আজকে ঈদ উপলক্ষে আমাদের বাসায় প্রায় সাড়ে ছয়কেজি মাংশ এসেছে । এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে কেবল আমাদের বাসাতেই নয়, আমাদের পুরো জাফরপুর গ্রামের প্রায় প্রত্যেকের বাসাতেই আজকে এই সাড়ে ছয়কেজি করে মাংস করে হাজির হয়েছে ।
টাকায় হিসাব করলে সেটা কত হয় ? বর্তমানে গরুর মাংসের বাজার দর কত? সম্ভবত সেটা সাড়ে ছয়শ থেকে সাতশ টাকা । টাকা হিসাবে সেটা হবে সাড়ে চার হাজার টাকার মত । একবার ব্যাপারটা ভাবুন । একটা গ্রামের প্রায় সবাই সাড়ে চার হাজার টাকার কেবল গরুর মাংস কিনছে ।
এইখানেই আসল ব্যাপারটা । গরুর মাংস পছন্দ করে না এমন বাঙালী খুব কম পাওয়া যাবে । আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে ঈদের সময়ে এই গরুর মাংসটার আবেদন আলাদা রকমের । কিন্তু বর্তমানে গরুর মাংসের দামের পরিমান এতো বৃদ্ধি পেয়েছে যে একজন সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে এককেজি মাংস কিনতে গেলে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হয় । সেখানে ছয় কেজি কেনার কথা তো কল্পনাই করা যায় না । এই জন্য গ্রামের মানুষ বেশির ভাগ সময়েই এই সকল অনুষ্ঠানে ফার্মের মুরগির দিয়ে কাজ চালাতো । এমন অবস্থায় আমাদের গ্রামের কয়েকজন মিলে একটা দারুন বুদ্ধি বের করলো । তারা সবার কাছে গিয়ে একটা প্রস্তাব করলো । প্রস্তাবটা হচ্ছে সারা বছর ধরে প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন মাত্র ১০ টাকা করে জমা দিবে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে । তারপর ঈদের আগে সেই টাকা দিয়ে গরু কেনা হবে এবং সেটা গরুর মাংস সবাই ভাগ করে নিবে । কেউ যদি প্রতিদিন টাকা দিতে না চায় সে এক মাসে তিনশ টাকা দিতে পারবে। এই টাকা পুরো বছর জুড়ে জমা হবে ।
যখন প্রথমবার এই কাজটা করা হল তখন খুব বেশি মানুষ এতে যুক্ত হয়েছিলো না । কিন্তু যখন ঈদের সময় একটা গরু কেনা হল এবং অগশ গ্রহন কারী সবার বাসায়া গরুর মাংস গিয়ে হাজির হল তখন অন্য সবাই আগ্রহী হয়ে উঠলো । তরপর থেকে গ্রামের সবাই আস্তে আস্তে এই সমাবায় কাজে অংশ গ্রহন করা শুরু করলো । আজকে যতদুর জানি চারটা গরু জবাই করা হয়েছে । কালও হবে কিছু ।
এই কাজে দেখুন দুই দিন থেকে লাভ হয়েছে । টাকার হিসাবে একটা পরিবার পুরো বছর জুড়ে দিয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকার মত । কিন্তু সে মাংস পেয়েছে সাড়ে চার হাজার টাকার পরিমানে । এখানে এক হাজার টাকা লাভ । খুচরো মাংস কিনতে গেলে টাকা বেশি লাগবে । সেখানে আস্ত গরু কেনায় জন প্রতি খরচ কমে গেছে । অন্য দিকে একজনের পক্ষে এক সাথে সাড়ে চার হাজার টাকা কেবল মাংসের পেছনে খচর করাটা একটু কষ্ট সাধ্য কিন্তু প্রতিদিন ১০ টাকা কিংবা মাসে ৩০০ টাকা করে দিলে টাকাটা দিতে গায় বাঁধে না । এখানেও তাই হয়েছে ।
অনেকে আবার এক ভাগের জায়গাতে দুই ভাগও নেয় । সেখানে ১০ টাকার বদলে ২০ টাকা জমা দিতে হয় ।
এমন কিছু আপনারাও আপনাদের গ্রাম এলাকাতে করতে পারেন । এতে আশা করি উপকার হবে সবারই । তবে এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে টাকাটা যে রাখবে বা যার দায়িত্বে রাখা হবে যারা যারা এর পেছনে কাজ করবে তারা যেন সৎ আর নিষ্ঠাবান হয় । নয়তো আবার হিতে বিপরীত হতে পারে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:০২