চলমান জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ঢাকার অবস্থান রত মানুষগুলোর ভেতরে সব থেকে উন্নত(!) জীবন যাপন করতে শুরু করেছে ঢাকার ছাত্র সমাজ । যারা বাসা থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পায় নিজের হাত খরচ চালানোর জন্য অথবা নিজেরাই টিউশনী কিংবা অন্য কোন কাজ করে নিজেদের খরচ চালায় । এবং এদের প্রায় সবাই থাকে কোন মেস ভাড়া করে ।
আগে সকালে নাস্তার জন্য গড়ে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা খরচ হত । আরও একটু বিলাসী খাবার খেলে বিল আসতো ৩৫ টাকা । এখন নাস্তা খেতে গেলে ৫০ টাকার নিচে বিল আসে না কোন ভাবেই । সাথে যদি একটা ডিম খেতে চাই তাহলে তো কথাই নেই । পরোটা থেকে ভাজি সব কিছুইর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে একবার চিন্তা করে দেখেন কেবল সকালের নাস্তা বাবদই চলে যাচ্ছে দের হাজার টাকা । মাসের অন্যান্য খরচ তো বাদই ছিলাম । আগে যেখানে মেস মিল রেট আসতো ২৫ থেকে ৩৫ টাকার ভেতরে । এখন সেটা আসে ৭০ থেকে ৯০ টাকার ভেতরে । একবার চিন্তা করে দেখেন একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রী যে কিনা ঢাকাতে পড়তে এসেছে তার কেবল খাওয়ার জন্য চলে যাচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ছয় হাজার টাকা । ঘর ভাড়ার কথা তো বাদ দিলাম । বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার আড্ডায় যাওয়ার কথা তো চিন্তাই করা যায় না ।
আমি অনেক দিন থেকে পুরোপুরিই ভাববে তিন বেলা বাইরে খাওয়া করি । মুল্য বৃদ্ধির প্রত্যেক্ষ প্রভাব এই খাবার হোটেল গুলোতে পড়ে খুব ভাল ভাবে । একেবার সরাসরি এসে হাজির হয় ।
বিকেল বেলা খাওয়া পুরি চপ আর পিয়াজু । এসব আগে পাওয়া যেত ছোট আর বড় সাইজের দুইটা । দাম ছিল দুই/তিন টাকা আর বড়টার দাম ছিল ৫ টাকা । এখন তিন টাকার কোন কিছু নেই । আগে যেটার দাম ছিল তিনটা সেই একই জিনিসের দাম এখন ৫ টাকা আর ৫ টাকার জিনিসের দাম এখন দশটা । আপনাদের মনে হতে পারে যে এই সামান্য দাম বৃদ্ধির ফলে কী যায় আসে । তাহলে হয়তো কোন ধারণাই নেই !
আগে ৫ টাকা দিয়ে একটা বড় সাইজের সিঙ্গারা পাওয়া যেত । এখন ৫ টাকার সিঙ্গারা আপনি কোথাও খুজে পাবেন না । যদিও পাবেন তা মুখে দিয়ে এক কামড়েই শেষ ।
দুপুরের খাবারের কথা যদি বলি । ভর্তার যে দাম আগে ছিল তা এখন প্রতিটার বেলাতে দ্বিগুন বাদ বেড়েছে । ২০ টাকা থেকে শুরু করে তা হয়েছে ৩৫ টাকা পর্যন্ত । ডিমের দাম ছিল আগে ১৫/২০ টাকা । এখন সেই ডিম ৩০ টাকা । ভাতের প্লেট প্রায় সব হোটেলেই করে দেওয়া হয়েছে ২০ টাকা । এটা কিন্তু একেবারে পাড়ার হোটেলের কথা বলছি । রাস্তার পাশের হোটেলের দিকে তো যাওয়াই যাবে না ।
বেশির ভাগ হোটেলের ভাতের প্লেট ২০ টাকা । আর যে যে হোটেলে এখনও ১০ টাকা রেখেছে সেখানে কমে গেছে ভাত দেওয়ার পরিমান । কমেলে চালের মান । মোটা চালের ভাত সেখানে দেওয়া হয় ।
প্রতিটা মাছের আইটেমের দাম বেড়েছে ১৫/২০ টাকা করে এক লাফে । ককমুরগি আগে ছিল ১০০ টাকা এখন সেটা ১২০ । গরু গুনে গুনে ৭টা ছোট ছোট পিচ দেয় দাম ১৫০ টাকা ।
তবে এখনও পর্যন্ত লাল শাক আর পালন শাকের দাম একই আছে । আগে দুপুরে আমি যখন খেতে যেতাম যখন মাঝে মাঝে দেরী হয়ে যেত । চারটাও বেজে যেত । তখনও দেখা যেত যে এই লাল শাক ঠিকই আছে । এখন যদি দুইটা আড়াইটা বেজে যায় গিয়ে দেখি শাকের পরিমান একেবারে শেষ হয়ে গেছে । এটার কারণ হচ্ছে পুরো তরকারী গুলোর ভেতরে এই শাকের দামই সব থেকে কম । তাই সবাই এই কম দামী জিনিসটাই বেশি করে খাচ্ছে ।
আগে প্রতিমাসে কেবল খাওয়ার জন্য আমার যা খরচ হত এখন তার প্রায় দ্বিগুন খরচ হচ্ছে । কিন্তু আমার আয় কিন্তু দ্বিগুণ হয় নি । প্রতিটা মানুষের বেলাতেই একই ব্যাপার । আয় কিন্তু বাড়ে নি কিন্তু খরচ বেড়েছে । হ্যা আপনি যখন কাজ করা শুরু করবেন তখন আরো আরো বেশি পরিশ্রম করে টাকা বেশি বেশি আয় করবেন কিন্তু একজন ছাত্রের বেলাতে এটা প্রায় অসম্ভব । তাদের মাসিক আয় খুব একটা বাড়ে না । আর এখন আরও একটা ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে ছাত্রদের প্রধান আয় টিউশনীর পরিমান কমে গেছে । জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পরিবার গুলো যে যে আয়কে সংকোচন করেছে তার ভেতরে একটা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের জন্য বাসায় স্যার না রেখে তাদের একেবারে কোচিংয়ে দিয়ে দিচ্ছে যাতে কম খরচে সব পড়া হয়ে যায় । সেই হিসাবে ছাত্রদের আয়ের উৎস কমে আসছে ।
ঢাকাতে মানুষজন কিভাবে বেঁচে আছে কে জানে । ঘর ভাড়া দিয়ে খাবার খরচ যাতায়াত খরচ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ এই গুলো দিয়ে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার কিভাবে টিকে আছে সেটা একটা বড় রহস্য । অবশ্য চারিদিকে যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে তাতে আসলে সব কিছুই সম্ভব।
ঢাকাতে এখন শ্রেণী বৈষম্য কমে এসেছে অনেক । আগে আমাদের সমাজে তিনটা শ্রেণী ছিল । গরীব মধ্যবিত্ত আর বড়লোক । এখন কেবল গরীব আর বড়লোক । অনেকে অবশ্য নিজেদের এখনও মধ্যবিত্ত ভাবতে পছন্দ করে । তাদের সুবিধার জন্য বলি, আপনি এখন গরীব ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪০