আমার বাড়ির সামনে একটা ছোট গেট আছে । গেটটা এমন মজবুত করে তৈরি করে । কেবল বাঁশ চিরে সেটা বানানো হয়েছে । মুল ঘরের সামনের দিকে অল্প কিছু অংশ ফাঁকা স্থান । সেখানে বেড়াটা দেওয়া । এখানে কয়েকটা ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে । ছাগল গরুদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই এই বেড়া দেওয়া ।
আজকে গেটের কাছের আসতে গলুকে দেখতে পেলাম । আমার বাড়ির দরজার সামনে চুপ করে দাড়িয়ে রয়েছে। আমার একটু মন খারাপ হল । কয়েকদিন আগে বেচারাকে কষে একটা লাঠি মেরেছিলাম । আমি অবশ্য পশুপাখিদের প্রতি এতোটা নির্দয় আচরন করি না । কিন্তু এই বেটার কাহিনী আলাদা ।
আমার বাগানে গরু ছাগল ঢুকতে দেই না গাছ খেয়ে ফেলে বলে । এই কারণেই বেড়া দেওয়া । কিন্তু গলু মানে কুকুর ঢুকলে কোন সমস্যা নেই । কুকুর তো গাছ খেতে পারে না । আমি সেই হিসাবে এই কুকুরটাকে বাগানের ভেতরে ঢুকতে দিতাম । আমার কোন সমস্যা ছিল না । কয়েকদিন সে আসতো চুপচা বসে থাকতো । আমি মাঝে মাঝে আমার খাবারের কিছু বেঁচে যাওয়া খাবার ঠিকই দিতাম । আমার আসলে একটু মায়াই লাগতো কুকুরটার জন্য । জাতে তো নেড়ি টাইপের কুকুর এবং বয়সও হয়েছে । সম্ভবত আগের মত আর শরীরে জোর নেই একা একা থাকতে পারে না খেতে পারে না । বাগানে ঢুকতে দিতাম । মাঝে মাঝে খেতে দিতাম ।
কিন্তু সমস্যা হল একদিন দেখলাম বাগানের মুল রাস্তার পাশে বেটা মল ত্যাগ করে বসে আছে ।
এই হচ্ছে নেড়ির সমস্যা । মেজাজটা একটু খারাপ হলেও কিছু বললাম না ।
কিন্তু পরপর কয়েকদিন একই কাজ করা শুরু করলে মেজাজটা একটু খারাপই হল । বেটাকে আমি আমার বাগানে ঢুকতে দিচ্ছি । খেতে দিচ্ছি আর বেটা কিনা আমারই বাগানই নষ্ট করছে । যখন পরপর এক সপ্তাহ এমন ভাবে চলল তখন মেজাজটা আর ঠিক রাখা গেল না । সোজা কষে একটা কোমড় বরাবর লাথি মেরে বাগান থেকে বের করলাম ।
লাথি উঠে বললাম, ফের যদি এদিকে আসিস তাহলে খবর আছে !
দৌড়ে পালালো । অন্য কারো বাসায় গিয়ে হাজির হবে হয়তো ।
কিন্তু দুদিন পরে আবার এসে দেখি আমার গেটের কাছেই এসে হাজির । আমি খবর পেয়েছি গলু পাড়ার অন্য বাড়িতে যায় । খাবার খায় । তবুও বেটা আমার বাসায় কেন আসছে! তবে আমি ঢুকতে দিলাম না । গেট রইলো বন্ধ ।
কয়েকদিন পরে খেয়াল করলাম বেটা খেয়ে খেয়ে বেশ নাদুন নুদুস হয়েছে । বুঝতে পারছি পাড়ার অন্য ঘরে খাচ্ছে ভাল। যাক খাক । খেয়ে বড় হোক । আর বাঁচবেই কটা দিন । একটু শান্তিতে থাকুক ।
কিন্তু আমার ঘরের সামনে ঠিক ই আসতো সে । আমার ঘরে ঢোকার জন্য সে চাহনী ! একবার মনে হল বেচারাকে আমার ঘরে ঢুকতে দিই । বাগানে ঘুরে বেড়াক । তবে বাড়ির লোকজন বলল, এই বদমাইসটাকে যেন কোন ভাবেই ঘরের ভেতরে না ঢুকতে দিই । এই শরীর দিয়ে গন্ধ বের হয় । বয়স হয়ে গেলে সব গুলো শরীর থেকেই এমন গন্ধ আসে । আর এর ঢুকলেই জায়গা নষ্ট করবে !
কদিন পরে আমাদের পাড়ার খালেক ব্যাপারী আমার কাছে এসে বলল, আমার বাড়ির সামনে এই কুকুরটা দাড়িয়ে থাকে আমি ওটা কে ভেতরে ঢুকতে কেন দিই না । আমি কুকুরকে ভয় পাই ।
আমি হেসে বললাম, আরে ভয় পাওয়ার কী আছে বলেন চাচা । সামান্য একটা বুড়ো কুকুর । পাছায় এক লাথি দিলেই কুই কুই করে দৌড়াবে ।
-তাহলে বাবা কেন ঢুকতে দাও না । দেখো না তোমার বাড়ির সামনে এসে কেমন দাড়িয়ে থাকে । তুমি হয়তো জানো না তুমি যখন বাইরে যাও, কিংবা পাড়ায় তোমার ঐ বন্ধু মোমিনের বাড়িতে যাও ও ঠিক ঠিক তোমার পেছন পেছন যায় ।
-হ্যা । আম দেখেছি । যেখানেই যাই যার সাথে কথা বলি পেছন থেকে ঘেউ ঘেউ করে । করুক । এর আসলে দৌড় এই পর্যন্ত !
-তবুও একটু ভেবে দেখো । এমন একটা অবলা প্রাণী ।
-না চাচা ! মোটেই অবলা নয় । এই বেটা বিরাট বদমাইশ । যেখানেই খায় সেখানে জায়গা নষ্ট করে। যা গন্ধ ছড়ায় জানেন না । আপনি তো ঢুকতে দেন আপনার বাড়িতে !
খালেক চাচাকে দেখলাম একটু কী যেন ভাবলো । তারপর বলল একটু অবশ্য করে । তবে আমি কিছু মনে করি না ।
-আমার আসলে এতো ধৈর্য্য নেই । তাই দুরে রাখি ।
আজও গলুকে দেখতে পেলাম বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ! আমাকে দেখেই একটু যেন ঘেউ ঘেউ করে উঠলো । বাগানের ভেতরেই একটা ছোট বাশের লাঠি ছিল । সেটা তুলে নিয়ে দৌড় দিতেই দেখলাম খেচে দৌড় দিল । দাড়ালো কিছু দুর গিয়ে । আরেক পা এগিয়ে আবারও একটু ঘেউ করে উঠলো । এবার লাঠিটা ছুড়ে মারতেই ঠিক ঠিক গিয়ে লাগলো পেছনে । সাথে সাথে কুউকঊকুউ করতে করতে দৌড় দিলো ।
এদের আসলে স্বভাবই এই একই রকম। কাছে তো ঠিক আসতে পারবে না । দুর থেকে কেবল কুউকুউ করবে ।
ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