somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্পঃ দ্য আনএক্সপেক্টেড ব্রাইড (পর্ব এক)

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিন গুলোতে বুক স্টোরে ভীড়টা একটু বেশি থাকে । এই দিনে তাই নোরাকে একটু বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় । বই চেক করে দেখা, সেগুলো দাম মিলিয়ে মূল্য রাখা । তাছাড়াও মাঝে অনেক গ্রাহকদের বই খুজেও দিতে হয় মাঝে মাঝে । নোরার অবশ্য কাজ গুলো করতে বেশ মজাই লাগে । সব সময় বইয়ের ভেতরে থাকাটা ওর মন্দ লাগে না । তবে অন্যান্য দিন গুলোতে ভীড় থাকে কম । তখন একটু অবসর সময় কাটানো যায় ।

তবে আজকের ব্যাপারটা সম্পূর্ন অন্য রকম । নোরা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময় । তারপর সেখান থেকে মুখ সরিয়ে ঠিক ডান দিকে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো । তারপর আবারও স্ক্রিনের দিকে তাকালো । স্ক্রিনে আদনান চৌধুরীর একটা ছবি বের করা রয়েছে । ডিপ ব্লু রংয়ের সুট পরা । স্যুটের ভেতরে পরেছে হাকলা গোলাপী রংয়ের একটা শার্ট সেই সাথে ডিল ব্লু টাই। কালার কম্বিনেশনটা অন্য কারো ক্ষেত্রে হলে বড় হাস্যকর লাগতো কিন্তু আদনান চৌধুরীকে রাজপুত্রের মত লাগছে । সেই দিকেই নোরা কিছু সময় কেবল তাকিয়ে রইলো । ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে এই ছেলেটাই এখন এই বুক স্টোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
ভাবা যায় ?

গতকালকেই সে জানতে পেরেছে এই ছেলেটা ওদের বুকশপে এসে হাজির হয় । ও হয়তো চিনতেও পারতো না যদি না অরিন ওকে বলতো ! নোরার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা । নোরার পরিবার থাকে বগুড়াতে । নোরা ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে। মাস শেষে বাবা ওকে বেশ ভাল পরিমান টাকায় দেয় তবুও নোরা একেবারে পায়ের উপর পা তুলে, সম্পর্ন খচরটা বাবার উপরে চাপিয়ে দিতে চায় না । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শুরু থেকেই কিছু করার চেষ্টা করেছিলো । প্রথম কিছু দিন টিউশনী করিয়েছিলো । তবে বুঝতে পেরেছিলো যে টিউশনি ব্যাপারটা তার সাথে ঠিক যাচ্ছে না । অন্য কিছু করার চেষ্টা করছিলো তখনই এই অনিন্দ্য বুক স্টোরে চাকরিটা পেয়ে যায় । নোরার দায়িত্ব হচ্ছে বিকেলের দিককার কাস্টমার সামাল দেওয়া । বিশেষ করে কাউন্টার সামলানোর দায়িত্ব ওর । ছোট বেলা থেকেই বই পড়ার একটা অভ্যাস আছে তার । এতো বড় একটা বইয়ের দোকানে ঘন্টা ৬ থাকাটা মোটেও মন্দ হবে না ।
প্রথমে ওর বাবা অবশ্য একটু আপত্তি করেছিলো তবে ওর বাবা যখন নিজে বুক স্টোরে এসে হাজির হয় তখন খানিকটা মন গলে যায় তার । অভিজাত এক বইয়ের দোকান । এখানে আসা যাওয়া মানুষ গুলোও সব অভিজাত শ্রেণীর । তারপর আর সে আপত্তি করে নি ।

এরপর থেকে এই বুকস্টোরেই কাজ করছে সে । ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীরাও মাঝে মাঝে এখানে এসে হাজির হয় । কাজের ফাকে গল্প চলে । গতদিন অরিন এসেছিলো । কাজের ফাঁকে গল্প চলছিলো দুজনের মধ্যে সেই সময়েই অরিন বুকস্টোরে আসা একজন ছেলের দিকে নির্দেশ করে বলে, এই এটা আদনান চৌধুরী না ?

নোরা অরিনের দেখানো মানুষটার দিকে তাকালো । আদনান চৌধুরীকে কে জানে চেনে । বিশেষ করে ওর বয়সী সব মেয়েদের ক্রাশ হচ্ছে এই আদনান চৌধুরী । দেশের বিখ্যাত ব্যবসায়ী । সব চেয়ে ইয়াং এন্ট্রাপ্রেনার ! কত ধরনের ব্যবসা যে তার আছে তার কোন হিসাব নেই । মাত্র ৩১ বছর বয়স কিন্তু এরই মধ্য সাফল্যের চুড়ান্ত শিখড়ে পৌছে গেছে ।

তাকে চেনার আরেকটা কারন হচ্ছে, মাঝে মধ্যেই তাকে পত্রিকার পাতায় দেখা যায় । সুদর্শন হওয়ার কারনে প্রায়ই মডেলিং করে । দেশের বিখ্যার প্রায় গুলো ক্লডিং ব্রান্ডের এম্বাসেডর সে । যদিও মডেলিং করে কেবল শখ থেকে । মাঝে মাঝে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার এটেন করে । বিশেষ করে বিজনেস সেমিনার গুলোতে তাকে ডাকা হয় । সেখানে সে বক্তব্য দেয় । সব মিলিয়ে একটা মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হওয়ার জন্য যা যা দরকার সবই তার ভেতরে আছে ।

তবে আদনান চৌধুরীর বদনামও আছে অবশ্য । বাজারে গুজব আছে যে মানুষ হিসাবে সে খুবই রাগী, প্রচুর বদমেজাজী আর একগুয়ে ! তার আশে পাশের মানুষ গুলো তাকে জমের মত ভয় পায় । এই বদনাম শুনে অবশ্য মেয়েরা তার উপর ক্রাশ খাওয়া বন্ধ করে নি ।

নোরা কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থেকে অরিনকে বলেছিলো যে মোটেই না । এই লোকের বই পড়ার মত সময় নেই । কত ব্যস্ত সে ! নোরা ভেবেছিলো কাউন্টারে এসে পেমেন্ট করার সময় তাকে জিজ্ঞেস করবে । কিন্তু ওদের দুজনকেই অবাক করে দিয়ে ছেলেটা কোন বই না কিনেই চলে গেল । অনেকেই এই বুকস্টোরে আসে কেবল বই পড়ার জন্য কিংবা ছবি তোলার জন্য ।
নোরা অরিনকে বলেছিলো, এই ছেলে কোন ভাবেই আদনান চৌধুরী হতে পারে না । একটু চেহারার অবশ্য মিল আছে এই যা ! আদনানা চৌধুরী চশমা পরে না এই চোখের চোখে একটা চশমাও দেখা যাচ্ছে ।

কিন্তু আজকে আবার যখন ছেলেটাকে বুকস্টোরে আসতে দেখলো নোরা তখন খানিকটা কৌতুহলী হয়েই তার চেহারার দিকে তাকাতে লাগলো । এবং সত্যিই সত্যিই মনে হতে লাগলো ছেলেটার চেহারা আসলেই আদনান চৌধুরীর মত । একেবারে সেই রকম । চেলাকা কেবল ফরমাল ড্রেস না পরে ক্যাজুয়াল ড্রেস পরেছে বলেই হয়তো এমন মনে হচ্ছে । সামনের এই ছেলেটাকে ফরমাল ড্রেস পরিয়ে দিয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলেই সবাই তাকে আদনান চৌধুরী বলেই ধরে নিবে ।

আজকে অবশ্য ছেলেটা বেশ কিছু বই কিনলো । কাউন্টারে এসে বিল পেমেন্টের সময় নোরা হঠাৎ বলল, আপনার বিলটা ৫ হাজার ক্রস করেছে । আপনার কাছে কি মেমবার শীপ কার্ড আছে ?
যদিও নোরা খুব ভাল করেই জানে এই ছেলে এই প্রথম এই বুক স্টোরে এসেছে ।
ছেলেটা হাসলো । তারপর বলল, মেমবারশীপ কার্ড তো নেই । এটা থাকলে কি সুবিধা ?
-এটা থাকলে আপনি পুরো বিলের উপর আলাদা ৫% ডিসকাউন্ট পাবেন !
-আচ্ছা । আমাকে একটা কার্ড দেওয়া যাবে ?
-এই জন্যই জানতেই চাইলাম । একবারে বিল ৫ হাজারের বেশি হলে আমরা তাকে এই মেম্বারশীপ কার্ড দেই ।
-আচ্ছা তাহলে তো ভালই ।
নোরা ছেলেটার দিকে একটা ফর্ম এগিয়ে বলল, এই টা একটু ফিলআপ করে দিন প্লিজ !

