somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত বড় গল্পঃ 'মৃ'

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়ে মানুষজন যে মৃর দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝতে ফয়সালের একদমই কষ্ট হল না । অন্য মানুষগুলোকে সে দোষ দিতে পারলো না । আজকে সে যদি এই মানুষগুলোর স্থানে থাকতো সেও মৃর দিকে এভাবে মুগ্ধ চোখেই তাকিয়ে থাকতো ।
মৃর দিকে তাকিয়ে ফয়সালের মনে হল মৃ আজকে বেশ লজ্জা পাচ্ছে । লজ্জার কারণে মৃর সবুজ চোখদুটো আরও বেশি লাবণ্যময় হয়ে উঠেছে । শহুরে পোশাক সে খুব একটা পরে না । আজকে একটা কালো জিন্স আর সাদার সাথে আকাশী রংয়ের মিশিয়ে একটা কুর্তা পরে বের হয়েছে । গলাতে একটা লাল স্কার্ফ ।
ফয়সালের হাত ধরে রেস্টুরেন্টের একেবারে কোনার দিকে গিয়ে বসলো মৃ । এমনভাবে বসলো যেন অন্য লোকগুলো মৃকে দেখতে না পারে । ওর ঘনকালো লম্বা চুলটা কেবল দেখতে পাবে । সেই সাথে ফয়সাল সবাইকে দেখতে পাবে যারা মৃর দিকে তাকাবে !
মৃ বসতে বসতে বলল,
-এইজন্য আমি বাইরে আসতে চাই না ।
ফয়সাল হাসতে হাসতে বলল,
-আরে বাবা কি হয়েছে ? এমন করছো কেন ?
-করবো না ? দেখছো না কেমন করে লোকগুলো তাকিয়ে আছে । এদের বাসায় কি বউ নেই ?
ফয়সাল হাসতে হাসতেই বলল,
-বউ আছে কিন্তু আমার বউয়ের মত বউ নেই তো ।
মৃ হাসলো একটু । এই ব্যাপারটার সাথে অনেক আগে থেকেই সে পরিচিত ।
ফয়সাল মৃর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে । সারাটাদিন সে মৃকে দেখতে থাকে অথচ তবুও যেন তার মৃকে দেখার স্বাধ মেটে না । মৃর চোখ-নাক-ঠোঁট সবকিছু ওকে কি ভাবে পাগল করে দেয় সেটা ও বুঝতে পারে না । এই মেয়েটি ওকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করতে শুরু করেছে যে অন্যকিছু আর ভাবতেই পারে । মাত্র মাস দুয়েক হল ওদের পরিচয় । বিয়েটাও ঠিক একই সময় ধরে । এই সময়ে ফয়সাল মেয়েটাকে আস্তে আস্তে জানতে শুরু করেছে । মেয়েটাও কেবল ওকেই জানপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতে শুরু করেছে । ফয়সালের উপর ভরশা করেই মৃ সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছে । সেই ভরশা ফয়সাল কোনদিন ভঙ্গ করতে পারবে না ।
রেস্টুরেন্টটা বেশি বড় না, মাঝারি সাইজের । একেবারে শেষ মাথায় ওরা বসেছে । আসার সময় কেবল দেখেছে ওদের দিকে প্রায় সবাই তাকিয়েছিলো । অবশ্য তাকানোটা স্বাভাবিক । পুরুষ হিসাবে ফয়সাল সুদর্শন । যে কোন মেয়ের মনে ঢেউ তুলতে ফয়সালের লুকই যথেষ্ট । উচ্চতায় পুরোপুরি ছয়ফুট । উজ্জল শ্যামলা গায়ের রং আর ঘনকালো চুল । আর মৃর চেহারার বর্ণনা দেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব না । বিধাতা যেন নিপুণ হাতে ওকে তৈরি করেছেন । দুধে আলতা গায়ের রং । উচ্চতায় প্রায় ফয়সালের সমান। ওদের দুজনের জুটিটা মনে হবে যে দেবতা জিউসের সাথে তার রানি হেরা । এতো পার্ফেক্ট জুটি মানুষ অনেকদিন দেখে নি ।
ফয়সাল লক্ষ্য করেছে ওরা দরজা থেকে ভেতরে আসতেই সবাই ওদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে । এমনকি এখনও মাঝে মাঝে ওদের দিকে তাকাচ্ছে মানুষজন । কেবল একজন মানুষ ওদের দিকে একবারও তাকায় নি । মানুষটা ওদের থেকে সোজা ডান দিকে বসে আছে । কালো প্যান্ট আর কালো শার্ট পরা। আপনমনে নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছে সে।
আরও কিছু সময় গল্প করার পরে ফয়সাল ওয়েটারকে ডেকে অর্ডার দিল । কিন্তু ওরা কি জানতো এই খাবার ওদের ভাগ্যে ছিল না ! ওয়েটার অর্ডার নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ফয়সাল দেখতে পেল তিনজন মানুষ দরজা দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকেছে । ওদের চেহারার দিকে তাকিয়েই ফয়সালের বুকের ভেতরে কেমন যেন কু ডেকে উঠলো । বাঙালী নয় ওরা । উপজাতিদের মত চেহারা । তবে তার ভেতরেই একটা বাঙালী সংমিশ্রণ রয়েছে । ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে চোখ বুলাতে লাগলো পুরো রেস্টুরেন্টের উপর । স্পষ্টতই কাউকে খুঁজছে । ফয়সালের দিকে চোখ পড়তেই থেমে গেল ওরা । একভাবে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে । ফয়সালের চোখের দৃষ্টি লক্ষ্য করেই মৃ বলল,
-কি হয়েছে !
এবং সেও ফয়সালের দৃষ্টি লক্ষ্য করে পেছনে ঘুরে তাকালো । এবং তাকিয়েই চমকে উঠলো ।
সাথে সাথেই ফয়সালের দিকে ফিরে তাকালো । ফয়সাল দেখতে পেল মৃর মুখের রং একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । ফয়সাল বলল,
-কি হয়েছে ?
মৃ কোনভাবে বলল,
-ওরা তুনং গোত্রের লোক । আমাদের জাত শত্রু বলা যায় ।
মৃর মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল । ফয়সাল দেখতে পেল একজন তার কোমর থেকে চাইনিজ কুঠার জাতীয় একটা অস্ত্র বের করলো । তারপর সেটা মুহূর্তের ভেতরে ওদের দিকে ছুঁড়ে মারলো ।
ফয়সাল চোখ বড় বড় করে কেবল তাকিয়ে রইলো সেদিকে । এতো দ্রুত যে লোকটা প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা ফয়সাল বুঝতে পারে নি । কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । ফয়সাল দেখতে পেল কুঠারটা ঠিক মৃর মাথা বরাবর এগিয়ে আসছে । ওকে ধাক্কা দিয়ে সে হাত বাড়ালো বটে তবে সে জানে অনেক দেরি হয়ে গেছে । কুঠারটা সরাসরি এসে মৃর শরীরে লাগবে ।

