সকালবেলা মর্নিংওয়াকে গিয়েছি বাসার পাশের পার্কে । বাইরে প্রচুর শীত পড়েছে । তাই খুব বেশি সময় হাটাহাটি না করে আবারও বাসার দিকে পা বাড়ালাম। তবে একটা ব্যাপার আমার নজর এল ফেরার পথে । দেখত পেলাম দুইটা বেড়াল কী নিয়ে যেন ঝগড়া করছে । কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যেতেই নজরে এল বেড়াল দুটি একটা পাখির শরীর নিয়ে কামড়াকামড়ি করছে । আমি যত সময়ে গিয়েছি তত সময়ে পাখি মারা গেছে । আমি একটু তাড়া দিতেই পাখি ফেলে দিতে বেড়াল দুটো পালিয়ে গেল । তবে বেশি দুরে গেল না । আমি মরা পাখিটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে যেই না চলে আসবো তখন আমার কানে চিউচিউ আওয়াজ ভেসে এল । একটু খেয়াল করতেই টের পেলাম আওয়াজটা কোথা থেকে আসতে । পাখির বাসাটাও চোখ পড়লো আমার । বড় গাছ থেকে বাতাসের কারণে হয়তো পাখির বাসাটা মাটিতে পরে গিয়েছে । কাছে যেতে দেখলাম সেখানে তিনটা পাখির বাচ্চা রয়েছে । একেবারে ছোট না আবার এতো বড়ও না যে একা একা বেঁচে থাকতে পারবে । আমি যদি এখন এগুলোকে এখানে রেখে যাই তাহলে এগুলো এখানেই মরে যাবে । যদি বেড়াল গুলো এই তিন বাচ্চাকে নাও খেয়ে ফেলে, না খেতে পেরে বাচ্চা গুলো মারা পড়বে । ঠিক করলাম বাচ্চা গুলোকে আমি বাসায় নিয়ে যাবো ।
আমার বাসায় আগে থেকেই একটা পাখির খাঁচা রয়েছে । পাখির বাসাটা আমি সেই খাঁচার ভেতরেই ঢুকিয়ে দিলাম । তারপর গুগলে সার্চ করে দেখলাম পাখি গুলো জন্য ঠিক কী কী খাবার ব্যবস্থা করা যায় । বেশ কিছুদিন পাখিগুলোর দেখা শুনা করলাম । কয়েকদিন বেশ ভাল করেই কেটে গেল । পাখির গুলোর দেখা শুনা করি । তাদের খাবার দেই । পানি দিই । মাঝে মাঝে গান গেয়ে শোনাই । তারাও কিচির মিচির করে আমাকে গান শোনায় । দিন বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিলো । এরই ভেতরে পাখি তিনটা বেশ বড় হয়ে গেল । ডানাতে পাখির পালক বড় আর মজবুত হল আরও । বুঝতে পারলাম যে ওরা এখন বাইরে আকাশে ওড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে । তবে আমি ওদের জন্য আরও উন্নত আর ভাল জীবন ভেবে রেখেছি । আমি জানি যদি ওদের আমি আকাশে ছেড়ে দেই তাহলে ওদের জীবনটা কষ্টে কাটবে । নিজেদের কষ্ট করে খেতে হবে । তারপর শীতে গরমে কিংবা ঝড় বৃষ্টিতে পাখি গুলো কষ্ট পাবে । আমি এটা মোটেই হতে দিতে পারি না । আমি ওদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান ঠিক করেছি । এমন কি ঘরে এসি পর্যন্ত লাগিয়েছি যাতে একটা নির্দিষ্ট আর আরাম দায়ক তাপমাত্রায় ওরা ওরা বড় হতে পারে । ওদের গরম শীত কিংবা বৃষ্টিতে যেন কোন কষ্ট না হয় সেদিকে আমি খেয়াল রেখেছি । কখনো যেন খাওয়ার কষ্ট না হয় সেটাও নিশ্চিত করেছি । এতো উন্নত জীবন ওরা কোন ভাবেই বাইরে উপভোগ করতে পারতো না । আমি ওদের ভাল চাই সব সময় ।
কিন্তু ইদানীং পাখি গুলো খুব চিৎকার চেঁচামিচি করে । কেবই খাঁচা ছেড়ে বাইরে বের হতে হয় । খাঁচার দেওয়ালে ধাক্কা দিতে থাকে ডানা দিয়ে । আমি অবাক হয়ে তাকাই ওদের দিকে । তিনটা পাখিই এক সাথে এমন করে । মাঝে মাঝে ওদের ডানার ধাক্কায় তো খাঁচা নড়ে ওঠে । এতো উন্নত সুরক্ষা ওরা ভেঙ্গে ফেলতে চায় । ওদের জন্য এতো উন্নয়ন করলাম তবুও ওরা সেটা বুঝতে পারছে না । নিজেদের ভাল ওরা বুঝতে পারছে না । তাই আমি নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওদের জন্য যা ভাল আমি মনে করি সেটাই করবো । এই যেমন এখন ওদের ডানা আমি অপারেশন করে কেটে ফেলেছি । এখন ওরা আর আগের মত খাঁচার দেওয়ালে ধাক্কা দিতে পারে না । ওদের কষ্ট হয় না । আমি এখন নিজে ওদের সব সময় খাইয়ে দেই । অনেক আদর করি । তবে এখনও ওরা সারা দিন চিৎকার করেই চলেছে । আমি বুঝতে পারি ওরা আমার সাথে থাকতে চাচ্ছে না তবে আমি জানি এটা ওদের ভুল সিদ্ধান্ত। ওরা তো নিজেদের ভাল বুঝে না । আমি ভাল বুঝি । ওদের উন্নত জীবন কেবল আমিই দিতে পারি । এটা আমিই কেবল পারি । তাই এখন থেকে ওদের ঠোঁট দুটো আমি টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছি । কেবল খাওয়ার সময় হলে খুলে খাইয়ে দিই তারপর আবারও পেঁচিয়ে দিই । এখন ওরা খুব ভাল আছে । নিয়ম করে খাওয়া করে । আরাম করে ঘরে থাকে । কোন আওয়াজ করে না ।
আমি ওদের ভাল চাই । চাই ওরা যেন উন্নত এক জীবন অতিবাহিত করে । সেই কত বিপদ থেকে আমি রক্ষা করেছিলাম । তারপর একটা উন্নত আর সুন্দর জীবন উপহার দিয়েছি । সামনে ঠিক করেছি ওদের জন্য আলাদা একটা টিভি কিনবো । সেখানে সারা দিন ওরা টিভি দেখবে । কতই না ভাল হবে । এতো উন্নত জীবন ওরা কি বাইরে থাকলে পেত কোন দিন ।
আপনারাই বলুন পেত ! নিজের ভাল না বুঝলে আমার তো একটা দায়িত্ব আছে ! আছে না !
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩২