somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আবার ফিরে আসা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-কি ব্যাপার তোমার শরীর খারাপ নাকি? অফিস যাবে না?

আমাকে চা হাতে বসার রুমে বসতে দেখে মীরা প্রশ্ন করলো। অন্যান্য দিন এই সময়ে আমার অফিস যাওয়ার তাড়া থাকে। আমি তাড়াহুড়া করি। অথচ আজকে আমি নিশ্চিন্তে বসে টিভি দেখা শুরু করতেছি।
আমি টুকুনকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললাম
-না। তোমাকে সেদিন বললাম না! হয় তুমি চাকরি ছাড়বে নয়তো আমি! তুমি যেহেতু ছাড়বে না তাই আমিই গত সপ্তাহে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। গতকাল ছিল আমার শেষ অফিস। এখন থেকে তুমি আর্ন করবে আর আমি ঘর সামলাবো। আর টুকুনকে দেখবো ।

এই কথা বলেই আমি হাসলাম। এমন একটা ভাব যেন খুব মজার কথা বলেছি। তারপর আবারও টুকুনের মুখ থেকে ফিডারটা সরিয়ে নিলাম । ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো । আমি মুখের উপর বিভিন্ন ভঙ্গি করে ওকে হাসাতে লাগলাম ।

মীরা আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলো। বোঝার চেষ্টা করছে আমি সত্যি বলছি নাকি ওর সাথে ঠোট্টা করছি। যখন বুঝলো যে আমি ইয়ার্কি মারছি না তখন ও খানিকটা সময় কোন কথাই বলতে পারলো না।। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কি সিরিয়াস?
-আমাকে দেখে মনে হচ্ছে যে আমি ইয়ার্কি মারছি? দেখ এই নিয়ে আগেও তোমার সাথে আমি কথা বলেছি। আমাদের অফিসটা চট্টগ্রামে সিফট হয়ে যাচ্ছে । এখানে বলতে গেলে কিছু থাকবে না । আমাকে চাকরি করতে হলে সেখানে যেতে হবে । আর তোমার অফিস চট্টগ্রামে বদলি করা সম্ভব না ।
-বদলি করা সম্ভব না তো কি হয়েছে, কটা দিন তুমি ওখানে গিয়ে থাকতে পারবে না ? এতো ভাল একটা চাকরি তুমি ছেড়ে দিবে ?
আমি মীরার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললাম
-আমার চাকরি আমার মেয়ের থেকে বড় নয় । আমি কোন ভাবেই আমার মেয়ের থেকে দুরে থাকতে পারবো না ।
-তাহলে এখানে ট্রাই কর কিছু !
-দেখি । এখানেই ট্রাই করছি আর যতদিন না পাই ততদিন ঘর সামলাচ্ছি আমি । তুমি বাইরেরটা সামলাও । আর এই সময়ে টুকুনের দেখা শুনা করা জরুরী । অন্তত কয়েক টা বছর ! ও যতদিন স্কুলে না ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ।

মীরা কোন কথা না বলে কেবল আমার দিকে আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো। এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি আসলেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমি বললাম
-ও হ্যা যাওয়ার আগে দু হাজার টাকা দিয়ে যেও। বাজার করতে হবে। আর দুপুরে কি খাবে বল? যা খেতে চাও তাই রান্না করবো।

এই বলে আমি আবারও একটা বিগলিত হাসি দিলাম। আমার দেখা দেখি টুকুনও ফিক করে হাসি দিয়ে দিল । মীরা আর আমার সাথে কথা বলল না। সোজার শোবার ঘরের দিকে হাটা দিল। আমি আরাম করে চায়ে আরেকটা চুমুক দিলাম। আজকে অনেক দিন পর আমার মন মেজাজ খুব ভাল। অনেক দিন পর নিজেকে একটু মুক্ত মুক্ত লাগছে । এখন থেকে টাকা পয়সার কোন চিন্তা করবো না । ওটা এখন থেকে মীরার দায়িত্ব ।


আমি জানি মীরা ঠিকই আমার অফিসে খোজ নিবে। তা নিক। সেখান থেকে আমি সত্যি সত্যিই ইস্তফা দিয়েছি। সেখানে আমি আর যাচ্ছি না।