এক
বিকেলের রোদ মিইয়ে এসেছে বেশ খানিকক্ষণ আগেই । ফয়সাল লজের বারান্দা থেকে সামনের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে । ছোট একটা আরাম কেদারার উপরে গরম চা নিয়ে বসে আছে । আজকের মত ঘোরাঘুরি শেষ । আপাতত রাতটা এই লজের বারান্দায় বসে কাটিয়ে দেওয়ার একটা ইচ্ছে রয়েছে ওর । তবে আজকে ওর মন খানিকটা অস্থির ।
পাহাড়ে সে এর আগেও এসেছে । যতবার সে এখানে আসে ততবারই মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি দেখে । প্রতিবারই তার সবকিছু নতুন মনে হয় । মনে হয় যেন এসব সে নতুন করে দেখছে । মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকেছে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
কিন্তু আজকে ফয়সালের মন প্রকৃতির দিকে নেই। আজকে তার চিন্তা কেবল বারবার অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে। বারবার কেবল সেই মেয়েটির চেহারা ফুটে উঠছে। কিছুতেই অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছে না। কি গভীর টলমল সবুজ চোখ নিয়ে মেয়েটি তাকিয়েছিল ওর দিকে। যেন ওকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছে। এই দেশে কোন মেয়ের চোখের রং সবুজ হয় সেটা জানা ছিল না ওর ।
স্থানটা একেবারে মায়ানমার বর্ডারের কাছে। পাহাড়ি বন জঙ্গল এতোই ঘন যে মানুষজন এদিকটাতে সহজে আসতে চায় না। এমন কি আর্মির অনুমতিও পাওয়া যায় না। এখানে আসতে হয় লুকিয়ে। খুব পরিচিত গাইড না হলে, গাইডরা এখানে কাউকে নিয়ে আসতে চায় না। ফয়সাল এর আগেও বান্দরবানে এসেছে অনেকবার। এখানকার প্রায় সব গাইডই তার পরিচিত। বারবার পরিচিত স্থানে যেতে যেতে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে উঠেছিল। তার বর্তমান গাইড মিংঝু এর সাথেই কম করে হলেও দশটা ট্যুর সে দিয়েছে।
এইবার তাই ফয়সালের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। প্রতিবারই তার সঙ্গী কয়েকজন মানুষ থাকে। তবে এইবার ঠিক করেই এসেছিল যে এবার সে একা একাই ঘুরে বেড়াবে। এবং এমন স্থানে যাবে যেখানে সাধারণত মানুষ যায় না কিংবা কোনদিনই যায় নি কেউ। মিংঝুকে ইচ্ছের কথাটা বলতেই সে কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল,
-এমন স্থানে আপনাকে নিয়ে যেতে পারি তবে কথা দিতে হবে যে কেবল ঘুরবেনই। অন্য কিছু করা যাবে না।
ফয়সাল খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
-অন্য কিছু মানে কি? তুমি আমাকে চেনো না? আজ পর্যন্ত কোন ট্যুরে আমাকে আজেবাজে কাজ করতে দেখেছো কোনদিন?
মিংঝু বলল,
-এই জন্যই আপনাকে নিয়ে যেতে রাজি হলাম। জায়গাটা বান্দরবান আর রাঙ্গামাটি জেলার কোল ঘেঁসে। একেবারে মায়ানমারের সীমান্তের কাছে। বড় বড় কয়েকটা ঝর্ণা আছে। সেখানকার প্রকৃতির নাকি কোন তুলনা নেই। সেখানে থাকার জন্য একটা লজ আছে। উপজাতিদের একটা পরিবার লজটা চালায়। তাই থাকা খাওয়ার সমস্যা হবে না সেখানে। তবে সমস্যা আছে অন্যখানে।
ফয়সাল বলল,
-কি সমস্যা?
-লজের কাছেই প্রথম ঝর্ণাটা। সামনে দিয়েই বয়ে চলে গেছে ঝিরিপথ। তার পেছনের জঙ্গল পার হলে আরেকটা ঝর্ণা পাওয়া যাবে। তবে এর বেশি দূরে যাওয়া যাবে না।
-কেন?
মিংঝু একটু অপেক্ষা করে বলল,
-ওখান থেকেই একটা পাড়া শুরু হয়েছে। চিড়ং উপজাতির বাস সেখানে। এরা বাইরের মানুষ একেবারেই পছন্দ করে না। ওদের এলাকার ভেতরে বাইরের মানুষ ঢুকে পড়লে ওরা রাগ করে, মারধর করে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
ফয়সাল কথা দিয়ে এসেছে যে নির্দিষ্ট সীমার ভেতরেই সে থাকবে। বান্দরবান থেকে প্রথমে জিপে, তারপর পায়ে হেঁটে প্রায় একদিন পর সে গতকাল এসে হাজির হয়েছে এখানে। লজটায় মোট চারটা রুম রয়েছে। সপ্তাহে বড়জোর দুইটা দল আসে এখানে। তবে এখন কেবল ফয়সাল একা। আর কেউ আসে নি। ফয়সালের জায়গাটা এতোই পছন্দ হয়ে গেল যে দুই দিনের স্থানে চার-পাঁচ দিন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। ঠিক করলো প্রতিদিন সকাল থেকে সে আর মিংঝু আশেপাশের নানান দিকে ঘুরে বেড়াবে আর বিকেল থেকে রাত এই বারান্দায় বসে কাটাবে। ঝর্ণার পানিতে গোসল করবে। সাথে করে বই নিয়ে এসেছে সেগুলো পড়বে।
এমনিভাবেই একটা দিন কেটে গেল। দ্বিতীয় দিনেই ঘটলো আসল ঘটনা। মিংঝুকে রেখেই সকালবেলা সে হাঁটতে বের হয়েছিল। পাহাড় অচেনা হলেও এখানে পথ হারিয়ে ফেলার ভয় কম। কারণ একটাই মাত্র পথ এখানে। আর পাহাড়ি পথে হাঁটার অভ্যাস ফয়সালের আছে।
আপনমনেই হাঁটছিল সে। একটা সময়ে লক্ষ্য করে সামনে থেকে নতুন আরেকটা ঝর্ণার আওয়াজ ভেসে আসছে। আওয়াজ লক্ষ্য করেই এগিয়ে যায় সে। এগিয়েই যেতে থাকে। ঠিক এমন সময় কেউ একজন তার হাত চেপে ধরে। খানিকটা চমকেই ওঠে সে। কিন্তু যখন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কে তার হাত চেপে ধরেছে তখন তার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। জীবনে এতো বিস্মিত সে হয়েছে কিনা কোনদিন বলতে পারবে না। মেয়েটার দিকে কেবল কিছুটা সময় সে তাকিয়েই থাকে। একটা শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। ওর কাছে মনে হয় যেন কোন দেবী তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওর হাত ধরে ইশারায় ওর সাথে যেতে বলছে। ফয়সাল মন্ত্রমুগ্ধের মত মেয়েটির পেছনেই হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় মেয়েটি লজের পাশের ঝর্ণার কাছে চলে আসে। স্পষ্ট বাংলাতে বলে,
-আপনি আমাদের সীমানাতে ঢুকে পড়েছিলেন। ওদিকে আর যাবেন না। আসি কেমন !
এই বলেই মেয়েটা একটু হাসলো। সাথে সাথে ফয়সালের বুকের ভেতরে ধরাক করে উঠলো।
মেয়েটিকে ডাক দিতে গিয়েও লক্ষ্য করলো তার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না। বুকের ভেতরে কেমন একটা কাঁপন অনুভব করছে।
দিনের বাকিটা সময় ফয়সাল আর বের হল না লজ থেকে। মিংঝু ডাকতে এসেও ফিরে গেল। সন্ধ্যার দিকে কেবল বের হয়ে এল রুম থেকে। চা নিয়ে বসে পড়লো বারান্দায়। অন্য সময় হলে মুগ্ধ চোখে সে তাকিয়ে থাকতো বাইরের প্রকৃতির দিকে কিন্তু আজ চিন্তা ভাবনা জুড়ে কেবলই সেই মেয়েটাই রয়েছে। যখন সন্ধ্যা মিলিয়ে অন্ধকার হল, তখনও ফয়সাল একইভাবে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে। কিছুই দেখছে না সে। কেবলই ভাবছে।
রাতেরবেলা খাওয়ার ডাক পড়লে ফয়সাল মিংঝুকে বলল প্লেটে খাবার রেখে দিতে। সে সারারাত ঠিক একইভাবে বসে রইলো। ভোরবেলা যখন আলো ফুটলো তখন ফয়সাল বুঝতে পারলো যে সে ওই অচেনা সবুজ চোখের পাহাড়ি মেয়েটার প্রেমে পড়েছে । একেবারে মুষলধারের প্রেম। আর কোন চিন্তাভাবনা তার ভেতরে কাজ করলো না। তার সমস্ত ভাবনা জুড়ে কেবল সেই মেয়েটিকেই অনুভব করতে শুরু করলো।
সে বারান্দা ছেড়ে নিচে নেমে এল। তখনও ভোরের আলো ফুটে ওঠে নি ভালভাবে। সে আস্তে আস্তে সেদিনের সেই পথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। সে নিশ্চিত জানে সামনে সেই পাড়ার ভেতর ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আজকেও যে সেই মেয়েটা আসবে এমন কোন সম্ভাবনা নাই। বরং না আসাটাই স্বাভাবিক। তবুও এক অদম্য আকর্ষণে সে এগিয়ে চলল সেই পথ ধরে।
মেয়েটিকে দেখতে পেল পথের মাঝেই। ফয়সালের মনে হল যেন মেয়েটি ওর জন্যই অপেক্ষা করছে। ফয়সাল আরও একটু এগিয়ে গেল। মেয়েটি গত দিনের মত সেই উপজাতী পোশাক পরেছে। থামি জাতীয় পোশাক। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই সে গোসল করেছে। চুল দিয়ে এখনো পানি পড়ছে। ফয়সাল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো কেবল।
মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল,
-আপনি আবার কেন এসেছেন? আপনাকে আমি সাবধান করেছিলাম।
ফয়সাল কিছু সময় কথার খেই হারিয়ে ফেলল। এখন নিশ্চয়ই মেয়েটিকে বলা যায় না যে শুনো মেয়ে, কাল তোমাকে প্রথম দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গেছি। লাভ এট ফার্স্ট সাইট।
ফয়সাল তার বদলে মেয়েটির দিকে কেবল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো কেবল।
-কি বললাম আমি?
-হ্যা কি বললে?
-বললাম আবার কেন এসেছেন?
ফয়সাল বলল,
-তোমাকে দেখতে। আমার কেবলই মনে হল যে তোমাকে না দেখলে আমি মারা যাবো, আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।
ফয়সালের বলার ভঙ্গিটাই এমন ছিল যে মেয়েটা খানিকটা চমকে উঠলো। দীর্ঘ সময় কেউ কোন কথা বলল না। এক সময় মেয়েটা ব্যস্ত হয়ে ফয়সালের চোখের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর বলল,
-আপনি চলে যান। আমার পাড়ার লোকজন আসছে এদিকে।
ফয়সাল বলল,
-তুমি কিভাবে বুঝলে এদিকে আসছে?
-শুনুন আমি বুঝতে পারি। যা বলছি শুনুন। দয়া করে চলে যান।
ফয়সালের ভেতরে কেমন একটা ছেলেমানুষী জেদ চেপে বসলো। সে বলল,
-না যাবো না আমি।
এবার মেয়েটার চোখে একটু ব্যাকুলতা দেখা গেল। মেয়েটি বলল,
-এখন যান। এমন করবেন না, আমার গ্রামের মানুষ দেখলে অনর্থ হয়ে যাবে।
-না, আমি যাবো না।
-আচ্ছা আপনি যান, আমি বিকেলের দিকে ঐ ঝর্ণার কাছে আসবো। এখন যান।
ফয়সাল এবার অবশ্য আর জেদ ধরে রাখলো না । পেছন ঘুরে হাটা দিলো ।
বাকিটা সময় সে আবারও নিজেকে লজের রুমের ভেতরে আটকে রাখলো । তার আসলে অন্য কিছু ভাল লাগছে না । অন্য কিছু সে চিন্তা করতে পারছে না । ফয়সালের মন জুড়ে কেবল ওই মেয়েটাই । অন্য কিছু যেন তার মাথার ভেতরে এলই না ।
বিকেলের জন্য সে অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করলো । কিন্তু বাঁধ সাধলো বৃষ্টি । বর্ষাকালে পাহাড়ে কখন যে বৃষ্টি শুরু হয় সেটা বলা যায় না । এই রোদ, এই বৃষ্টি অবস্থা । কিন্তু দুপুর থেকে এমন বৃষ্টি শুরু হল যে ফয়সাল রুম থেকে বের হতে পারলো না । কিন্তু যখন বিকেল হয়ে এল, ফয়সাল নিজেকে কোনভাবেই ধরে রাখতে পারলো না । বৃষ্টির সময় পাহাড়ে হাঁটাচলা করাটা একটু কষ্টের হয়ে যায় । একটু ঝুঁকিও থাকে । তারপরেও ফয়সাল বের হয়ে গেল । বৃষ্টিতে ভিজেই সে রওয়ানা দিল । যদিও এই সময়ে কেউ বাইরপ বের হবে না । হয়তো মেয়েটাও আসবে না । কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । বনের ভেতরে হাঁটতে শুরু করলো । অসহায়ের মত বারবার পথের দিকে চেয়ে রইলো । মেয়েটা নিশ্চয়ই আসবে ।
যখন মনে হল যে মেয়েটা আর আসবে তখন ফয়সালের তীব্র মন খারাপ হল । মেয়েটার উপর এক অজানা অভিমান এসে জড়ো হল । মেয়েটা কেন এল না ? সে কি বুঝতে পারছে না যে তার জন্য ফয়সাল কি পরিমাণ ব্যাকুল হয়ে আছে ? ফয়সাল বসেই রইলো বনের ভেতরে ।
এমন সময় কেউ তার কাঁধে হাত রাখলো । ফরসাল চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি এসে দাঁড়িয়েছে । আস্তে ধীরে মেয়েটি ফয়সালের সামনে বসলো । চোখে চোখ রেখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । ঠোঁটে একটু দুষ্টামীর হাসি । ফয়সালের কি হল সে নিজেও বলতে পারলো না । মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল । তারপর সেই ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো ।
ফয়সাল এই কাজটা কেন করলো সেটা সে বলতে পারবে না । তবে মনের কোনে একটা ভয় ছিল যে মেয়েটি হয়তো বাঁধা দিবে । কিন্তু মেয়েটি কোন বাঁধা দিল না বরং ফয়সালের চুমুতে আরও যেন যুক্ত করলো নিজেকে ।
বৃষ্টির জোর যেমন একটু একটু বাড়ছিলো সেইসাথে ফয়সালের মেয়েটিকে আরও তীব্রভাবে যেন চুমু খেতে শুরু করলো । তীব্র বৃষ্টিতে পুরো পাহাড় যেন ভাসিয়ে নিতে শুরু করলো । এদিকে দুইজন মানব মানবী বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে আদিম খেলাতে মেতে উঠলো ।
একটা সময় বৃষ্টি থামলো । থামলো তাদের আদিম উন্মাদনাও । দুজনই পাশাপাশি শুয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময় । ভেজা শরীরে দুজনেই মৃদু কাঁপছে কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে উঠতে চাইলো না । এদিকে মেঘ সরে গিয়ে শেষ সন্ধ্যার লালীমাতে আকাশটা রঙিন হয়ে উঠেছে । ফয়সাল একটু উঠে বসেছে । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । মেয়েটি পরনে এখনও কোন পোশাক নেই । উন্মুক্ত বুকের দিকে ফয়সাল অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে বিস্ময় আর মুগ্ধতা নিয়ে । এটার পেছনের আরেকটা কারণ রয়েছে । মেয়েটির বুকের ঠিক মাঝখান থেকে নাভীর একটু উপর পর্যন্ত একটা অদ্ভুত প্রাণীর ট্যাটু আঁকা । ফয়সাল প্রাণীটাকে চিনতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না । অনেকটা ড্রাগনের মত দেখতে তবে ড্রাগনের যেমন পাখা থাকে এই প্রাণীটার সেই রকম পাখা নেই । প্রাণীটা আকাশে ওড়ে না । মাটিতেই তার চলাচল । মুখটা ড্রাগনের মত লম্বা দেখতে । মোট ছয়টা পা দেখা যাচ্ছে । লেজটা বেশ লম্বা । পুরো শরীরটা লাল । পেটের কাছে একটু হলদে ধরনের !
ফয়সাল বলল,
-এটা কিসের ট্যাটু ? দারুণ তো ! কোথা থেকে এই ট্যাটু আঁকিয়েছো?
মেয়েটি এবার উঠে বসলো । হাত দিয়ে নিজের লজ্জাস্থানগুলো একটু আড়াল করলো সে । তারপর ফয়সালের দিকে তাকিয়ে রলল,
-এটা আমি কোথাও থেকে আঁকাই নি ।
-তাই নাকি ! তোমাদের পাড়াতে কি এটা আঁকা যায় ? এটার কি অর্থ?
মেয়েটা একটু হাসলো । তারপর বলল,
-এটার অর্থ হচ্ছে আমি নির্ধারিত হয়েছি ।
ফয়সাল ঠিক বুঝতে পারলো না । বলল,
-নির্ধারিত ? মানে ! কিসের জন্য ?
মেয়েটি বলল,
-তুমি বুঝবে না । এখন উঠে পড় । লজে ফিরে যাও । কাল ভোরেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিবে !
ফয়সাল একটু অবাক হয়ে বলল,
-কেন ? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না । দরকার হলে সারাজীবন এখানেই থাকবো !
মেয়েটি এবার ফয়সালের আরও একটু কাছে চলে এল । ওর ঠোঁটে একটু ছোট চুমু খেয়ে বলল,
-আমি এমনিতেও অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি । আমার এই কাজটা করার অনুমতি ছিল না । তারপরও আমি নিজেকে সামলাতে পারি নি । তুমি যেমন আমার দিকে আকর্ষিত হয়েছো আমিও হয়েছি তীব্রভাবে । সব নিয়ম ভেঙ্গে তোমার দিকে এগিয়ে এসেছি । এর জন্য আমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । তারপরেও আমি খুশি । আমার মনে কোন দুঃখ নেই । কিন্তু তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না ।
ফয়সাল যেন কিছুই বুঝতে পারছিলো না মেয়েটির কথায় ! বলল,
-তুমি কি বলছো এসব ! তুমি আমার সাথে চল ঢাকাতে । আমি তোমাকে বিয়ে করবো, আমরা একসাথে থাকবো ।
মেয়েটি বলল,
-আমাকে তুমি চেনো না । আমি কে, কি আমার পরিচয় এবং এমনকি আমার নাম পর্যন্ত জানো না । আমি এমনিতেও অনেক নিয়ম ভেঙ্গেছি । আর না । তুমি চলে যাও । কাল সন্ধ্যার ভেতরে আমার পাড়ার সবাই আমাদের এই ব্যাপারটা জেনে যাবে তখন ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে । কোনভাবেই আমি তোমাকে বাঁচাতে পারবো না । চলে যাও, দয়া করে চলে যাও।
ফয়সাল সত্যিই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে মেয়েটার ব্যাপারে সে কিছুই জানে না । এমন কি মেয়েটার নাম পর্যন্ত সে জানে না । কিন্তু তার মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে সে কোনদিন ভুলতে পারবে না ।
মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো । পোশাক পরে নিল ওর সামনেই । তারপর আবারও ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমার পরিণতি যেমনই হোক আমি তোমাকে কোনদিন ভুলবো না । তোমার চোখে প্রথমবারের মত সত্যিকারের মুগ্ধতা দেখেছি । যে চোখে কোন কলুষিত কামনা ছিল না, কেবলই ভালবাসা ছিল । এই ভালবাসা আমি উপেক্ষা করতে পারি নি । তাই ধরা দিয়েছি স্বইচ্ছেতেই । এইজন্য আমার হয়তো শাস্তি পেতে হবে তবে আমি সন্তুষ্ট মনে সেটা মাথা পেতে নিবো । তুমি চলে যাবে কাল সকালেই । মনে থাকবে তো ?
ফয়সাল বলল,
-থাকবে ।
-কথা দিচ্ছো ?
-হ্যা ।
-আর কোনদিন এদিকে এসো না । নয়তো সত্যিই অনর্থ হয়ে যাবে ।
মেয়েটি হাঁটতে শুরু করলো । মেয়েটির পিঠটা একেবারে উন্মুক্ত হয়ে আছে । ফয়সাল দেখতে পেল সেই পিঠেই ঠিক একইরকম একটা ট্যাটু আঁকা রয়েছে । পুরো পিঠ জুড়ে । ট্যাটুর চোখ জোড়া ঠিক ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ফয়সালের হঠাৎ মনে হল সেটা একেবারে জীবন্ত । ওকেই যেন দেখছে ।
মিংঝু একটু অবাকই হল যখন ফয়সাল ওকে বলল যে কাল ভোরেই ও চলে যেতে চায় । আরও একটা দিন থাকার কথা ছিল ওদের । তবে মেয়েটার কথা ওকে শুনতেই হবে । মেয়েটার মাঝে কি অদ্ভুত একটা টান আছে সেটা ফয়সাল জানে না । মেয়েটা যা বলছে সেটা উপেক্ষা করতে সে পারছে না ।
পরদিন ভোরে রওয়ানা দিয়ে সারাদিন হেটে সন্ধ্যা সময়ে সে ঢাকার বাসে উঠে বসলো । এই পুরো সময় ফয়সাল একটা সময়ের জন্যও মেয়েটাকে মাথা থেকে বের করতে পারে নি । সে খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে মেয়েটা তার মাথার উপর ঝেকে বসেছে । কোন দিন সে আর তার মাথা থেকে বের হবে না । তীব্র একটা ইচ্ছে জাগছে মেয়েটার কাছে ফেরৎ যেতে কিন্তু পারছে না । মেয়েটা বলেছিলো ওকে শাস্তি পেতে হবে ! কি শাস্তি পেতে হবে ?
আর মেয়েটা যদি না বলে তাহলে এই ব্যাপারটা অন্যেরা কিভাবে জানবে ?
যখন গাড়ি ছাড়লো তখন ফরসাল চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে মেয়েটার কথাই ভাবতে লাগলো । ওর চোখ দিয়ে পানি বের হতে শুরু করলো । ও কোন দিন এমন ভাবে কাঁদে নি অথচ সবার ওর কান্না আসছে । খুব কাছের মানুষটাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট হচ্ছে ফরসালের ।
তারপর হঠাৎ অনুভব করলো কেউ ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছে । নরম ছোঁয়াটা পাওয়ার সাথে সাথে চোখ খুলল সে । তীব্র এক বিস্ময় পেয়ে বসলো ওকে । একটা মেয়ে ওর পাশের সিটে এসে বসেছে । মেয়েটার পরনে উপজাতীয় পোশাক । তবে মুখে নিকাবের মত করে আটকানো । কেবল চোখ দুটো খোলা ।
তবে ফয়সালের চিনতে মোটেও কষ্ট হল না এই চোখ । এই গাঢ় সবুজ রংয়ের চোখ সে কোনদিন ভুলতে পারবে না ।
মেয়েটি নরম সুরে বলল,
-কাঁদছো ? আমাকে হারিয়ে ?
ফয়সাল অশ্রুসজল চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো । মেয়েটি বলল,
-দেখেছো ? আমিও তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারি নি । কি ভয়ংকর এক ফলাফল সামনে অপেক্ষা করছে আমার জন্য তবুও ছুটে চলে এলাম ।
ফয়সাল হঠাৎই মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল,
-সবকিছু সামলে দেব । কোন ভয় নেই তোমার !
পাশের লোক দুজন কেমন চোখে তাকাচ্ছিলো ওদের দিকে । ফয়সাল মেয়েটিকে ছেড়ে দিল । তারপর ওর হাত চেপে ধরে বলল,
-তোমার নামটাই তো আমি এখনও জানি না ।
মেয়েটি একটু হেসে বলল,
-আমার ব্যাপারে তুমি কিছুই জানো না । তবে জানতে পারবে আস্তে আস্তে । আপাতত নাম দিয়েই শুরু হোক । আমার নাম মৃ !

