
কলা আমার পছন্দের একটা ফল । ছোট বেলা থেকেই এই ফলটা আমি নিয়মিত খেয়ে আসছি । এখনও প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় কম করে হলেও এক হালি কলা নিয়ে বাসায় আসি । এটাই প্রতিদিনের অভ্যাস আমার । কলার কেনার জন্য আমার পরিচিত একজন কলা বিক্রেতাও আছেন । সব সময় তার কাছ থেকেই কলা নিয়ে থাকি । গতদিন কলা কিনতে গিয়ে দেখি তার ভ্যানটা নেই সেখানে । কাল সে বসে নি । আমি বাসায় কলাও নেই । অন্য কারো কাছ থেকে কিনতে হবে । কলেজের ঠিক সামনেই একটা ভ্যান বসে । তবে এখানে সব সময় প্রচুর ভীড় থাকে বলেই এখানে আসা হয় না । আজকেও গিয়ে দেখি সেখানে বেশ কয়েকজন রয়েছে । আমি অন্য সবার চলে যাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম । তখনই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম । কলাওয়ালা একজন ক্রেতাকে একটা কলা দিতে চাচ্ছেন তবে সে সেটা কিছুতেই নিতে চাচ্ছে না । এমন না কলাটা নষ্ট কিংবা পচা । শেষ বাধ্য হয়ে ছড়া থেকে আরও একটা কলা কেটে দিলেন তাকে । মহিলা সেই নতুন কলাটি নিয়ে ব্যাগে ভরলো । এবার কলাওয়ালা আমার দিকে ফিরলেন । আমি এক হালি কলা দিতে বলায় সে বলল, মামা এটা নিবেন ? দাম একই রাখবো ।
এটা হচ্ছে সেই কলাই যেটা একটু আগে মহিলা ক্রেতাটি নিতে চায় নি । আমি বললাম হ্যা দিয়ে দাও ।
বিক্রেতা বলল, মানুষের বেশি দিতে গেলেো তারা সন্দেহ করে । ভাল একটা কলা । দিতে চাইলাম নিলো না ।
আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । কলা নিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলাম ।
মহিলাটি যে কলাটি নিতে চায় নি সেটা একটা জোড়া কলা ছিল । আমি অবশ্য তাকে খুব একটা দোষ দিতে পারি না । এই জোড়া কলা নিয়ে আমাদের সমাজে সব প্রচলিত কুসংস্কার হচ্ছে জোড়া কলা গেলে জমজ বাচ্চা হয় । এটা আমি শুনে এসেছি সেই ছোট বেলা থেকে । যদি এক ছড়া কলা নিয়ে আসা হত খুব স্বাভাবিক ভাবে দেখা যেন সেখানে একটা জোড়া কলা রয়েছে । এবং অবাক হওয়ার মত বিষয় ছিল অন্য সব কলা খাওয়া হয়ে গেলেও এই কলাটা সবাই যেন এড়িয়েই চলতো ! ছেলে মেয়ে উভয়ই । যদিও বাচ্চা হওয়াটা কেমন মেয়েদের ব্যাপার তবুও ছেলেরাও এটা এড়িয়ে যেত । আমি নিজেও তখন খেতাম না । তবে একটু বড় হলেই আসলে এসব নিয়ে পরিস্কার ধারণা যখন হল তখন এসব কুসংস্কার আর ছিল না ।

আমি বান্দারবানে বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি । এই ট্যুর গুলো ছিল বান্দারবানের ভেতরে যেখানে আসলে আধুনিক জীবনের অনেক কিছুই পাওয়া যায় না । কিন্তু সেখানে একটা জিনিস পাওয়া যায় খুব ভাল ভাবে তা হচ্ছে এই কলা । এবং দামে একেবারে সস্তা । পাহাড়ি আদিবাসিরা এই কলা আমাদের কাছে বিক্রি করতেন । ঢাকাতে কলা আমি কিনি প্রতি পিচ দশ টাকা দিয়ে আর ওখানে এক ছড়ি কলা পাওয়া যায় দশ টাকায় । এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে গিয়েছিলাম । তখনও এই দামেই খেয়েছি । যা বলছিলাম, সেখানেও এই ব্যাপারটা খেয়াল করেই দেখেছি যে গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা এখনও এই জোড়া কলা খেতে চায় না । মানে, অন্য একটা কলা তারা স্বাভাবিক ভাবে যেমন করে খায় এই জোড়া কলা সেই ভাবে তাদের প্রথম চয়েজ না । এই যে দীর্ঘদিন ধরে একটা মিথ , একটা কুসংস্কার আমাদের মাঝে রয়েছে এটা আমি জানি যে সঠিক না তারপরেও সেটা থেকে বের হওয়াটা এতো সহজ হয় না ।
এই রকম আরেকটা কুসংস্কার হচ্ছে পরীক্ষার দিন সকালে ডিম খেলে পরীক্ষায় ডিম পাবে। এই কুসংস্কারটা অবশ্য আমি ছোট বেলাতে পায় নি কখনো । আমাদের আগে সকালের নাস্তা ছিল ভাতের সাথে আলু ভর্তা, ডাল চচ্চড়ি , আলু ভাজি সাথে থাকতো ডিম ভাজি ইত্যাদি । মাঝে মাঝে হত রুটি কিংবা পরোটা । সেখানেও ডিম ভাজির একটা আইটেম থাকতো । ছোট থেকে এই সকালের নাস্তা খেয়েই সব সময় বড় হয়েছি । এই জিনিস খেয়েই স্কুলে গিয়েছি সব সময় । কী বা পরীক্ষা কিংবা কী বা সাধারণ দিন । এই ডিম খেলে ডিম পাওয়ার ব্যাপারটা আমি আশ্চর্যজনক ভাবে জানতে পেরেছি ঢাকাতে এসে । আগে শুনেছিলাম কিনা আমার ঠিক মনে নেই তবে ঢাকাতে এসে এই ব্যাপারটার বাস্তব প্রয়োগ দেখেছি নিজের চোখে ।
আমার প্রাক্তন এক ছাত্রের বাসায় গিয়েছি সকালে । সেদিন এগারোটার দিকে তার পরীক্ষা ছিল। আমি সকালে গিয়ে শেষ বারের মত ওকে কিছু ব্যাপার দেখাতে গিয়েছি । আন্টি বললেন যেন আমি পড়ানো শেষে যেন নাস্তা করেই যাই । নাস্তা করতে বসেছে আমার ছাত্রটিও । কী আইটেম ছিল আমার মনে নেই তবে সাথে ডিম ছিল এটা মনে আছে । ছাত্র তখন কিচুতেই ডিম খাবে না । আমি অবাক হয়ে বললাম কেন ডিম খাবে না । পছন্দ না ।
সে বলল, না স্যার খাই তবে একটু পরে পরীক্ষা দিতে যাবে । ডিম খেয়ে ডিম পাবে !
আমি কিছু সময় খাওয়া বন্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । এই সময়ে যে কেউ এমন কথা বলতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল । ছাত্রের মা হাসতে হাসতে জানতে চাইলো যে এসব অপ্রয়োজনীয় কথা কে শিখিয়েছে । সে জানালো যে তার বন্ধু বান্ধব কেউ খায় না । সেও খাবে না । কিছুতেই তাকে ডিম খাওয়ানো গেল না । পরে রাতের কিছু খাবার ছিল সে সব গরম করে দেওয়া হল ।
আমার পরিবারে বাবা কিংবা বা কখনই আমাদের এই সব কুসংস্কার শিক্ষা দেয়নি । তাদের ভেতরে গোড়া কোন সংস্কার ভাব ছিল না । তবে একটা ব্যাপার আমার বাবার ভেতরে আমি খেয়াল করে দেখেছি সেটা হচ্ছে সে যখন অফিস যাওয়ার জন্য বের হত কিংবা অন্য যে কোন কাজে বাইরে বের হত তখন তাকে পেছন থেকে ডাকলে সে রেগে যেত । একবার আমার মনে আছে আমি তখন বেশ ছোট । থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি । সকালে অফিস যাচ্ছে বাবা আমি পেছন থেকে ডাক দিয়েছিলাম কোন একটা কাজে । সেই সময়ে আমার মা আমাকে ধরে বলল, পেছন থেকে ডাকতে নেই । আমি সেদিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম পেছন থেকে ডাকলে কী হবে ! অবশ্য সেটার সঠিক উত্তর সে দেয় নি । বাবা চলে যাওয়ার পরে বলেছিলো যে বাইরে বের হওয়ার সময় তোর বাবা পেছন থেকে ডাকা পছন্দ করে না । বাবা সেই সময় ভয় পেতাম খুব । তাই ডাক দেওয়ার কথা পরে আর কোন দিন মাথাতেও আসে নি ।
মানুষ আসলে যত বড় আর আধুনিক হয়ে যাক না কিছু কিছু মানুষের ভেতরে এই ব্যাপার গুলো কখনই যায় না । থেকেই যায় ।
ছবির সাথে লেখার কোন সম্পর্ক নেই । ছবি দুটি পিক্সেল থেকে ডাউলোড করা ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


