবাইকে বের হতে বলছে । তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন আসে পাশের মানুষ গুলোও তার মত উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করছে । সবাই তাকিয়ে আছে আসন্ন দুর্ঘটনার দিকে ।


তিন

ইশানার বিরক্তিটা এবার ভয়ে রূপান্তরিত হয়েছে । বাইরের জ্যামটার দিকে এতক্ষন সে খুবই বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে ছিল এখন সেটা ভয়ের দিকে টার্ন নিয়েছে । ট্রেনের হুইসেলটা শোনার পর থেকেই । ওদের পেছনের বাস টা এখনও রেল লাইনের উপর । কোন সন্দেহ নেই ট্রেন সরাসরি ওটার গায়ে আঘাত মারবে । এখনও বাস টা ভেতরে মানুষজন দেখে যাচ্ছে ।

-আফা !
বাস থেকে নজর সরিয়ে ড্রাইভার দিকে তাকালো ইশানা ।
-কি হয়েছে ?
-আপনে নাইমা খাড়ান !
-কেন ?
-আমাগো গাড়িটাও লাইনের উপরে একটু আছে । জোড়ে ধাক্কা না মারলেও ঢাক্কা লাগতে পারে । আপনে নাইমা যান ! আমি এটার ভেতরে আছি !
-আরে আপনি কেন থাকবেন ? আপনিও নামুন !
-না আফা ! বড় সাবে বিশ্বাস কইরা এইটা গাড়ি আমার কাছে দিছে । আমি ভালা থাকুম আর এইটা নস্ট হইবো এইটা আমি পারুম না । আপনে নাইমা যান !
-আরে কি আশ্চর্য কি বলছে না আপনি । নামুন বলছি ! নামুন !
-না আফা ! আপনে নামেন !


ইশানা কি করবে কিছু বুঝতে পারলো না । কোন ভাবেই এই বুড়ো ড্রাইভার কে নামানো যাবে না দেখতে পাচ্ছে । যদিও খুব একটা ভয়ে নেই সে কিন্তু ট্রেনটার ধাক্কা ঠিকই লাগবে ওর গাড়িটার গায়ে । এই সময়ে এখানে বসে থাকাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে ?
এদিকে ট্রেনটার হুইসেল আরেকবার কানে এল । আর কত সময়ের ভেতরেই ট্রেনটা চলে আসবে ।


ইশানা গাড়িতে থেকে নামতে যাবে তখনই একটা অবাক করা বিষয় ঘটলো ওর সামনে । ওর গাড়িটা হঠাৎ করেই খুব জোরে নড়ে উঠলো । যেন কেউ হাত দিয়ে নড়িয়ে দিয়েছে । তারপরই গাড়িটা দুলে উঠলো ।


আরে !!

ইশানা কয়েক মুহুর্ত বুঝতেই পারলো না কি হচ্ছে । কেবল অনুভব করলো যেন কেউ ওদের গাড়িটা হাত দিয়ে উচু করেছে । ইশানা সেটা খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে । তারপর সেটা এক পাশে সরিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে । কয়েক সেকেন্ড লাগলো সেটা করতে ।
গাড়িটা যখন আবারও নিচে নামিয়ে রাখলো তখন ইশানার হুস ফিরলো । একটু আগে ওর গাড়িটা যেখানে রাস্তা বরাবর ছিল, রেল লাইনের সাথে উলম্ব আকারে ছিল এখন সেটা রাস্তার উপর আড়াআড়ি ভাবে রয়েছে । রেললাইন থেকে বেশ খানিকটা দুরে !


চোখে অবিশ্বাস নিয়ে ইশানা গাড়ি থেকে নেমে এল । বুড়ো ড্রাইভারও নেমে এসেছে । তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে ! তার চোখেও অবিশ্বাস ! ইশানা গাড়ির পেছনে তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখতে পেল । কোন সন্দেহ নেই এই ছেলেটাই একটু আগে ওদের গাড়িটা উচু করে এক পাশে সরিয়ে দিয়েছে ।

ছেলেটার মুখে একটা ডাস্ট মাস্ক পরা । চুপ গুলো একটা বড় করে রাখা । গায়ের রং শ্যামলা ফর্সা ! গায়ে নীল রংয়ের একটা শার্ট আর কালো জিন্স ! পায়ে চপ্পল !

