শবে বরাতের সময় হালুয়া রুটি খাওয়ার প্রচলন কবে আর কিভাবে শুরু হয়েছিল সেই ধারণা আমার নেই । অবশ্য সেটা জানার কোন আগ্রহও নেই । ছোট বেলায় যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে দেখে এসেছি যে এই দিন টি আসার আগেই আমাদের বাসার মেয়েরা প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে দিতো । পাড়ার ঢেকিওয়ালা বাড়ি থেকে চাপ কুটে আনতো । চাল উঠন কিংবা ছাদের উপরে শুকোতে দেওয়া হত । সেই চালের গুড়ো দেখা শুনার দায়িত্ব পড়তো ছোটদের উপরে ।
তারপর এই দিনটি এসে হাজির হল সকাল থেকেই মায়েরা রান্না বান্নার কাজে লেগে যেত । দুপুরে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা হত । প্রতিবারই মাংস কিংবা পোলাও রান্না করা হত । মাংস তোর রান্না হতই । দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরে বিকেলের একটু আগে থেকে এবার হালুয়া বানানো হত, চালের রুটি বানানো হত । হালুয়া বানানো হত বেশ কয়েক পদের । এর ভেতরে আমার সব থেকে পছন্দের হালুয়া ছিল । এই হালুয়া বড় প্লেটে ঢেলে সেগুলো ঠান্ডা করা হত । তারপর ছুরি দিয়ে পিচপিচ করে কেটে নেওয়া হত । এই হালুয়া তো ছিলই সাথে সাথে মাঝে মাঝে দেশী মুরগি রান্না করা হত চালের রুটির সাথে খাওয়ার জন্য ।
সন্ধ্যা হলেই আমরা সবাই মসজিদে চলে যেতাম নামাজ পড়ার জন্য । এশার নামাজ পড়ে তারপর আরও নামাজ পড়তাম । এই সময়ে বড়রা অল্প বিস্তার নামাজ পড়ে বাসায় চলে আসতো । সেখানে রাতের খাওয়া শেষ করে তারপর বাসায় নামাজ পড়তো । আমরা যারা ছোট ছিলাম তারাও বাসায় চলে আসতাম । বাসায় আসতেই দেখতাম বাসার পরিবেশ কেমন যেন একটু নিশ্চুপ । সব ঘরের আলো নেভানো কিংবা কেবল ডিম লাইট জ্বলছে । সেখানে এক ঘরে বাবা নামাজ পড়ছেন অন্য ঘরে মা নামাজ পড়ছেন । বাসায় আসার আওয়াজ শুনে নামাজ শেষ করে মা আসতেন খাবার দিতে ।
আমার কোন কালেই চালের রুটি পছন্দ ছিল না । তাই আমি কেবল হালুয়া খেতাম । রাতে আর কেউ ভাত খেত না । কেবল আমার জন্য আলাদা ভাবে ভাত রান্না করা হত । আমি সেই ভাত খেয়ে আবারও বের হয়ে যেতাম মসজিদের উদ্দেশ্যে । সেকাহনে ততক্ষনে সমবয়সি অনেকেই এসে হাজির হয়েছে খাওয়া শেষ করে । এরপর আমরা আবারও মসজিদে নামাজ পড়তাম । রাত ভর নামাজ চলতো । গল্প চলতো । যদিও যখন বয়স কম ছিল তখন বেশি রাত করে বাইরে থাকার অনুমতি ছিল । একটু বড় হলে তখন আর কিছু বলা হত না বাসা থেকে । আমরা তখন গ্রামের নানান মসজিদে এমন কি পাশের গ্রামের মসজিদে যেতাম নামাজ পড়তে । পুরো রাতভর এভাবে ঘুরে বেড়াতাম আর নামাজ পড়তাম ।
তারপর একেবারে শেষ রাতের দিকে ফিরে আসতাম আমাদের নিজেদের মসজিদে । সেখানে তখন আবারও মানুষ নতুন করে আসা শুরু করেছে । এরপর হুজুর আখেরী মোনাজাত ধরতেন । এই মোনাজাত চলতো দশ থেকে পনেরো মিনিট ধরে । মোনাজাত শেষ করে একেবারে ফজরের নামাজ শেষ করে তারপর বাসায় ফিরতাম আমরা ।
মোটামুটি আমি যখন কলেজে পড়ি তখন পর্যন্তও আমাদের সময় গুলো এমনই ছিল । এভাবেই আমরা এই শবে বরাত পালন করতাম । তারপর আস্তে আস্তে এই কাজ গুলো বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করলো । এখন তো নেই বললেই চলে । এই সময় হয়তো আর কখনই ফিরে আসবে না ।
অনেক বিতর্ক আছে যে এই কাজ করা যাবে ঐ কাজ করা যাবে না । এই বিতর্ক গুলো শুরু হয়েছে আমাদের এই কলেজের জীবনের পরের সময় গুলো থেকে । একদম উঠে পড়ে তখন লেগেছিলো যে এই কাজ গুলো সবে বরাতের সময় করা যাবে না । আস্তে আস্তে এই নিয়ম গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে । তবে ঢাকাতে আমার এক স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে গিয়ে এই হালুয়া খেয়ে ছিলাম মনে আছে । সেটাও অনেক বছর আগে ।
সেই সময় গুলো ভাল ছিল । ধর্ম নিয়ে তখন মানুষের মাঝে এতো তীব্রতা ছিল না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