দুই
ফয়সাল মৃর হাত ধরে রাস্তায় বের হয়ে এসেছে । কোনদিকে যাবে, কিভাবে যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না । আজকে বাইকটার খুব বেশি দরকার ছিল । অন্য সব সময় সে বাইক নিয়ে বের হলেও আজকে ওরা এখানে এসেছিলো রিক্সাতে করে । বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয় এই রেস্টুরেন্টটা । তাই আর বাইক বের করতে চায় নি । তাছাড়া আজকে ইচ্ছে ছিল অনেকটা সময় দুজন একসাথে থাকবে । বাইকটা সাথে থাকা একটা ঝামেলা মনে হয়েছিলো । অথচ এখন বাইকটারই দরকার ছিল সব থেকে বেশি । ওরা কি আর জেনে রেখেছিলো যে হাতে উদ্ধত কুড়াল নিয়ে ওদেরকে কেউ মারতে আসবে !
একটু আগে কি ঘটনা ঘটে গেল সেটা ফয়সালর মাথার ভেতরে ঢুকছে না । সে নিশ্চিত, নিজ চোখে একটু আগে যা দেখেছে তার ভেতরে কোন ঝামেলা আছে । যা দেখেছে সেটা ঠিক দেখে নি । কারণ এমন কিছু হতে পারে না কখনও । সম্ভব না এটা ।
ফয়সাল কেবল অবাক হয়ে তাকিয়েছিল যখন দেখতে পেল যে কুঠারটা উড়ে আসছে মৃর দিকে । সে কেবল তাকিয়ে ছিল সেদিকে । কুঠারটা এতো দ্রুত আসছিলো যে ফয়সালের কিছু করার ছিল না । চোখ বড় বড় করে কেবল সে তাকিয়েই ছিল সেদিকে । বুকের ভেতরে একটা তীব্র ভয় ঝাঁকি দিতে শুরু করেছিলো ওকে । মৃ চিৎকার করে উঠবে আঘাতটা লাগার সাথে সাথে এমন একটা ব্যাপারই সে অপেক্ষা করছিলো । এটা ছাড়া তার আর কিছু করারও ছিল না ।
কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে কুঠারটা একেবারে মৃর শরীরের সামনে এসে আটকে গেল । ফয়সালের মনে হল যেন কুঠারটাকে কেউ চেপে ধরেছে । একেবারে শূন্যে ভেসে রইলো সেটা কিছু সময় । এবং ব্যাপারটা যে কেবল সেই দেখে তা নয় । মৃ ফিরে তাকিয়েছে । রেস্টুরেন্টের কয়েকজন সেটা দেখতে পেয়েছে । এমন কি যে মানুষটা কুঠারটা ছুঁড়ে মেরেছিলো সে নিজেও খানিকটা অবাক চোখেই তাকিয়ে ছিল । তাদের চোখ তখন মৃর দিকে । তারা ভাবছে মৃ সম্ভবত কাজটা করেছে । কিন্তু ফয়সাল মৃর দিকে তাকিয়ে দেখলো যে সে নিজেও অবাক চোখে সামনে ভেসে থাকা কুঠারের দিকে তাকিয়ে আছে । এখানে যে তার কোন হাত নেই সেটা ফয়সালের বুঝতে কষ্ট হল না ।
সেই তিনজন লোকের বিস্ময় কাটতে সময় লাগলো না । দ্বিতীয় জন এবং তৃতীয় জনও একইভাবে কোমর থেকে কুঠার বের করে ফয়সালদের দিকে ছুঁড়ে দিল । সাথে সাথেই একটা মেয়ে চিৎকার করে উঠলো ।
ফয়সাল দেখতে পেল যে একইভাবে কুঠারগুলো সামনে এসে আটকে গেল । তখনই ফয়সালের চোখ গেল সেই কালো পোশাক পরা যুবকের দিকে । যুবকটা দাঁড়িয়ে পড়েছে । একটা হাত এদিকে বাড়িয়ে দেওয়া । ফয়সালের মনে হল যেন কাজটা সে-ই করছে । যুবক এগিয়ে এসে পথের মাঝে দাঁড়ালো । লোক তিনজন খানিকটা ভীত চোখে এবার সামনে দাঁড়ানো যুবককে দেখছে । একজন বলে উঠলো,
-তোমার সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমরা কেবল মেয়েটাকে চাই ।
যুবক এবার বলে উঠলো,
-বিরোধ নেই কিন্তু তোমাদের জানা উচিৎ ছিল যে আমি এখানেই থাকি ।
-এর ফল কিন্তু ভাল হবে না ।
-না হোক ।
-তুমি জানো এর পেছনে কে আসবে ? আমরা সবাই বিপদে পড়বো !
-সেটা দেখা যাবে ।
ফয়সাল কিছুই বুঝতে পারছিলো না । কি হচ্ছে এসব। পুরো রেস্টুরেন্টের সবাই যেন একেবারেই কথা বলতে ভুলে গেছে । ফয়সাল তখন দেখলো সামনের দাঁড়ানো তিনজনের একজন নিজের পকেট থেকে একটা থলির মত কিছু একটা বের করলো । তারপর সেটাতে কিছু একটা পড়ে ফুঁ দিয়েই সামনে ছুঁড়ে মারলো । সামনের দাঁড়ানো মানুষটা প্রতিক্রিয়া দেখালো সাথে সাথেই । আগের মত করেই মাঝপথে সে সেটা ধরে ফেলল ঠিকই তবে এইবার ঝামেলা বাঁধলো অন্যখানে । থলেটা কিছু সময় অপেক্ষা করেই বিকট শব্দে ফেটে উঠলো । এতোই জোরে যে ফায়সাল আর মৃ খানিকটা ছিটকে গেল । রেস্টুেরেন্টের মাঝে হট্টগোল বেঁধে গেল । চারিদিকে চিৎকার চেঁচামিচি বেঁধে গেছে । ফয়সাল দেখলো ওর মাথার ভেতরে শনশন করছে । একটু মাথাটা স্থির হতেই ও দেখলো পেল যে ওরা যে কাঁচে ঘেরা দেওয়ালের পাশে বসেছিল, সেটা ঝনঝন করে ভেঙ্গে পড়লো ।
এদিকে একের পর এক বিকট শব্দ হয়েই যাচ্ছে । পুরো রেস্টুরেন্ট যেন যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেছে । ফয়সাল সুযোগ বুঝে মৃর হাত ধরে সেই কাঁচ ডিঙ্গিয়ে বের হয়ে এল । বের হয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো কোথায় যাবে ।
তখনই দেখলো সেই কালো শার্ট পরা যুবক বের হয়ে এল । ফয়সালের দিকে তাকিয়ে খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বলল,
-এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো শুনি ? উবারের অপেক্ষা ?
ফয়সাল কি বলবে খুঁজে পেল না । যুবক বলল,
-ঐদিকে চল ।
বলেই যুবক ডান দিকে দৌড় দিল ।
-ওরা কারা ?
-তোমার স্ত্রী খুব ভাল করে জানে ওরা কারা । এভাবে প্রোটেকশন ছাড়া আপনারা কিভাবে বের হলেন ?
-প্রোটেকশন ?
ফয়সাল কিছুই বুঝতে পারছে না । তার মাথায় কিছুই যেন ঢুকছে না । হঠাৎ লক্ষ্য করলো ওদের পেছনে লাগা সেই মানুষগুলো আবার বের হয়ে এসেছে । সামনের যুবক এবার রাস্তার পাশেই দাঁড় করানো একটা কালো প্রিমো গাড়ির সামনে দাঁড়ালো । দরজা খুজে ফেলল সাথে সাথে ।
ফয়সাল বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে বসলো । মৃও ভীত চোখে তাকিয়ে আছে সামনে । কিছু বোঝার আগেই আবার গাড়িটা কেঁপে উঠলো । পেছন থেকে কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ পাওয়া গেল । পেছন থেকে আবারও কিছু ছুঁড়ে মেরেছে ওরা । ফয়সাল গাড়ির টায়ার পোড়ার আওয়াজ পেল । তারপরই গাড়িটা ঝাঁকি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল ।
যখন গাড়িটা খানিকটা নিরাপদ দূরত্বে এসে দাঁড়িয়েছে তখন যুবক ছেলেটি মৃর দিকে তাকিয়ে বলল,
-এই রকমভাবে ডিফেন্সলেস কিভাবে হয়ে গেলে তুমি ?
মৃ খানিকটা কাচুমচু হয়ে বলল,
-আমি আসলে বুঝতে পারি নি ।
-তুনংদের না হয় তুমি পেছনে ফেলে আসতে পেরেছো। কিন্তু এরপর যে আসবে তাকে কিভাবে সামাল দিবে?
ফয়সাল দেখলো মৃর চোখে মুখে একটা ভয় ফুটে উঠেছে । ফয়সাল কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । ফয়সাল বলল,
-আমাকে বলবে কেউ এখানে কি নিয়ে কথা হচ্ছে ?
যুবক মৃর দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোমার স্বামীকে তুমি কিছুই বল নি ?
মৃ মাথা ঝাঁকালো । বলল,
-ওকে আমি চিন্তায় ফেলতে চাই নি ।
ফয়সাল এবার বলল,
-কি হয়েছে বলবে প্লিজ ?
যুবক বলল,
-তুমি যে ঝিঞ্জুংয়ের হবু বউকে নিয়ে পালিয়েছো, সে তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে ?
ফয়সাল কিছুই বুঝলো না । বলল,
-ঝিঞ্জুংটা কে ? তার বউ মানে ?
ফয়সাল আসলেই কিছু বুঝতে পারছিলো না । তবে এটা বুঝতে পারছে যে সামনে একটা বিপদ এগিয়ে আসছে ।