ইশানা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে । কেবল ওই নয় আসে পাশেই সবাই যারা একটু আগে চিৎকার চেঁচামিচি করছিল এখন চুপ করে আছে । গাড়ির হর্ন গুলো থেমে গেছে । কেবল ট্রেনের হুইসেল শুনা যাচ্ছে !

বাস !
ইশানার মনে পড়লো এখনও বাসটা রয়ে গেছে রেল লাইনের উপরেই !

ইশানা আবারও ছেলেটার দিকে তাকয়ে আছে । চোখাচোখি হল দুজনের । ইশানার কেবল মনে হল ছেলেটা হাসলো । সেই হাসিতে ভরশা দেওয়া দৃষ্টি !

যেন বলছে
ভয়নেই আমি আছি !


শার্টের হাতা গুটিয়ে ছেলেটা এবার বাসটার সামনে চলে এল । আরেকবার তাকিয়ে দেখলো ট্রেনের দিকে । খুব বেশি সময় নেই আর হাতে ।

সার্জেন্ট হাফিজ অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে আছে । একটু এই পিচকি ছেলেটা এমন ভাবে সামনে থাকা কার গাড়িটা তুলে এক পাশে সরিয়ে রাখলো যেন কোন গাড়ি নয় একটা খেলনা গাড়ি তুলে ধরেছে । এখন এতো বড় বাসরার সামনে দিয়ে তুলে দুই চাকা তুলে ধরেছে ।বাসে ভেতরে যে মানুষ গুলো এখনও বের হতে পারে নি তারাও চুপ করে গেছে । নড়াচড়া করছে না ।

মনে হল ছেলেটা সম্ভব বাসটা তুলে ধরতেই ক্লান্ত হয়ে গেছে । আরও কয়েক মূহুর্ত নিশ্চল ভাবেই দাড়িয়েই রইলো এক জায়গায় ! তারপরেও আস্তে আস্তে নড়তে শুরু করলো বাসটা ।
আস্তে আস্তে সরতে লাগলো বাসটা রেল লাইনের উপর থেকে ।
ইশানা কেবল তাকিয়েই আছে । কখন যেন ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও করা শুরু করেছে ও নিজেই জানে না । ছেলেটা তখনও বাসটা কে তুলে নিয়ে একপাশে সরিয়ে দিতে ঠিক যেমন করে ওদের গাড়িটা লাইন সোজাসোজি সরিয়ে আড়াআড়ি ভাবে রেখে দিয়েছিল ।

ইশানা তাকিয়ে দেকখো ট্রেনটা অনেক কাছে চলে এসেছে । এখনও বেশ কিছু টা বাকি !

ছেলেটা পারবে তো ?
পারবে ?
পারবেই !
আর একটু এই তো হয়ে গেছে ।



ঠিক যখন ট্রেনটা চলে তার কয়েক মুহুর্ত আগে বাস টা সম্পর্ন ভাবে লাইন থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখলো । একটু যেন ছুয়েও গেলে বাসটাকে । মৃদু ধাক্কা খেলো তবে সেটা বড় কোন কিছু না !



ট্রেনটা দ্রুত গতিতে পার হয়ে গেল । তারপর সব চুপচাপ । কেউ কোন কথা বলছে না । আরও ভাল করে বললে কেউ কোন কথা বলতে পারছে না । একটু আগে তাদের চোখের সামনে যে অবিশ্বাস ঘটনা ঘটে গেল তা কোন ভাবেই বিশ্বাস করছে না । আবার না বিশ্বাস করে পারছেও না । নিশ্চিত দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বাসের যাত্রী গুলোও কোন কথা বলতে পারছে না । নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার মত আনন্দে তারা কিছু সময়ের জন্য কথা হারিয়ে ফেলেছে ।

ট্রেন টা চলে যাওয়ার পরে তখনও সেই ছেলেটা সেখানেই দাড়িয়ে আছে । মুখে এখনও ডাস্ট মাস্ক পরা !

