somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্পেশাল পহেলা বৈশাখ, আমার প্রথম প্রেম যেভাবে শুরু হয়েছিলো । :D

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিবার পহেলা বৈশাখ এলেই আমার কেবল এই ঘটনা মনে পড়ে । আমার প্রথম প্রেম শুরু হওয়ার গল্প । গত ভালবাসা দিবসে আমি আমার প্রেমিকা চলে যাওয়ার গল্প বলেছিলাম । আশা করি সেটা সবারই মনে আছে । এই গল্পটা আসলেই সেই গল্পের গল্পেরই শুরু । অর্থ্যাৎ আমার প্রথম প্রেমিকার সাথে আমার প্রথম প্রেমটা কিভাবে শুরু হয়েছিলো সেটা ।

ধরে নিই আমার আমার প্রথম প্রেমিকার নাম নিশি । নিশিকে আমি প্রথম দেখি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি । প্রথম দেখাতেই প্রেম যাকে বলে । তবে তখন সেই সুযোগ ছিল না কোন ভাবেই । আমি আবার বরাবরই বড়ই লজ্জাশীল মেয়েদের ব্যাপারে । অর্থ্যাৎ মেয়েদের সাথে ঠিকঠাক মত কথা বলতে পারি না । তাই তার পেছনে ঠিকমত ঘুরতে পারি নাই । সেই ছোট বেলার প্রেম মনের ভেতরেই রয়ে গেল বহুদিন ।

ক্লাস সেভেন আইচ নাইন পার করে উঠলাম ক্লাস টেন । আমাদের স্কুলটা কম্বাইন হলেও ছেলে ও মেয়েদের ক্লাস রুম ছিল আলাদা । কিন্তু ক্লাস টেনে এসে আমাদের একই ক্লাস রুমে ক্লাস শুরু হল । প্রতিটা দিন তখন বড় রঙ্গিন মনে হত । এরই ভেতরে একদি আমারই এক কাছের বন্ধু জানালো যে সে প্রেম শুরু করে দিয়েছে ক্লাসেরই আরেক মেয়ের সাথে । সেই মেয়ে আবার নিশির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী । বন্ধুর প্রেমের কথা শুনেই বুঝি এতো দিন মনের ভেতরে লুকায়িত থাকা সেই প্রেমটা জেগে উঠলো । বন্ধুর কাছে মনের কথা বলে দিলাম । বললাম যে ক্লাসের নিশিকে আমি সেই কবে থেকে পছন্দ করি । সম্ভবত এই কথা সে তার প্রেমিকার কাছেও পাস করে দিয়েছিলো এবং খবর পৌছে গেল নিশির কাছে ।

তারপর একদিন আমার কাছের দুএকজন বন্ধুর মাধ্যমে খবর এল যে নিশিও প্রেমের সম্পর্ক করতে প্রস্তুত তবে একটাই শর্ত যে আমাকে আগে প্রেম নিবেদন করতে হবে । আমি তো এক পায়ে খাড়া ! এক টিফিন প্রিয়ডে একটা রুমাল একটা চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিলাম । আমি তো নিশ্চিত জানি যে আজ থেকেই সে আমার প্রেমিকা হয়ে যাচ্ছে । এতো দিনের মনের ভেতরে সে ইচ্ছে ছিল সেটা আজকে পুরণ হতে যাচ্ছে ।
কিন্তু ওমা ! কিছু সময় পরেই তার বান্ধুবী দুজন রুমাল আর চিঠি ফেরৎ দিয়ে বলল যে নিশি এখন প্রেমের কথা ভাবছে না । আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । কী বলে এই মেয়ে ! এই না বলল যে আমি প্রেম নিবেদন করলেই সে রাজি হয়ে যাবে !
পরে আসলে জেনেছিলাম যে নিশি এই ব্যাপারে কিছু জানতো না । আমার বন্ধুরা মিলে এই প্লান করেছিলো । তাদের একটা ধারণা ছিল যে আমি প্রেম নিবেদন করলে নিশি রাজি হয়ে যাবে কিন্তু নিশি রাজি হল না ।

