সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা । যদিও একটু দেরি হয়ে গেছে । আসলে কোথাও ঘুরতে গেলে আমি নেটওয়ার্কের ভেতরে থাকতে খুব একটা পছন্দ করি না । মোবাইল তখন ব্যবহার করি কেবল ছবি তোলার জন্য । দুইটা দিন ছিলাম সমুদ্রের বুকে । যদিও সেখানে নেটওয়ার্ক ছিল ঠিকই । তবে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হই নি ইচ্ছে করেই । বছরের শুরুটা যান্ত্রিকতা দেখে একটু দুরে থাকি ।
বর্ষ বরণ কিংবা থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করা কোন কালেই ঠিক হয়ে ওঠে নি । যখন ছোট ছিলাম তখন বাড়ির আশের পাশের মানুষ জনেরা চাল ডাল তুলে খিচুড়ি রান্না করতো । সেটাই খাওয়া হত । এটাই ছিল বলতে গেলে হ্যাপি নিউ ইয়ার পালন । ঢাকাতে আসার পরে সব গুলো নিউ ইয়ার আমি ঘুরে শুয়ে বসেই কাটিয়েছে । এইবারও সেই রকমই পরিকল্পনা ছিল । তবে কিভাবে সমুদ্রে যাওয়ার প্লান তৈরি হল সেটা নিজেও জানি না । ৩০ তারিখ রাতে রওয়ানা দিয়ে দিলাম । ভয় ছিল যে বাস যদি দেরি করে কোন কারণে তাহলে শিপ মিস করবো হয়তো । ১৬ই ডিসেম্বর নাকি অনেকে বাস ঠিক সময়ে পৌছাতে পারে নি । তবে আমরা ঠিক সময়েই পৌছিয়ে গেলাম ।
টেকনাফে সেদিন বেশ কুয়াশা ছিল । নিচের এই জাহাজে করে আমরা রওয়ানা দিলাম
শীপে ওঠার পথে এই দৃশ্য পড়ে
এইটা হচ্ছে শীপের বোডিং পাস
জাহাজের সাথে উড়ে চলেছে পাখির দল । আগে যখন গিয়েছিলাম তখনও এ দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছিলো ।
আমরা কেবল একা নই । সাথে ছিল আরও জাহাজ
ছিল মাছ ধরা নৌকা
আমরা সেন্টমার্টিন পৌছালাম এগারোটার কিছু পরে । পর্যটকের সংখ্যা বেশ ভালই ছিল । আমাদের রিসোর্ট আগে থেকেই বুক করা ছিল । মুল জেটি থেকে সেটা অনেকটাই দুরে । অটো ভাড়া চাইলো আকাশ সমান । ১০ মিনিটের রাস্তা অথচ ভাড়া চাইলো ৩০০ টাকা । সব অটোর ভাড়া একই । এর নিচে তারা যাবে না । বাধ্য হয়ে তাই নিতে হল ।
রিসোর্টের নাম নীল দিগন্তে । নিচের হাঁস গুলো রিসোর্টের ।
চেক ইন করে সবাই দৌড় দিল সমুদ্রে । আমিও হাজির হলাম । সমুদ্রের সামনে গেলেই প্রতিবার আমি বড় অবাক হই । আর হই বিষণ্ণ । এতো বড় সমুদ্রের সামনে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হয় । আমি ঘন্টার পর ঘন্টা এই পাড়ে বসে থাকতে পারি কেবল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আর গর্জন শুনে । আমার কোন ক্লান্তি আসে না ।
দুপুরে খাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার সমুদ্রের পাড়ে । বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখলাম । একটা বছর চলে গেল জীবন থেকে ।
সূর্য অস্তের পরে
রাত বিচে ছিলাম অনেকটা সময় । আমাদের মত অনেকেই ছিল । যদিও কর্তৃপক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিলো যেন কোন ভাবেই বাজি কিংবা ফানুশ যেন না পোড়ানো হয় তবে রাত বারোটা বাজার সাথে সাথে বেশ কিছু ফানুশ আর আতশবাজি ফুটে উঠলো । সত্যিই বলতে কি সেগুলো দেখতে খারাপ লাগছিলো না । এভাবে এক বছর থেকে নতুন বছর প্রবেশ করলাম সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে । হঠাৎ করে আমার মন খারাপ হল খুব । এমন একটা রাতের জন্য আমি কতকাল অপেক্ষা করেছি প্রিয় মানুষটির সাথে কাটানোর জন্য । হয়তো আরও আরও অনেক কয় বছর অপেক্ষা করতেই হবে ।
পরদিন সকালের নাস্তা শেষ করে হাজির হলাম ছেড়া দ্বীপে ।
রোদের এতো তেজ ছিল যে বলার অপেক্ষা রাখে না । ফিরে এসে আবারও বেশ কিছু সময় সমুদ্রে ঝাপাঝাপি করলাম ।
বছরের প্রথম সূর্যাস্ত
এক তারিখেই অনেক পর্যটক চলে গিয়েছিলো। রাতে যখন বিচে যাই তখন বলতে গেলে আমরা কজন ছাড়া আর কেউই ছিল না। সেদিনও ছিলাম বেশ রাত পর্যন্ত । চারিদিকে কেবল সমুদ্রের ডাক ছাড়া আর কিছু ছিল না । কত সময় এক ভাবে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম তার কোন ঠিক ছিল না । বেশ রাত করেই রুমে ফিরে এলাম ।
পরের দিন আর কোন কাজ ছিল না । সকালে ঘুম থেকে আবারও হাজির হলাম বিচে । অন্যেরা তখনও ঘুমে । আমি একা একা এদিক ওদিক হাটাহাটি করলাম । অনেক দুর পর্যন্ত ।
পাবলিক আর বদলাবে না । ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে তারপরেও এই রকম কত গুলো বোতল যে পড়ে থাকতে দেখলাম তার কোন ঠিক নেই ।
দুপুরে খাওয়া শেষ করে শীপে উঠলাম । শীপ থেকে শেষবারের মত দ্বীপের ছবি
নিচের রোদ পোহানোর ছবি দেই একটা ।
তিনটা দিন কিভাবে চলে গেল টের পেলাম না । আজকে সকালে আবার এসে হাজির হলাম এই ইট পাথরের শহরে । কাল কিংবা পরশু থেকে আবারও সেই যান্ত্রিক জীবন শুরু ।
নতুন বছর সবার ভাল কাটুক এই কামনা করি । সবাইকে আবারও নতুন বছরের শুভেচ্ছা ।
ছবি গুলো আমার কম দামী মোবাইলে তোলা। আরও কিছু ছবি যুক্ত করেছি । সেগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করতে পারেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪২