somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দোয়া কবুল

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃinquirer.com

সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই । তবে এখনও পুরোপুরি অন্ধকার নেমে আসে নি স্যান ডিয়েগোর বুকে । তবে ধীরে ধীরে কালো অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে শহরটা । আরও একটি বিভিষিকাময় রাত নেমে আসছে । আব্দুল মুতালেপ দ্রুত পা চালালেন । শহরের এক প্রান্তে তার বাড়ি । জরূরি খাদ্যের জন্য আজকে তাকে বের হয়েছে । লম্বা লাইন ধরে এখন তাদেরকে খাবার দেওয়া হয় । সেই খাবারই তিনি তার এবং তার পরিবারের জন্য সংগ্রহ করতে বের হয়েছিলেন । চারিদিকে এক ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে । সারা দিন তিনি তার বউ আর তিন ছেলে মেয়ে টিভির সামনে বসে থাকেন একটু ভাল সংবাদের আশায় । কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে । পৃথিবীর এতো শক্তিশালী একটা দেশের অবস্থা এই রকম হবে সেটা সে কোনদিন ভাবতে পারেন নি ।

আব্দুল মুতালেপ বাড়ির কাছে চলে এসেছেন । বাড়িতে সাদা রং করেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে । অন্য সব বাড়ি থেকে তাই বাড়িটা সবার আগে চোখে পড়ে । এটা নিয়ে সে বেশ চিন্তিত । যখনই কেউ এই এলাকাতে আসে সবার আগে তার বাসাটাই সবার চোখে পড়ে । অবশ্য যখন বানিয়েছিলেন তখন তিনি চেয়েও ছিলেন যেন সবার আগে এই বাসাটা সবার যেন চোখে পড়ে । দেশের সব জমিজমা বিক্রি করে দিয়ে তিনি পরিবার সহ আমেরিকাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সেই ২০২২ সালে । সময় গুলো কী চমৎকারই ছিল । আমেরিকান ভিসাটা পেয়ে যাওয়ার পরপরই মনে হয়েছিল জীবনটা বুঝি এবার সেটেলড হয়েছিলো । ভাগ্য বুঝি তার দিকেই ।

একা আসার পরপরই একটা ভালো মাল্টিন্যশনাল কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায় । এক বছরের মাথায় এই বাড়িটা কিনে ফেলেন । ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা জন্য ভর্তি করেন ভাল স্কুলে । সপ্তাহ দেশে উইকেন্ডে ঘুরতে যান নানান স্থানে । সব কিছু হয়ে যাচ্ছে নিয়ম মাফিক । কাজ করছেন, দু হাতে টাকা কামাচ্ছেন জীবনটাকে উপভোগ করছেন । ঐ কয়েকটা বছর মনে হচ্ছিলো এর থেকে সুখের জীবন বুঝি আর হবার নয় !

ঠিক সেই সময়েই আমেরিকাতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল । রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেটের মধ্য। সালটা ২০২৫ । দেশ দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে গেল। পুরো দেশটার অবস্থা যেন ভয়ংকর হয়ে উঠলো । যতই দিন যাচ্ছে ততই অবস্থা খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুই গ্রুপের মাঝে যুদ্ধ হচ্ছে । মারা যাচ্ছে অগনিত সাধারন মানুষ । ডেমোক্রেটরা রিপাবলিকান সন্দেহ যে কাউকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে ডেমোক্রেটরা উল্টোটা করছে । কেউ নিরাপদে নেই ।

আব্দুল মুতালেপের চাকরি চলে গেল কয়েক মাসের মধ্যেই । কেবল তার চাকরিই অনেক কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেল । বাইরের দেশের সক নাগরিক নিজ দেশে পালিয়ে যেতে শুরু করলো । একটা সময়ে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল । সকল এয়ারপোর্ট গুলো দুই গ্রুপের বিদ্রোহীরা দখল করে নিলো । এছাড়া বাইরের দেশের সাথে আমেরিকার বিামন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল কদিন পরেই । কেউ আর আমেরিকাতে ঢুকতেও পারছে না আবার বের হতে পারছে না । অনেকে অবশ্য লুকিয়ে মেক্সিকান বর্ডার দিয়ে পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তবে মেক্সিকো নিজেদের বর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে । সেখান দিয়ে যাওয়াই রিক্স অনেক বেশ । অবশ্য আব্দুল মোতালেপের দেশে ফেরার কোন উপায় নেই । আর কোন দিন দেশে আসবে না বলেই সে সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছিলো ।

