somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের হালুয়া রুটির শবেবরাত

০৭ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শবে বরাতের সময় হালুয়া রুটি খাওয়ার প্রচলন কবে আর কিভাবে শুরু হয়েছিল সেই ধারণা আমার নেই । অবশ্য সেটা জানার কোন আগ্রহও নেই । ছোট বেলায় যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে দেখে এসেছি যে এই দিন টি আসার আগেই আমাদের বাসার মেয়েরা প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে দিতো । পাড়ার ঢেকিওয়ালা বাড়ি থেকে চাপ কুটে আনতো । চাল উঠন কিংবা ছাদের উপরে শুকোতে দেওয়া হত । সেই চালের গুড়ো দেখা শুনার দায়িত্ব পড়তো ছোটদের উপরে ।
তারপর এই দিনটি এসে হাজির হল সকাল থেকেই মায়েরা রান্না বান্নার কাজে লেগে যেত । দুপুরে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা হত । প্রতিবারই মাংস কিংবা পোলাও রান্না করা হত । মাংস তোর রান্না হতই । দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরে বিকেলের একটু আগে থেকে এবার হালুয়া বানানো হত, চালের রুটি বানানো হত । হালুয়া বানানো হত বেশ কয়েক পদের । এর ভেতরে আমার সব থেকে পছন্দের হালুয়া ছিল । এই হালুয়া বড় প্লেটে ঢেলে সেগুলো ঠান্ডা করা হত । তারপর ছুরি দিয়ে পিচপিচ করে কেটে নেওয়া হত । এই হালুয়া তো ছিলই সাথে সাথে মাঝে মাঝে দেশী মুরগি রান্না করা হত চালের রুটির সাথে খাওয়ার জন্য ।

সন্ধ্যা হলেই আমরা সবাই মসজিদে চলে যেতাম নামাজ পড়ার জন্য । এশার নামাজ পড়ে তারপর আরও নামাজ পড়তাম । এই সময়ে বড়রা অল্প বিস্তার নামাজ পড়ে বাসায় চলে আসতো । সেখানে রাতের খাওয়া শেষ করে তারপর বাসায় নামাজ পড়তো । আমরা যারা ছোট ছিলাম তারাও বাসায় চলে আসতাম । বাসায় আসতেই দেখতাম বাসার পরিবেশ কেমন যেন একটু নিশ্চুপ । সব ঘরের আলো নেভানো কিংবা কেবল ডিম লাইট জ্বলছে । সেখানে এক ঘরে বাবা নামাজ পড়ছেন অন্য ঘরে মা নামাজ পড়ছেন । বাসায় আসার আওয়াজ শুনে নামাজ শেষ করে মা আসতেন খাবার দিতে ।

আমার কোন কালেই চালের রুটি পছন্দ ছিল না । তাই আমি কেবল হালুয়া খেতাম । রাতে আর কেউ ভাত খেত না । কেবল আমার জন্য আলাদা ভাবে ভাত রান্না করা হত । আমি সেই ভাত খেয়ে আবারও বের হয়ে যেতাম মসজিদের উদ্দেশ্যে । সেকাহনে ততক্ষনে সমবয়সি অনেকেই এসে হাজির হয়েছে খাওয়া শেষ করে । এরপর আমরা আবারও মসজিদে নামাজ পড়তাম । রাত ভর নামাজ চলতো । গল্প চলতো । যদিও যখন বয়স কম ছিল তখন বেশি রাত করে বাইরে থাকার অনুমতি ছিল । একটু বড় হলে তখন আর কিছু বলা হত না বাসা থেকে । আমরা তখন গ্রামের নানান মসজিদে এমন কি পাশের গ্রামের মসজিদে যেতাম নামাজ পড়তে । পুরো রাতভর এভাবে ঘুরে বেড়াতাম আর নামাজ পড়তাম ।

তারপর একেবারে শেষ রাতের দিকে ফিরে আসতাম আমাদের নিজেদের মসজিদে । সেখানে তখন আবারও মানুষ নতুন করে আসা শুরু করেছে । এরপর হুজুর আখেরী মোনাজাত ধরতেন । এই মোনাজাত চলতো দশ থেকে পনেরো মিনিট ধরে । মোনাজাত শেষ করে একেবারে ফজরের নামাজ শেষ করে তারপর বাসায় ফিরতাম আমরা ।

মোটামুটি আমি যখন কলেজে পড়ি তখন পর্যন্তও আমাদের সময় গুলো এমনই ছিল । এভাবেই আমরা এই শবে বরাত পালন করতাম । তারপর আস্তে আস্তে এই কাজ গুলো বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করলো । এখন তো নেই বললেই চলে । এই সময় হয়তো আর কখনই ফিরে আসবে না ।

অনেক বিতর্ক আছে যে এই কাজ করা যাবে ঐ কাজ করা যাবে না । এই বিতর্ক গুলো শুরু হয়েছে আমাদের এই কলেজের জীবনের পরের সময় গুলো থেকে । একদম উঠে পড়ে তখন লেগেছিলো যে এই কাজ গুলো সবে বরাতের সময় করা যাবে না । আস্তে আস্তে এই নিয়ম গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে । তবে ঢাকাতে আমার এক স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে গিয়ে এই হালুয়া খেয়ে ছিলাম মনে আছে । সেটাও অনেক বছর আগে ।

সেই সময় গুলো ভাল ছিল । ধর্ম নিয়ে তখন মানুষের মাঝে এতো তীব্রতা ছিল না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×