somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ নীলা চৌধুরী

১৫ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীলা চৌধুরীকে নিয়ে আমাদের ক্লাসের সবাই বেশ কানাঘুষো করে। সবারই একটা ধারনা যে মেয়েটার মাঝে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে । কেউ কেউ তো আবার বলে মেয়েটা নাকি কালো জাদু জানে । আড়ালে অনেকেই নীলাকে ডাইনি বলে ডাকে । অনেকের ধারনা মেয়েটা যার সাথেই মিশে তার উপরেই নাকি কোন না কোন বিপদ ঘনিয়ে আসে ।


স্কুলে থাকাকালীন সময়েই নীলার বাবা মা দুজনে এক সাথে মারা যায় রোড এক্সিডেন্টে। সেই গাড়ির মধ্যে নীলা নিজেও ছিল কিন্তু সে কোন ভাবে বেঁচে গিয়েছিল। সেই সময় থেকেই নীলাকে নিয়ে গল্পের চালু । তখন অবশ্য নীলা আমাদের স্কুলে পড়তো না । তবে ওর সাথে স্কুলে পড়ে এমন বেশ কিছু ছেলে মেয়েদের সাথে আমি প্রাইভেট পড়তাম । সেখান থেকেই আমি নীলার কথা প্রথম জানতে পারি ।

নীলার বাবা বেশ অবস্থা সম্পন্ন মানুষ ছিলেন । নিজের ব্যবসা বাদ দিয়ে পারিবারিক ভাবেই তারা বেশ সম্পদশালী ছিলেন । গ্রামে তাদের অনেক জমিজমা ছিল । সেই জমিজমা দেখা শুনা করার জন্য মাঝে মাঝেই তিনি গ্রামে যেতেন সবাইকে নিয়ে । সবাই বলতে নীলার মা আর নীলা । এমন এক যাত্রা থেকে ফিরে আসার দিনেই নীলাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে । এমন কোন গুরুতর এক্সিডেন্ট ছিল না । গাড়ির সামনের অংশটা গিয়ে ধাক্কা লাগে পাশের একটা গাছের সাথে । আমি গাড়িটার ছবি দেখেছিলাম পত্রিকাতে । বলতে গেলে তেমন ক্ষতিই হয় নি । সামনে গ্লাস ভেঙ্গে গিয়েছিলো আর বাম্পাটার ভাঙ্গা ছিল । বনেটটা প্রায় অক্ষত ছিল । এর থেকেও খারাপ কার এক্সিডেন্টে আমি মানুষকে বেঁচে থাকতে দেখেছি ।
রাতে হয়েছিলো ওদের এক্সিডেন্টটা । সকাল বেলা যখন তাদের গাড়িটা মানুষ খুজে পায় তখন সবাই অবাক হয়ে দেখে নীলার বাবা আর মা গাড়ির ভেতরেই মরে পড়ে আছে । তাদের শরীর একেবারে শক্ত হয়ে গেছে । কিন্তু নীলার একেবারে স্বাভাবিক আছে । ওর শরীরে একটা আচড়ও লাগে নি । পুরোটা রাত ও গাড়ির পেছনের সিটে শুয়ে ছিল । এর পর থেকেই নানান মানুষ নানান কথা বলতে শুরু করেছিলো ।

ওর সাথে যারাই মিশেছে কিংবা মিশতে চেয়েছে তারাই নাকি বিপদে পড়েছে । তখন আমর কলেজে পড়ি । তখনই নীলা চৌধুরীর খবর আবারও আমার কানে এল । এবারও পুরো খবর আমি জানতে পারলাম পত্রিকার মাধ্যমে ।
নীলার বাবার রেখে যাওয়া পুরো ব্যবসাটা মূলক কোম্পানীর কিছু পুরানো কর্মচারীরাই চালাতো । নীলার কাছে এসে মাসে মাসে একজন সব হিসাব পত্র দিয়ে যেত । যে মানুষটা এই কাজটা করতো তাকে একদিন সকালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । ফরেনসিক রিপোর্টে ধরা পড়ে লোকটা উপর থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে ঘাড় ভেঙ্গে মারা গেছে ।