তিন
মৃর জীবনটা ওর জন্ম থেকেই নির্ধারিত ছিল । ওদের চিড়ং গোত্রটা পাহাড়ে সবার থেকে আলাদা এবং উন্নত । ওদের পাড়ার পুরোটা যেন একটা সম্পদদের খনি । যা বাইরের মানুষ জানে না । তবে ওদের পাশের তুনং গোত্রের মানুষ সেটা জানে এবং এই কারণেই সবসময় তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে । কারণ তারা বিশ্বাস করে যে তাদের গোত্রের উপর এই সৌভাগ্যের কারণটা হচ্ছে ঝিঞ্জুং দেবতার আশির্বাদ । এই ঝিঞ্জুং দেবতাই তাদেরকে আগলে রেখেছে । তাদের পুরো পাড়াটা তার দয়াতে বেঁচে আছে ।
তবে এইসবের একটা মূল্য আছে । মূল্যটা হচ্ছে ঝিঞ্জুংকে প্রতি ২০/২২ বছর পরপর একটা যুবতী মেয়ে উপহার দিতে হয় ! উপহার দিতে হয় বলতে তার নামে উৎসর্গ করতে হয় । এটাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে । ওদের গোত্রের উপর আশির্বাদ বর্ষণ করতে থাকে । এই মেয়েটি কে হবে সেটাও নির্ধারণ করা থাকে ! মেয়েটি জন্ম থেকেই তার শরীরে সেই চিহ্ন নিয়েই জন্মে । বুকের কাছে আর পিঠে অদ্ভুত প্রাণীর চিহ্ন নিয়ে জন্মে । সে-ই দেবতার জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে ।
কথাটা শুনেই ফয়সাল চমকে গেল । সেদিন সেই বিকেলবেলা মৃর শরীরে প্রথম সে এই চিহ্ন দেখেছিলো। তারপর বিয়ের পর যতবার সে মৃকে আদর করেছে ততবারই সে ট্যাটুটা দেখতে পেয়েছে । সেদিন বিকেলবেলা মৃ বলেছিলো সে নির্ধারিত ছিল । কথাটা সেদিন সে বুঝতে পারে নি । কিন্তু আজকে বুঝতে পারছে ।
রাফায়েল বলতে শুরু করলো,
-তুনংদের বিশ্বাস এই দেবতা একসময় তাদের গোত্রের উপর আশির্বাদপুষ্ট ছিল । কিন্তু কোন এক কারণে তিনি সেই আশিবার্দের হাত সরিয়ে মৃদের চিড়ং গোত্রের উপরে নিয়ে গেছেন । এখন কোনভাবে যদি মৃকে মেরে ফেলা যায় তাহলে দেবতা তার ভোগ পাবেন না । তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি আবারও তুনংদের গোত্রের দিকে চলে যাবেন । যদিও এসবের কোন ভিত্তি নেই । তুনংদের গোত্রটা বেশ বড় । ওরা শক্তিতেও মৃদের গোত্র থেকে বেশি কিন্তু তারপরেও মৃদের কোন ক্ষতি ওরা করতে পারে না । এমন কি ওদের গোত্রের ভেতরে তুংনরা ঢুকতে পর্যন্ত পারে না । দেবতা ঝিঞ্জুং মৃদের গোত্রটাকে নিরাপত্তা দিয়ে রাখে । কথিত আছে যে চিড়ংদের এলাকার চারপাশে চারটা বড় কুকুরের মত প্রাণী পাহারা দেয় । বলতে গেলে ঐ প্রাণীগুলো যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে তার কাছেই চারটা কষ্টিপাথরের মুর্তি স্থাপন করা । এই মুর্তিটাই চিড়ংদের এলাকা নির্দেশ করে । এই এলাকার ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারে না ।
ফয়সাল চুপ করে মৃর কথা শুনছিলো। সে বলল,
-আমি তো কোন ঝামেলা ছাড়াই ঢুকে পড়েছিলাম !
মৃর কিছু বলার আগেই রাফায়েল বলে উঠলো,
-কারণ এখানে মৃ তোমাকে ঢুকতে দিয়েছিলো । তুমি যেদিন হাঁটতে হাঁটতে বনের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলে মৃ তোমার আশেপাশেই ছিল । তোমার উপর চোখ পড়ে ও সম্ভবত খানিকটা চমকে উঠেছিলো ।
-কেন ?
-তুমি ওকে দেখে কিভাবে চমকে উঠেছিলে ?
ফয়সাল এই যুবককে কিছুতেই বুঝতে পারছে না । চিনতেও পারছে না । অথচ এই ছেলে কত সাবলিলভাবে ওর সাথে কথা বলছে । তুমি তুমি করছে ! মৃর সাথে ছেলেটার আগে থেকেই পরিচয় আছে সেটা সে বুঝতে পারছে ।
রাফায়েল বলল,
-মৃর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ওদের পাড়াতেই । আমি নিজের একটা কাজে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম ওখানে । ওদের পুরোহিত মশাইয়ের সাথে আমার দরকার ছিল । সেই সময়েই আমি মৃকে দেখতে পাই । ওর শক্তি সম্পর্কে ধারণা পাই । তারপর আবারও একদিন ওদের গোত্রের ওখানে আমাকে যেতে হয় পুরোহিত মশাইয়ের আমন্ত্রণে । সে-ই আমাকে ডেকেছিলো তার একটা কাজে । সেটা আমি করে দিয়েছিলাম । মৃর সম্পর্কে আমি সেবার আরও ভাল করে জানতে পারি । আরও অনেক কিছুই জানতে পারি ।
তারপর ফয়সালের দিকে তাকিয়ে বলল,
-মৃ কোন সাধারণ মেয়ে নয় । ওখান থেকে চলে আসা পর্যন্ত ওকে সবাই পাগলের মত খুঁজছে । এতোদিন খুঁজে পায় নি কারণ এতোদিন ও নিজের অবস্থান লুকিয়ে রেখেছিলো । আজকে সেটা করে নি । আজকে ওর অবস্থান সবাই জেনে গেছে । এইজন্যই তুনংরা ওখানে পৌঁছে গিয়েছিলো । ওর নিজের গোত্রের মানুষেরাও আসবে নিশ্চিত !
ফয়সাল চোখের দিকে তাকিয়ে রাফায়েল বুঝতে পারলো যে সে কিছুই বুঝতে পারে নি । রাফায়েল আবার বলল,
-এইটা আসলে তোমাকে কিভাবে বুঝাবো আমি বুঝতে পারছি না ।
রাফায়েল একটু চিন্তা করলো । তারপর বলল,
-তোমার মোবাইল নাম্বারের কথা চিন্তা কর । তোমার মোবাইল যদি খোলা থাকে তাহলে সেখান থেকে একটা সিগনাল সবসময় বের হয় । এখন যার কাছে প্রযুক্তি আছে সে চাইলেই তোমার মোবাইল দিয়ে তোমাকে খুঁজে বের করতে পারবে । মৃর ব্যাপারটাও ঠিক একইরকম । ওর শরীর থেকেও এক ধরনের এনার্জি, এক ধরনের সিগনাল বের হয় যা অনেকের কাছে পৌঁছায় । কেবল ও-ই নয়, অস্বাভাবিক সবকিছু থেকেই একধরনের এনার্জি বের হয় যার সিগনেচার রিচ করে তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব । যারা হ্যাকার তারা কি করে? নিজেদের অবস্থান লুকিয়ে রাখে । নিজেদের আইপি এড্রেস হাইড করে । এইখানেও এমনভাবে নিজের অবস্থান লুকানো সম্ভব । মৃ এতোদিন সেটাই করে আসছিলো । কিন্তু আজকে সে সেটা করে নি ।
মৃ মাথা নিচু করে বলল,
-ভেবেছিলাম আর হয়তো দরকার নেই ।
-খুবই ভুল কাজ করেছো । দেখেছো কি পরিমাণ বিপদ ডেকে এনেছো ? এখন দোয়া কর যাতে আর কেউ তোমাদেরকে না খুঁজে পায় ! আমি আবার তোমাকে লুকানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি । দয়া করে এবার সাবধানে থাকবে ! আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে !
পুরান ঢাকার গলির ভেতর থেকে ওরা যখন বের হল তখন রাত হয়ে গেছে বেশ খানিকটা । রাফায়েল গাড়ি নিয়ে সোজা এখানেই চলে এসেছিলো ।ওদের বাসার ভেতরে ঢুকিয়ে এতো সময় এই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । ফায়সাল নিশ্চুপ হয়ে ছিল । মৃ ফয়সালের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
-তোমাকে অনেক বিপদে ফেলে দিলাম । তাই না ?
ফয়সাল হাসলো । তারপর বলল,
-তোমাকে কথা দিয়েছিলাম মনে নেই ? তোমার সব বিপদ আমার বিপদ । দুজন মিলে সামাল দিবো । আচ্ছা, এই রাফায়েলটা কে ?
মৃ বলল,
-রাফায়েল আসলে যে কে সেটা কেউ জানে না । তবে রাফায়েলকে সবাই খুব ভাল করে চেনে । আমাদের গোত্রের লোকজন একবার রাফায়েলের সাহায্য নিয়েছিলো । কি যেন একটা ঝামেলা হয়েছিলো । রাফায়েল মানুষের উপকার করে । তবে আমাদের গোত্র সহ অন্যান্য সব গোত্রের মানুষই ওকে একটু ভয় পায় । ওর নাম কি জানো ?
-কি ?
-অন্ধকারের রাজপুত্র ।
গাড়িটা ফয়সালের বাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে । ওদের দুজনের কেউই লক্ষ্য করলো না যে ওদের গাড়ির পেছনে একটা বাইক ওদেরকে অনুসরণ করছে । বাইকটা ঠিক ওদের বাড়ি পর্যন্ত এসে থেমেছে ।

চার
দুটো দিন এবার বেশ শান্তভাবেই কেটে গেল । শুরুতে যে ভয়টা ওরা পেয়েছিলো সেটা আস্তে আস্তে কেটে গেল । মৃর যখন মনে হল যে ওর গোত্রের লোকজন আসলেই ওর খোঁজ পাবে না তখন ফয়সালকে সে বাইরে যেতে দিল । ফয়সাল যদিও নিজের ঘরে বসে থাকতে চাইছিলো না তবে মৃ ওকে ঠিকই আটকে রেখেছিলো । যখন মৃর মনে হল যে আর কোন ভয় নেই, ওর শরীরকে ওর গোত্রের মানুষজন আর খুঁজে পাবে না ঠিক সেই সময়ই ওদের উপরে হামলা হল । হামলার ভেতরে কোন জাদু কিংবা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না । এই জন্যই সম্ভবত কেউ সেটা টের পেল না ।
ঘটনার দিন খুব স্বাভাবিকভাবে দরজাতে কলিংবের বেজে উঠলো । ফয়সাল টিভি দেখছিলো । খুব বেশি খেয়াল ছিল না । দরজা খুলতেই দেখতে পেল তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে । পরনের পোশাক দেখে ফয়সালের মনে হল ওরা সম্ভবত কার্পেন্টার । ওদের নীচ তলায় কাজ চলছিলো দুদিন ধরে । কিন্তু তখনই ফয়সালের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় কেঁপে উঠলো । কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । দুইজন ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে । একজন হাতে পিস্তুল বের করে ফয়সালের মাথায় চেপে ধরেছে । তিনজনই ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল ।
মাঝের জন ফয়সালের সামনে এসে বলল,
-মৃ কোথায় ?
ফয়সালকে কিছু বলতে হল না । মৃ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এসেছে । বিস্মিত চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে । ফয়সাল যখনই দেখলো মৃ সামনে চলে এসেছে সে নিজেকে মুক্ত করতে চাইলো । ফলে একটু ধস্তাধস্তি শুরু হল । তিনজনের বিপরীতে একজন বলে ফয়সালের কোনভাবেই ওদের সাথে পেরে ওঠার কথা না । পিস্তল ধরা বাটটা দিয়ে ফয়সালের মাথায় একজন জোরে আঘাত করলো । মৃ চিৎকার করে উঠলো । বলল,
-ওকে মেরো না ।
-মারবো না ? একে তো মেরেই ফেলবো ! এর জন্য সব ঝামেলা শুরু হয়েছ ।
মৃ কেবল তীব্র চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । স্পষ্ট বুঝতে পারছে ওরা ধরা পড়েছে । ও আজকে ঠিকভাবেই নিজের অবস্থান লুকিয়েছিলো তবে সম্ভবত এরা আগে থেকেই ওর পিছু নিয়েছিলো । আধ্যাত্মিকভাবে ওর খোঁজ করে নি তাই নিজের অবস্থান লুকিয়েও লাভ হয় নি । মৃ জানে ওকে আজকে ঠিকই ধরে নিয়ে যাবে এবং যাওয়ার সময় ফয়সালকে ওরা মেরেই রেখে যাবে । মৃ আর কিছু ভাবতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে এখন যদি সে ঐ গাছপালার ভেতরে থাকতো তাহলে এমনটা হতে দিতো না । গাছপালা মাটির ভেতরে নিজের ভেতরে একটা আলাদা শক্তি অনুভব করে । কিন্তু এই ইট কাঠের শহরে মাটি আর গাছ পাবে কোথায় ?
আচ্ছা বাতাস কি কাজ করবে !
মৃ চোখ বন্ধ করলো । তারপর জোরে করে একটা নিঃশ্বাস নিলো । যেন বাতাসের সাথে ও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে !
তিনজনের একজন মৃকে ধরতে এগিয়ে গেল । ফয়সাল ভেবেছিলো মৃ এখনই দৌড়ে পালাবে ঘরের ভেতরে । দরজা বন্ধ করে দিবে । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলো মৃ মোটেই পালালো না । লোকটা যখনই মৃর হাতটা চেপে ধরলো তখনই অবাক করা একটা ঘটনা ঘটলো । ফয়সাল দেখলো মৃ কেবল লোকটার পেটে নিজের হাত দিয়ে স্পর্শ করলো কেবল । লোকটা যেন তীব্র একটা ধাক্কার মত খেল । অন্তত ১০ ফুট দূরে গিয়ে পড়লো । ফয়সাল সেদিকে কেবল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো । নিজের চোখকে যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । ঠিক তেমনিভাবে আগন্তুক দুইজনের চোখেও তীব্র এক বিস্ময় । ওরা যেন এমনটা মোটেও আশা করে নি ।
ফয়সাল মৃর দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে গেল । মৃর চোখের রং সবুজ ছিল । তবে যে চোখে সে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ফয়সালের কাছে অচেনা । চোখের রংটা আরও বেশি গাঢ় সবুজ হয়ে গেছে ।
মাঝের জন মৃর দিকে তাকিয়ে অপরিচিত ভাষায় কিছু একটা বলে উঠলো । মৃ সেটা শুনে একটু যেন হাসলো । তাচ্ছিল্যের হাসি । তারপর মৃও কিছু বলল । ফয়সাল সেটা বুঝলো না । ফয়সালের পাশের লোকটা যেন এই কথা শুনে একটু রেগে গেল । সে পিস্তলটা ফয়সালের দিকে থেকে সরিয়ে মৃর দিকে তাক করলো । তারপর চিৎকার করে এগিয়ে যেতে লাগলো । ফয়সালের পুরো শরীর জুড়ে এবার সত্যিই একটা ভয় জেঁকে বসলো । তবে ফয়সালকে আবারও অবাক করে দিয়ে মৃ খুবই দ্রুত গতিতে সরে দাঁড়ালো । তারপর ঠিক আগের মত করেই এই লোকটার কোমর বরাবর নিজের ডান হাতটা কেবল ছোঁয়ালো । ফয়সাল এতো দুর থেকেও মট করে হাড় ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পেল ঠিকই । সেই সাথে লোকটা আবারও পাশের দেওয়ালের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেলে বেশ জোরে করেই ।
মৃ এবার একটু একটু এগিয়ে এল । ফয়সালের সামনে এসে থামলো । ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
-তুমি ঠিক আছো ?
ফয়সাল তাকিয়ে দেখলো ওর চোখের রং আবারও আগের মত হালকা সবুজ হয়ে গেছে । ফয়সাল মাথা ঝাঁকালো । মৃ এবার তৃতীয় লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । তৃতীয় লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-আমার পেছনে আসা বন্ধ করে দাও । ভাল হবে না এর ফল । রংলুকে বলে দিবে যে আমার কিংবা আমার স্বামীর দিকে তোমরা আসেব না । আসলে এর ফল ভাল হবে না মোটেই । আগেই বলে দিলাম ।
-তুমি তোমার গোত্রের কথা ভাববে না ?
-না । ঝিঞ্জুংকে সন্তুষ্ট করার কোন কারণ আমি দেখিনা ।
-সে তোমাকে নির্বাচন করেছে ।
-আমার জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার আমি কাউকে দেই নি । কাউকে না ।
লোকটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মৃ আঙুল দিয়ে চুপ করার নির্দেশ দিল তাকে । তারপর বলল,
-এখনই বিদায় হবে এখান থেকে । এরপর যদি আবার আমার কাছে আসো সেদিন কিন্তু ফল ভাল হবে না !
ফয়সাল দেখলো লোকটার চোখে মুখে একটা ভয় কাজ করছে । সে মৃকে ভয় পাচ্ছে । একজনের কোমরের হাড় ভাঙ্গার আওয়াজ শুনেছিলো সে । অন্য লোকটা কোনমতে উঠে দাঁড়িয়েছে । দুজন মিলে সেই কোমরভাঙ্গা লোকটাকে তুলে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল । লোকগুলো বের হতেই ফয়সাল মৃর দিকে ভাল করে তাকালো । মৃকে সে ঠিকমত চিনতে পারছে না । মৃ এতো শান্ত স্বভাবের মেয়ে অথচ একটু আগে কি ভয়ানকভাবেই না আক্রমণ করলো লোকগুলোকে !
মৃকে জড়িয়ে ধরলো সে । কোন কথা বলল না । এখন কোন কিছু বলার সময় না । মৃকে সে জড়িয়ে ধরে থাকলো । মেয়েটার হার্টবিট আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসছে ।
কিছুদিন ওদের জীবন আবারও ভয়ে ভয়ে কাটলো বটে তবে সেটাও স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করলো। একটা সময় সকল ভয় কেটে গেল একেবারে । কদিন আগেও ওদের কাছে মনে হত যে এই বুঝি আবারও ওদের উপর হামলা হবে তবে সেই ভয়টা কেটে গেল । মৃও স্বাভাবিক হয়ে উঠলো । ওদের প্রতিবেশী সবার সাথে আস্তে ধীরে মেলামেশা করতে শুরু করে দিলো । ফয়সাল একটু স্বস্তিবোধ করলো । সেও স্বাভাবিকভাবে অফিস করতে শুরু করলো ।
মাস খানেক পরে ফয়সাল অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলো । গত কালকে ওর বাইকটা হঠাৎ বিগড়ে গিয়েছিলো । সেটা সার্ভিসিংয়ে দেওয়া হয়েছে । দুদিন সময় লাগবে । এই দুইদিন ওকে রিক্সা কিংবা সিএনজিতে করে যাওয়া আসা করতে হবে !
প্রথমদিনই সে বাসা পর্যন্ত রিক্সা পেল না । ঢাকা শহরে নাকি কি একটা কারণে রিক্সাওয়ালারা স্ট্রাইক করেছে । সেটা নিয়ে খুব অল্প সংখ্যক রিক্সা ঘুরে বেড়াচ্ছে । ওর বাসা পর্যন্ত কোন রিক্সা আসবে না । শেষে বাসার আগের মোড় পর্যন্ত রিক্সা ঠিক করা হল । রিক্সা ছেড়ে দিয়ে সে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলো । সন্ধ্যা হলেও ওদের এলাকাটা সব সময়ই জমজমাট থাকে। তবে হাউজিংয়ের গলিগুলো একটু নির্জন । সেটা মিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তা নেই । কারণ এই হাউজিংগুলো খুব নিরাপদ । হাঁটাচলা করতে কোন সমস্যা হয় না । তাই ফয়সাল নিশ্চিন্তেই হাটছিলো । এমন সময় সে নিজের সামনে একটা বড় সাইজের কুকুর দেখতে পেল ।
কুকুর হাউজিংয়ের রাস্তায় থাকেই । এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই । কিন্তু এই কুকুরটা দেখতে যেন একটু অস্বাভাবিক । ফয়সাল একটু পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো বটে তবে কুকুরটার হাবভাব তার কাছে ভাল মনে হল না । মনে হল যে সেটা ওর উপর খুব বেশি বিরক্ত । একটা চাপা গর্জন করেই চলেছে । ফয়সাল কি করবে বুঝতে পারলো না । কুকুরটা তাকে কামড়ে দিতে পারে । সেই সম্ভাবনা আছে । এই সময়টা কুকুরের মাথা নাকি খারাপ হয়ে যায় । ফয়সাল কিছু সময় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো । একভাবে তাকিয়ে রইলো কুকুরের চোখের দিকে । অন্ধকারের ভেতরেও কুকুরটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে জ্বলন্ত চোখে । ফয়সালের এবার সত্যিই মনে হল যে কুকুরটা কোন কারণে তার উপরে খুব বেশি রেগে আছে । কুকুরটার চোখে রাগটা সে স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে । তারপরই ঘটলো ঘটনাটা । ফয়সাল দেখতে পেল কুকুরটা ওর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো । ফয়সাল শুনেছিলো যে কুকুরদের চোখের দিকে তাকিয়ে সাহস করে দাঁড়িয়ে থাকলে কুকুর আর সামনে আসে না । কিন্তু এই কুকুরটা যে ওর দিকে এভাবে এগিয়ে আসবে সেটা ও বুঝতেই পারে নি । একদমই প্রস্তুত ছিল না সে । কুকুরটা ওকে দেখেই একটা বড় করে লাফ দিল । ফয়সাল এবার সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গেল । মুখ দিয়ে একটা চিৎকার বের হয়ে এল আপনাআপনি । হাতটা সামনে এনে চোখটা বন্ধ করে ফেলল আপনাআপনিই ।
কিন্তু অবাক হয়ে দেখলো কুকুরটা ওকে কামড় দিলো না । ফয়সাল কিছু সময় চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করলো বটে কিন্তু কোন কামড় অনুভব করলো না শরীরে । চোখ খুলে তাকালো । এবং সাথে সাথেই লক্ষ্য করলো যে ও পুরো গলির ভেতরে একেবারে একা দাঁড়িয়ে আছে । আশেপাশে কোন কুকুর নেই । ফয়সাল এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো । কিন্তু কুকুরটাকে কোথাও দেখতে পেল না । ও গলির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ছিল । কুকুটা কোনভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যে গলি পার হয়ে যেতে পারবে না । ফয়সাল কিছু সময় এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো বোকার মত । তারপর মনে মনে বলল যে কুকুরটা সম্ভবত কোন বাড়িতে ঢুকে পড়েছে । যদিও ব্যাখ্যাটা ওর নিজের কাছেই পছন্দ হল না কিন্তু এখন এর থেকে ভাল কিছু আর তার মাথায় এল না । ততক্ষণে সে খানিকটা শান্ত হয়ে এসেছে । আবারও নিজের বাসার দিকে হাঁটা দিল ও । ফয়সাল তখনও বুঝতে পারে নি তার ভেতরে কি এক পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে ।

