somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ নাম না জানা আগন্তুক

৩০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহির শেখ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষটার দিকে । কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না । হাজার হলেও দোকানের কাস্টোমার বলে কথা । ব্যবসা চালাতে গেলে কোন সব সময় কাস্টমারের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হয় । কোন সময় তাদের না বলতে নেই । আর এই কাস্টমারের কাছ থেকে বেশ কিছু আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । সহ্য না করে উপায় নেই । হাসি মুখেই সেই কাস্টমারের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আকাশে মেঘ ডেকে উঠলো । জাহির শেখ দোকানের পাশ দরজা থেকে মুখ বের করে আকাশের দিকে তাকালো । অন্ধাকার রাতে মেঘটা আকাশটা আরো বেশি ঘুরঘুটে মনে হচ্ছে । সন্ধ্যা থেকে টুকটাক বৃষ্টি পড়েছে । তবে এবার মনে হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে । জাহির শেখের বাড়িটা যদিও খুব বেশি দুরে না । দোকানের ঠিক পাশ দিয়েই একটা লম্বা গলি । গলি পার হয়ে ৫ মিনিট হাটলে বেশ কিছু টিনের ছাপড়া উঠেছে । সেখানেই তারা বাড়ি । বাড়িতে তার বউ রয়েছে ।
জাহির শেখের বয়স একটু বেশি । তবে বিয়ে করেছে খুব বেশি দিন হয় নি । তার বউ তার থেকে কম করে হলেও ২০ বছরের ছোট । এই নিয়ে অন্যান্য ঘরের মানুষজন হাসি ঠোট্টা করে । তবে জাহির শেখ সেটা গায়ে মাখে না ! সে জানে এতো বয়সে সে কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে পেরেছে বলেই মানুষজন হিংসাতে জ্বলে ।

জাহির শেখ আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইজান আর কিছু দিবো ?
আগন্তক এরই ভেতরে একটা দুধ চা দেওয়া হয়েছে । তার আগে সে একটা বড় কেক খেয়েছে । এখন চায়ের সাথে একটা সিগারেট ধরিয়েছে ।
আগন্তক একটা বাইকে এসেছে । বাইকটা দোকানের সামনেই পার্ক করা । বাইকের নামটা জাহির শেখ পড়তে পারে নি । তবে দেখে বেশ দামিই মনে হচ্ছে । জাহির শেখ এমন মানুষদের চিনে ভাল করে । এর আগেও এমন হয়েছে । এদের বেশির ভাগই হয় বড়লোকের ছেলে । রাতে বেলা বাইক কিংবা গাড়ি নিয়ে বের হয় । কোথাও দাড়িয়ে বিড়ি সিগারেট খেতে ইচ্ছে হয় । এদের অনেকে আবার নেশাগ্রস্থ থাকে । মাথা ঠিক থাকে না । বিড়ি সিগারেট খেয়ে বড় নোট দিয়ে চলে যায় । অনেকে আবার খুশি হয়ে বকশিস দেয় । জাহির শেখ এই আশাতেই কাস্টমারকে আপ্যায়ন করে চলেছে ।
যদিও তার এখন বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে । রাত হয়ে গেছে অনেক । মিনু এতো সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । অবশ্য ঘুমিয়ে পড়লে সমস্যা নেই । সে গেলেই আবার উঠে পড়বে । আজকে বৃষ্টির ভেতরে রাতটা ভাল কাটবে । এই কথাটা মনে আসতেই একটা মুচকি হাসি চলে এল হাজির শেখের মুখে । সেই হাসিই সম্ভবত কাস্টমারের চোখে পড়লো । সে বলল, কি ব্যাপার চাচা মিয়া হাসেন কেন?
-এমনি বাবাজি । কোন কারণ নাই । আপনে আর কিছু নিবেন?
-এক প্যাকেট সিগারেট দেন ।
-কোনটা দিবো ভাইজান ?
-যেইটা আপনের ইচ্ছে !

জাহির শেখের মনটা ভাল হয়ে গেল । যাক ভাল হয়েছে । দোকানটা তখন বন্ধ না করে ভালই করেছে । কাস্টমার লোকটাকে আরও ভাল করে দেখলো । বয়স ত্রিশ বত্রিশের কাছাকাছি । গায়ের রং বেশ ফর্সা । দোকানের হ্যারিকেনের আলোতে খুব বেশি ভাল বোঝা না গেলেও দেখতে শুনতে বেশ ভালই মনে হচ্ছে ।
ছেলেটা আবার বলল, চাচা মিয়া আরেক কাপ চা বানান । আপনেরে হাতে চা টা বেশ ভাল ।

এমনটাই হবে হাজির শেখ মনেই করেছিলো । তার হাতের চা ভাল এটা সে খুব ভাল করেই জানে । মিনুও প্রথম এই চা খেয়েই তার প্রতি এগিয়ে এসেছিলো। যদি সে এই চা ভাল না বানাতে পারতো তাহলে হয়তো মিনুর সাথে তার আজকে ঘর করা সম্ভব হত না । এমন কি এখনও মিনু তার হাতের চা খুব পছন্দ করে । ঘর ছেড়ে এখনও সে তার দোকানে এসে হাজির হয় চা খাওয়ার জন্য । ব্যাপারটা জাহির শেখের বেশ ভালই লাগে ।

-আপনার চায়ের সুনাম অনেক ।
জাহির শেখ একটু দাঁত বের করে হাসলো । তারপর বলল, এই আর কি ! মানুষ জন পছন্দ করে আর কি !
ছেলেটা হাসলো । তারপর বলল, হ্যা । এতোই পছন্দ করে যে একজনের বউ পর্যন্ত চলে আসে আপনার কাছে !