টিফিন প্রিরিয়ডে প্রেম নিবেদন করে ছ্যাঁকা খেলাম। ছুটি হতে না হতে পুরো স্কুল এই কথা জেনে গেল । আমি লজ্জা্য আর নেই । সময় টা সম্ভবত ছিল মার্চের শেষের দিকে । এরপর আরও নানান ঘটনা । এতো কথা ঠিক মনেও নেই । তবে আগেকার দিনের প্রেমিক প্রেমিকাদের মাঝে হাত কেটে রক্ত বের করার একটা রীতি ছিল । আমিও সেই একই রীতি ফলো করলাম । কয়েকটা কাগজ গেল আবারও ।

এরপর নিশির এক বান্ধবীর ছোট ভাইয়ের জন্মদিনে আমাদের কয়েকজনের দাওয়াত পড়লো । যাবো না যাবো না করেও হাজির হলাম ।সে দিন ঠিক হল যে পহেলা বৈশাখে আমাদের বাসায় তারা যাবে । ততদিনে শুনেছি যে নিশির মন নাকি খানিকটা গলেছে । এটা একটা গ্রিন সিগনাল ।

যথারীতি ১৪ই এপ্রিল এল । সকাল সাড়ে দশটার দিকে তারা চারজন আমাদের বাসায় এসে হাজির । সাথে আমার তিন বন্ধুও ছিল । খাওয়া দাওয়া নাস্তা চলল, আড্ডা চলল । এরই মাঝে এলো সেই সময় । তার এক বান্ধবী আমাকে ডেকে বলল যে নিশি আমার সাথে আলাদা কথা বলতে চায় ।

তাকে নিয়ে বারান্দায় বসলাম । সে জানতে চাইলো যে তোমার কি বলা আছে বল । আগেই বলেছি যে আমি কথা বলার ব্যাপারে বেশ লজ্জাশীল । তাই শত চেষ্টা করেও বলতে পারলাম না । তারপর বলল যে লিখে দেই?
সে সম্মতি জানালো । আমি লিখেই তাকে আবারও প্রেম নিবেদন করলাম । এইবার গতবারের মত হল না । সে রাজি হল ।

ঘটনা সেখানেই শেষ না । আমরা ঘরে ফিরে এলাম আর সোফার উপরেই বসলাম । সোফার পাশে রাখা একটা ছোট বক্স টেবিলের ড্রায়ার খুলে হঠাৎ একটা এন্টিকাটার বের করলাম। কেন করলাম আমি নিজেও জানি না । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই কাটার দিয়েই হাত কেটেছো?
আমি বললাম হ্যা ।
ঘটনা সত্যি ছিল ।
সে বলল, এখন কাটো দেখি !

ব্যাপার একটা একবার ভাবেন । সদ্য হওয়া প্রেমিকা আমাকে বলছে তার সামনে হাত কাটতে । ডান হাতে কাটারটা ধরে বাঁম হাতের উপরে এক টান দিলাম ।
এই এন্টিকাটার গুলো নিশ্চয়ই চেনেন । তীব্র ধার যুক্ত ব্লেড । দেড় ইঞ্জি মত কেটে গেল । একেবারে সাদা মাংস বের হয়ে গেল । সেদিন আমার কেমন ব্যাথা লেগেছিলো সেটা আমার এখন আর মনে নেই । তবে নিশি যে দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল সেটা এখনও মনে আছে । এবং সেই কাটা দাগ এখনও আমার হাতে রয়েছে । ছবি যুক্ত করে দিলাম ।



মোটামুটি এই হচ্ছে আমার পহেলা বৈশাখের চমৎকার এক স্মৃতি । এটা কোন দিন ভোলা যাবে না মনে হয় !

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা । সেই সাথে রমজান মোবাকর ।
আপনাদের দিন শুভ হোক !

ভ্যালেন্টাইনের দুঃখ ভর্তি কাহিনী জানতে এই পোস্টে ঢু মারতে পারেন।

Photo by engin akyurt on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:১৩
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×