নীলার ফোন করেছিল পুলিশের কাছে । বাসায় যেহেতু আর কেউ থাকে না তাই ও নিজেই ফোন করে । তার জবানবন্দী থেকে জানা যায় যে প্রতিমাসের মত এই লোকটা গতদিন সন্ধ্যার কিছু পরে এসে হাজির হয় । ঐদিন শুরু থেকেই নাকি লোকটা একটু অপ্রকৃতস্ত মনে হয় । তার মুখ থেকে কড়া মদের গন্ধ বের হচ্ছিলো । একটা সময় সব হিসাবপত্র নীলাকে দেওয়ার পরেই লোকটা নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে । তারপরই নীলার উপর হামলা করে বসে ওকে । ওর উপর জোর জবরদস্তি শুরু করে । একটা সময় নীলা লোকটার হাত থেকে কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুই তলার দিকে দৌড় দেয় । সেখানে থেকে ছাদের উপর উঠে পড়ে । লোকটাও পেছন পেছন ওকে । একটা পর্যায়ে আরও ধস্তাধস্তি হয় দুজনের মাঝে । তারপর দুর্ঘটনাবসত লোকটা নিচে পড়ে যায় ।

নীলার নিজের শরীরের আঘাত আর ঐ লোকটার শরীর থেকে আলকোহলের আলামত মেয়ে পুলিশ নীলার কথা সত্য বলে ধরে নেয় । তারপরই কেস ক্লোজড হয়ে যায় । সেইবারই আমি পত্রিকাতে নীলার ছবি দেখেছিলাম প্রথম । সত্যি বলতে কি এমন নিঃপাপ চেহারা দেখে আমার প্রথম দর্শনেই ভাল লেগে গিয়েছিলো । তারপর যখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম তখনই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে নীলার চৌধুরী নামের মেয়েটা কেবল আমার ইউনিভার্সিটিতেই নয়, আমার ডিপার্টমেন্টেই ভর্তি হয়েছে । আমার সেদিন থেকেই কোন কারন ছাড়াই খুশি খুশি লাগছিলো । তারপর থেকে ওকে আমি আস্তে আস্তে লক্ষ্য করা শুরু করি । কিন্তু নীলার এই সব খবরের জন্য ক্লাসের সবাই নীলাকে খানিকটা এড়িয়ে চলতো । কেউই নীলার সাথে ঠিক মিশতে যায় না । বাধ্য না হলে কেউ ঠিক মত কথাও বলে না ওর সাথে ।
ক্লাসে নীলা নিজেও কারো সাথে ঠিক মিশতে চায় না। চুপচাপ নিজের মধ্যেই থাকে। সময় মত ক্লাসে আসে, ক্লাস করে আবার ফিরে যায়৷কারো সাথে আড্ডা দেয় না, কোথাও ঘুরতে যায় না । বাবা মা মারা যাওয়ার পরে নীলা তাদের বিশাল বাড়িতে একা একাই থাকে ।

আমি নীলাকে দূর থেকেই লক্ষ্য করে যাই৷ মাঝে মাঝে নীলার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে যায়। তখন কেন জানি আমার মনে হয় এই মেয়েটা আমার খুব পরিচিত। এই চোখ যেন আমি প্রতিদিনই দেখি। এছাড়া ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার এও মনে হয় যে মেয়েটা সম্ভবত আমাকে লক্ষ্য করে । আমার এমনটা মনে হওয়ার পেছনে কোন কারন নেই কিন্তু এমনই মনে হয় ।