লাইনটা শোনার সাথে সাথেই জাহির শেখের মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি হল । সে ঝট করে তাকালো ছেলেটার দিকে । ছেলেটা এবার জাহির শেখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের দিকে তাকাতেই জাহির শেখের বুকের ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো । এতো কোন সাধারন লোকের চোখ না । জাহির শেখের মনের ভেতরে কি ডেকে উঠলো । সে জলদিই এখান থেকে পালাতে চাইলো। তার মনে হল এখান থেকে এখনই চলে যাওয়া উচিৎ । এখানে থাকাটা খুব বেশি নিরাপদ হবে না । সে বলল, ভাইজান টাকাটা দিয়ে দেন । দোকান টা বন্ধ করবো । মেঘ করছে । বৃষ্টি আইবো !
-আরে এতো জলদির কি বাসায় গিয়ে কি হবে ! তোমার বউ বাসায় নেই ।
জাহির শেখ বলল, মানে কি বলছেন ? আপনি এসব কি বলতেছেন? আপনে কে ?
-আমি কে সেটা জানা জরূরী না জরূরী হচ্ছে তুমি আর মিনু মিলে কি করছো সেটা !
-আপনে কি চান?

আগন্তুক এবার উঠে দাড়ালো । তারপর হাতটা পকেটে ভরলো। জাহির শেখ এবার সত্যিই ভয় পেল । রাত প্রায় বারোটা বার হয়ে গেছে । আকাশে মেঘ ডাকে ঘনঘন । তাই বাইরে কোন লোক নেই ।
আগন্তুক বলল, দেখো, কাউকে পছন্দ হতে পারেই । পুরানো স্বামীকে ছেড়ে নতুন কাউকে পছন্দ করাটাও খুব একটা অন্যায়ের ভেতরে না। তুমি যদি কেবল মিনুকে নিয়ে পালিয়ে আসতে তাহলে হয়তো আমাদের কোনদিন দেখা হত না । কিন্তু আসার আগে তুমি আর মিনু মিলে লিয়াকতকে মেরে ফেলেছো । বেচারা ঠিক মত বিছানা থেকে নড়তে পর্যন্ত পারতো না ।

জাহির শেখের শিরদার বেয়ে একটা ভয়ের অনুভূতি ছেঁয়ে গেল কেবল । সে যেন নড়তে ভুলে গেছে । সামনের মানুষটাকে সে প্রচন্ড ভয় পাওয়া শুরু করছে । মিনুর আগের স্বামীকে তারা দুজন মিলে যে মেরে ফেলেছিলো বালিশ চাপা দিয়ে এবং সেটা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়েও দিয়েছিলো । লিয়াকত অনেক দিন থেকেই অসুস্থ ছিল । নড়তে পারতো না বিছানা থেকে । কেউ জানতে পারে নি । তাহলে এই লোকটা কিভাবে জানতে পারলো ? তাও বছর দুয়েক হয়ে গেছে ।

জাহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা নিজের পকেট থেকে হাত বের করলো । তার হাতে একটা রিভালবার । মুখটা একটু যেন বেশি লম্বা মনে হল জাহির শেখের কাছে । জাহির শেখের বুঝতে কষ্ট হল না যে পিস্তলের মুখটা লম্বার কারণ । গুলি করবে কিন্তু আওয়াজ বের হবে না । মুভিতে সে দেখেছে ।

হলও তাই । আগন্তুক গুলি চালালো। পরপর দুইবার । গুলি দুটো লাগলো জাহির শেখের বুকে। সে মুহুর্তের ভেতরে মারা গেল। একটা আওয়াজ পর্যন্ত করতে পারলো না। দোকানের ভেতরেই মুখ থুবড়ে পরে গেল সে । জাহির শেখের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় একবার থুথু ফেলল । তবে তখনই চলে গেল না সে ! এখানে আসার আগেই সে জাহির শেখের বাড়িতে গিয়েছিলো ।
দরজাতে আওয়াজ পেয়ে ঘুমন্ত মিনু ভেবেছিলো হয়তো জাহির শেখই এসেছে । দরজা খুলে দিয়েছিলো । তার কপালেও এই একই ভাবে দুটো গুলি বরাদ্ধা করেছে সে ! সাথে সাথেই মারা গেছে সেও দরজার পরেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সেখানে !

আগন্তুক চায়ের কাপটা হাতে দিল । জাহির শেখ মানুষ যেমনই হোক চা বানায় বেশ ভাল ।
চায়ের চুমুক দিয়ে আরেকবার জাহির শেখের দিকে তাকালো । খোলা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আগন্তুকের দিকে । হ্যারিকেনের আলোতে বিস্ময় আর ভয় দেখা যাচ্ছে সেখানে !

আগন্তুক হাসলো । তারপর আমন মনে চায়ে রকাপে চুমুক দিতে লাগলো !

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×