somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রকিবীচের সেই লেখক ...

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ক্লাস সিক্সে যখন উঠলাম, তখন একা একা শহরে যাওয়ার মতো সাহস হয়ে উঠল। স্কুলের কাছেই রেলস্টেশন ছিল। সেই স্টেশনে একটা ছোট বইয়ের দোকান ছিল। সেখান থেকেই প্রতি মাসে রহস্য পত্রিকা কিনে পড়তাম। সেখানে মাঝে মাঝে পুরানো রহস্য পত্রিকার চালান আসত। সেগুলোও কিনে পড়তে পারতাম। সেই পত্রিকার ভেতরেই তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা সহ নানান রকম কিশোর ক্লাসিক বইয়ের বিজ্ঞাপন থাকত। সেগুলো দেখতাম আর ভাবতাম যে এই বইগুলো কোথায় পাওয়া যায়! তখন আমাদের জেলার লাইব্রেরিগুলোতে বই পাওয়া যেত না। সেখানে কাসেম বিন আবু বকরের বই পাওয়া যেত আর পাওয়া যেত ভারতীয় লেখকদের বই। বাংলাদেশি লেখকদের মধ্যে হুমায়ূন বা ইমদাদুল হক মিলনের বই। আমার সেসবের দিকে তখন কোনো আগ্রহ ছিল না। আর পকেটে টাকাও ছিল না খুব একটা।

তারপর যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম, তখন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম যে আমাদের জেলায় একটা পাবলিক লাইব্রেরি আছে। ভর্তি হতে একশো টাকা লাগবে আর মাসিক দশ টাকা বেতন। সেই সময়ে একশো টাকার দাম ছিল বেশ। তবুও মাকে পটিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। তারপরই যেন আমি হাতে পেলাম স্বর্গ। প্রথম কয়েকদিন আমি নিজেই বই নেওয়ার চেষ্টা করতাম। তবে সেখানে বুকশেলফ থেকে পছন্দ করে বই নেওয়ার উপায় ছিল না। বেশ কয়েকটা বড় বড় খাতা ছিল। সেখানে বইয়ের নাম আর লেখকের নাম থাকত। সেই নাম দেখে বললে লাইব্রেরিয়ান বই এনে দিত। প্রথম কয়েকদিন খুব একটা সুবিধা করতে পারলাম না। কারণ তখন কোনো লেখককে চিনতাম না, কার বই পড়ব তাও জানতাম না। তবে একদিন লাইব্রেরিয়ান নিজেই আমাকে বই পছন্দ করে দিলেন! সেটাই ছিল তিন গোয়েন্দার বই। সেই থেকে শুরু। আমি লাইব্রেরিতে গিয়ে হাজির হতাম আর লাইব্রেরিয়ান আমাকে একটা একটা তিন গোয়েন্দার বই এনে দিত। আমি সেটা বাসায় নিয়ে যেতাম। একদিনের মধ্যে পড়ে শেষ করে পরদিন আবার হাজির। মাসে কম করে হলেও ২০/২৫টার মতো বই পড়ে শেষ করে ফেলতাম।



কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড আর মুসা আমান। সঙ্গে থাকত জর্জিনা পার্কার। আরও কত চরিত্র। এখন অবশ্য সেসব কাহিনী ঠিক মনেও নেই। রকিবীচের কথা মনে আছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সান্তা মনিকা পর্বতমালার পাশে অবস্থিত সেই রকিবিচ! তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার। বইয়ের জগতে প্রবেশ আমার তিন গোয়েন্দা দিয়ে, রকিব হাসানের হাত ধরেই। তিন গোয়েন্দার পরে তার লেখা আর নানান ধরনের বইও আমি পড়ে ফেলতাম, যা পেতাম। একসময়ে তিন গোয়েন্দা লেখা শুরু করেন অন্য একজন লেখক। সেই বইয়ের কিছু পড়েছি, তবে রকিব হাসানের মতো স্বাদ সেখানে ছিল না। তাই সেদিকে আগ্রহ আস্তে আস্তে অন্য দিকে চলে যায়।

আজকে রকিব হাসান মারা গেলেন। আমার মতো যারা বাংলাদেশি কিশোর ক্লাসিকের ভক্ত ছিল, তাদের সবার প্রথম পছন্দই ছিল তিন গোয়েন্দার বই। আমাদের কিশোর বেলাটা চমৎকার কেটেছে রকিব হাসানের কারণে। তাকে আমি সরাসরি কোনোদিন দেখিনি, দেখার ইচ্ছেও অবশ্য হয়নি। তাকে চিনি তার লেখা দিয়ে, তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা হিসেবে। কিশোর, রবিন আর মুসা! বইয়ের প্রতি ভালোবাসা যতদিন থাকবে, রকিব হাসানের কথা ততদিন মনে থাকবে। মনে থাকবে তার লেখা বই নিয়ে কত রাত নির্ঘুম কেটেছে। টানটান উত্তেজনার সেই বইগুলো শেষ করে কোনোভাবেই ঘুমানো যেত না।

প্রিয় লেখক, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনাকে এদেশের পাঠকেরা কোনোদিন ভুলবে না।


ছবিঃ কবির হোসেন
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:১৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×