ছেলেটা ফর্মটা ফিলাপ করে দিল । নামটা দেখেই নোরা চমকে উঠলো । সেখানে আদনান চৌধুরীই লেখা ! নোরার মনে হল ও একটা হার্ট বিট মিস করলো ! ওর সামনে সত্যিই সত্যিই আদনান চৌধুরি দাড়িয়ে আছে ।

বিলে নেওয়া শেষ করে যখন যাওয়ার সময় হল তখনই আদনান বলল, মিস নোরা আজকে আসি কেমন !
নোরা এসে বিদায় জানালো !
আদনানের চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তখনই ওর মনে ব্যাপারটা ধরা পড়লো । আদনান চৌধুরী ওর নাম জানলো কিভাবে ? ও নিজের নাম বলে নি । আর ওর যত দুর মনে পরে অন্য কোন কর্মচারিও ওর নাম ধরে ডাকে নি । তাহলে ?
ওর নামটা কিভাবে জানলো ?


পর্ব দুই

সব কাজ শেষ করে বুকস্টোর থেকে বের হতে হতে রাত আট টা বেজে গেল । ছুটির দিন গুলোতে আরও একটু দেরি হয় । গল প্রভোস্টের সাথে আগে থেকেই নোরা কথা বলে নিয়েছে । এই জন্য ওর খুব একটা সমস্যা হয় না । নোরা বরাবরই পড়াশুনাতে বেশ ভাল । তাই স্যার ম্যাডামদের সুনজরে পড়তে খুব একটা সময় লাগে না । এই অনুরোধ টুকু তারা ঠিকই রাখে ।
বুক স্টোরের সামনে এসে দাড়ালো । ওর হলটা এখান থেকে খুব বেশি দুরে নয় । চাইলে হেটেই যাওয়া যায় । পুরো রাস্তা যখন জ্যাম হয়ে থাকে তখন রিক্সা না নিয়ে ও বরং হেটেই চলে যায় । কিন্তু নোরার আজকে হাটতে ইচ্ছে করছে না । কয়েক কদম হেটে গেলেই রিক্সা পেয়ে যাবে । নোরা সেদিকেই হাটতে শুরু করলো । তবে ওকে থামতে হল কয়েক কদম হাটার পরেই । একজন মানুষ ওর ঠিক সামনে এসে দাড়িয়ে । সুট টাই পরা একটা ছেলে । ছেলেটার বয়স কত হবে এই অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারলো না । চোখে মুখে একটা কনফিউজড ভাব রয়েছে ।
-গুড ইভিনিং মিস নোরা ! আপনি কেমন আছেন ?
নোরা একটু না অবাক হয়ে পারলো না । এই লোকটা ওর নাম জানলো কিভাবে ? একটু আগে ঐ আদনান চৌধুরীও ওর নাম ধরেছিলো ! এখন আবার এই লোকটাও ওর নাম ধরে ডাকছে । এই শহরের সবাই ওর নাম জেনে বসে আছে নাকি ? নাকি হঠাৎ করেই ও খুব বিখ্যাত কেউ হয়ে গেছে !
নোরা নিজেকে সামলে নিল মুহুর্তেই । তারপর বলল, আমি ভাল আছি । কিন্তু আপনি কে ?
ছেলেটা এবার একটু হাসলো । তবে মুখ থেকে সেই কনফিউজড ভাবটা গেল না । বলল, আমার নাম কামাল । আমি আদনান স্যারের সেক্রেটারি !
আবারও সেই আদনান !
ব্যাপারটা কি হচ্ছে নোরা আসলে কিছুই বুঝতে পারছে না । কি হচ্ছে ওর সাথে !
কামাল নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, আসলে আমাদের স্যার আপনার সাথে একটু কথা বলতে চান ? উনি ঐ যে ঐ গাড়িতে বসে আছেন ! আপনি প্লিজ চলুন আমার সাথে ?

নোরা কিছু সময় কামাল নামের এই মানুষটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আপনার স্যার কথা বলতে চায় তাকে আসতে বলুন আমার কাছে ? আমি কেন যাবো ?

