somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য আনএক্সপেক্টেড ব্রাইড (পর্ব ছয়)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পর্ব এক পর্ব দুই পর্ব তিন পর্ব চার পর্ব পাঁচ

এগারো

নোরা বাবার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, বাবা আমি জানি এ কথা !

পুরো করিডোরে যেন একটা বোমা পড়লো । আতিকুল ইসলাম তো অবাক হলেনই, আদনান সোবাহান চৌধুরী দুইজনই তীব্র বিস্ময় নিয়ে তাকালো নোরার দিকে । নোরা কয়েকটা নিশ্চুপ মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো আদনানের দিকে । তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা ও আমাকে আগেই সব কিছু বলেছে । আমি জানি !
-তুই জানিস ? আর আমাকে বলিস নি ?
-এটা এমন কিছু বলার কথা নয় ! আমি মানুষকে বলে বেড়াবো শুনো শুনো আমার স্বামীর না আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো সবাই শুনো !
আতিকুল ইসলাম মেয়ের দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকালেন । তার মনে হল নোরা কেমন যে অস্বাভাবিক আচরন করছে । নোরা কখনই তার সাথে এমন স্বরে কথা বলে না ।
আতিকুল ইসলাম বললেন, তাই বলে আমি জানবো না ?
-এখন জানলে তো ! এতো রিএক্ট করার কি আছে ! দেখে নেবো জেলের ভাত খাওয়াবো এসবের মানে কি ! আমাকে বিয়ে করেছে আমাকে জানিয়েছে । ব্যাস ! আর ওকে তোমাদের জানাতে মানা করেছি !

আতিকুল ইসলাম আর কিছু বলার সুসোগ পেলেন না । সোবাহান চৌধুরী আতিকুল ইসলামের কাধে হাত রেখে বললেন, আমরা মানছি যে আমাদের অন্যায় হয়েছে । আপনি বরং আমার সাথে আসুন প্লিজ ! মাথা গরম করে কি কোন সমাধান হয় ! মাথা ঠান্ডা করে একটু চিন্তা ভাবনা করা যাক !

আতিকুল ইসলাম আরও কিছু সময় দাড়িয়ে রইলেন । তারপর সোবাহান চৌধুরীর সাথে বের হয়ে গেলেন হাসপাতাল থেকে । আদনান তখনও এক ভাবেই দাড়িয়ে ! নোরাকে সে ঠিক বুঝতে পরছে না । মেয়েটার এমন আচরন সত্যিই তাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েছে । মেয়েটা এমন একটা কথা বলবে সেটা আদনান মোটেই ভাবতে পারে নি ।
আদনান কিছু বলতে গেল । কিন্তু তাকে থামিয়ে দিলো । বলল, ভাববেন না যে আমি কেবল আপনার সাথে থাকার জন্য কিংবা আপনার কারনে মিথ্যা বলেছি । আমি চলে গেলে আম্মুর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি কোন দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না !
আদনান চুপ করে কেবল শুনলো কথাটা । একটা কথাও বলল না । নোরা বলল, আম্মু শরীরটা ভাল হয়ে গেলে আমি কি করবো সেটা পরে ভেবে দেখবো । আমাকে কিছু সময় ভাবতে হবে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে !

আদনানের এই সব কথা শুনে মন খারাপ করার কথা কিন্তু আদনান আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো যে ওর মন খারাপ লাগছে না । রবং মনের ভেতরে একটা আলাদা আনন্দ আনন্দ ভাব হচ্ছে । সামনে দাড়ানো এই মেয়েটা কি চমৎকার ভাবেই না তার মায়ের কথা ভাবছে । তার স্বাস্থ্যের জন্য চিন্তা করছে । আদনান নিশ্চিত ভাবে জানে যে নোরার তার মায়ের জন্য এই চিন্তার মধ্যে কোন খাদ নেই । সে এই কাজটা করছে মন থেকে । আদনানের এতোদিন পরে হঠাৎ করে নীতুর কথা মনে পড়লো । তবে তার মন খারাপ হল না । আগে নীতুর কথা মনে হতেই আদনানের মন খারাপ হয়ে যেত । আজকে কেন জানি মন খারাপ হল না ।
নীতু মাঝে মাঝেই বলতো যদি সে কোন দিন মরে যায় তাহলে আদনানের কি হবে ! সে তো কোন দিন আর কাউকে ভালবাসতে পারবে না । আজকে আদনানের মনে হল নীতু ছাড়াও আরেকটা মেয়েকে সে ভালবাসতে শুরু করেছে । তার সামনে দাড়ানো এই মেয়েটাকে সে ভালবাসতে শুরু করেছে ।
নোরা বলল, আমার কথা পরিস্কার হয়েছে ?
আদনান কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাঁকালো !
নোরা বলল, এখন দয়া করে আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান ! আপনার চেহারা দেখতে ইচ্ছে করছে না ।