এখন এই দেশেই সে আটকা পরেছে পরিবার সহ । তার আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই । খুব দ্রুত বাসায় ঢুকে পড়লেন । রাত হলেই ভয়ের ব্যাপারটা বেশি । বিদ্রোহীরা রাতের বেলা এসেই মানুষের বাসায় হামলা করে । বাড়িতে যদি বিরোধী পক্ষের কোন চিহ্ন পায় তাহলে তাকে ধরে নিয়ে যায় । অথবা সরাসরি সেখানেই গুলি করে মেরে ফেলে । আজ সকাল থেকে এলাকাটা বেশ থমথম করে আছে । গতকাল নাকি পাশের এলাকাতে হামলা হয়েছে । অনেক লোককে মেরে ফেলা হয়েছে । লাইন ধরে খাবার নেওয়ার সময় লোকে বলাবলি করছিলো যে আজকে এই এলাকাতে বিদ্রোহীরা আসতে পারে ! ভয়ে তার মুখ শুকিয়ে গেছে । কী করবেন তিনি নিজের ছেলে মেয়েদের নিয়ে ! কোথায় গিয়ে উঠবেন ? বাড়ির পেছনে একটা ছোট্ট জঙ্গলনের মত আছে । সেখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকবেন কি?

আব্দুল মুতালেপ বুঝতে পারছেন না । রাতের খাবার শেষ করে দরজা জানালা বেশ শক্ত করে আটকে দিলেন । যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিটি দরজাতে আলাদা করে খিল লাগানো হয়েছে । তবে তিনি জানেন যদি বিদ্রোহীরা চলে আসে ভারী মর্টারের আঘাতে এই দরজা টিকে থাকবে না ।

রাতে একটু চোখের পাতা এক করেছিলেন তখন গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেলেন আব্দুল মুতালেপ । এই পাশেই গুলি হচ্ছে । পাশের বাড়িতে বিদ্রোহীরা চলে এসেছে ।
এই তো গুলি করলো !
চিৎকারটা চিনতে পারলেন তিনি । জহর শেখ। এক মিশরীয় । অনেক দিন থেকেই পাশাপাখি বাস করতো ওরা !

এমন সময়ে তার দরজাাতে ধাক্কার আওয়াজ হল ।
আব্দুল মুতালেপ বুঝলেন তাদের দিন শেষ হয়েছে । পেছন থেকেও আওয়াজ আসছে । ওরা বাড়ির পেছনেও চলে গেছে । আর পালানোর জায়গা নেই । এমন সময়ে দরজা ভেঙ্গে পড়লো ।

আব্দুল মুতালেপ দেখলেন কালো পোশাক পরা চারজন অস্ত্রধারী তার দিকে তাক করে আছে । ইংরেজি কঠিন কন্ঠে বলল, ইউ ডেমোক্রেট ?

আব্দুল মুতালেপ কি বলবে বুঝতে পারলেন না । কারণ হ্যা না যাই বলা হোক না দুটোতেই বিপদ আছে । সামনে যারা দাড়িয়ে আছে তারা ডেমোক্রেট নাকি রিপাবলিকান সেটা সে জানে না । যদি হ্যা বলেন এবং তারা রিপাবলিকান হয় তাহলে তার জীবন শেষ । আর যদি না বলেন এবং তারা ডেমোক্রেট হয় তাহলেও তার জীবন শেষ ।

উপরওয়ালার নাম নিয়ে সে বলল, না !
ব্যাস কষে একটা বুটের লাথি এসে পরলো তার বুকে । তাকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হল বাড়ির বাইরে । রাস্তায় দাড় করিয়ে তার দিকে বন্দুক তাক করা হল । তার শেষ সময় এসে হাজির । সে নিজের চোখ বন্ধ করলো । তখনই ফ্লাশ লাইটের মত একটা দৃশ্য তার চোখের সামনে এসে ধরা দিল ।
২০২১ সালে এক জুম্মার দিনে সে আমেরিকার ধ্বংশ কামনা করে দান বক্সে ১০০ টাকা দান করেছিলেন । সেই দোয়া কবুল হয়েছে ।

(সমাপ্ত)

অপ্রাসঙ্গিক ফেসবুক স্টাটাস
প্রচলিত আছে '' বাঙালীর চাওয়া দুইটা- ১। আমেরিকার ধ্বংশ ২। আমেরিকান ভিসা





মুল গল্পঃ হাফিজুর রহমান রিক ।
পুনঃরচনাঃ অপু তানভীর ।


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×