পাঁচ
মৃ কোনদিন ভাবে নি ওর জীবনটা এমন হবে । ফয়সালের মত এমন একটা মানুষ আসবে ওর জীবনে। জন্মের শুরু থেকেই মৃ হয়ে গিয়েছিলো আলাদা । অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম । যখন ছোট ছিল, কোনদিন বুঝতে পারে নি এমনটা কেন হচ্ছে ওর সাথে । সবাই ওকে অন্য চোখে দেখতো । ওদের গোত্রের অন্য ছেলেমেয়েরা ওর সাথে স্বাভাবিকভাবে মিশতো না কোনদিন । ওকে ভয় পেত ।
ওর বয়স যখন দশ বছর তখনই ওকে সত্যটা জানানো হয় । ওকে বিশ্বাস করানো হয় যে ওর জীবনটা কতখানি জরূরী সবার জন্য । মৃ নিজেকে সেই মোতাবেকই তৈরি করে নিয়েছিলো তবে মাঝে মাঝেই অনুভব করতো মানুষ হিসাবে ও কতখানি একা । মৃর নিজের চেহারা সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা ছিল। ও জানতো পুরুষেরা ওর দিকে কামনার চোখে তাকায় । ওকে পেতে চায় কিন্তু কেউ ওর কাছে আসার সাহস পায় না । এমন কি ওর বাবার বয়সী মানুষগুলোর চোখেই ও কি এক ঘৃণ্য কামনা দেখতে পেত । যদি সে বিশেষ কেউ না হত তাহলে আজকে ওরা ভয়ংকর কিছু করে ফেলতো ।
ফয়সালকে প্রথমদিন দেখেই ওর মনে কি হয়েছিলো সেটা মৃ নিজেও বুঝতে পারে নি । একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো । আজও ফয়সালকে দেখলে মনের ভেতরে সে অজানা অনুভূতিরা জেগে ওঠে । প্রথম যেদিন ফয়সাল ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল সেদিন ওর কাছে মনে হয়েছিলো ওর এই সৌন্দর্য্য স্বার্থক । কি এক মুগ্ধ দৃষ্টি ও দেখতে পেয়েছিলো ফয়সালের চোখে । অন্য সব মানুষের দৃষ্টি দেখলেই ভেতর থেকে কেউ বলে উঠতো যে এই লোকটা ভাল না অথচ ফয়সালের দৃষ্টিতে ও এমন কিছু অনুভব করে নি ।
তারপর প্রথম চুম্বন, প্রথম শিহরণ, সবকিছু এমনভাবে শুরু হয়েছিলো যে মৃর মনে আর অন্য কিছু ছিল না । সবকিছু ভুলে গিয়েছিলো । এমন কি এখনও মৃ মোটেই নিজের সিদ্ধন্তের জন্য অনুতপ্ত নয় । বরং বারবার মনে হয় যে ও সঠিক কাজটা করেছে ।
মৃ চারিপাশের সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে এই চিন্তাই করছে । ফয়সাল এখন অফিসে । ফয়সালকে ছাড়া ও খুব একটা বাইরে বের হয় না । কেবল হাউজিংয়ের সুপারশপে যায় মাঝে মাঝে । এতোদিনে ও বাইরের জীবনের সাথে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছে । কেনাকাটা থেকে শুরু করে এটিএম থেকে টাকা তোলাসহ সব ধরনের কাজই ও এখন একা একাই করতে পারে । মাঝে মাঝে হাউজিংয়ের কাছের ক্যাফে থেকে কফিও খেয়ে আসে । ফয়সাল ওকে বলেছে আস্তে আস্তে সব স্থানে একা একা যাওয়া শিখতে হবে । তবে বাইরে বের হলে মৃ ওর মুখ একটা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে নেয় । নয়তো মানুষজন ওর দিকে কি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে । আজকে ঘরের জন্য কেনাকাটা শেষ করে ও ক্যাফেতে বসেছে কফি খাওয়ার জন্য । আর এইসব চিন্তাভাবনা করছিলো । দুপুরের দিক বলে ক্যাফেটাতে এখন মানুষজন নেই বললেই চলে । তখনই মৃ রাফায়েলকে দেখতে পেল । ওর বুঝতে কষ্ট হল না যে এই মানুষটা ওর সাথেই দেখা করতে এসেছে ।
মৃ একটু নড়েচড়ে বসলো । রাফায়েল ওর সামনে বসতে বসতে বলল,
-কি কি কিনলে ?
মৃ সে প্রশ্নের জবাব দিলো না । বলল,
-আপনি এখানে ?
-আসতে হল ।
-কেন ? কোন সমস্যা ?
-হ্যা ।
মৃর বুকের ভেতরে কেমন একটা কু ডেকে উঠলো । ওদের গোত্রের মানুষজন ওদের বাসায় হামলা করেছিলো প্রায় দুই মাস আগে । এর ভেতরে ওদেরকে আর কোন ঝামেলা পোহাতে হয় নি । রাফায়েল বলল,
-তুমি কদিন থেকে ফয়সালের ভেতরে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেয়েছো ?
মৃ একটু ভাবার চেষ্টা করলো । তারপর বলল,
-কই নাতো । সে আগের মতই ।
-তুমি কি জানো তোমাদের এলাকায় কদিন থেকে অদ্ভুতভাবে কুকুর, বেড়াল আর কাক মরা শুরু করেছে !
কথাটা শুনেই মৃর বুকের ভেতরে ধ্বক করে উঠলো ।
মৃ যখন ছোট ছিল তখন প্রায়ই দেখা যেত ওদের পাড়ার আশেপাশে বিভিন্ন পাখি কিংবা ছোট জন্তু জানোয়ার মরে পড়ে আছে । ঠিক মরে পড়ে নেই, কেউ যেন তাদেরকে মেরে ফেলেছে নৃশংসভাবে । ঠিক ঘাড়ের কাছ থেকে পুরো মাথাটা কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে যেন । মায়ের কাছ থেকে মৃ শুনেছে এটা ঝিঞ্জুংর কাজ । মাঝে মাঝে সে আকাশ থেকে তাদের পাড়ায় নেমে আসতো । কিন্তু কোন মানুষকে সে মারতে পারতো না । তাই সামনে যে পশু কিংবা পাখি পেত সেগুলোকে মেরে ফেলতো । মৃর পছন্দের বেড়ালটা এইভাবে মারা পড়েছিলো ।
মৃ বলল,
-মাথা ছেঁড়া অবস্থায়?
-হ্যা । আমার কাছে কদিন থেকে খবর আসছিলো । আমি নিজে এসে দেখে সন্দেহটা করলাম । আমি বলছি না যে ফয়সালের উপরেই সে এসেছে । তুমি জানো তোমাদের পাড়াটা তার নিজের এলাকা । সেখানে সে কারো সাহায্য ছাড়াই নেমে আসতে পারে, আকার ধারণ করতে পারে কিন্তু এখানে মানে তার টেরিটোরির বাইরে একা একা কোনভাবেই আসতে পারে না । কোন মাধ্যম দরকার হবে! আমার মনে হচ্ছে যে সে তোমার আশেপাশেই আছে !
-এখন আমি কি করবো?
-আমি জানি না । তবে সে যদি এখানে এসে থাকে তাহলে তাকে কাবু করা খুব একটা শক্ত হবে না । তুমি জানো । তোমাদের পাড়ার ভেতরে সে প্রবল শক্তিশালী । তাকে কেবলমাত্র তুমি নিজে টেক্কা দিতে পারো । কিন্তু এখানে বাইরে সে শক্তিশালী নয় । তাকে কাবু করা যাবে!
মৃ খানিকটা অবাক চোখে রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে রইলো । রাফায়েল যা বলল সেটা ঠিক বুঝতে পারছে না । মৃ বলল,
-আপনি কি বললেন? আমি টেক্কা দিতে পারি মানে ?
রাফায়েল যেন একটু অবাক হল । তারপর বলল,
-তুমি জানো না?
-না!
রাফায়েল একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।
-তোমার কি মনে হয়, তোমাকে তার কি কারণে দরকার?
-কোন দরকার নেই । সে আমাদের পুরো গোত্রকে নিরাপত্তা দেয় বিনিময়ে তাকে ভেট দেওয়া হয়!
-আচ্ছা তোমাকে তোমার গোত্রের মানুষ এই বুঝিয়েছে ?
-আমাদের প্রধান পুরোহিতমশাই আমাদেরকে এটা বিশ্বাস করিয়েছে । যুগযুগ ধরে এই চলে আসছে ।
রাফায়েল বলল,
-শুনো, তোমাকে তার প্রায়োজন । নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য, নিজের যৌবন ধরে রাখার জন্য তোমাকে তার দরকার । মাদার নেচারকে তো মানো ! সকল শক্তি ক্ষমতা এই মাদার নেচারের হাতে । তুমি হচ্ছো মাদার নেচারের অমূল্য সৃষ্টি । আর ঝিঞ্জুং ঠিক দেবতা নয়, অপদেবতা । অনেক বছর আগে তোমাদের গোত্রের মানুষজন তুনংদের সাথে যুদ্ধ করতো ! বারবার তারা যুদ্ধে হেরে যেত । তুনংরা কেন তোমাদের উপর আক্রমণ করতো জানো ? তারা ঠিক তোমার মত মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যেত নিজেদের কাছে । তারপর তার সাথে নিদের গোত্রের মানুষদের বিয়ে দিতো । তাদের বিশ্বাস যে তোমরা হচ্ছো সবকিছুর অধিপতি, এই প্রকৃতির একমাত্র সৌভাগ্যের প্রতীক । বারবার এই আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে তোমার গোত্রের মানুষ ঝিঞ্জুংয়ের সাথে তারা একটা চুক্তি করে । চুক্তিটা হচ্ছে, যখন তোমার মত কেউ তোমাদের গোত্রে জন্মাবে তখন তারা ঝিঞ্জুংকে তাকে দিয়ে দিবে । বিনিময়ে ঝিঞ্জুং পুরো গোত্রকে নিরাপত্তা দিবে । তোমার গোত্রের মানুষজন দেখলো যে তুনংরা তো তোমাদের মত মেয়েদেরকে নিয়েই যায় এবং সেই সাথে পুরো গ্রামটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে যায় । এর থেকে কেবল একজনের বিনিময়ে যদি পুরো গ্রামটা রক্ষা পায় তাহলে এটাই ভাল ।
রাফায়েল একটু থামলো । তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
-ঝিঞ্জুংর নির্দেশেই তোমাদের গ্রামের চার দিকে চারটা মূর্তি স্থাপন করা হয় । আর এখানেই ঝিঞ্জুং নিজের এলাকা নির্বাচন করে । এই এলাকার ভেতরে সে প্রবল শক্তিশালী । তবে কেবল তুমি ওর সাথে যুদ্ধ করতে পারো । আর কেউ না ।
মৃ বলল,
-আপনি এইসব কিভাবে জানলেন ?
-তুনং গোত্রের একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে । সে আমাকে আসল কথাগুলো জানিয়েছে । আমি নিজেও এরপর খোঁজখবর নিয়েছি । সে মিথ্যা বলে নি ।
মৃ কিছু সময় রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে রইলো । তার যেন এই কথা ঠিকমত বিশ্বাস হচ্ছে না । রাফায়েল বলল,
-তুমি অন্য সাধারণ মানুষদের মত নও সেটা তুমি খুব ভাল করেই জানো । জানো না?
মৃ সেটা খুব ভাল করেই জানে । ও সত্যিই অন্য সাধারণ মানুষগুলোর মত নয় । ও ঠিকই বুঝতে পারে সেটা । ফয়সালকে বাঁচাতে ও কিভাবে নিজের গোত্রের মানুষের উপর হামলা করেছিলো তা নিজেও জানে না । ওর সেই হুশ ছিল না । তারপর যখন পাড়াতে ছিল তখন বুঝতে পারতো অনেক কিছু । প্রকৃতির অনেক কিছুই যেন ওর আয়ত্ত্বে আছে । আপনা থেকেই যেন ধরা দেয় ।
রাফায়েল বলল,
-তোমার গোত্রের মানুষজন চাইলেই অন্য ব্যবস্থা নিতে পারতো ! কিন্তু একজন নারী একজন পুরুষের থেকে উঁচু স্থানে চলে যাবে এটা তারা মেনে নিতে পারে নি ।
মৃ চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এখন ও সত্যিই নিজের সিদ্ধান্তের জন্য খুশি হল খুব । ফয়সালের কাছে চলে আসাটা সব থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল । কিন্তু ফয়সালের যদি কিছু হয়ে যায় । ও আবার রাফায়েলের দিকে তাকালো । তারপর বলল,
-এখন কি করবো আমি?
রাফায়েল বলল,
-আমি জানি না কি করবে । কেবল একটা কাজ করতে পারো ।
এই বলে পকেট থেকে একটা হলুদ লেবুর মত ফল বের হয়ে মৃর হাতে দিল । তারপর বলল,
-এটা তোমাদের শোবার ঘরে রাখবে । তাহলে আশা করি ঝিঞ্জুং কাছে আসত পারবে না ।
মৃ ফলটা হাতে নিল । তারপর ক্যাফে থেকে বের হয়ে গেল । বের হয়ে যাওয়ার সময় কফির বিল দিতে ভুলে গেল !

ছয়
-গাইড নিবে?
মৃ রাফায়েলের দিকে তাকালো । ও রাফায়লের চেহারা দেখে একটু অবাক না হয়ে পারলো না । মানুষটা কেমন শান্ত হয়ে আছে । অবশ্য তার চিন্তার কোন কারণ নেই । সব চিন্তা তো মৃর নিজে । ফয়সালকে উদ্ধার করতে যাচ্ছে ও । কোনদিন ভাবতেও পারে নি যে ফয়সালের উপরে এমনভাবে বিপদটা নেমে আসবে । ফয়সাল কেমন আছে কে জানে ! যদি ফয়সালের কিছু হয় যায় তাহলে মৃ জানে না ও কি করবে !
গতদিন রাফায়েলের কথামতই মৃ ফলটা শোবার ঘরে রেখেছিলো । বালিশের তলাতে । ফয়সাল যখন অফিস থেকে ফিরলো তখনও তার চেহারা দেখে মৃর কিছু মনে হয় নি । সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল অন্যান্যয দিনের মত । কিন্তু যখনই ফয়সাল শোবার ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে যাবে তখনই মৃ একটা অবাক করা ব্যাপার লক্ষ্য করলো । ফয়রাল দরজাতেই দাঁড়িয়ে গেল কিছু সময়ের জন্য । এমন একটা ভাব যেন কিছু ওর মনে পড়ে গেছে । সে ঘুরে দাঁড়ালো । তারপর মৃর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো অবাক চোখে । তারপর মৃ ফয়সালের চোখে একটা ক্রোধ দেখলে পেল । মৃর দিকে তাকিয়ে রইলো সেই রাগান্বিত চোখে । মৃর আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না ।
ফয়সাল মৃর দিকে তাকিয়ে একটা কথাও বলল না । একপ্রকার দৌড়েই বেরিয়ে গেল দরজা দিয়ে । মৃ তাকে বাঁধা দিতে পারলো না ।
রাতে মৃ আরেকটা ব্যাপার আবিষ্কার করলো । ওদের ডিপ ফ্রিজ থেকে মৃ কয়েকটা কুকুর আর বেড়ালের মাথা রক্তাক্ত মাথা খুঁজে পেল । মাথাগুলো পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে মোড়া । মৃ মাথাগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো সেগুলো ঠিক কেটে নেওয়া হয় নি । কেউ যেন খুব আক্রোশে সেগুলো ধড় থেকে ছিঁড়ে নিয়েছে ।
সারাটা রাত মৃ ওদের ড্রয়িং রুমে বসে ছিল । একটুও নড়ে নি । রাতেই সিদ্ধন্তু নিয়েছিলো যে ও ফয়সালকে উদ্ধার করতে যাবে । ফয়সালকে দিয়ে ওদের কোন কাজ নেই । মৃকে দরকার ওদের । মৃ গেলে ফয়সালকে ছেড়ে দিবে । ভেবেছিলো একাই যাবে কিন্তু পরদিন সন্ধ্যাবেলা যখন রওয়ানা দিতে যাবে তখনই দেখতে পেল রাফায়েল বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছে ওর জন্য । এমনকি বাসের টিকেটটাও কেটে রেখেছে সে ।
মৃ বলল,
-কোন দরকার নেই । আমি এমনিতেই যেতে পারবো ।

সরাদিন হেটে বিকেলের আগেই সেই লজে এসে হাজির হল ওরা । মৃ কিছুটা সময় সেই লজে বসে বিশ্রাম নিল । তারপর রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-আপনি আপাতত এখানেই থাকুন । আমি পাড়ার ভেতরে ঢুকি । আমাকে দেখে আশা করি ওরা অন্য দিকে খেয়াল করবে না । আমি যতদূর জানি, নির্ধারিত সময় আগেই পার হয়ে গেছে । আমাকে পাওয়ার সাথে সাথেই ওরা আমাকে ঝিঞ্জুংর মন্দিরের কাছে নিয়ে যাবে । এটা আমাদের একটা উৎসবের দিন । তাই অন্য দিকে কেউ খুব একটা লক্ষ্য রাখে না । আপনি সুযোগ বুঝে ঢুকবেন । ঠিক আছে?
রাফায়েল মাথা ঝাকালো কেবল !

রাফায়েলকে রেখেই মৃ হাঁটা দিল । সেই পরিচিত পরিবেশে আসার পরে মৃর নিজের মধ্যেই কেমন যেন একটা আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে । নিজের পরিচিত জায়গা । মৃ আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকলো সামনের দিকে । নিজেদের পাড়ার সীমানা ও খুব ভাল করেই জানে । সেই পথ ধরেই ও হাঁটতে শুরু করলো । মৃ এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো । চারিদিকটা কেমন যেন শুনশান মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে যেন কেউ কোথাও নেই । পুরো এলাকাটাই শান্ত হয়ে আছে । মৃ আরও কয়েকধাপ এগিয়ে গেল । কেমন যেন সব শান্ত লাগছে । তবে ওর মনে সেই অনুভূতিটা ঠিকই হচ্ছে । ওকে কেউ ঠিকই লক্ষ্য করছে । ওদের গোত্রের লোকজনের চলাচল এমনই । তারা ঠিক এমন ভাবেই চলাচল করে । মৃ আরও কিছু দূর এগিয়ে গেল । তারপরই একটা সুক্ষ আওয়াজ কানে এল ওর । সাধারন মানুষ হলে হয়তো এই আওয়াজ তার কানে আসতো না কিন্তু মৃর কানে ঠিকই গেল। কিছু করতে যাবে তার আগেই একটা সুঁই ফোঁটার মত ব্যথা অনুভব করলো নিজের ঘাড়ের কাছে । হাতটা চলে গেল সেদিকেই । দেখতে পেল একটা ডার্ট ! চিনতে কষ্ট হল না মৃর । ও খুব ভাল করেই জানে এটা কি । এখনই ঘুমিয়ে যাবে ও । মৃ জানে ডার্টের সুঁইয়ে তীব্র ঘুমের ঔষধ মেশানো আছে । মৃর চোখটা খুব ভারী হয়ে এল । দুই পা এগোনোর আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ও !

রাফায়েল আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলো মৃ যাওয়ার পর । তারপর সে নিজেও বের হয়ে গেল । সামনে কি হবে সেটা রাফায়েল নিজেও জানে না তবে সাবধানে থাকতে হবে । মেয়েটা নিজেও জানে না কিভাবে সব কিছু সে সামাল দিবে । রাফায়েল নিজে কি জানে ? না ! সে নিজেও জানে না । চিড়ংদের এই পাড়াটা সম্পূর্ণভাবে ঝিঞ্জুং নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছে । সবার আগে সেটাকে ধ্বংস করতে হবে । কথায় আছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধে জয়ী হতে হল কোনভাবেই তাকে তার পছন্দমত স্থানে যুদ্ধ করতে দেওয়া যাবে না । সেই সাথে তার সকল সুবিধাগুলো দূর করতে হবে ।
রাফায়েল আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করলো । ঝর্ণার ঠিক উল্টো দিকেই থাকার কথা সেই মূর্তিটা । মূর্তিগুলো আগে ধ্বংস করতে হবে । তাহলে পুরো স্থানটা ঝিঞ্জুংর হাত থেকে মুক্ত হয়ে যাবে । তখন সে আর আগের মত শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না ।
রাফায়েল পানির ভেতরে ঝাঁপিয়ে পড়লো । তারপর আস্তে আস্তে এগোতে শুরু করলো সামনের দিকে । ঝর্ণার উপরে উঠতে হবে তাকে । সেখানেই পাওয়া যাবে প্রথম সীমানার মূর্তিটা ! একেবারে যখন ঝর্ণার কাছে পৌঁছালো, রাফায়েল অনুভব করলো খুব তীব্রভাবে সেখান থেকে পানি পড়ছে । শরীরে বিঁধছে । অন্য সময় এখানে আসলে এই গোসলটা উপভোগ করা যেত । মিশুকে একদিন এখানে নিয়ে আসতে হবে । রাফায়েল ভাবলো । মেয়েটার সাথে অনেক দিন দেখা নেই ।
মাথা থেকে অন্য সব চিন্তা দূর করে দিল সে । এখন অনেক কাজ । পরে চিন্তা করা যাবে ।
ঝর্ণাটা অন্তত চারতলা ভবনের সমান উঁচু । এত উপরে সে কিভাবে উঠবে ! আশেপাশে উঠার মত কিছুই দেখতে পেল না । অন্য উপায় না দেখে শেষ পথটাই অবলম্বন করতে হল তাকে । এই কাজগুলো সে খুব একটা করতে পছন্দ করে না । ছোটবেলা থেকেই রাফায়েলের মাঝে এই শক্তিটা বিদ্যমান রয়েছে । রাফায়েল দূর থেকে যে কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । কেবল হাতের ইশারাতেই যেকোন জিনিস ধরতে পারে । যেন কোন অদৃশ্য দড়ি দিয়ে সে কোন কিছু আটকে ফেলছে, তারপর সেটা সরাচ্ছে ।
ঝর্ণার উপরের সব থেকে বড় গাছটার দিকে তাকালো সে । নিজের হাতটা উপরে তুলে অদৃশ্য শক্তি দিয়ে সেটা ধরলো শক্তভাবে । রাফায়েল জানে এই শক্ত বাঁধন তত সময় ছুটবে না যতসময় সে নিজের মনোযোগ সেদিকে দিয়ে রাখবে । এবার রাফায়েল গাছটাকে নিজের দিকে টানতে শুরু করলো । কিন্তু গাছটা শক্ত হওয়ার কারণে নিজেই আসতে আসতে উপরে উঠতে শুরু করলো । অনেকদূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন উপরের গাছ থেকে একটা দড়ি ঝুলছে । আর রাফায়েল সেটা বেয়েই উপরে উঠছে ।
একেবারে উপরে উঠতে রাফায়েলের বেশ পরিশ্রম হল । তবে সেটা সে মানিয়েই নিল । গাছ থেকে একটু দূরেই দেখতে পেল মূর্তিটা । তবে মূর্তির আশেপাশে কোন বড় পশু দেখতে পেল না । ও তুনংদের কাছে শুনেছে যে অন্য পাশে যে মূর্তিগুলো আছে সেগুলোর কাছে যেতে গেলেই একটা বড় কুকুর জাতীয় জন্তু এসে হাজির হয় । এখানে সম্ভবত সেসব নেই । এতো উঁচুতে কেউ উঠার কথা চিন্তা করবে না সম্ভবত এই কারণেই এখানে অন গার্ড রাখা হয় নি । অথবা হয়তো কাছে গেলে সেটা হাজির হবে। অবশ্য রাফায়েলের কাছে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই । দূর থেকেই সে মূর্তিটা ধ্বংস করে দিতে পারবে ।