আদনানের কেন জানি হাসি পেল । এটা তারই হাসপাতাল । তার তার এই হাসপাতাল থেকে তাকেই এই মেয়ে বলছে যে চলে যেতে । অন্য কারো এমন কথা বলার সাহস হত কি না আদনানের ধারনা নেই । আদনানের খুব মজাই লাগলো কথা শুনে । তবে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল । যাওয়ার আগে নোরাকে বলল, তুমি কি খাবে ? সকাল হয়েছে বেশ সময় আগেই । নাস্তা করা হয় নি !
-সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না ! আমার খাওয়া আমি নিজে বুঝবো !
নোরা আদনানের থেকে মুখ সরিয়ে নিল । তারপর একটু আগে যেখানে বসে ছিল সেখানেই গিয়ে বসলো ।

নোরা আদনানকে চলে যেতে দেখলো । করিডোরের একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে সে একজন বয়ের সাথে দাড়িয়ে কি যেন বলল । বয়টা মাথা কাত করে সম্মতি জানালে আদনান আরেকবার ওর দিকে তাকালো । আদনানের চোখে ও কেমন যে একটা আনন্দের ভাব দেখলো । আদনানের মনটা যেন কোন কারনে আনন্দে ভরে উঠেছে । কি কারনে আনন্দ লাগছে সেটা নোরা বুঝতে পারলো না ।

আদনান চলে যেতেই নোরার প্রচন্ড ক্ষধা অনুভুত হল । সেই রাতের বেলা পুলিশের কাছে ধরা পরা । তারপর আদনানের সাথেই নদীর পাশে যাওয়া, ওর মায়ের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া তারপর ওকে দেখে ওর মায়ের শান্ত হয়ে যাওয়া, ওর বাবার এভাবে চলে আসা এবং সবার শেষে ওর নিজের আচরন ! এতো কিছু এক রাতেই হে গেল । পুরো সময়টাতেই ও একটু উত্তেজনাকর অবস্থায় ছিলো । স্বাভাবিক ভাবে কিছুই চিন্তা করতে পারছিলো না । এই জন্যই হয়তো ক্ষুধাটা অনুভব করে নি । এখন সেটা ভাল করেই অনুভব করতে পারছে ।
এই হাসপাতালে নিশ্চয়ই ক্যান্টিন আছে । নোরা উঠে দাড়ালো । এখনই কিছু খেয়ে আসা যাক । আদনানের আম্মু যে কোন সময় জেগে উঠতে পারে । নোরা যখনই উঠতে যাবে তখনই দেখলো সেই বয়টা ওর সামনে এসে হাজির । এই বয়টার সাথেই আদনান একটু আগে কথা বলছিল। বয়টার হাতে একটা প্লেট । ওর জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে এসেছে । আদনান তাহলে বয়কে নাস্তার কথাই বলে গিয়েছিলো।
নোরার একবার ইচ্ছে হল এখনই বয়কে রাগ দেখিয়ে বলে যেন খাবার নিয়ে যায় । সে এখন খাবে না । কিন্তু বয়ের সাথে রাগ দেখানোর কোন মানে নেই । আর ও যেহেতু ক্ষুধা লেগেছেই তা খেয়ে ফেলাই ভাল ।
বয় ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাডাম এখানে তেলছাড়া পরোটা আর ডিম ভাজি আছে আর নিহারী নিয়ে এসেছি । সকালে ক্যান্টিনে আরও ব্যবস্থা হয় । রুটি পাওয়া যায়, ডাল আছে । স্যুপও পাওয়া যায় । আপনার কি আর কিছু লাগবে !
নোরা বলল, এমন ভাবে বলছেন যেন আমি যা বলবো তাই নিয়ে আসবেন !
বয় একটু হেসে বলল, চেষ্টা তো করাই যায় । একবার কেবল বলে দেখুন ।
-আচ্ছা যান হরিণের মাংসের ভূনা নিয়ে আসুন । পারবেন ?
বয়ের মুখ খানিকটা কালো হয়ে গেল । বোঝা গেল তাদের স্টকে হরিণের মাংস নেই । নোরা বলল, দিন আপাতত যা নিয়ে এসেছেন তাই দিন ।
বয় তাই দিয়ে ঘুরে চলে গেল ।

