somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের যে আফসোস গুলো আজও পূরণ হয় নি

১৪ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট বেলা থেকে আমার পরিবারের একটা শিক্ষা ছিল যে সব সময় নিজের গন্ডি বুঝতে হবে । যা আমার নেই, যা আমার সাধ্যের বাইরে সেই জিনিসের জন্য কখনো আফসোস করা যাবে না । এটা আমি কোন দিন করি নি । তবে না চাইতেও অনেক কিছু মনের মাঝে চলে আসে । এমন কিছু ব্যাপার আছে যা নিয়ে আমার আফসোস আছে । প্রায়ই মনে হয় যে এই ব্যাপারটা আমার সাথে কেন ঘটে নি! কেন পাই নি! এই আফসোসের কথা শুনলে হয়তো অনেকে হাসবে । আবার অনেকের কাছে এটা খুবই ছোট একটা ব্যাপার মনে হবে । কিন্তু আমার কাছে এই না পাওয়া গুলো এখনও বেশ গুরুত্বপূর্ন । এখনও আশা করি যে এই ব্যাপার গুলো ঘটবে আর আফসোস গুলো পূরণ হবে !

১. তখন সবে মাত্র ঢাকাতে এসেছি । সময়টা ২০০৭ সাল । ঢাকার পথ কিছুই চিনি না । কোচিং ছিল ফার্মগেট আর বাসা ছিল মোহাম্মাদপুর । চেনা জানা বলতে মোহাম্মাদপুর থেকে ফার্মগেটের পথ টুকু । বাসে করে যাই আসি । একদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে । তখন বৃষ্টি হলেই ঢাকার পথ ঘাট ডুবে যেত । আড়ং সিগনালে এসে বাস থেকে নেমে গেমাল । একটু আগেই প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে । বৃষ্টি তখনও পুরোপুরি থামে নি । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে । সংসদ ভবনের দিকে যাওয়ার পথে পানি জমেছে । এতো জ্যাম লেগে গেছে যে মনে হল যে এই ভীড়ের ভেতরে বাসে বসে না থেকে হাটা দিই ।
বাস থেকে নেমে ছাতা মেলে হাটতে শুরু করেছি, তখন দেখলাম দৃশ্যটা । একটা ছেলে আর মেয়ে । ছেলে মেয়ে দুজনেই নিজেদের প্যান্টের গুটিয়ে নিয়েছে । এক হাতে মেয়েটা ছাতা ধরেছে, বন্ধ । অন্য হাতে স্যান্ডেল । ছেলেটার এক হাতে স্যান্ডেল অন্য হাতে ছাড়া তবে সেটা খোলা । এক ছাতার নিচে তারা রাস্তায় জমা সেই পানিতে হাটছে আর গল্প করছে । চারিদিকের দিন দুনিয়ার কোন খবর নেই তাদের । হাটছে গল্প করছে !

এই দৃশ্যটা এখনও আমার চোখ লেগে আছে । ১৪ বছরের আগের একটা দৃশ্য এখনও আমি সেটা । আফসোস টা হচ্ছে যদি এমন ভাবে প্রিয় মানুষটির সাথে ঠিক এমন ভাবে হাটা যেত ! এমন ভাবে এক ছাতার নিচে ! এমন সুযোগ কোন দিন আসে নি । হয়তো সামনে কোন দিন আসবে !

২. এই আফসোসটাও এই বৃষ্টি কেন্দ্রীক । সময়টা আরও একটু পরে । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেছি তখন । আমার তখনও মাঝে মাঝে এই শখ ছিল যে আমি বাসে করে এদিক ওদিক চলে যেতাম । একদিন বৃষ্টির ভেতরে বসে উঠে বসলাম । বাসের নাম তরঙ্গ । এটা মোহাম্মাদপুর থেকে যায় বাড্ডা পর্যন্ত । আমি বসে আছি একদম শেষ সীটে । আমার সামনের বেশ কিছু সিট ফাকা যদিও বাসে তখন অনেকেই দাড়িয়ে আছে । সিট গুলোতে কেউ বসে নি কারণ জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাট এসে সব ভিজে গেছে । আমি পেছনের সিটে বসে চার পাঁচ সিট সামনে বসা এক কাপলের দিকে তাকিয়ে আছি । জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাট তখনও আসছে কিন্তু সেই কাপলের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । ছেলেটা বসে আছে জানলার পাশে । বেশির ভাগ বৃষ্টির পানি তার গায়েি লাগছে । ছেলেটা একটা হাত মেয়েটার মাথার কাছে দিয়ে রেখেছে । মেয়েটার মাথা নড়ছে । কি বলছিলো সেটা আমি পেছন থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম না তবে মেয়েটা অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে । এই দৃশ্যটা দেখেও আমার মনে সেই যে একটা ইচ্ছে জেগেছে যে এমন বৃষ্টির দিনে ঠিক একই ভাবে বৃষ্টি ভেজা কোন বাসের সিটে প্রিয় মানুষটির সাথে বসে গল্প করতে করতে যাবো কোন অনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ! যদিও এই সুযোগ আসে নি কোন দিন ।