মৃর যখন ঘুম ভাঙ্গলো, ও নিজেকে আবিস্কার করলো খোলা একটা জায়গাতে । সময়টা রাত কোন সন্দেহ নেই । আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃ দেখলে পেল আকাশে লক্ষ-কোটি তারার মেলা । চাঁদটা উঠেছে বেশ বড় করে । সেই আলোতে চারিদিক আলোকিত হয়ে আছে । মৃ একটু শোয়া থেকে একটু ওঠার চেষ্টা করলো । মাথাটা ভার ভার মনে হচ্ছে । মৃর সব মনে পড়ে গেল সাথে সাথেই । ফয়সালের কথা মনে হতেই ও তড়াক করে উঠে সবলো । ও ঝিঞ্জুংর মন্দিরের সামনেই বসে আছে । সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে । চাঁদের আলো ছাড়াও চারিদিকটা মশালের আলোতে আলোকিত করা হয়েছে । সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ।
ঝিঞ্জুংর মন্দিরটা আর দশটা মন্দিরের মত নয় । এটা পাহাড়ের বুকে এক টুকরো সমতল ভুমি । গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে । চারিদিক থেকে বনজঙ্গল ঘিরে রেখেছে । ঠিক মাঝে দুটো চক্র আঁকা থাকে ।
মৃ চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । ওদের পাড়ার সবাই এখানে হাজির রয়েছে । ও জেগে ওঠার সাথে সাথেই লক্ষ্য করলো চারিদিক থেকে মৃদু তালে ঢোলের আওয়াজ বাজতে শুরু করেছে । ওর ঠিক সামনেই ওদের পাড়ার পুরোহিত মশাই বসে আছে । দুইটা গোল চক্র আঁকা রয়েছে । একটার ভেতরে ও শুয়েছিল । অন্যটার ভেতরে ঝিঞ্জুং এসে হাজির হবে একটু পরে । মৃ এটা জানে । পুরোহিত মৃর দিকে তাকিয়ে বলল,
-তুমি যে অন্যায় করেছো সেটা ঠিক করার পথ এখনও আছে ।
মৃ জানে সেই পথটা কি !
মৃ বলল,
-আমি কোন অন্যায় করি নি । আমার নিজের পছন্দ বেঁছে নিয়েছি ।
-তোমার পথ আগে থেকে নির্ধারিত ।
-কে ঠিক করে দিয়েছে? তুমি? আমার উপর জোর করে লাভ হবে না তুমি জানো পুরোহিত ! ঝিঞ্জুংকে ডেকে এনেও লাভ হবে না যদি না আমি স্ব-ইচ্ছেতে নিজেকে তার সামনে তুলে ধরি । তুমি এটা খুব ভাল করে জানো !

মৃ পুরোহিতের মুখে একটা রাগের রেখা দেখতে পেল । সে জানে মৃ ঠিক কথা বলছে । তবুও সে দমবার পাত্র নয় । পুরোহিত বলল,
-আচ্ছা আমার জানা আছে তোমাকে কিভাবে রাজি করাতে হয় !
এই বলেই সে হাত জোর করে তালি দিল । মৃ দেখতে পেল কয়েকজন মিলে ফয়সালকে ধরে নিয়ে আসছে । ফয়সালের জ্ঞান নেই । সে মাথা নিচে করে রয়েছে । পা চলছে না ।
মৃ চিৎকারে করে বলল,
-ওর কি হয়েছে ? তোমরা ওর গায়ে হাত দিয়েছো ? আমি তোমাদের খুন করে ফেলবো বলে দিলাম । ওকে ছেড়ে দাও । ছেড়ে দাও বলছি ।
পুরোহিত বলল,
-ছেড়ে দিবো । কোন সমস্যা নেই । আগে তুমি তাই কর যার জন্য তোমাকে এই দুনিয়াতে নিয়ে আসা হয়েছে !
-না !
-ঠিকাছে ! তাই হোক । এই ওটাকে ধর । আজকে দেবতার নামে একটা নয়, দুটো বলি দেওয়া হবে ।

মৃ দেখতে পেল ফয়সালকে মাটির উপর শোয়ানো হল । ও ঘুমিয়ে আছে । একজন একটা বড় রকমের রামদা নিয়ে এসেছে ।
মৃ উঠতে চাইলো কিন্তু পারলো না । ওর পায়ে একটা বড় শিকল দিয়ে ওকে আটকে রাখা হয়েছে । পুরোহিত এবার জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে শুরু করলো । মৃ এই প্রক্রিয়াটা জানে খুব ভাল করেই । প্রতিবার যখন ঝিঞ্জুংকে ডেকে নিয়ে আসা হবে তখন আগে একটা পশু বলি দেয়া হয় । আজকে পশুর বদলে ফয়সালকে ওরা বলি দিবে । ফয়সালের শরীরের রক্ত যখন চক্রের ভেতরে আসবে তখনই ঝিঞ্জুং এসে হাজির হবে । বলি দেওয়ার স্থান থেকে চক্র পর্যন্ত একটা ছোট লাইন গর্ত করা আছে রক্ত আসার জন্য ! পুরোহিত আরও জোরে মন্ত্র পড়তে থাকে ।
মৃ তাকিয়ে আছে সেদিকে । ও কি করবে বুঝতে পারছে না । নিজেকে ও কোনভাবেই ঝিঞ্জুংয়ের কাছে সমর্পন করবে না । কিন্তু ফয়সালকে কিভাবে বাঁচাবে ?
মৃ দেখলো রামদাটা আস্তে আস্তে নেমে আসছে ফয়সালের ঘাড় বরাবর ! কিন্তু সেটা আটকে গেল মাঝপথেই । একটা ছোট কুঠার এসে লাগলো রামদা ধরা লোকটার হাতে । তারপর একই সাথে আরও কয়েকটা কুঠার লোকটার শরীরের নানান স্থানে এসে বিঁধলো। লোকটা পড়ে গেল । কয়েক মুহূর্ত পরেই ছোট ছোট কয়েকটা বল এসে হাজির হল খোলার স্থানে । মুহূর্তের ভেতরে সেগুলো ফেঁটে উঠলো । চারিদিক থেকে আওয়াজ ভেসে আসতে শুরু করলো ।
তুনংরা আক্রমন করেছে ?

রাফায়েল !

তুনংদের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করেছে ।

মৃ হয়তো তুনংদের দেখে জীবনে এতো খুশি হয় নি যতখানি না আজকে হল । পুরো জায়গাটা জুড়ে একটা হট্টগোল বেঁধে গেল । দুই দলই দা রামদা লাঠি যা পারছে সেটা নিয়েই মারামারি শুরু করে দিয়েছে । মৃ এখনও সেই চক্রের ভেতরেই আটকে আছে । কয়েকবার চেষ্টা করেও সে পায়ের শিকলটা খুলতে পারে নি । সেটা শক্ত করেই আটকে আছে ।

তখনই ভয়ংকর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলো মৃ । ফয়সালের শরীরের রক্ত এসে জমা হওয়ার কথা ছিল পাশের চক্রটাতে । তাতেই দেবতা ঝিঞ্জুংর আসার কথা । ফয়সাল যেহেতু মারা যায় নি তাই তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে আসে নি । মৃ সেদিকে আর খেয়াল দেয় নি । যে মানুষটার রামদা নিয়ে ফয়সালকে বলি দিতে আসছিলো তার বুকে কুঠার লেগেছিলো । সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে এবং সেটা ছোট ড্রেন দিয়ে এসেছে চক্রের কাছে ।
মৃ দেখতে পেল চক্রটা পূর্ণ হতে খুব বেশি সময় লাগলো না । যেন চক্রটা রক্ত টেনে নিচ্ছে নিজের দিকে। মৃ অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো কেবল । আকাশ থেকে বিদ্যুৎ চমকানোর মত আওয়াজ হল । বাজ পড়লো একেবারে চক্রের মাঝে । মৃ চোখ সরিয়ে নিয়েছিলো আলো আর আওয়াজের কারণে । আবারও ফিরে তাকালো । তখনই তাকে দেখতে পেল !
ঝিঞ্জুং দাঁড়িয়ে আছে একেবারে ওর কাছেই ।

পুরো শরীরটা কালো লোমে ঢাকা । মুখটা অনেকটাই কুকুরের মত চোখা । চোখদুটো লাল । মৃ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে নখগুলো অনেক বেশি বড় । চাঁদ এবং মশালের আলোতে সেই তীক্ষ্ণ নখগুলো বুকের ভেতরে ভয় ধরিয়ে দেয় । মৃ একটু অবাক হল চেহারা দেখা । মৃ ভেবেছিলো ওর শরীরে যে ছবিটা রয়েছে ঝিঞ্জুং দেখতে হয়তো সেই রকম হবে । কিন্তু না, সে দেখতে অন্যরকম ।
ঝিঞ্জুং মৃর দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর বলল,
-এখনও সময় আছে তোমার ভুল ঠিক করে নাও । আমার সামনে নত হও । নয়তো এখানে সবাইকে মেরে ফেলবো আমি ।

মৃ বুকে কোথা থেকে যেন বল ফিরে এল । একটু একটু ভয় পাচ্ছিলো ও । তবে এখন সেটা চলে গেল। মনে হল একে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । মৃ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই মারামারি থামিয়ে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে ঝিঞ্জুংর দিকে । সবাই ভয় পাওয়া শুরু করেছে । মৃ বলল,
-জীবনেও না । আমি দরকার হলে মারা যাবো ।
ঝিঞ্জুং হাসলো । তারপর বলল,
-তোমাকে মরতে দেবো না তবে সবাই মরবে । সবার আগে মরবে ....
এই বলে ঝিঞ্জুং ফয়সালের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করলো । তারপর সেদিকেই পা বাড়াতে যাবে তখনই আরেকটা ঘটনা ঘটলো । কিছু একটা আলো যেন ঝিঞ্জুংর শরীরে এসে লাগলো । কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে ।
মৃ ঝিঞ্জুংর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যে আঘাতটা তার শরীরে বেশ ভাল করেই লেগেছে। মৃ আঘাতটা যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে তাকালো । কেবল সে-ই নয় আরও অনেকে তাকিয়েছে সেদিকে ।
রাফায়েল !

ঝিঞ্জুং রাগে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই মৃ দেখতে পেল রাফায়লে নিজের হাত দিয়ে আবারও কিছু ছুঁড়ে মারলো । তবে এবার ঝিঞ্জুং খানিকটা প্রস্তুত ছিল । আঘাতটা প্রতিহত করতে পারলো । রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-এখানে তুমি আমার কিছু করতে পারবে না ।
ঝিঞ্জুং কিছু যেন করতে গেল । তখনই বুঝতে পারলো কিছু যেন একটা সমস্যা হয়েছে । রাফায়েলের মুখে হাসি ফুটলো । তারপর বলল,
-কি ? কাজ হচ্ছে না বুঝি !

ঝিঞ্জুং সত্যিই যেন ঠিক বুঝতে পারছিলো না কি হচ্ছে । সে জানে তার এই এলাকার ভেতরে সে সব থেকে শক্তিশালী । অন্য কোন শক্তি তার সামনে দাড়ানোর ক্ষমতা রাখে না । সে আরও একটু এগিয়ে গেল রাফায়েলের দিকে । রাফায়েলকে সে দেখার চেষ্টা করলো । এর আগেও সে এই মানুষ টা দেখেছে । তার এই এলাকাতেই । সামনে না গেলেও ঠিকই মানুষটার শক্তির একটা অস্তিত্ব অনুভব করেছে । কিন্তু নিজের শক্তিরও একটা অস্তিত্বও সে ঠিকই অনুভব করতে পারতো কিন্তু আজকে এমন কেন হচ্ছে ? কে কিছুটা দূর্বল অনুভব কেন করছে ?
ঝিঞ্জুং আরও একটু এগিয়ে গেল । নিজের হাত দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো । রাফায়েলের দিকে কিছু একটা ছুড়ে দিলো । তীর বেগে সেই আলোর বিচ্ছুরণ টা এগিয়ে গেল রাফায়েলের দিকে । ঝিঞ্জুং জানে এই আলো বিচ্ছুরণ যার গায়ে লাগবে তার শরীর ছাই হয়ে যাবে । রাফায়েল আশ্চর্য্য দক্ষকতায় সরে গেল সেটা থেকে ।
ওর প্রতিরক্ষা বলয় কি ভেঙ্গে গেছে ?
না এটা হতে পারে না ! তবে যাই হোক, এখনও সে যথেষ্ট শক্তিশালী । এই রাফায়েল তার সাথে পারবে না কোন ভাবেই । সর্ব শক্তি প্রয়োগ করলে এইখানে কেউ তার সাথে পারবে না ।
ঝিঞ্জুং নিজের হাতটা আবার উপরে তুলে ধরলো ।

মৃ দেখতে পেল ঝিঞ্জুং নিজের হাত দিয়ে কিছু একটা পড়ে সামনে ছড়িয়ে দিল । আর সেখান থেকে চারটা বড়বড় কুকুরের মত প্রাণী বের হয়ে এল । প্রাণীগুলো দেখতে কুকুরের মত হলেও আরও বড় । উচ্চতায় একজন মানুষের সমান এবং সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে প্রাণীগুলোর মাথার কাছ থেকে চেরা । চারটা প্রাণী একযোগে রাফায়েলের দিকে এগোতে লাগলো ।

