
আমাদের দাদা বাড়ির এলাকার মানুষ সবই প্রবাসী । সেখানে ছেলেরা খুব একটা পড়াশোনা করে না । স্কুল পাশ করে তো করে না । তারপর সোজা বিদেশ । কয়েক দশক ধরে সেখানে এই নিয়ম চলে আসছে । এই গল্পটা আমাদের বাড়ির পাশের একজন । প্রায় আমারই বয়সী সে । যতবার গিয়েছি তার সাথে খোশ গল্প হয়েছে । তারপর এক সময়েও দেশের বাইরে চলে গেল । ওখানকার বেশির ভাগেরই প্রথম গন্তব্য হয় মিডিলইস্ট । তবে সে গেল জাপানে । কয়েক বছর সেখানেই রয়ে গেল বছর খানেক আগে দেশে ফিরে এসেছে । আরো ভাল করে বললে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে ।
কাহিনীটা এমন যে এই ঘটনা যদি আমাদের দেশে ঘটতো তাহলে তাকে ফিরে আসতে হত না । ধরুন আপনি পথ দিয়ে যাচ্ছেন । হঠাৎ দেখতে পেলেন যে পথের একপাশে একটা মানিব্যাগ পড়ে আছে । আপনি যদি সেই মানিব্যাগটা তুলে নিয়ে ভেতরের টাকা পয়সা নিয়ে আবারও মানিব্যাগটা ফেলে দেন আপনার কোন শাস্তি হবে না । আপনার নিজের ভেতরেও কোন অনুশোচণা হবে বলে হয় না । আপনার মনে হবে আমি তো কারোটা চুরি করি নি । পড়ে পেয়েছি তাই নিয়েছি । খুব মানুষই আছে যারা সেই মানিব্যাগটা ফেরৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে ।
এই চিন্তা ভাবনা নিয়েই আসলে আমরা বড় হয়েছি । কিন্তু সব দেশ তো আমাদের মত নয় । তো সে গিয়েছিলো জাপানের কোন মার্কেটে । এবং সেখানে একটা মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছে । তার উচিৎ ছিল ভেতরে কোন পরিচয় আছে কিনা সেটা খুজে পের করা না থাকলে সিম্পল ভাবে সেটা কাছের পুলিশ স্টেশন দিয়ে দেওয়া । কিন্তু সে টুপ করে সেটা নিজের পকেটে পুরে ফেলল । সে ভেবেছিল এই আর কী হবে এমন ! কিন্তু ঘটনা ঘটলো কয়েক দিন পরেই । মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে কোন ভাবে তার এই পরে পাওয়া মানিব্যাগটা ধরা পরলো । এবং সেখান থেকেই তার পেছনে পুলিশ পড়ে । সে কেন মানিব্যাগটা জমা না দিয়ে পকেটে পুরলো এটা ছিল তার অপরাধ ! তাকে সোজা দেশে ডিপোর্ট করে দেওয়া হল ! মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই মানিব্যাগে কিন্তু খুব বেশি টাকা ছিল সেটাও না । বাংলাদেশী টাকায় দুই আড়াই হাজার টাকার মত হবে ।
আপনি যদি আমাদের বাংলাদেশী মনভাব থেকে এই ব্যাপারটা দেখেন তাহলে মনে হবে আরে কত সামান্য একটা ব্যাপার । মানিব্যাগটা তো সে চুরি করে নি । পরে পেয়েছে । এটা যে একটা অন্যায় কাজ সেটা আমাদের মাথায় আসবেই না । এই কারণেই যখন কেউ টাকার ব্যাগ পেয়ে ফেরৎ দিয়ে দেয় তখন সেটা পত্রিকাতে নিউজ হয়ে যায় । অথচ আপনি টাকার ব্যাগ পেয়েছে সেটা ফেরৎ দেওয়াই তো স্বাভাবিক কাজ । সেটা নিয়ে তো নিউজ হওয়ার কথা না । আমাদের সমাজ এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যে টাকার ব্যাগটা মেরে দেওয়াই আমাদের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে ।
আমার নিজের মানিব্যাগ কয়েকবার হারিয়েছে । আমার আগে স্বভাব ছিল মানিব্যাগে সব টাকা পয়সা রেখে দেওয়া । মাসের সব খরচের টাকা আমার কাছে তখন মানিব্যাগেই থাকতো । আমার আসলে মানিব্যাগ ভরা আর ফোলা থাকলে ভাল লাগে । নিজেকে বড়লোক বড়লোক মনে হয় ! প্রথমবার যখন সেই টাকা সমেত মানিব্যাগ টা হারিয়ে গেল আমার নটক নড়লো । অবশ্য বাসায় বলার পরে আমারও টাকা পাঠিয়েছিল তবে একটা শিক্ষা হল বেশ ভাল করেই । তারপর থেকে মানিব্যাগ ৫০০ টাকা করে রাখা শুরু করলাম । স্বাভাবিক দিয়ে ৫০০ টাকার বেশি না । তবে কোন প্রোগ্রাম থাকলে একটু টাকা বেশি নিয়ে নিতাম । এছাড়া বিকাশ একাউন্ট খোলার পরে টাকা নিয়ে আর চিন্তা হত না । দরকার হলেই তুলে নেওয়া যেত । যাই মানিব্যাগ হারারনোর গল্পটা বলি । প্রতিবার মানিব্যাগ হারানোর অনেক সময় পড়ে টের পেয়েছি যে মানিব্যাগ হারিয়েছে । যখন টের পেয়েছি তখন আর খুজে পাওয়ার কোন সম্ভবনাই ছিল না । তবে সেবার সাথে সাথেই টের পেয়েছিলাম । মগবাজার দিয়ে যাচ্ছি বাংলামোটরের দিকে সাইকেলে । এমন সময় প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগটা পড়ে গেল । একটু দুরে গিয়েছি । মিনিট দুয়েক হবে । সর্বোচ্চ । পেছন থেকে রিক্সার এক যাত্রী বলল ভাই আপনার মানিব্যাগ পরে গেছে । আমি জলদি হাত দিলাম পকেটে । নাই । সাইকেল ঘুরিয়ে আবার ফিরলাম । মিনিট তিন কেটেছে সর্বোচ্চ । মানিব্যাগ আর খুজে পেলাম না । টাকা খুব বেশি ছিল না । এন আইডি কার্ড ছিল, এটিএম কার্ড ছিল ভার্সিটির আইডি কার্ড ছিল ! যে হয়তো নিয়েছিলো তারও মনে হয়েছিলো যে চুরি তো করি নি পড়েই তো পেয়েছি !
picture source
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


