
একটা দৃশ্য কল্পনা করেন দেখি। আপনি ক্লাবে ফুটবল খেলতে গিয়ে দেখলেন যে মাঠের ঠিক মাঝে একটা পাখি সেখানে ডিম পেড়েছে। এমন সময় আপনি কী করবেন? আমাদের দেশ হলে নিশ্চিত ভাবেই সেই ডিম ভেজে খেয়ে ফেলতেন। ভেজে না খেলেও পাখিটাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে খেলা শুরু করতেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় ঘটেছে অন্য এক ঘটনা। ‘ক্যানবেরা থেকে ২০ মিনিট দূরত্বের জেরাবম্বেরা রিজিওনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ফুটবল খেলতে গিয়ে খেলোয়াড়েরা জানতে পারেন, মাঠের একদম মাঝখানে এক প্লোভার পাখি ডিম দিয়েছে।’ এই কারণে পুরো স্টেডিয়ামটা এক মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্লোভার পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে সর্বোচ্চ ২৮ দিন লাগে তাই এই পুরো মাস সেখানে খেলা হবে না। পাখির বাচ্চা ফুটে বের হতে দেওয়া হবে। এমন কিছু কি আমাদের দেশে কল্পনা করা যায়? আমাদের দেশে হলে এই পাখির ডিম খাওয়া গেলে ভেজে খেয়ে ফেলত তারা নয়তো জাস্ট ছুড়ে ফেলে দিত বাইরে। এই সামান্য কারণে ২৮ দিন একটা স্টেডিয়াম বন্ধ রাখার মত বোকা কি আমাদের দেশের মানুষ?
(প্রথমআলোর)
২
আরেকটা সংবাদ আমার চোখের সামনে যতবার আসে ততবার আমার মনে একটা আনন্দের বাতাস বয়ে যায়। জাপানের এই গল্পটা আপনাদের অনেকেরই জানা। মানুষ যাতায়াত একদম কমে যাওয়ার কারণে জাপান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হোক্কাইডো দ্বীপের শিরাতাকি স্টেশনটা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছিল কিন্তু তখনই তারা খেয়াল করল যে দ্বীপের একজন মেয়ে প্রতিদিন এই ট্রেন ব্যবহার করে স্কুলে যাতায়াতের জন্য। কানা হারাদা নামের সেই হাই স্কুলের পড়ুয়া মেয়েটি সকালে এই ট্রেনে করে স্কুলে যেত পরে আবার দিরে আসত বিকেলে। তখন কর্তৃপক্ষ ট্রেনটা তো বন্ধ করলই না বরং মেয়েটির স্কুলের সময়ের অনুযায়ী ট্রেনের নতুন টাইম টেবিল সেট করল। প্রতিদিন মাত্র একবার ট্রেনটা শহর থেকে শিরাতাকি স্টেশনে যেত। কানা হারাদাকে নিয়ে স্কুলে পৌছে দিত আর বিকেলে তাকে আবার নিয়ে বাসায় পৌছে দিত। এভাবে তিন বছর তারা এই স্টেশনটা চালু রেখেছিল। তারপর যখন কানা হারাদা হাইস্কুল পার করে ফেলল তখন স্টেশনটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটা দেশের সরকার তার নাগরিকদের কাছে কতটা দায় বদ্ধ সেটা এই সামান্য ঘটনা থেকে বোঝা যায়। আমাদের এমন কিছ আপনি কখনো ভাবতে পারবেন? আমাদের দেশ হলে সরকার উদ্যোগী হয়ে সেই মেয়েকে বাল্য বিয়ে দিয়ে তার পড়াশোনা সেখানেই শেষ করে দিত। মেয়ে মানুষের এতো পড়াশোনা করে কী হবে! তার জন্য আবার পুরো একটা স্টেশন চালু রাখা, এটা কি সম্ভব কোনো ভাবে?
৩.
প্রতিদিন সকালেই মোটামুটি আমার পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু গতকাল সকালে পাখির ডাকের সাথে সাথে আরেকটা আওয়াজে ভাঙ্গল। মসজিদের শোক সংবাদ। যে হাউজিংয়ে আমি থাকি সেখানে কেউ মারা গেলেই আমাদের মসজিদের মোয়াজ্জিন মাইকে ঘোষণা দেন সেই শোক সংবাদ। একটি শোক সংবাদ। ওমুক রোডের ওমুক বাড়ির ওমুক মারা গেছে, মরহুমের নামাজে জানাজা … বেশ কয়েক দিন আমি এই শোক সংবাদ শুনি নি। এটা নিয়ে আগে একটা লেখা লিখেছিলাম। সকালে সেই সংবাদ শুনে আমার দিন শুরু হল।
যে লোকটা মারা গেছেন তিনি আমাদের গলির মাথার দিককার বাড়িতে থাকতেন। আমি ওনাকে মসজিদে দেখেছি কয়েকবার, কয়েকবার দেখা হয়েছে বাড়ির সামনেও হাটাচলা করতেন। এরপর থেকে তার সাথে আর দেখা হবে না। কোন দিন তাকে আর বাড়ির সামনের রাস্তায় দেখা যাবে না।
দুপুরের পরে বাসায় ফেরার সময় দেখলাম বাসার সামনে বেশ মানুষজনের ভীড়। বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই সাথে একটা লাশবাহি গাড়িও দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছুটা সময় সেই লোকজনের ভীড়ে দাঁড়িয়ে মানুষজন দেখতে লাগলাম। মানুষজনের ভেতরে মৃত ব্যক্তির কাছের কাউকে দেখলাম না। এট যদিও আমার অনুমান। কারণ কারো চেহারাতেই শোকের কোণ ছায়া নেই। সবাই খোজ গল্পে মশগুল। এরা হয়তো মৃত ব্যক্তির পরিচিত মানুষ কিংবা আত্মীয় স্বজন। আপন মারা গেলে মানুষের চোখেমুখে যে শোক থাকার কথা এদের কারো চোখে মুখেই সেটা নেই। হয়তো সেই আপন মানুষগুলো এখনও সবাই বাড়ির ভেতরে। আমি নিজের বাসার দিকে হাটা দিলাম।
ইদানীং আমার মৃত্যু চিন্তা এসে হাজির হয় প্রায়। এখন প্রায়ই মনে হয় যে জীবনের শেষ মুহুর্তটা আসলে কেমন হবে? আশে পাশে কি কোন পরিচিত মুখ থাকবে? অনেকটাই নিশ্চিত যে আমার মৃত্যুর সময়ে হয়তো পরিচিত মানুষ থাকবে না আশে পাশে। সেই সময়টা আসলে কেমন হবে কে জানে?
৪.
গত দুই এক বছর আগেও আমার ভেতরে একটা নিশ্চিন্ত ভাব ছিল। এই নিশ্চিন্ত ভাবটা থাকার কারণ তখন ছিল যে আমার সব সময়ই মনে হত যে যত যাই হোক আমি সব সময় আমার পরিবারের কাছে ফেরত চলে যেতে পারব, যতই বিপদে পড়ি কিংবা কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাক না কেন বাসায় গেলে পার পেয়ে যাবে। আমার ব্যাকাপের জন্য মানুষ রয়েছে। তারা আমার দেখা শোনা করতেই পারবে। কিন্তু সময় পরিবর্তন হয়েছে। এখন জীবনের একটা পর্যায়ে এসে যে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম যে আসলে পেছনে ব্যাকাপের আর কেউ নেই। যাদের উপরে আমি এতোদিন ভরশা করতাম এখন সেই মানুষগুলো আমার উপর ভরশা করে আছে। তার মানে আমার আর তাদের কাছে ভরশার জন্য যাওয়ার কোন উপায় নেই। এখন যদি এই কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায় কোণ কারণে তাহলে আমি কোথায় যাবো? এই চিন্তা এখন প্রায়ই আমাকে দুঃচিন্তায় ফেলে! বড় হওয়ার মত যন্ত্রণা আর কিছু নেই।
(ইদানীং কাজের জন্য গুগল ডক খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। এই টুকরো লেখাগুলো সেই ডকের কোন এক জায়গা লেখা রাখি ফাঁকে ফাঁকে। সেইগুলোর কয়েকটা এখানে পোস্ট করলাম।)
Pic source
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