নোরা বেঞ্চটার উপরে বসেই তেলছাড়া পরোটা মুখে দিল । পরোটা মুখে দিতে দিতেই নোরার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো । ও যে সব সময় তেল ছাড়া পরোটা খায় এটা এই বয় কিভাবে জানে ? সে তো রুটিও আনতে পারতো ! হয়তো আদনান বলেছে ওকে । কিন্তু আদনানই বা কিভাবে জানলো এটা ?

একটা পরোটা খঅয়া যখন শেষ হয়েছে তখনই একজন ডাক্তারকে ওর দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখলো । ওর সামনে দাড়িয়ে ডাক্তার বলল, ম্যাডামের ঘুম ভাঙ্গছে । আমার মনে হয় আপনি যদি তার সামনে থাকেন তাহলে তাহলে একটু ভাল হয় !
নোরা একবার ডাক্তারের দিকে তাকালো তারপর নিজের সকালের নাস্তার দিকে তাকালো । খাওয়াটা মাঝ পথেই রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না আবার বসেও থাকতে ইচ্ছে করছে না । নোরা প্লেট টা হাতে নিল । তারপর ডাক্তাের পেছন পেছন কেবিনের দিকে হাটতে শুরু করলো ।


বারো
নোরা আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করলো ডাক্তারের পেছন পেছন । হঠাৎ ই বুঝতে পারছে ওর গুরুত্ব খুব বেশি বেড়ে গেছে এই সব মানুষ গুলোর কাছে । সবাই তাকে অন্য চোখে দেখছে, সমীহের চোখে । নয়তো এতো হাসপাতালের এই এতো বড় ডাক্তার তাকে ম্যাডাম ম্যাডাম করছে । নোরার বেশ কয়েকবার অন্য হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়েছে । সেখানকার ডাক্তার নার্সদের ব্যবহার কোন দিনই এমন ছিল না । আর সরকারী হাসপাতাল হলে তো কথাই নেই ।

নোরা হঠাৎ বলল, ডাক্তার সাহেব !
-জি ম্যাডাম ?
-আম্মুর অবস্থা কেমন এখন?
-আসলে আমরা এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না । তবে গতকালের ব্যাপারটা দেখে আমা সবাই খানিকটা অবাক হয়েছি । ম্যাডামের মাথায় আঘাতটা খুব গুরুতর ছিল । আমরা কোন দিন ভাবি নি যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন । প্রায় দুই বছরের মত তিনি কোমাতে ছিলেন ।
নোরার হঠাৎ জানতে ইচ্ছে হল কিভাবে এই দূর্ঘটনা ঘটলো । ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলেন না । ডাক্তারের কাছে কথাটা জানতে চাওয়াটা শোভন দেখায় না । ডাক্তার সাহেব বললেন, তবে আমরা এখন খুব আশাবাদী । ম্যাডাম ঠিক হয়ে উঠবেন আশা রাখি ।আপনার সাথে ম্যাডামের খুব গভীর কোন সম্পর্ক রয়েছে । এই জন্যই কাল এমনটা হয়েছে । এমনটা অনেক সময়ই হয় । ম্যাডাম বুঝি আপনাকে অনেক ভালবাসেন ?
নোরা ডাক্তারের দিকে তাকালো। মুখের ভাবটা পরিবর্তন করলো না । সে নিজেও জানে না আদনানের আম্মুর সাথে আসলে তার কি সম্পর্ক আছে । এই মহিলা কিভাবে তাকে এতো আপন ভাবছে সেটাও সে জানে না । তবে এখনও নোরাকে সে নিতু বলেই ডেকেছে । হয়তো নোরাকে সে অন্য কেউ ভেবে নিয়েছে ।
তাহলে নিতুই কি আদনানের আগের স্ত্রীর নাম ? হ্যা এটাই হবে । এটা ওর আগেই ভাবা দরকার ছিল । এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক ।

নোরা যখন রুমের ভেতরে ঢুকলো দেখতে পেল রেবেকা একেবারে জেগে উঠেছেন। উঠে বসেছেন বিছানার উপর । নোরার দিকে চোখ পড়তেই তার চোখ খানিকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তারপর বললেন, তুই একা একাই নাস্তা খাচ্ছিস ?
নোরা খানিকটা চমকে উঠলো । তার শ্বাশুড়ি কন্ঠে কি একটা মায়া রয়েছে সেটা সে ঠিক বুঝতে পারছে না । নোরার কেবল মনে হল রেবেকা যেন ওকে অনেক দিন ধরে চেনেন । খুব কাছের ভাবেই চেনেন ।
রেবেকা আবার বললেন, কই দেখি আমাকে একটু খাইয়ে দে তো ।
নোরা একটু এগিয়ে এল প্লেট নিয়ে, আমার এটোটা খাবেন ?
রেবেকা যেন একটু বিরক্ত হলেন, তারপর বললেন, চড় খাবি একটা ! খাবেন বলছিস কেন ?
নোরা প্লেট থেকে একটু পরোটা ছিড়ে রেবেকার মুখে এগিয়ে দিলেন। রেবেকা বাচ্চা মেয়ের সেটুকু খেতে থাকলেন । একটা সময় নোরা নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে রেবেকাকেই খাওয়া থাকলো । খাওয়া শেষ করে নোরা যত্ন করে রেবেকাকে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল । তাকে গোসল করিয়ে দিল । রেবেকার নাকি সকাল সকাল গোসল করার অভ্যাস । তারপর নিজেই তার চুপ মুছে দিলো । ভেজা চুপ ড্রাই করে দিল । নোরা হঠাৎ আবিস্কার করলো যে ওর এসব কাজ করতে ভাল লাগছে । রেবেকা ওর দিকে এমন মায়ার চোখে তাকায় যেন মনে হয় ওকে তিনি কত দিন ধরেই না চেনেন ।

আর দুইদিন হাসপাতালে থাকলো তারা । তারপর ডাক্তার রেবেকাকে বাসায় নিয়ে যেতে বললেন । নোরাও চলল তার সাথে বাসায় । এই দুইদিন নোরা হাসপাতাল থেকে নড়ে নি । প্রতি মুহুর্তেই সে রেবেকার সাথেই ছিল । রেবেকার চোখের পাতা খুললেই নোরাকে দেখতে পেত ।

রেবেকাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সময় আদনান নিজে এসেছিলো । ডাক্তার তাকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে বললেন, আপনার ওয়াইফের ভেতরেই আসলে ম্যাডামের সুস্থতা নির্ভর করছে । এই দুইদিন আমরা আসলে তাকে পর্যবেক্ষনে রেখেছিলাম । এই ব্যাপারটা স্পষ্ট যে আপনার মা আর আপনার ওয়াইফের ভেতরে একটা আশ্চর্য বন্ড তৈরি হয়েছে । এটা যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন ।

আদনান কিছু বলল না । এই ব্যাপারটা সে নিজেও জানে । যে কোন ভাবেই নোরাকে সে আটকাবেই । কোন ভাবেই যেতে দিবে না ।

বাসায় ফিরে নোরা খাানিকটা অবাক হয়ে গেল । তারা নিজের বাবা এখনও আদনানদের বাসায় রয়ে গেছে । লনে বসে সে সোবাহান চৌধুরীর সাথে জম্পেস আড্ডা দিচ্ছে । দুদিন আগে এই মানুষটা কি অগ্নি মূর্তি নিয়েই না তাদের সামনে গিয়ে হাজির হয়েছিলো । নোরা সেদিকে তাকিয়ে রইলো একটু চিন্তিত মুখে । তার চিন্তার কারন অন্যখানে ।

সেদিন হাসপাতালে সে তার বাবাকে বলেছিলো যে আদনান তাকে সব কিছুই বলেছে । এবং তাকে বুঝিয়েছিলো যে আদনানের যে আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো সেটা নিয়ে তার কোন আপত্তি নেই । কিন্তু আসলে সেটা সত্যি নয় । তার আপত্তি অবশ্যই আছে । সে এই কাজটা করেছিলো কেবল রেবেকার জন্য । কিন্তু এখন ?
পরে আসলে কি হবে সেটা নিয়ে সে মোটেও কিছু ভাবে নি । তখন নোরার কেবল মনে হয়েছিলো যে এখন এখানে থাকাটা দরকার । অন্য কিছু আসলে মাথায় আসে নি । এতো গভীর ভাবে সে ভাবেও নি কিছু । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে কিছু ভাবা দরকার ছিল । এখন তো পরিস্থিতি অন্য দিকে চলে যাবে । ওর বাবার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে সেও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে খুশি মনে ।

রাতে ঝামেলা বাঁধলো বেশ । নোরাকে ঘুমাতে হল আদনানের ঘরে । ঘরে ঢুকে নোরা কিছু সময় বোকার মত দাড়িয়ে রইলো । আদনানের সামনে এসে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে রইলো । আদনান নিজের বিছানার উপর বসে কাজ করছিলো ল্যাপটপে । নোরার যে এখন কি করা উচিৎ সেটা ও বুঝতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে গতবারের মত এবারও যদি কিছু হয় !
নাহ ! এইবার এমন কিছু আর হবে না । হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই । আবারও মনে হচ্ছে যে হতেও পারে !

যখন এমন দ্বিধান্বিত ওর মনটা তখন আদনান ওর দিকে ফিরে তাকালো । ল্যাপটপটা থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকালো । তারপর বলল, তুমি ইচ্ছে করলে বিছানাতে ঘুমাতে পারো । এই দুইদিন হাসপাতালে ছিলে । তোমার ভাল ঘুম হয় নি আমি জানি ।
নোরা বলল, আপনি কোথায় ঘুমাবেন ?
আদনান বলল, সেটা আমি খুজে নেব । তুমি ঘুমাও এখানেই ।

এই বলেই ওর পাশের ফাঁকা স্থানটা দেখালো ও । তারপর আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল । নোরা আরও কিছু সময় অপ্রস্তুত হয়েই এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করলো । সত্যিই গত দুই দিন ওর খুব ভাল করে ঘুমানো হয় নি । হাসপাতাল যতই আধুনিক হোক না কেন হাসপাতালে শান্তিমত ঘুম আসে না । নোরারও আসে নি । আজকে ভেবেছিলো কিছু সময় শান্তিমত ঘুমাবে । সব থেকে ভাল হত হলে চলে যেতে পারলে কিন্তু রেবেকাকে ছেড়ে কেন জানি ওর যেতে ইচ্ছে করছে না । বারবার মনে হচ্ছে যদি ও চলে যাওায়র পরে আবারও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে । এই মানুষটার প্রতি কেমন যেন একটা টান অনুভব করছে ও ।

বিছানার এক পাশে আদনান বসে থাকার কারনে নোরা কেন জানি একট অস্বস্থিবোধ করছে । আদনানকে বলতেও পারছে না যে আপনি বিছানা থেকে উঠে যান তো । আমি ঘুমাবো । বিছানাটা আদনানেরই । তারপর এক সময় নিজেকে খানিকটা বোঝালো । আদনান নিজের কাজে বেশ ব্যস্ত । ওর দিক তাকানোর সময় তার নেই । নোরা নিজেই বিছানার ওপাশে গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো ! একটা সময়ে ঘুমিয়েও পড়লো ।

আদনানের কাজ শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগলো । যখন ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ও একটু আড়মোড়া ভাঙ্গলো তখন বেশ রাত হয়ে গেছে । নিজের কাজে এতোই ব্যস্ত ছিল যে অন্য কিছু তার মনে ছিল না । পাশে শুয়ে থাকা নোরার দিকে চোখ পড়তেই আদনানের কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল । কি নিঃপাপ একটা মুখ । এই মেয়ে নিশ্চিত ভাবে জীবনে কোন অন্যায় করে নি । আদনান কত সময় যে সেদিকে তাকিয়ে রইলো যেটা আদনান নিজেই জানে না ।
কি মনে হল ও এগিয়ে গেল নোরার দিকে । খুব যত্ন করে ওর কপালে একটা চুমু খেল । চুমুটা এতো ভাল লাগলো যে আদনান নিজেই অবাক হয়ে গেল । নিতু ছাড়া আর কাউকে ও কোন দিন কাছে আসতে দেয় নি । এমন কি নোরাকে বিয়ে করে ছিল কেবল মাত্র ওর মায়ের জন্য । কিন্তু এখন কেমন সব বদলে যাচ্ছে । সব কিছু নতুন ভাবে ভাবতে হচ্ছে । নোরা মেয়েটা সব হিসাব বদলে দিচ্ছে ।
আবার হাসপাতালে নোরা বলেছিলো সে চলে যাবে । আদনান নোরার গালে আরেকটা চুমু খেল । তাররপ ফিসফিস করে বলল, তোমাকে আমি কোথাও যেতে দিবো না । কোন ভাবেই না । একজন আমাকে ছেড়ে গিয়েছে । তোমাকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে না !

আদনানের খুব ইচ্ছে করছিলো যে নোরার পাশেই শুয়ে পড়ে । ওকে জড়িয়ে ঘুমায় । কিন্তু সেই ইচ্ছেটা দমন করলো সে ! নোরা যতদিন না নিজ থেকে ওকে আহবান করবে ততদিন সে নোরার কাছে আসবে না । তবে হ্যা এই ভাবে লুকিয়ে চুমু খাওয়া যাবে অবশ্য ! তখনই আদনানের মাথায় একটা বুদ্ধি হল । নোরাকে সে কোন ভাবেই যেতে দিবে না । কোন ভাবেই না ।

আদানন উঠে দাড়অ । নিজের ফোন বের করে সে কামালকে ফোন দিল । ফোনটা কানে ধরেই দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল ।

আদনান দরজা দিয়ে বাইরে বের হতেই নোরা চোখ খুলে তাকালো । নোরার চোখটা লেগে এসেছিলো । আদনান যখনই তার কপালে চুমু খেল তখনই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে । মানুষটা এতো যত্ন করে ওকে আদর করলো নোরার কেন জানি খুব ভাল লাগলো । নিজের মনের কাছেই একটা সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছিলো । কি আজব একটা ব্যাপার !
তারপর আদনান কি বলল ওকে ! একজন হারিয়ে গেছে আর ওকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে না !
আদনানের কন্ঠে কি দৃঢ়তা ছিল সেটা নোরার ভাল লাগলো । সে কোন ভাবেই ওকে যেতে দিবে না । আচ্ছা দেখা যাক সে কি করে তাকে আটকায় !
এটা ভাবতে ভাবতেই নোরা ঘুমিয়ে পড়লো ।

সকালবেলাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে ও বিছানা থেকে নামতে যাবে তখন তীব্র একটা বিস্ময় ওকে ঘিরে ধরলো । সেই সাথে সাথে মনটা তীব্র আনন্দে ভরে উঠলো । ও কত টুকু ঘুমিয়েছে সেটা ঠিক বলতে পারবে না । ভোরের আলো গুটেছে অনেক সময় তবে এখনও রোদ ওঠে নি । উঠবে উঠবে করছে । আদনান যখন বাইরে গিয়েছিলো তখন বেশ রাত । তার মানে খুব একটা সময় হয় নি । এর মাঝেই আদনান এই কাজটা করেছে ।

আদনানের পুরো ঘরটার মেঝেতে লাল আর হলুদ গোলাপে ভর্তি ! হলুদ গোলাপ ওর খুব বেশ পছন্দ ! সেই ফুলই ব্যবহার করা হয়েছে। মেঝেতে গোলাপ দিয়েই নাম লেখা হয়েছে ।

নোরা তোমাকে ভালবাসি !
নোরা কেবল সেই লেখাটার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে । ওর কিছুতেই বিছানাকে থামতে ইচ্ছে করছে না । একভাবে তাকিয়ে থাকতে মন চাইছে । গত রাতে আদনান যে বলেছিলো ওকে যেতে দিবে না, সেই কাজটা সে শুরু করে দিয়েছে ! নোরা বিছানার উপরে উপর হয়ে শুয়ে পড়লো আরও কিছু সময় ! তাকিয়ে রইলো বেঝের গোপাল ফুল গুলোর দিকে !



ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ২:২৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×