৩. এই ঘটনা আরও অনেক আগের । তখন স্কুলে পড়ি । আমাদের এলাকাতে স্থানীয় বিএডিসি টা ফার্ম হিসাবে পরিচিত । এখানে বিকাল সকাল দুপুরে সব সময় মানুষ জনের আনাগোনা লেগেই থাকতো । তাদের ভেতরে কাপলরাও যে থাকতো সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না । আমরা যেতাম বন্ধু বান্ধব নিয়ে । এমন এক বিকেল বেলা গিয়ে গল্প করছি এমন সময় দৃশ্যটা চোখে পড়লো । দেখতে পেলাম একটা ছেলে দুটো মেয়ের সাথে গল্প করছে বসে । মেয়েদের একজন যে তার প্রেমিকা সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । মফস্বলে মেয়েদের সাধারণত একলা বের হতে দেওয়া হয় না । একজন কাজিন কিংবা বান্ধবীর সাথে বের হলে কোন সমস্যা হয় না । আমরা নিজেদের মাঝে গল্প করলে চোখ চলে যাচ্ছিলো বারবার ওদের দিকে । তখনও ছেলেটা উঠে দাড়ালো । সাথে একটা মেয়েও । এবার দুজনে সামনে রাখা সাইকেলটার দিকে এগিয়ে গেল । তারপর ছেলেটা সাইকেলে উঠলো, মেয়েটাও সাইকেলের সামনে রডে উঠে বসলো । তারপর ছেলেটা সাইকেল চালাতে শুরু করলো । আমার চোখ পুরোটা সময় সেই সাইকেলে চালানোর দিকেই রয়ে গেল । তখনই মনে হয়েছিলো যে এমন করে কি নিজের প্রিয় মানুষকে নিয়ে সাইকেল চালানো যাবে ? কবে যাবে?

৪. এই আফসোস টা অতি সম্প্রতি জেগেছে মনে । আমাদের ব্লগের মডারেটর জাদিদ ভাই কয়েকদিন আগে বৃষ্টির দিনের একটা ছবি শেয়ার করেছেন । ছবিটা তার অনুমতি নিয়ে এখানে পোস্ট দিলাম ।


ছবিটা দেখার পরে মনের ভেতরে কেবল একটা ইচ্ছেই বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে যে, কোন বৃষ্টির দিনে যদি এখানে যাওয়া যেতো । এই দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি বেজা পথ, ভেজা বেঞ্চ ঠিক যেন কোন গল্পের বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা কোন দৃশ্য ।

৫. শেষ করি এমন একটা ইচ্ছে দিয়ে যেটা আমার পূরণ হয়েছে । আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল যে এমন কিছু সময় কাটানো যেখানে আমার আসলে কোন কাজ করতে হবে না । আমার নিজের একটা ঘর থাকবে । বিছানার পাশে থাকবে প্রচুর বই । সারা দিন আমি শুয়ে বসে বই পড়বো । খাবো দাবো আর বই পড়বো । আর কোন কাজ কর্ম করবো না । এই ভাবে অন্তত মাস খানেক কাটাবো কেবল বই পড়ে ! কিন্তু এই সুযোগ আসলে কোন দিন আসে নি । পেটের জন্য কাজ করতেই হত সব সময় । বাসা থেকে বের হওয়া লাগতো । বই যদিও পড়তাম তবে ঐ ইচ্ছেটা পুরন হয় নি । সব সময় কেবল বই পড়া আর কোন কাজ না করা । কিন্তু সেই সুযোগটা চলে এল করোনা কালীন সময়ে । ২০২০ সালের মার্চ থেকে যখন লকডাউন দিয়ে দিল তখন বাসায় পুরোপুরি আটকে গেলাম । যদিও আমার এতে কোন সমস্যা ছিল না । সারা দিন মুভি দেখি আর বই পড়ি । এছাড়া আর কোন কাজ নেই । কয়েকদিন যাওয়ার পরে আবিস্কার করলাম যে আমি আসলেই আমার সেই কাঙ্খিত স্বপ্নের সময় পার করছি । সারা দিন বই পড়া খাওয়া দাওয়া আর মুভি দেখা । এছাড়া আর কোন কাজ নেই ।

তবে একটা ব্যাপার আমি ঠিকই আবিস্কার করলাম যে আমি আসলে ঠিক যেভাবে ভেবেছিলাম আমার এই ইচ্ছেটার কথা, ইচ্ছেটা পূরণের সময়ে আসলে সেই রকম মনে মনেহল না । বলতে চাচ্ছি যে যখন ইচ্ছেটা কেবল ইচ্ছেই ছিল তখন এটার প্রতি যতখানি আকর্ষণ ছিল, যতখানি আবেদন ছিল, পুরণের সময়ে ততখানি আকর্ষণ আমি অনুভব করছিলাম না । তখন কেন জানি মনে হল যে এই ইচ্ছেটা পূরণ না হলেই বুঝি ভাল হত । আমার উপরে না পূরণ হওয়ার ইচ্ছে গুলোর বেলাতেও হয়তো একই ঘটনা খাটবে ! এখনও সেগুলো পূরণ হয় নি বলেই হয়তো সেগুলো আমার কাছে এতো আকর্ষনীয় মনে হয় । আমি যদি সত্যিই বৃষ্টির ভেতরে এক ছাতার নীচে আমার প্রিয় মানুষের সাথে হাটার সুযোগ পাই তখন হয়তো আমার কাছে ব্যাপারটা এতো আকর্ষনীয় মনে হবে না !
কিছু আফসোস থাকা ভাল সম্ভবত ।

pic source
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:৪৫
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×