মোটামুটি সন্ধ্যার ভেতরে সব জায়গাতে খবর চলে গেল যে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রান্না বান্না করতে মনঃস্থির করেছি। রাতের বেলাতেই মীরার বাবা মা এসে হাজির। আমাকে বোঝাতে লাগলো। অবশ্য খুব বেশি কথা বলার চেষ্টা করলাম না। এই সব বিষয় নিয়ে আগেও অনেক কথা হয়েছে। ওনারা সব সময় তার মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে। আজকেও তাই করতে লাগলো। আমি কথা না বলে খাবার টেবিলে সবাইকে এক সাথে খেতে ডাকলাম । খাওয়ার টেবিলে নিজেই ওদের সব এগিয়ে দিতে লাগলাম ।টেবিলে বসে আমার শ্বশুর মশাই বলল
-তাই বলে এভাবে ঘরে বসে থাকবে ?
-আব্বা আপনি এটাকে কেন ছোট করে দেখছেন ? এক, আমি টুকুনকে দেখা শুনা করছি । এই সময়ে ওর কাছে থাকাটা জরূরী । দুই ঘরের সব কিছু সামলাবো আমি । মীরাকে ঘরের কোন কাজ করতে হবে না । খাবার কেমন হয়েছে ?


কিছু সময়ে আমার শ্বশুর মশাই চুপ করে রইলো । এতো কথা বললেও আমার রান্না যে ভাল হয়েছে সেটা দুজনেই স্বীকার করে নিল। মীরা বিরক্ত হয়ে তাদের কে বলতে লাগলো আমি আজকে সারা দিনে কি কি কাজ করেছি এই সব। আমি মনে মনে হাসলাম।
আমি শ্বশুর মশাইলে বললাম
-দেখুন আমি মানছি আমার চাকরিটা ভাল ছিল । কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেছে । এই জন্যই হয়তো আমি এই সিদ্ধন্তটা নিয়েছি কিংবা নিতে বাধ্য হয়েছি । এই ছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না । কিন্তু আগে সব কিছু ট্রাই করেছি । আমি প্রথমে মীরা কে বলেছিলাম চাকরির বদলির কথা । ওকে বললাম যে সে যেন আমার সাথে যায় । মীরা আমাকে বলল যে এখানে চাকরি ছেড়ে ওর পক্ষে যাওয়া সম্ভব না । আমি ওকে বললাম চাকরি ওখানে খুজবে । তখন সেও রাজি হল না ।
মীরা তখন বলল
-কেন তোমাকে তো বললাম যে তুমি যাও আপাতত ওখানে ! আমরা এখানে থাকি !

আমি এবার মীরার দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বললাম
-তুমি আমার সিদ্ধান্তটা শুনছো না কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তটা আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো ! আমি প্রস্তাব দিয়েছি তুমি রাজি হও নি । আমি বলেছি মেয়েকে নিয়ে আমি তাহলে চট্টগ্রামে যাই তুমি তাও রাজি হও নি । আর আমাকে বলছো দুরে যেতে ? আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে কোথাও যাবো না । বুঝতে পেরেছো ? সুতরাং এটা ছাড়া আমি তো আর কোন পথ দেখত পাচ্ছি না ।

মীরা আর কোন কথা বলল না । বিরক্ত নিয়ে বসে রইলো । তবে আমার শ্বশুর আর শ্বাশুড়িকে দেখলাম তারা খুব মজা করে রাতের খাবার খাচ্ছে । রান্না যে ভাল হয়েছে সেটা আর বলে দিতে হয় না । সবাই তো পুত্রবধুর হাতে রান্ন খায় । জামাইয়ের হাতের রান্না সবার ভাগ্যে জোটে না ।

দিন আমার জন্য ভাল ভাবেই কাটতে লাগলো । এখন পুরো খরচটা মীরার উপর । ঘর ভাড়া থেকে শুরু করে ময়লার বিলটা মীরার বেতনের টাকা থেকে আসে । এবং এটা সামলাতে ওকে একটু বেগ পেতেই হয় । আগে ও চাকরি করতো সংসারের খুব সামান্যই ও বহন করতো । মাস শেষে ওর হাতে অনেক টাকা থাকতো । আর হাতে টাকা থাকলে নিজেকে খুব বেশি শক্তিশালী মনে হয় কিন্তু যখন মাস শেষ টাকা থাকে না হাতে তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয় । মীরারও তেমনই মনে হচ্ছে । আমি নিশ্চিন্তে সময় কাটাতে লাগলাম । আর মনে মনে হাসতে লাগলাম ।