আমি হয়তো ভেবেছিলাম নীলার সাথে আমার কোনদিন কথা বলার সুযোগ হবে না। কিন্তু একদিন কথা বলার সুযোগ চলেই এল ৷ক্লাস আর টিউশনী বাদ দিলে আমি মাঝে মাঝেই ঢাকার বড় বড় বই ঘর গুলোতে ঘুরে বেড়াই । ইদানিং বেশ কিছু চমৎকার বইয়ের দোকান খুলেছে ঢাকাতে । বাতিঘর তাদের মধ্যে অন্যতম । মাঝে মাঝেই আমার সেখানে যাওয়া হয় । সপ্তাহে একটা দিন আমি বাতিঘরে গিয়ে সময় কাটাই । একটা বই কিনলে আরও দুটো বই সেখানে গিয়ে পড়ে আসি । সময়টা ভাল কাটে ।

গত দিনও তাই গিয়েছিলাম । দুপুরের খাবারের পরেই সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে গেলাম । এক মনে বই পড়তে শুরু করলাম । বই পড়া শুরু করলে আমার আবার অন্য দিকে লক্ষ্য থাকে না । আপন মনে পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছি আর মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে এক কাপ কফি নিয়ে আসছি । এমন সময় আমার হঠাৎ করেই মনে হল যেন আমার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে । চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম নীলা বেশ কিছু বই হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি ওর চোখের দিকে তাকানোর পরেও ও নিজের চোখে সরিয়ে নিল না । আমি নিজেও চোখটা সরিয়ে নিতে পারলাম না । একভাবে তাকিয়ে রইলাম । কতক সময় পরে নীলা যেন আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । প্রতি উত্তরে আমি নিজেও হাসলাম । তারপর নীলা আবার ঘুরে ঘুরে বই দেখতে লাগলো । আমার অবশ্য আর বই পড়া হল না ।

আমিও বই হাতে নিয়ে নীলার পেছন পেছন ঘুরতে লাগলাম । একটা সময় নীলা পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার পড়া বাদ দিয়ে ঘুরাঘুরি কেন ?
ওর কন্ঠে এমন কিছু ছিল যেন ও চাচ্ছে আমি ওর পিছু পিছু আসি । আমি বললাম
-মাঝে মাঝে পিছু আসতে হয় । নয়তো জীবনে অনেক কিছু মিস করতে হয় !
-তাই বুঝি ?
-জি ম্যাডাম!

আমি এমন ভাবে জি ম্যাডাম বললাম যে নীলা হেসে ফেলল । তারপর থেকে আমাদের কথা বার্তা শুরু । আমি জানতাম নীলার কোন ফেসবুক আইডি নেই । কিন্তু একদিন ও নিজে আমাকে ওর একটা আইডি দেখালো । এবং সেই আইডি দিয়ে সে আবার আমাকে ফলো করেও আছে । আমার সেই ধারনা সত্যিই হয়ে গেল । আমার যতবার ওর সাথে চোখাচোখি হত ততবারই আমার মনে হত যে ও আমাকে ঐ চোখ আমার ব্যাপারে কৌতুহলী ।

এই সময় পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিল । আমাদের ক্যাম্পাসে কথা বার্তা না হলেও বাইরে ঠিকই দেখা সাক্ষাত । তারপর একদিন আমি গিয়ে হাজির হলাম ওর বাসাতে । ধানমন্ডির ভেতরে উচু দেওয়াল ঘেরা বিশাল দুই তলা বাসা । ধানমন্ডির ভেতরে এমন বাসা থাকতে পারে আমার ভাবতেই অবাক লাগলো । বাড়িটা গাছ গাছালি দিয়ে ঢেকে আছে । বিকেল বেলা যখন ঐ বাসাতে পৌছালাম তখনই কেমন অন্ধকার অন্ধকার লাগছিলো ।

আমি ছোট বেলা থেকেই গ্রামে মানুষ হয়েছি । বাড়ির আসে পাশে গাছগাছালিতে ভর্তি থাকবে এমনটা আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক দৃশ্য। যদিও ঢাকা শহরে আসার পর এই স্বাভাবিক দৃশ্যটা মোটেই দেখতে পেতাম না । কালে ভাদ্রে চোখে পড়তো । তখন নিজ গ্রামের কথা মনে পড়লো । মনটা ভাল হয়ে যেত । কিন্তু নীলাদের এই বাসাতে ঢুকেই আমার কেন জানি অস্বস্থি লাগলো । এমন অস্বস্তি লাগার কোন কারন নেই । তবুও মনে হল কি যেন ঠিক নেই এই বাড়িতে ।

নীলা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ভয় পাচ্ছো না তো আমার বাসায় আসতে ?
আমি সাথে সাথেই বললাম আরে ভয় কিসের ? আমি তো এমন নির্জন জায়গাই খুজি । দেখবা এবার থেকে তোমার এই বাড়িতে ঘন ঘন আসবো । তখন তুমিই বিরক্ত হয়ে যাবা !
নীলা চোখটা হঠাৎই আমি উজ্জ্বল হতে দেখলাম । একটু যেন হাসলো আমার কথা শুনে । তারপর বলল
-আচ্ছা দেখা যাবে । এখন চল ভেতরে ।

ভেতরে ঢুকতেই আমার আবারও সেই অনুভূতিটা ফিরে এল । একটা অস্বাভাবিক অনুভূতি হচ্ছে । মনে হচ্ছে এখনই এখান থেকে আমার চলে যাওয়া উচিৎ । নীলা আবারও আমাকে ডাক দিল দরজার মুখের দাড়িয়ে । আমি সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম । তারপর ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লাম ।

ওদের ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই নীলা আমার জন্য এক গ্লাস শরবত নিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-সবার আগে এটা খেয়ে নাও । আমাদের বাসায় আগে যখন কোন গেস্ট আসতো তখন সবার আগে তাদের শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করা হত !
আমি একটু হেসে বললাম
-তাই নাকি ?
-হুম । এখন তো আর মানুষজন আসে না । মাঝে মাঝে আমি কাউকে হয়তো নিয়ে আসি । তখন আগে শরবত খাওয়াই ।
আমি এক চুমুকই শরবতটা খেয়ে ফেললাম । নীলা বলল
-তুমি একটু এখানে একটু বস । আমি এখনই আসছি !

বসতে বসতে আমি চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগলাম। আগের আমলের মত বিশাল বড় ড্রয়িং রুম । আমি সব কিছু চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম । আমার একটা বড় করে বাঁধাই করা ছবি চোখে পড়লো । তিন জনের ছবি পারিবারিক ছবি । আমার চিনতে অসুবিধা হল না ছবিটা কার ! নীলার বাবা মায়ের সাথে তোলা ছবি । কিন্তু ছবিটা দেখেই আমার মনে কেমন যেন একটা অনুভূতি হল । নীলার বাবা আর মায়ের চেহারার সাথে নীলার চেহারার কোন মিল নেই । বিন্দু মাত্র মিল নেই । নীলা যে অনাদের মেয়ে নয় এটা আমি কেবল এই একটা ছবি দেখেই মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেল ।

আমার তখন কেমন যেন একটু অন্য রকম অনুভূতি হল । কেন হল সেটা আমি বলতে পারবো না । ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখি ঘরটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে । বাইরে কি তাহলে আলো কমে আসছে ? এতো জলদি আলো কমার তো কথা না । আমি বাইরের জানালার দিকে তাকাতে যাবো তখনই পাশে রাখা ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো ।

বেশ কয়েকবার বেজেই চললো । নীলার নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু নীলার কোন খোজ খবর নেই । শেষে আমি আর না থাকতে পরে নিজেই রিসিভারটা তুলে ধরলাম । বললাম
-হ্যালো !

