somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০২৪ সালটা তাহলে শেষ হচ্ছে ...

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগে যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের গ্রামে হ্যাপি নিউ ইয়ার পালনের একটা রীতি ছিল। তখন আমরা এবং আমাদের বাড়ির আশেপাশের বাড়িতে থাকা আমাদের বয়সী বাচ্চারা মিলে পিকনিক করতাম। পিকনিকে রান্না হত খিচুড়ি। পিকনিকও হতো অনেকটাই ঘরোয়া পরিবেশে। সবার বাড়ি থেকে চাল, ডাল, আর তেল সংগ্রহ করা হতো। মাঝে মাঝে অল্প টাকা তুলে একটা ফার্মের মুরগি কেনা হতো। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো প্রকার টাকা ছাড়াই আমাদের এই পিকনিকগুলো হতো। শুধু ডিম, সবজি, আর খিচুড়ি।

পিকনিকের যাবতীয় জিনিসপত্র আমরা সবার বাড়ি থেকেই সংগ্রহ করতাম। তারপর আমাদের কারো বাড়ির রান্নাঘরে রান্না হতো। রান্না শেষ হতে হতে রাত দশটা-এগারোটা বেজে যেত। তবে প্রায় প্রতিবারই এমন হতো যে আমরা আসলে কেউই পিকনিকের মতো একসঙ্গে এক জায়গায় বসে খেতে পারতাম না। কারণ, আমরা ছোটরা এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে পারতাম না। তার ওপর আমাদের চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীত পড়ত সবসময়। এই শীতে বাইরে বসে খাওয়া দাওয়া করা সম্ভব হতো না। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত, আমরা সেই খিচুড়ি প্লেটে করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খেতাম। ইংরেজি নববর্ষের পিকনিক বলতে এটাই ছিল।

আমি যখন কলেজে উঠলাম, তখনকার কথা। আমাদের আসল বাড়ি মূলত বিক্রমপুরে। সব আত্মীয়-স্বজন ওখানেই থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকাতেও থাকেন। এই রকম এক আত্মীয় সেবার আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন। তাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম, তবে সেবার তিনি প্রায় সাত দিনের মতো আমাদের এবং নানীদের বাসায় ছিলেন। আমার থেকে এক বছরের বড় হলেও সেবার তার সঙ্গে আমার বেশ ভাব হয়েছিল। ঢাকা ফিরে গিয়ে তাই তিনি প্রায়ই ফোনে কথা বলতেন। তখন সবে মাত্র হাতে ফোন এসেছে।

সেবারই থার্টি ফার্স্টের রাতে তিনি আমাকে ফোন দিলেন। ফোন ধরেই বুঝতে পারলাম ওপাশে জোরে মিউজিক বাজছে। তিনি ফোনে জানালেন যে তিনি বাইরে আছেন, পার্টি করছেন এবং তার সঙ্গে তার প্রেমিকাও রয়েছেন। ব্যাপারটা আমার কাছে হজম করা একটু কঠিন ছিল। এত রাত পর্যন্ত কেউ তার প্রেমিকা সমেত বাইরে থাকতে পারে, সেটা আমার কাছে সত্যিই নতুন ছিল।

এই কথাটা আজকে হঠাৎ করেই মনে পড়ল। এরপর আমি ঢাকা এলাম। তারপর থেকে এখানেই রয়েছি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, এর পরে আর কখনও থার্টি ফার্স্ট নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করিনি। আলাদা করে বাইরে যাওয়া, পার্টি করা বা পিকনিক করা হয়নি। তবে তিন বছর আগে একটা ট্যুর দিয়েছিলাম সেন্টমার্টিনে। সময়টা ছিল ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি। সেই বারই বলা যায়, জীবনে প্রথমবার বাড়ির বাইরে ছিলাম। পুরো সময়টা সমুদ্রপাড়ে বসে কাটিয়েছিলাম। এটাই আমার জীবনে একমাত্র বাড়ির বাইরে থার্টি ফার্স্ট উদযাপন।
আমার কোনো দিন আসলে ইচ্ছেও হয়নি যে বাইরে যাই বা পার্টি করি। আমার মনে হয়, এর থেকে বরং বাসায় লেপের নিচে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকাই ভালো। আজকে অবশ্য সেটাও সম্ভব নয়। বছরের নতুন বই আসছে, সেই কাজ চলছে এখন। এই লেখার আগে সেই কাজই করছিলাম। রাতের খাবারের পরে আবার সেটা শুরু করতে হবে। এখনও একটা অধ্যায় বাকি আছে।

২০২৪ সাল সত্যিই এবার শেষ হয়ে গেল। বছর শুরুর সময় আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে এই বছরে এত কিছু ঘটবে। এখনও অনেক কিছুই অবাস্তব মনে হয়। বিশেষ করে আপা আর তার পুরো ক্যাবিনেট যে এভাবে পালিয়ে যাবে, সেটা আমি কখনো ভাবিনি। ৫ আগস্টের পর আরও কতগুলো দাবি দেখলাম রাস্তায়। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটছেই। এত অস্থির সময় আমি কখনো কাটাইনি।

এই বছরের সব থেকে বড় ঘটনা ঘটে গেছে। না আপা পালানোর ঘটনা না। ঘটনা হচ্ছে আমার সর্ব প্রথম ছাত্র, এই কদিন আগে বিয়ে করে ফেলেছে। আর আমি সেই বিয়ের দাওয়াতেও গিয়েছিলাম। ভাবতে পারেন ব্যাপার? আমারই ছাত্র বিয়ে করে ফেলেছে! যখন বিয়ে পড়ানো হচ্ছিল আমি একেবারে স্টেজে ওর পাশেই ছিলাম।

এছাড়া নিজের জীবনের বেশ বড় পরিবর্তন এসেছে। এমন একটা দিন যে সত্যিই দেখব, সেটা কখনো ভাবিনি। সামনের দিনগুলো এখন বেশ অনিশ্চিত মনে হচ্ছে। জানি না সামনে কীভাবে কাটবে। তবে ভালো-মন্দ মিলিয়েই তো মানুষের জীবন। এভাবেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়, বেঁচে থাকতে হয়, টিকে থাকতে হয়। সামনের বছরেও সম্ভবত এমন করেই টিকে থাকব।
আপনাদের নতুন বছর যেন ভালো কাটে, এই কামনা রইল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

হ্যাপি নিউ ইয়ার!


Image by Jevgeni Fil from Pixabay
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×