আমি ভেবেছিলাম ও হার মেনে নিবে। কিন্তু ও যেটা বলল সেটার জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না।

রাতে বসে খাবার খাচ্ছিলাম। ও গম্ভীর মুখে বসে ছিল আমার সামনে। আমি বললাম
-কি ব্যাপার? খাচ্ছো না কেন? রান্না ভাল হয় নি?
মীরা আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল
-আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।
আমার মনে হল আমি ঠিক মত শুনি নি। বললাম
-কি বললে?
-বললাম আমি তোমার সাথে থাকবো না আর।
-কেন? রান্না ভাল হচ্ছে না?
-শুনো ইয়ার্কি মারবা না। যে পুরুষ আয় করে না, বউয়ের জন্য রান্না করে দিন কাটায় তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।
-আচ্ছা যে স্ত্রী স্বামী মানে না যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায় সেটা খুব যায় তোমার সাথে?
-তুমি আমাকে ঘরে বন্দী করতে পারো না ।
-আমি তোমাকে ঘরে বন্দী করতে চাই নি। আমি কেবল চেয়েছি তুমি ঘরের বউ হও। তোমার স্বাধীনতা তোমার কাছে । কিন্তু যখন একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হবে তখন সেটার প্রতি একটা দায়িত্ব তোমার আসবে সেটা তোমার পালন করতেই হবে । আমি করছি । তোমাকে সেই কথা বললেই তুমি বারবার কেবল বলেছো যে চাকরি করে এতো কিছু করা সম্ভব না । তুমি সংসারের জন্য নিজের চাকরি স্যাকরিফাইস করতে নি । তাই মেনে নিলাম আমি । তুমি যা চেয়েছো তুমি তাই করছো । বাদ বাকি কাজ আমিই করছি । সেখানেও তোমার আপত্তি ! তাহলে আমি কোথায় যাবো বল ?


মীরাকে দেখলাম আমার কথায় বিরক্ত হল আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। কিছু বলে আর লাভ নেই। আমি ভাবি নি ব্যাপারটা এদিকে চলে যাবে কিন্তু যখন চলেই গেছে তখন আমি আর অন্য দিকে এটা নিয়ে যাবো না।
মীরা বলল
-আমি কালকেই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।
আমি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম
-তুমি কেন যাবে। এ ফ্ল্যাট তোমার। তুমি থাকো এখানে। আমি চলে যাবো কাল কিংবা পরশু দিন। জিনিস পত্র নিতে যে টুকু সময় লাগে।


আর কোন কথা বলার দরকার বলে মনে করলাম না। নিজের রুমের দিকে হাটা দিলাম। মীরা টিভির রুমে বসে রইলো চুপচাপ।

মীরা চাকরি করবে না এমন ইচ্ছে আমার কোন দিনই ছিল না। দুজনেই আমরা চাকরি করবো আবার সংসার করব এমন টাই ইচ্ছে ছিল। কিন্তু একটা সময়ে এসে আবিস্কার করলাম সংসার করার নাম নাম গন্ধ মীরার ভেতরে নেই। বউ হিসাবে তার যে কিছু দায়িত্ব রয়েছে সেটা সে মানতে নারাজ ! আমি আমার দিককার দায়িত্ব পালন করে গেলেও সে যে আমার স্ত্রী কিংবা এ ঘরের বউ সেটা ওর আচরনে মনে হত না। চলত নিজের খেয়াল খুশি মত। প্রথম প্রথম কিছু বলতাম না কিন্তু একটা সময়ে আমার আর সহ্য হল না। তখন সে সব কাজের পেছনে তার চাকরিকে অযুহাত বলা শুরু করলো। সে চাকরি করে সংসার সামলাতে পারবে না, সংসারের কোন দায়িত্বও সে পালন করতে পারবে না। ভেবেছিলাম টুকুন হওয়ার পরে কিছুটা হয়তো বদলাবে । কিন্তু তাও না । যেমনটা তেমনই রয়ে গেল ।

ব্যাপারটা যখন ডিভোর্সের দিকে গড়ালো তখন আমাকে একটু কঠিন হতেই হল । আমার কাছে আমার মেয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিল । আমি যে কোন ভাবেই টুকুনকে নিজের কাছে রাখবো বলে ঠিক করলাম । এবং সেটা করতে আমার খুব বেশি বেগ পেতে হল না । আমার স্কুল জীবনের বন্ধু হাই কোর্টের জাদরেল উকিল হয়ে উঠেছে এরই ভেতরে । সেই যা করার তাই করলো । অবশ্য সে শুরু থেকেই আমাকে বলেছিলো যেল ছোট বাচ্চাদেরকে সাধারনত মায়ের কাছে রাখা হয় । সেটা ঠেকানোর জন্য অবশ্য অন্য উপায় আছে । তবে ব্যাপারটা বেশ নোংরা হবে ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বললাম যে আমার কাছে কেবল আমার মেয়ে গুরুত্বপূর্ন আর কিছু নয় !

তাই হল । কোর্টে মীরার নামে এমন সব অভিযোগ আনা হল যে মীরা কেবল হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ও আসলে ভাবতেও পারে নি যে আমি এমন কিছু করতে পারবো সেটা ভাবতেও পারে নি । কোর্ট সিদ্ধান্ত নিলো যে টুকুন মীরার থেকে আমার কাছেই ভাল থাকবে । তবে চাইলে মাসে একবার মীরা টুকুনের সাথে দেখা করতে পারবে !

এই সিদ্ধান্ত টুকুনের অবশ্য খুব একটা সমস্যা ছিল না । একটা সময়ে ও আমাদের দুজনের কাউকের কাছে পেত না । অফিস থেকে বাসায় ফিরে মীরা ওর দিকে খুব বেশি সময় দিতে পারতো না । বেশির ভাগ সময়ে সে আয়ার কাছেই থাকতো । তারপর আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে আমার সাথেই ওর সময় কাটতো বেশি । এই কমাসে ওর সাথে আমার সম্পর্কটা যে কোন সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছিলো । তাই নতুন বাসায় যে ওর মা নেই সেটা ওকে খুব একটা চিন্তিত করে তুলল না । এভাবেই টুকুনের জীবন থেকে মীরা হারিয়ে গেল একটা সময়ে । মাসে একটা বার যখন মীরা আসতো টুকুনের সাথে দেখা করতে টুকুন এমন একটা ভাব করতো যেন সে তাকে ঠিক চেনেই না । অনেকটা দুরের কোন আত্মীয়ের মত মনে করতো । মীরা কেবল ব্যতীত চোখে তাকিয়ে থাকতো টুকুনের দিকে । আমি এই সময়ে সাধারনত ওদের সামনে থাকতাম না ।


তারপর মীরা সেটা কমিয়ে দিল । দুই মাসে তিন মাসে একবার করে আসতো । কিছু সময়ে বসে থেকে চলে যেত । একবার এল ঠিক এক বছর পরে । তখন টুকুন বেশ বড় হয়ে গেছে । নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে । ছোট ছোট বাক্য বলে টুকটুক করে কথা বলে । আমি সারাদিন ওর সাথে কথা বলি । নিজের বাসা থেকেই কাজ করি । স্কুলের সময়টা বাদ দিয়ে টুকুন সারাটা সময় ঘর জুড়ে ছোটাছুটি করে । আমার সাথে খেলা করে । ওকে কোলে নিয়েই আমি কাজ করি !

মীরার ওভাবে ডিভোর্সের কথাটা শুনে আমি যতখানি কষ্ট পেয়েছিলাম সেটা ধীরে ধীরে একদম শেষ হয়ে এসেছিলো । টুকুনের সাথে কাটানো প্রতিটা সময় আমাকে সে সব কিছু ভূলিয়ে দিতো । বিশেষ করে যখন মীরা টুকুনের সাথে দেখা করতে আসতো, মীরার চেহারার বিষণ্ণ ভাবটা দেখে আমার কেন জানি ভাল লাগতো । বারবার কেবল মনে হত ওর বিষণ্ণতার জন্য ও নিজে দায়ী । আমি কোন ভাবেই দায়ী নই ।

কিন্তু আবার মাঝে মাঝে যখন টুকুনের সাথে থাকতাম তখন মনে হত যে টুকুন তো মায়ের কাছ থেকে দুরে থাকলো সব সময় । এটা কি ঠিক হল ! আমি কি চাইলে সব কিছু স্বাভাবিক হত না ? হয়তো হত ! কিন্তু আমি চাই নি । আমারও দোষ আছে হয়তো !


একবছর পরে যখন মীরা টুকুনের সাথে দেখা করতে এল তখন ওর চেহারা দেখে আমি খানিকটা অবাক হলাম । মীরাকে একদম বিধস্ত দেখাচ্ছে । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কেবল মনে হল ওর ভেতরে অন্য কিছু চলছে । এতো দিনের পরিচিত মীরাকে আমি চিনতে পারলাম না ।
টুকুন ওর কাছে আসতেই ওকে জড়িয়ে ধরলো । অনেকটা সময় জড়িয়ে ধরেই রাখলো । আমি ওর এই আচরনে খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । ওর পাশে এসে বসতেই ওর টুকুনকে ছেড়ে দিল । টুকুন খানিকটা অবাক হয়ে আমার কোলে এসে বসলো । আমি বললাম
-কি হয়েছে ? তোমাকে এমন কেন লাগছে ?

মীরার চোখ দিয়ে ততক্ষনে পানি পরতে শুরু করেছে । আমি আবার বললাম
-কি হয়েছে ?
-আমি আর পারছি না । ক্লান্ত হয়ে গেছি । নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে !
এই লাইনের উত্তরে আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । তাই চুপ করে রইলাম । মীরা বলল
-আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি । আমার কাছে আর কিছু ভাল লাগছে না । সব কিছু অর্থহীন মনে হচ্ছে । টুকুন এতো দেখতে ইচ্ছে করছে !

এই লাইনটা বলে আবারও ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো । টুকুন নিজের নাম শুনে খানিকটা সচেতন হয়ে উঠেছিলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা, উনি কাঁদছে কেন ?
আমি বললাম
-উনাকেই জিজ্ঞেস কর !
টুকুন মীরার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কেন কাঁদছো ?
মীরা বলল
-তোমার জন্য মামনী ! তুমি আমার সাথে থাকো না তো তাই !
টুকুন বলল
-আমি তো বাবার সাথে থাকি ! তুমিও থাকো এখানে ।
-তোমার বাবা আমাকে থাকতে দিবে না ।
-কেন দিবে না ? আমি বললে দিবে !
-তুমি বলবে ?
-হ্যা বলবো !

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা উনি থাকুক ! কেমন ?

আমি টুকুনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম । মেয়েটা কত সহজেই না বলে দিল থাকুক । ওর কিছু মনে নেই তাই । হঠাৎ আমার হল জীবনটা কি আরেকটু অন্য রকম হতে পারে ? চেষ্টা করে দেখবো নাকি ?
আমি মীরার দিকে তাকিয়ে বললাম
-আজকে থাকবে এখানে ?
মীরা আমার কথা শুনে সত্যিই অবাক হয়ে গেল । এই কথা সে আমার কাছ থেকে আশা করে নি । বলল
-আমাকে থাকতে দিবে ?
-টুকুন চাচ্ছে ! থাকো ! আমার একটা প্রেজেক্ট এসেছে আমার হাতে । ওটা শেষ করতে বেশ পরিশ্রম করতে হবে । তুমি থাকলে সাহায্য হবে !


পরের সাতটা দিন মীরা বাসাতেই থেকে গেল । এই মাত্র সাত দিনেই আমি ওকে যেভাবে দেখলাম আগের সাত বছরেও আমি ওকে এমন করে দেখি নি । সেই কথাটা আবারও মনে হল আমার । জীবনকে কি আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ ? যেভাবে চলছে তেমন চলার থেকে কি আরেকটু ভাল করে থাকার চেষ্টা করা উচিৎ নয় ?


পরিশিষ্টঃ

মীরা আবারও আমাদের সাথে এসে থাকতে শুরু করলো । তবে এবার তাকে আমি আর টুকুন অন্য ভাবে আবিস্কার করা শুরু করলাম । হয়তো আমাদের এক সাথের শুরু টা ততটা ভাল ছিল না কিন্তু আমাদের শেষটা আশা করি ভাল হবে ।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×