somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বছরের প্রথমদিন যেমন কাটলো

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক মানুষের মাঝে একটা বিশ্বাস থাকে যে বছরের প্রথমদিন যেমন কাটবে সারা বছর বুঝি তেমনই যাবে । যদিও এই বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই তবে মানুষ কত কিছুই না ভাবে । বছরের প্রথমদিন অনেকের বাসায় এই জন্য ভাল মন্দ রান্না হয় যাতে পুরো বছর ভাল যায়। বছরের প্রথমদিনই ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা ছিল । বেনাপোল এক্সপ্রেস আমাদের জেলার স্টেশনে আসার কথা ছিল দুপুর তিনটা বিশ মিনিটে । বাসা থেকে খাওয়া শেষ করে ২০ মিনিট আগেই পৌছে গেলাম স্টেশনে । সবে মাত্র ব্যাগ টা রেখে চেয়ারে বসতে যাবো তখনই শুনতে পেলাম যে ট্রেন নাকি লেট হবে । অনুসন্ধান থেকে খোজ খবর নিতে গিয়ে জানলাম যে ট্রেন তখনও বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে নি । অথচ সময় অনুযায়ী আরও ঘন্টা দুয়েক আগেই ট্রেন ছাড়ার কথা তবেই তা সঠিক সময়ে আমাদের স্টেশনে এসে পৌছাবে ।
একবার মনে হল তখনই বাসায় চলে যাই । স্টেশন থেকে বাসায় যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না । সেখানে গিয়ে বরং অপেক্ষা করি । কিন্তু তখনই মনে হল যে বাসায় গেলে বাসায় মানুষজনদের আলাদা প্যারায় ফেলা হবে । আমার মা হয়তো নতুন করে আবার রান্না বসাবে এবং আমাকে আরও একবার খাওয়া দাওয়া করাবে । বাসায় আসলে আমার মা এবং ভাবীর জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় যে আমি যেন যত পরিমান সম্ভব খাওয়া দাওয়া করি । আর সেই সাথে আরও একটা সম্ভবনা আছে যে একবার বাসায় গেলে আমাকে আর তারা স্টেশনে আসতেই দেবে না । কারণ ট্রেন যতখানি দেরি হবে তাতে আমার ঢাকা পৌছাতে বেশ রাত হয়ে যাবে । এই রাত করে আমি কিভাবে ঢাকা স্টেশন থেকে আমার বাসায় যাবো এই চিন্তায় তারা আমাকে আজকে আর যেতে দিবে না ।
স্টেশনেই বসে বই পড়তে শুরু করলাম । আরও ঘন্টা খানেক পরে স্টেশন থেকে মাইকে জানালো যে ট্রেন সবে মাত্র বেলাপোল থেকে ছেড়ে এসেছে ।
ট্রেন পৌছালো মোটামুটি সাড়ে তিনঘন্টা দেরি করে । বছরের শুরুতেই কোন কাজে সাড়ে তিন ঘন্টা লেট । যাক অবশেষে ট্রেনে তো এল । এরই মাঝে কতবার যে মনে চেয়েছে বাসায় ফিরে যাই । আরও দুটো দিন বাসায় আরাম করে কারিয়ে দিই । এই হচ্ছে বাসায় যাওয়ার সব থেকে বড় সমস্যা । একবার কয়েকদিন থাকলে কেবল থাকতেই ইচ্ছে করে । মনে হয় যেন ওখানেই কাটিয়ে দিই ।

ট্রেনে উঠে বসলাম । ট্রেন চলতে শুরু করলো । ব্যাগ জায়গা মত বসিয়ে নিজেও আরাম করে বসলাম । পরের স্টেশনে এক পরিবার উঠলো । সাথে উঠলো তাদের মাল পত্র । কেউ যে এতো পরিমান মাল পত্র নিয়ে যাত্রা করতে পারে আমার ধারণার বাইরে ছিল । চালের বস্তা থেকে শুরু করে বড় বড় বোয়াম ভর্তি গুড় সরিষার তেল আরও যে কত কিছু । মনে হচ্ছে যেন দুনিয়ার সব কিছু নিয়ে এরা ঢাকায় যাচ্ছে । এতো জিনিস পত্র নিয়ে কেউ ঢাকা যায় কিভাবে?

তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল ঈশ্বর্দী স্টেশনে এসে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল । আরও একটা পরিবার উঠলো । এরা মনে হল যে দুনিয়ার সবার মালপত্র নিয়ে এরা ট্রেনে উঠেছে । গ্রামের বাসায় যা ছিল সব কিছুই এরা নিয়ে ঢাকা চলে যাচ্ছে । মালপত্র রাখার গায়গায় তো জায়গা হলই না, পুরো বগির ভেতরে চলাচল করার রাস্তায় সেগুলো পড়ে রইলো পুরো যাত্রার সময় ।

ঘড়িতে সময় দেখলাম । যেহারে ট্রেন যাচ্ছে সেই হিসাব মত ঢাকায় পৌছাতে মোটামুটি বাঅটা বাজবে । বারোটা বাজলেও সমস্যা নেই । কিন্তু কপাল যখন খারাপ হয় তখন সব দিক দিয়ে খারাপ হয় । ট্রেন যে কতবার ক্রসিংয়ে পড়লো তার কোন ঠিক নেই । সব সময় দেখতে পেলাম যে আমাদের ট্রেন থেকে অন্য সব ট্রেনকে যেতে দিচ্ছে । যখন ঢাকা স্টেশনে পৌছালাম তখন দেখি ঘড়িতে বেজে গেছে দুইটা বিশ ।

চুয়াডাঙ্গা স্টেশন থেকে ঢাকা স্টেশনে আসতে সময় দেওয়া ছিল সাড়ে পাঁচ ঘন্টা । সেই ট্রেন পৌছাতে সময় লাগলো মোটামুটি আট ঘন্টা । আমি যখন ট্রেশন বের হচ্ছি তখন আমার মনে এই ভয় কাজ করছে যে রাতেই এই সময়ে এখান ঢাকায় বের হওয়াটা কতখানি নিরাপদ হবে । আমার ব্যাগে বেশ কিছু টাকা রয়েছে । সেই সাথে আমার ল্যাপটপ রয়েছে । এই জিনিস যদি ছিনতাই কারি নিয়ে যায় আমি তো দুঃখেই মরে যাবো ।

সিএনজি কিংবা বাইকে ওঠার সাহস করলাম না । একদম একা এই রাতে এসবে ওঠা ঠিক হবে না । আমার ধারণা ছিল যে রাতের বেলা উবার চলে না । তবে এক বন্ধু জানালো যে উবার সব সময় চলে । স্টেশন থেকেই এপসটা ইনস্টল করলাম । তারপর রাইড কল করতেই সেটা একদম প্রায় সাথে সাথেই চলে এল । মনের ভেতরে তবুও খানিকটা ভয় কাজ করছিলো যে হয়তো কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । তবে উবারে নিরাপত্তা বেশি । একটা রেকর্ড থাকে সব সময় ।

ঢাকার রাতের রাস্তায় আমার ঘুরে বেরানো হয়েছে খুবই কম । গভীর রাতে যখন আপনি যখন ঢাকার রাস্তায় ঘুরবেন তখন ঢাকা শহরটা আপনার কাছে একদম অপরিচিত মনে হবে । সত্যিই তাই । একদম যেন অপরিচিত একটা শহর মনে হবে তখন । তবে মানুষজন যে একেবারে ছিল না তেমন না । আশে পাশে মানুষ ছিল । বিশেষ করে যারা শহর পরিস্কার করে । সিটি কর্পোরশনের লোকজন রাস্তায় দেখা যাচ্ছিলো । স্টেশন থেকে বাসায় পৌছাতে সময় লাগলো মাত্র বিশ মিনিট ।

বছরের শুরুটা মোটেই আনন্দদায়ক হল না । অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম স্টেশনে । বছরের শুরুতে এতো অপেক্ষা দিয়ে শুরু হওয়াটা মোটেই ভাল লাগলো না । তবে শেষমেষ নিরাপদে বাসায় পৌছে গেলাম সেটাই সব থেকে আনন্দের ব্যাপার ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×