নোরা কেন যে এই কথাটা বলল সেটা ও নিজেই জানে না । অন্য কেউ হলে এক কথাতেই গাড়ির দিকে দৌড়ে যেত । আদনান চৌধুরী তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে এটা তো একেবারে স্বপ্নের মত একটা ব্যাপার । আর ও কিনা ভাব নিয়ে বলল যে আদনান চৌধুরীকেই ওর কাছে আসতে । কামালও সম্ভবত নোরার কাছ থেকে এমন কথা ঠিক আশা করে নি । কিছু সময় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । তারপর ঘুরে পেছনে দৌড় দিলো ।

নোরা কামালের এই দৌড় দেওয়াটা আশা করে নি । ছেলেটা কোন কারনে কনফিউজড হয়ে আছে । এবং নোরা তাকে আরও বেশি কনফিউজড করে দিয়েছে । নোরার এখন কি করা দরকার ?
এখানেই অপেক্ষা করবে নাকি রিক্সার জন্য হাটা দিবে ? নাকি গাড়িটার দিকে একটু এগিয়ে যাবে ! শেষে যেখানে দাড়িয়ে ছিল সেখানেই দাড়িয়ে রইলো । অবশ্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । ঠিক দুই মিনিটের মাথায় আদনান চৌধুরী ওর সামনে এসে হাজির হল । পেছনে কামাল সেই পাংসু মুখে দাড়িয়ে আছে । সম্ভবত এখনও এইটা মেনে নিতে পারছে না যে নোরা তার বসকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছে ।

নোরা নিজেও খানিকটা অবাকই হল । ও ভেবেছিলো ওর এই কথা শুনে হয়তো আদনান চৌধুরী চলে যাবে নয়তো আবারও কামালকে পাঠাবে । এভাবে নিজেই নেমে আসবে সেটা সে ভাবে নি । আদনান চৌধুরী ওর সামনে এসে দাড়ালো । এইবার অবশ্য নোরা নিজের ভেতরে একটু দ্বিধ দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করলো । কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না ।
আদনান চৌধুরী বলল, আপনার হলের গেট সম্ভবত নয়টায় বন্ধ হয় ! তাই না ?
নোরা কেবল মাথা ঝাকালো ।
-চলুন আপনাকে পৌছে দেই । নয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে !
নোরা মৃদুর স্বরে বলল, সমস্যা নেই । আপনি বলুন আপনার কি কথা ।
-যেতে যেতেই বলি ! খুব বেশি সময় লাগবে না । নাকি আমার গাড়িতে উঠতে সমস্যা আছে । ভয় পাবেন না । আপনার কোন ক্ষতি আমি করবো না !

নোরা কিছু সময় কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । ওর সাথে আদনান চৌধুরীর কি এমন কথা থাকতে পারে সেটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না । ওর হলের গেট কয়টায় বন্ধ হয় সেটাও এই লোক জানে । এর মানে হচ্ছে লোকটা ওর নারী নক্ষত্র সব কিছু জেনে বসে আছে । কিন্তু কেন ? এই এতো বড়লোক মানুষটা ওর প্রতি কেন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে ? এতো আগ্রহ দেখানোর কি কারন ?

নোরা অবশ্য আর প্রশ্ন করলো না । আদনান চৌধুরীর সাথে সাথে তার গাড়িতে গিয়ে উঠলো । আদনান চৌধুরী ঠিক তার পাশেই বসলো । কামাল উঠতে যাচ্ছিলো গাড়িতে আদনান বলল, কামাল তুমি এখানেই থাকো । আমি যাওয়ার সময় তোমাকে তুলে নিবো !


গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই নোরার মনে হল যে ও অন্য জগতে চলে এসেছে । বাইরে থেকে একটু আওয়াজও আসছে না । ওর সিটের সামনেই একটা ছোট টিভি রয়েছে । সেখানে খবর ছাড়া রয়েছে । তবে কোন আওয়াজ হচ্ছেনা । গাড়িতে চলতে শুরু করেছে নোরা সেটা বুঝতেও পারলো না ।

আদনান চৌধুরী বলল, দুঃখিত এই ভাবে চলে আসার জন্য !
-না ঠিক আছে । আসলে আমি ....
-কিছু বুঝতে পারছেন না ?
-জি ! আপনি আমার সাথে কি কথা বলতে পারেন সেটাই মাথাতে আসছে না আমার !
-আসলে আমি আপনাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই !

নোরার মনে হল ও যেন কানে একটু ভুল শুনলো । নিশ্চিত ভাবেই এটা কোন ভাবেই সম্ভব না ।এমনটা হওয়ার কোন কারন সে দেখতে পাচ্ছে না । আদনান চৌধুরী যে কিনা কম করেও কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক সেই লোক ওকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাচ্ছে !
নোরার মুখের ভাবটাই এমন ছিল যে কেউ ওকে দেখলে ঠিকই বুঝে যাবে যে ও অবাক হয়েছে । নিজের বিস্ময় ও লুকানোর চেষ্টাও করলো না । আদনান বলল, আমি বুঝতে পারছি আসলে আপনি অবাক হয়েছেন । এবং আপনার পূর্ণ অধিকার আছে আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার । আমার সেখানে কিছুই করার থাকবে না । তবে আমি সত্যিই আপনাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই ।
নোরা বলল, কেন ?
-সেটার পেছনে কারন আছে । সেটা আপনি গেলেই বুঝবেন । বেশি সময় চাইবো না আপনার কাছে । মাত্র ঘন্টা দুয়েক । এটা হলেই হবে । আপনাকে আমি হলের গেট থেকে কিংবা আপনার বুকস্টোর থেকে পিক করে নিয়ে যাবে । তারপর আবার এখানেই ড্রপ করে দিয়ে যাবো ।
-আমি আসলে কারনটা জানতে চাইছি !
-আপনি আমার একটা খুব বড় উপকার করেছেন । সেটার প্রতিদান কোন ভাবেই দেওয়া সম্ভব না আমি জানি । কিন্তু একেবারেও কিছু যদি না করি তাহলে আসলে আমি মনে শান্তি পাচ্ছি না !
নোরা আবারও অবাক হয়ে গেল । ও আদনান চৌধুরীর কি উপকার করেছে সেটা ও বুঝতেই পারলো না । বলল, আমি আপনার উপকার করেছি ? আপনার নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কোথাও ! আমি আপনাকে সরাসরি এই প্রথম দেখলাম । না ঠিক এই প্রথম না । গতদিন আপনি বুকস্টোরে এসেছিলেন । সেদিন দেখেছিলাম । আর কোন দিন দেখাই হয় নি আমাদের ।

নোরার তারপর কি যেন মনে পড়লো । তারপর বলল, আমি ঐ বুকস্টোরের মেম্বারশীপ কার্ডটা দিয়েছিলাম । এটা কি আপনি উপকার হিসাবে ধরছেন ?

আদনান খুব শব্দ করে হেসে উঠলো । নোরা খানিকটা অবাক হয়েই আদনানে মুখের দিকে তাকালো । মানুষটা এর আগেও সে দেখেছে পত্রিকার ছবিতে । ইউটিউবে তার কিছু ভিডিও আছে । সব সময় তাকে কেবল গম্ভীরম রাগী আর বদমেজাজী হিসাবেই বিশ্বাস করে এসেছে । কিন্তু এখন আদনানের হাসি দেখে নোরার সব কিছু কেমন ভুল মনে হল । আদানন বলল, ঠিক বলেছেন । ঐটাই কারন !
তারপর আবারও হাসতে লাগলো ।
নোরা বলল, সত্যিই বিশ্বাস করেন আমি কোন ভাবেই আপনার কোন উপকার করি নি । করতেই পারি না !
আদনান এবার নিজের হাসি থামালো । তারপর বলল, আমার সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন ! আপনার নিশ্চয়ই মনে হয় না যে আমি ভুল মানুষের পেছনে এতো সময় ব্যয় করবো ? আপনার হয়তো ধারনা নেই আমি আপনার জন্ম তারিখ স্থান থেকে শুরু করে এই আজকের দিনের একটু আগের ঘটনা পর্যন্ত সব কিছু জানি !
-সিরিয়াসলি ?
-জি !
-আমি সত্যিই খুব খুশি হব যদি আপনি আমার সাথে একটা দিন ডিনার করেন !
নোরা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আচ্ছা । কবে বলুন ?
-সামনের শুক্রবারে হলে আপনার সুবিধা হবে ?
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
-ধন্যবাদ ! আপনার হলের সামনেই আমি গাড়ি পাঠাবো । ঠিক আছে ?
নোরা তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে ওর সাথে এমন কিছু হতে যাচ্ছে । কেন এমন কিছু হচ্ছে ! এমন কিছু তো হওয়ার কথা না । কোন ভাবেই না । আদনান বলল, আপনার হল চলে এসেছে !
-চলে এসেছে ?
কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো আসলেই গাড়িটা হলের সামনেই দাড়িয়ে আছে ।
গাড়ি থেকে নেমে গাড়িটা চলে যেতে দেখলো ও । মনের ভেতরে একটু দ্বিধা কাজ করছে । ও আদনান চৌধুরীর কি উপকার করতে পারে?


চলবে ....



ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ২:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×