নেকড়ে আর হরিণ সাবকের গল্প মনে আছে কি? যেখানে নেকড়ে যখন হরিণ সাবকে খেতে চায় তখন কত রকম অযুহাত তৈরি করে । নানা রকম উছিলাতে যে হরিন সাবককে খাওয়ার ব্যাপারটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করে। ঠিক সেই রকম ভাবে ধর্ষণকে জায়েজ করার জন্যও আমাদের সমাজে এই নেকড়ে রূপী ধর্ষক এবং পটেনশিয়াল ধর্ষকরা এই রকম কিছু অযুহাত তৈরি করে রেখেছে । যেখানেই ধর্ষন, ইভটিজিং জাতীয় কোন ঘটনা ঘটে সবার আগে এই ধর্ষকের দল সেখানে গিয়ে হাজির হয় । তাদের যুক্তির বাহার নিয়ে হাজির হয় ! অনেকে এই যুক্তিগুলো দেয় জেনে শুনে । অর্থ্যাৎ তারা জানে যে এই যুক্তিগুলো খোড়া তবুও নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য এই যুক্তিগুলো হাজির করে । আবার আরেকদল আছে যারা আসলে জানেই না যে এই যুক্তিগুলো সঠিক না । তাদের মস্তিস্ক আসলে এই ভাবেই তৈরি হয়েছে । ছোট বেলা থেকে তারা তাদের বাবা চাচা, বড় ভাই সহ আশে পাশের অনেককেই দেখেছে এই কাজ গুলো করতে। তাদের মনে একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে যে বুঝি এমনই হয় !
যাই হোক আপনিও দেখে নিন নিচে লেখা অযুহাত গুলো কোৎি আপনি কোন দিন দিয়েছেন কিনা ! জেনে শুনে বুঝে কিংবা না জেনে বুঝে ! যদি এমন কোন অযুহাত দিয়ে থাকেন কিংবা এমন কিছু অযুহাতে আপনার সমর্থন থাকে তাহলে আপনারও রয়েছে একটু ধর্ষক মন । সেটা কেবল সুযোগের অভাবে এখনও ভর্দ্র হয়ে আছে !
অযুহাত সমূহের লিস্টঃ
১. মিষ্টি খোলা রাখলে পিপড়া তো আসবেই।
২. ছেলা কলার উপরে মাছি তো বসবেই ।
৩. মেয়েটির পোশাক ভাল ছিল না । এমন তো হবেই।
৪. মেয়েটি একা একা কেন বের হয়েছে । মেয়েটি বের না হলে এমন টা হত না ।
৫. মেয়েটির স্বভাব ভাল না । অনেক ছেলে বন্ধু আছে ওর । এমন তো হবেই ।
৬. মেয়েটি প্রেম করে বেড়ায় ।
৭. বোরকা পরে বের হলে এমন হত না ।
৮. এতো রাতে মেয়েটি কেন বের হয়েছে !
৯. জোয়ান ছেলের সামনে ঘুরঘুর করলে তারা তো এমন করবেই ।
১০. নারী হচ্ছে তেতুলের মত । তেতুল দেখলে যেমল মুখে লালা আসে তেমনি নারী দেখলে মুখে ....
১১. আহা বয়ফ্রেন্ডের সাথে ..... দোষ নাই আর আমরা ...... দোষ ..
১২. শেয়ার সামনে মুরগি হাটলে শেয়াল কী করবে? এমন তো হবেই ।
১৩. এই সমস্ত মেয়েদের কারণে ধর্ষণ হয় । (কোন মেয়েকে কিংবা তার ছবি দেখে বলা বক্তব্য)
আপনি নিজে কি কোন দিন এই মন্তব্য গুলো করেছেন? কিংবা এমন মন্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন? কিংবা সরাসরি হয়তো বলেন নি কিন্তু মনে মনে ঠিকই ভেবেছেন যে ঠিকই বলেছে কথা গুলো?
যদি এমনটা না করে থাকেন তাহলে অভিনন্দন আপনি একজন মানুষ । নিজেকে নিয়ে আপনি গর্ব করতে পারেন । সত্যিই পারেন । আপনার মত মানুষ পৃথিবীতে দরকার প্রচুর ।
আর যদি করে থাকেন তাহলে নিশ্চিত ভাবে আপনি একজন ধর্ষক কিংবা সুযোগের অভাবে ভদ্র। আপনি কুকুর শুয়োর থেকেও অধম ।
আরও একটা অযুহাত এই বুরবাকের দল দেয় । এটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি ।
পোশাকের কারণে ধর্ষণ হচ্ছে এমনটা বলা বুরবাককে যখন ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা, মধ্য বয়সী কোন নারীর কিংবা সাত বছর বয়সী কোন মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে এদের তো পোশাক ঠিক ছিল তাহলে কেন ধর্ষণ হল,তখন এই বুরবাকের দল কী বলে জানেন? এই আহম্মক শুকরের পাল বলে যে, অন্য এক মেয়ের খারাপ পোশাক দেখে ছেলের বীর্য মাথায় উঠেছে সেটা শান্ত করতেই তখন তারা এই স্কুল মেয়েকে ধর্ষণ করে ।
এখন বলেন এই যখন তাদের যুক্তি তখন আপনি এদের সাথে তর্ক কিভাবে করবেন? কোন যুক্তিতে করবেন!
মেয়েদেরকে আগে থেকে সাবধান করে বলি । আপনার পরিচিত বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের আচরণ ভাল করে খেয়াল করুন। বিশেষ সুযোগ বুঝে কৌশলে তাদের উপরের প্রশ্ন গুলোর ব্যাপারে জানতে চান । তাদের মনভাব খেয়াল করুন । এবং নিজেকে তাদের কাছ থেকে সাবধান রাখুন । মনে রাখবেন যার মনে এই ভিক্টিক ব্লেবিংয়ের ব্যাপারটা রয়েছে, তার মন ধর্ষকের মন । সুযোগ পেলে সে আপনাকে ছাড়বে না ।
মনে রাখবেন যে ধর্ষক তার মাথায় ঘিলু থাকে না, থাকে যৌনাঙ্গের বীর্য, সে সামনে কেবল মেয়ে দেখে, তার পরনে কী পোশাক আছে, তার বয়স কত, সে কোন ধর্মের কিংবা সম্পর্কে সে কি হয় এসব কিছু দেখে না ।
সবার শেষে অনলাইন থেকে প্রাপ্ত একটা ছোট কৌতুক দিয়ে শেষ করি । রাতের বেলা পাঁচটি ছেলে কুকুর রাস্তায় বসে গল্প করছিলো । এমন সময় একটা মেয়ে কুকুর সেখানে যাচ্ছিলো । মেয়ে কুকুরটি সেই পরিবেশে এসেই ভয় পেয়ে গেল । তখন পাঁচ কুকুর থেকে একজন কুকুর সামনে এসে বলল, তুমি ভয় পেও না । আমরা কুকুর, আমরা মানুষ না ।