ওপাশ থেকে কেমন একটা পিনপিন আওয়াজ হতে লাগলো । তারপর অনেক দুর কোথাও শব্দ হচ্ছে এমন আওয়াজ শুনতে পেলাম । কেউ যেন কিছু বলার চেষ্টা করছে । আরও কয়েক মুহুর্ত পরে আমি আওয়াজটা পরিস্কার শুনতে পেলাম ।

একটা পুরুষ কন্ঠ ।
-এখনই পালাও । এখনই । ও তোমাকে মেরে ফেলবে ।

আমার মনে হল লাইনটা সম্ভবত ভুল করে চলে এসেছে । কিন্তু তারপরই আমি আমার নিজের নাম শুনতে পেলাম । ফোনের ওপাশ থেকে কেউ আমার নাম ধরে ডাক দিলো । তারপর বলল
-আমাদের মেরে ফেলেছে । তোমাকেও মেরে ফেলবে !
-মানে ? কে মেরে ফেলবে ? কে আপনি ?
আমি কোন মতে এই কথা গুলোই কেবল বলতে পারলাম । আমি অনুভব করলাম যে আমার আমার বুকের ভেতরে কেমন একটা কাঁপন শুরু হয়ে গেছে । ফোনের ওপাশ থেকে আবার কন্ঠটা শুনতে পেলাম ।
-এখনই পালাও ।

আমি আরেকবার কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফোনটা কেটে গেল । আমি তাকিয়ে দেখি নীলা ঘরের ভেতরে ঢুকছে । আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো একটু । আমার কেন জানি নীলার এই হাসিটা মোটেই ভাল লাগলো না । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কে ফোন দিয়েছিলো ?
আমি নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নিয়ে বললাম
-জানি না । কি সব বলল ।
নীলা আবারও হেসে বলল
-তোমাকে পালিয়ে যেতে বলল । তাই না ?
আমি কিছু বলতে পারলাম না । কেবল তাকিয়ে রইলাম । নীলা আবারও হেসে বলল
-আমার বাবা ফোন দিয়েছিলো । তোমাকে সাবধান করছিলো । প্রতিবারই করে । কিন্তু বাবা বোঝে না অনেক দেরি হয়ে গেছে ।
আমার মুখ থেকে তখন রক্ত সরে গিয়েছে । আমি তীব্র বিস্ময় নিয়ে বললাম
-তোমার বাবা মানে ? সে না এক্সিডেন্টে মারা গেছে ?
-হ্যা বাবাই তবে সে এক্সিডেন্টে মারা যায়নি, আমি তাকে মেরে ফেলেছি !

নীলা এমন ভাবে কথাটা বলল যেন মানুষকে মেরে ফেলা খুবই চমৎকার একটা কাজ । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নীলার দিকে । তখনই আমার মাথার ভেতরে কেমন যেন দুলে উঠলো । আমি নীলার হাসি দেখতে পাচ্ছি । কিন্তু আমার এমন কেন মনে হচ্ছে ?
আমি তো ঠিকই ছিলাম !
শরবত !
আমার সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল । বাসায় ঢুকতেই নীলা আমাকে শরবত খাইয়েছিলো । ওটার সাথে কিছু মেশানো ছিল ।

আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে । এখনও আমি সঠিক ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারছি । আমাকে ও আটকে রাখতে পারবে না । আমাকে পালাতেই হবে এখান থেকে । আমি সাথে সাথে ঘুরে দৌড় দিলাম ।

ঐতো দরজা দেখা যাচ্ছে । আলো কমে এসেছে অনেক । দরজাটা দেখাই যাচ্ছে না । আমাকে দরজার কাছে পৌছাতে হবে !
ওটা খুলতে হবে । কিন্তু দরজার কাছে এসে আমাকে হতাশ হতে হল । আমি কিছুতেই দরজাটা খুলতে পারলাম না । কয়েকবার লাথি দিলাম ঝাকাঝাকি করলাম কিন্তু দরজা খুলতে পারলাম না ।


তারপরই আমি সেি ভয়ংকর হাসিটা শুনতে পেলাম । সাথে সাথেই পেছনে ঘুরে দাড়ালাম । অন্ধকারের মধ্যেও আমি নীলাকে দেখতে পাচ্ছি । তবে সেটা আর নীলা নেই । ওকে যেন আরও একটু বেশি লম্বা লাগছে । মাথাটা কেমন চোখ লম্বা মত মনে হচ্ছে । সেটা নড়ছে ধীরে ধীরে ।

সেটা এগিয়ে আসছে আমার দিকে ! আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে !
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:০২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×