সবার আগে ইশানাই ছেলেটার দিকে দৌড় দিল । তারপরই সার্জেন্ট হাফিজ ! এর পর আরও মানুষ কেবল ছেলেটার কাছে পৌছাতে চায় । ছেলেকে একটা ছুয়ে দেখতে চায় সবাই ।
তারা একটু আগে যা দেখলো তা কি আসলেই সম্ভব । সত্যি ? না কি সব চোখের ভুল !

ইশানা প্রায় পৌছে গেছে তখনই আবার ছেলেটার সাথে আবারও চোখাচোখি হয়ে গেল । আবারও সেই হাসি । ছেলেটা চোখ দিয়ে হাসতে পারে খুব ভাল । এবার আর ভরশা দেওয়ার হাসি নয় বরং ছেলে মানুষী হাসি ! যখনই ইশানা ছেলেটাকে স্পর্শ করতে যাবে তখনই ছেলেটা একটু নড়ে উঠলো । একটু নিচের দিকে ঝুকে লাফ দিলো উপরের দিকে ।

ঠিক ঠিক সবাই ধরা ছোয়ার বাইরে গিয়ে সোজা গিয়ে পৌছালো ফ্লাইওভারের ওপারে । তারপর আরেকবার সবার দিকে হাত দিলে হারিয়ে গেল ।


ইশানা কেবল তাকিয়ে রইলো ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে । ওর ক্যামেরার ভিডিও ক্যামেরা তখনও চালু হয়ে আছে ।


পরিশিষ্টঃ


-কি ফরম জমা দেওয়া শেষ ?
নীলা তাকিয়ে দেখে সুমনের ভেতরে কি একটা যেন একটু অন্য রকম লাগছে ।

ওকে জ্যামের ভেতরে রেখে সে যে সেই গায়েব হয়ে আর তার দেখা নেই । সামনে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছিলো নীলার মনে হয়েছে । অবশ্য নীলা সেদিকে খুব একটা লক্ষ্য করে নি । হেড ফোনের আওয়াজ বাড়িয়ে দিয়ে চুপ চাপ ছিল । তারপর কখন যে ঘুম চলে এসেছিল সে নিজেই বলতে পারবে না । যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ও প্রায়ই পৌছে গেছে গুলশান একের কাছে । আজকে এখানে দুজনের একটা স্কলার্শীপের ফরম জমার দেওয়ার কথা ছিল ।

কাজ শেষ করে নীলা যখন বের হয়ে এল তখনই সামনে সুমন দাড়িয়ে ।
নীলা আর কিছুক্ষন পরেই ব্যাপার টা ধরতে পারলো ।
-চুল কেটেছিস কেন ? এরই ভেতরে !
সুমন কোন কথা না বলে কেবল হাসলো একটু !
নীলা আবার বলল
-তোকে নিয়ে আর পারি না !
-আরে আমি কি করলাম ?
-কিছু একটা তো করেছিসই ! কি করেছিস ?
-বাসায় গিয়ে দেখবি । এখন চল । খুব ক্ষুধা লেগেছে । আজকে না তোর আমার খাওয়ার কথা ছিল ! মনে আছে ?






-----------------------------
------------------------------

এর আগেও আমি ঢাকাইয়া সুপারম্যান নিয়ে দুইটা পর্ব লিখেছি ! যদিও এটা থার্ড স্টেজ তবুও চলা চলে গল্পটা সেকেন্ড স্টেজের আগের কোন একটা পর্ব । অনেকেই গল্পটা ফানি মনে করতে পারে কন্তু আমি সব সময়ই সুপারহিরোদের খুবই পছন্দ করি । এদের মুভি দেখতে বই পড়তে এনিম্যাশন সব কিছুই আমি পছন্দ করি । তাহলে কেন নিজের একটা গল্পই থাকবে না কেন ? যেমনই হোক তেমনই সই । নিজের জিনিস নিজের লেখা ! ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×