ঝিঞ্জুং আবারও মৃর দিকে তাকালো । তারপর বলল,
-এবার আমার আসল কাজ করি । এই ছেলে আমার খাদ্য আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে । একে তো আমি ছাড়বো না । আমি যখন ওর ভেতরে ছিলাম, তোমার সাথে মিলিত হয়েছিলাম, কতটা পরিপূর্ণভাবে তুমি নিজেকে ওর কাছে সমর্পণ করেছো । যেটা আমার পাওনা ছিল !
মৃ বলল, তোমার কিছু পাওনা ছিল না । ওকে কিছু করবে না । আমি বলে দিচ্ছি ওকে কিছু করবে না।
মৃ আবারো নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না ।

ঝিঞ্জুং পৌঁছে গেল ফয়সালের কাছে । ফয়সালের মাথাটা ধরে উঁচু করে করে ধরেছে । ফয়সাল এখনও ঘুমিয়েই আছে । মৃ বুঝতে পারছে ফয়সালের সাথে কি করতে যাচ্ছে সে । ঠিক ঐ কুকুরগুলোর মত ফয়সালের মাথা টা সে ছিঁড়ে নিবে । এটা ভাবতেই মৃর পুরো শরীর যেন কেঁপে উঠলো । রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফায়েল তখনও ঐ বড় চারটা প্রাণী সামলাতে ব্যস্ত ।

মৃ এখন কি করবে। কার কাছে যাবে। এখানে কেউ ঝিঞ্জুংর সামনে দাঁড়াতে পারবে না। মৃ আরেকবার তাকালো রাফায়েলের দিকে । তখনই দেখলো রাফায়েল ওর দিকে তাকিয়েছে । চোখে চোখ পড়লো । সাথে সাথেই মৃর মনে হল রাফায়েল যেন ওকে কিছু বলল ।
কি বললে সে !
মৃর মনে সেই কথাটা ধাক্কা দিল ! মৃ-ই কেবলমাত্র ঝিঞ্জুংর সামনের দাঁড়াতে পারবে । আর কেউ না ।
এখন সে-ই একমাত্র ফয়সালকে বাঁচাতে পারবে । মৃ ঢাকাতে ওদের ফ্ল্যাটের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করলো । সেখানে ও একভাবে চিন্তা করেছিলো । এখানে তো কত শত গাছ রয়েছে, মাটিতে ওর পা রয়েছে ।
মৃ নিজের চোখ বন্ধ করলো । ছোটবেলা থেকে যেটা অনুভব করে এসেছে সেটাই মনে করার চেষ্টা করলো । ছোটবেলা থেকে ও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে যে পুরো প্রকৃতি যেন ওর কথা শোনে । ও প্রকৃতিকে খুব ভাল করে বুঝতে পারে, ওর মনে হয় যেন তারাও ওর কথা শুনতে পায় । মৃ আরও মনোযোগ দিয়ে প্রকৃতিকে ডাকতে শুরু করলো ।
হঠাৎই মনে হল যে মৃ সবকিছুর ভেতরে হারিয়ে গেছে । একেবার গভীর সমুদ্রের ভেতরে পড়েছে তারপর আবার উঠে এসেছে, আবার তীব্র তাপ অনুভব করলো, আবার সাথে সাথেই প্রকৃতির সবুজ ঘ্রাণ ওকে বিমোহিত করে তুলল । মৃ অনুভব করতে পারলো যে আস্তে আস্তে পুরো অঞ্চলটা যেন ওর সাথে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে ।
মৃ এবার চোখ খুলল । ওর সবুজ চোখ যেন আরও গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে । মৃ বলল,
-ঝিঞ্জুং !
মৃর ডাকের ভেতরে এমন কিছু ছিল যে ঝিঞ্জুং ঘুরে দাঁড়ালো । ওর দিকে তাকিয়ে খানিকটা চমকে গেল । তারপরই ঘটলো সবথেকে আশ্চর্যের ঘটনা । চারিদিক থেকে বড় বেশ কয়েকটা গাছের মোটাসোটা ডাল আর মোটা লতা এগিয়ে এসে চেপে ধরলো ঝিঞ্জুংকে ! দুই হাত, পা, গলা, পেটে পেঁচিয়ে ধরলো সেগুলো !
একটা টানেই সেগুল ছিড়ে ফেলল সে । খানিকটা বিস্মিত চোখে সে তাকিয়ে আছে মৃর দিকে । কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । তবে ফয়সালের দিকে হাটা সে বন্ধ করে দিয়েছে । এবার সে এগিয়ে আসতে শুরু করলো মৃর দিকে । ঝিঞ্জুংর চোখ দুটো দিয়ে যেন আগুন ধরছে ।
মৃ আবারও নিজের চোখ বন্ধ করলো । খুব করে চাইছে যেন ঝিঞ্জুংকে আটকাতে । কিন্তু কিভাবে সে তাকে আটকাবে সেটা সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না । ঝিঞ্জুং চলে এসেছে একেবারে ওর কাছে । মৃত চাইলেও পালাতে পারবে না । রাফায়েল কে ঠেকানোর জন্য ঝিঞ্জুং আরও চারটা প্রাণী পাঠিয়ে দিল । তারপর এগিয়ে এল আবারও মৃর দিকে । মৃ দেখতে পেল ঝিঞ্জুং চোখে এক সাক্ষাৎ যমদুত যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
মৃর দিকে হাত বাড়াতে যাবে এমন সময় আবারও পাশের কয়েকটা ডাল আর লতা এসে চেপে ধরলো ঝিঞ্জুংর হাত । তবে এবারও সেটা ঝিঞ্জুং ছাড়িয়ে নিল খুব সহজেই । একটা আঘাত করলো মৃর শরীর বরাবর । ধাক্কাটা বেশ জোরেই লাগলো । মৃ একটু ছিটকে পড়লো দূরে । তবে পায়ের শিকলের কারনে সে বেশি দূরে গিয়ে পড়তে পারলো না । মৃর মাথার ভেতরে কেমন ঝিম ঝিম করতে শুরু করেছে । এতো জোরে আঘাত তাকে কেউ করে নি কোন দিন । ঝিঞ্জুং বলল, আজকে তোকে আমি মেরে তারপর তোর রক্ত খাবো । তুই কি ভেবেছিস কেবল তোর ইচ্ছেতেই সব কিছু হবে ? না আমি অন্য ভাবেও আমার জিনিস পেতে পারি । এতোদিন করি তবে আজকে করবো ।
এই বলে সে আবারও এগিয়ে আসতে শুরু করলো । মৃর আরও কাছে এসে মৃকে দুই হাত দিয়ে উপরে তুলে ধরলো । তারপর ওর গলা চেপে ধরলো শক্ত ভাবে । মৃ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু কোন কাজ হল। ধীরে ধীরে অনুভব করলো যে মৃর শক্তি কমে আসছে । নিস্তেজ হয়ে আসছে সে। মৃ বুঝতে পারছে যে ওর সময় শেষ হয়ে এসেছে । আর পারছে না । খুনে চোখে ঝিঞ্জুং তাকিয়ে আছে ওর দিকে । ঠিক তখনই মৃ অনুভব করলো যে ঝিঞ্জুংর হাতের জোর কমে গেল । ওকে ছেড়ে দিল সে । মাটিতে পড়তে পড়তে আপছায়া চোখে মৃ তাকিয়ে দেখলো ফয়সাল দাঁড়িয়ে আছে । ওর হাতে একটা রামদা। তার দিকেই ঘুরে দাড়ালো ঝিঞ্জুং । ফয়সাল আবারও রামদা দিয়ে আরেকটা কোপ মারতে গেল কিন্তু এইবার আর আগের মত কাজ হল না । ঝিঞ্জুং হাত দিয়ে সেটা ধরে ফেললো । ফয়সালকে সে এবার একটা ধাক্কা দিলো । ধাক্কাটা এতোই জোরে যে প্রায় দশ হাত দূরে উড়ে গিয়ে পড়ল ।
ঝিঞ্জুং আবার ফিরে তাকালো মৃর দিকে । তারপর বলল, আগে ওকে শেষ করে আসি । তারপর তোকে দেখছি । এই বলে সে এগিয়ে যেতে লাগলো ফয়সালের দিকে । ফয়সাল তখন মাটি থেকে উঠে পড়ার চেষ্টা করছে । ঝিঞ্জুং ওর কাছে চলে এল । তারপর ঠিক একই ভাবে ফয়সালের গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো । তারপর আস্তে আস্তে মাটি থেকে উচুতে তুলে ধরলো । মৃ দেখতে পেল ফয়সাল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তুন কাজ হচ্ছে না । কিছুতেই ঝিঞ্জুংর শক্তির সাথে সে পেরে উঠবে না ।
মৃ কি করবে বুঝতে পারছে না । ওর শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা করছে । এমন সময় মনে হল ওর ঠিক কাছেই কেউ চলে এসেছে । বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফায়েল ওর একদম কাছেই চলে এসেছে । ওর পিঠে, ঠিক ট্যাটুটা আঁকা আছে সেখানে রাফায়েল ওর দুট হাত রাখলো । মুখে দিয়ে কিছু একটা বলল সে ! সাথে সাথেই মৃ অনুভব করলো যে ওর পুরো শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল । একটু আগে প্রকৃতির সাথে যে সম্পর্কটা সে অনুভব করছিল সেটা আরও ভাল করে বুঝতে পারলো সে । ছোট বেলা থেকেই সে এই সুক্ষ সম্পর্কটা অনুভব করে এসেছে । এখন এটা একেবারে পরিস্কার আর স্পষ্ট অনুভব করছে । পুরো গাছ পালা মাটি সব কিছু যেন ওর সাথে কথা বলছে ।
মৃ এবার উঠে দাড়ালো আবার । ঠিক আগের মতই গাছের ডাল পালা আর শুঁড় এগিয়ে গিয়ে ঝিঞ্জুংকে চেপে ধরলো। এতোই জোড়ে যে ফয়সালকে সে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল। ফয়সাল মাটিতে পড়ে গিয়ে আর উঠলো না । ফরসালের এই এমন অবস্থা দেখে মৃর রাগটা আরও যেন বৃদ্ধি পেল দ্বিগুণ ভাবে । নিজের ইচ্চে শক্তিকে আরও শক্ত করে তুলল । চারিদিক থেকে আরও গাছের শুঁড় এগিয়ে গেল ঝিঞ্জুংর দিকে।
ঝিঞ্জুং কয়েকবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু এইবার আর কাজ হল না । ছাড়াতে পারলো না নিজেকে। আস্তে আস্তে চারিদিক থেকে গাছ পালার শুঁড় গুলো একে একে ঝিঞ্জুংকে পেঁচিয়ে ধরতে শুরু করলো। তীব্র বিস্ময় নিয়ে সে মৃর দিকে তাকিয়ে আছে । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । সে মৃর সাথে শক্তিতে পারছে সেটা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না ।

অন্য সবাই লড়াই করা বন্ধ করে দিয়েছে । সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ঝিঞ্জুংর দিকে। লতাপাতা গুলো এবার ঝিঞ্জুংকে একেবারে মাটি থেকে উঁচুতে তুলে ধরেছে । চারিদিক থেকে সেই ডাল আর লতাগুলো ঝিঞ্জুংকে টানতে শুরু করলো । ঝিঞ্জুং যেন একেবারে শক্তিহীন হয়ে পড়েছে । নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা সে করলো কিছু সময় কিন্তু কোন কাজ হল না । একটা সময় সে স্থির হয়ে গেল ।
তারপর ঠিক যেভাবে গাছের ডাল-লতাগুলো চারিদিক থেকে এসেছিলো সেগুলো আবারও চলে গেল যে যার মত । ঝিঞ্জুং দেহটা মাটিতে নামিয়ে রাখার সাথে সাথেই সেটা ছাইয়ে পরিণত হয়ে গেল !

ফয়সালকে মাটিতে নামিয়ে দেওয়ার একটু পরেই ফয়সাল চেতনা ফিরে পেয়েছিল । শক্ত করে গলা চেপে ধরার কারনে একটু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল সে । সব কিছু শান্ত হতেই মৃর দিকে সবার আগে সেই এগিয়ে গেল। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরলো । এই গাঢ় সবুজ চোখ সে আগেও দেখেছে । সে জানে কিভাবে মৃকে শান্ত করতে হবে ।

পরিশিষ্ট
তুনং এবং চিড়ং গোত্রের ভেতরে চুক্তি হয়েছে । মৃর আসল রূপটা দেখতে পেয়ে সবাই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছে । মৃ ঘোষণা করেছে আজ থেকে কোন মেয়েকে আর কোন পুরুষের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না । মেয়ে কি করবে সেটা মেয়েটা নিজে ঠিক করবে । তারপর নতুন যে মেয়ে জন্মাবে সেও নিজে ঠিক করবে সে কোনদিকে যাবে । সে কাকে বিয়ে করবে, কিভাবে জীবনে কাটাবে সেটা একান্তই তার ব্যাপার । ধর্মের নামে তার উপর কিছুই চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ।
দুটো গোত্রই মিলে যাবে । দুই গোত্র একে অন্যের সম্পদ ভাগ করে নিতে পারবে । চাইলে এক গোত্রের মানুষ অন্য গোত্রে বিয়েও করতে পারবে । সেটা একান্তই নিজেদের ব্যাপার । অন্য কেউ বাঁধা দিতে পারবে না । পাশাপাশি দুই গোত্রের মাঝে কোন যুদ্ধ হবে না আর ।
মৃ ফিরে এসেছে ফয়সালের সাথেই । তবে সে প্রায়ই নিজের পাড়ায় ফিরে যায় । সাথে অবশ্যই ফয়সাল থাকে সবসময় । পাড়ার সবাই তাকে দেবীর আসনে বসাতে চেয়েছিলো তবে মৃ সেটা একেবারে নাকচ করে দিয়েছে । তবে মৃ খুব ভাল করেই জানে যে যতই নাকচ করে দিক ওর পাড়ার মানুষজন ওকে সেই আসনেই বসিয়ে রাখবে আজীবন !
রাফায়েল মৃকে বলেছে যে যেকোন দরকারে রাফায়েল এগিয়ে আসবে । তবে রাফায়েল জানে এরপর থেকে যা-ই কিছু ঘটুক না কেন মৃ নিজেই সেটা সামলে দিতে পারবে ।





রাফায়েল সিরিজ ১৬
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ২:১৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×