somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাক যুগের এক সবাক হিরোঃ দ্য গ্রেট চার্লি চ্যাপলিন

১৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







ছেলেটির বাবা মা কাজ করতেন ইংল্যান্ডের নাচিয়ে দল গুলোর হয়ে। পরিবারের অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। অভাব অনটনের সংসারে ঘর আলো করেই এলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সংসারের অবস্থা তো তথইবচ। তবুও জীবন থেমে থাকে না। ছেলেটির এভাবেই বড় হতে থাকলেন।
.
পরিবারে আর একজন ছিলেন ছেলেটির বড় ভাই সিডনি। ভাইয়ের সাথে ছেলেটির সখ্যতা ছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তবে সংসার চলছিল না। এমতাবস্থায় বাবাও সংসারে মনোযোগী ছিলেন না। ঠিক তখন মায়ের শারীরিক অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়।
.
তখন এই তাকে ঠেলে মঞ্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দর্শকের সামনে পাচ বছর বয়সী একটা ছেলে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পরে। কিন্তু সেটা কাটিয়ে গান ধরে। বিস্ময় কর ভাবে দর্শক সারি থেকে টাকা পয়সা উড়ে আসতে থাকে। ঠিক তখন তিনি গান থামিয়ে টাকা পয়সা কুড়াতে থাকেন। কারণ সংসার চালাতে হবে।
.
যে মানুষটির কথা বলছি তিনি আর কেউ নন। চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন, যাকে আমরা চার্লি চ্যাপলিন নামে বিশেষ ভাবে চিনে থাকি।
.
তার জন্ম ইংল্যান্ডের লন্ডনে ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল। "সমারসেট হাউজ" এ সবারই জন্ম তালিকা রয়েছে। কিন্তু সেখানে চ্যাপলিনের নাম নেই। তবে ধারণা করা হয় জন্মের সময় তার নাম অন্য কিছু ছিল। কিন্তু নামে কি বা যায় আসে। তিনি পৃথিবী বিখ্যাত একজন অভিনেতা, পরিচালক। এরচেয়ে বড় কিছু আর কিইবা হতে পারে।
.
ওহো সেই মঞ্চে ফিরে যাই। মঞ্চ থেকে চ্যাপিলের যাত্রা শুরু হয়। অভাব অনটনের সংসারে হাল ধরনে তিনি ও তার ভাই সিডনি। অভিনয় করতে থাকেন মঞ্চে মঞ্চে। অনেকটা হঠাৎ করেই আমেরিকা যাবার সুযোগ আসে। তিনি আসলেন দেখলেন এবং জয় করলেন। বিষয়টি ঠিক এমনই।
.
নিজেকে গড়েছেন ভেঙ্গেছেন। কিন্তু ভেঙ্গে পরেনি। চার্লির নেশা ছিল অভিনয়। যেটা তিনি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। বিশেষ ভাবে বললে তিনি নকল করতে পারতেন ভাল। মানুষকে নকল করার ক্ষমতা তার জন্ম গত ভাবেই ছিল। তাই তিনি অভিনয়ে বেশ পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছিলেন বলে মনে করা হয়। তবে তিনি যেভাবে নির্বাক যুগেও শুধু মাত্র শরীরের ভাষায় সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন সেটা কিন্তু অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।
.
চার্লি চ্যাপলিনের প্রথম অভিনীত ছবি যত দূর জানা যায় সেটা হচ্ছে "মেকিং এ লিভিং"। এটা ১৯১৪ সালের কথা। উনি তখন অনেক গুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এটা ছিল কিস্টোন নামে একটি কোম্পানি প্রযোজিত ছবি। তিনি এই কোম্পানির হয়ে ১৪টি সিনেমায় অভিনয় নয় করেন। তিনি এই কোম্পানি "কিড অটো রেসেস এট ভেনিস" সিনেমায় অভিনয় করেন। আর এই সিনেমাতেই আমরা তাকে তার সেই বিখ্যাত টুপি, ঢোলা প্যান্ট, ছড়ি ও গোফে দেখতে পাই।
.
এরপর তিনি কিস্টোনের সাথে চুক্তি শেষ করে যোগ দেন "এসানে" নামের একটি কোম্পানিতে। এখান তিনি তৈরি করেলেন ১৩টি সিনেমা। এই কোম্পানির তৃতীয় ছবি হচ্ছে "চ্যাম্পিয়ন"। তবে এই কোম্পানির সবচেয়ে মজার এবং বিখ্যাত চরিত্র হচ্ছে "ট্রাম্প"। "দ্য ট্রাম্প" সিনেমায় তিনি যে ভবঘুরের চরিত্রটি করেছেন সেটা তাকে চিনিয়ে দিয়েছে সবার কাছে। তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
.
এরপরে তিনি "দ্য ফার্স্ট ন্যাশন্যাল ফিল্মস" একটি কোম্পানিতে যোগদেন। এর আগে "মিচুয়াল" নামের কোম্পানির জন্য তিনি ১২টি সিনেমা করেন। এরপর ন্যাশনালের হয়ে ৯টি সিনেমা করেন। যাদের মধ্যে "এ ডগস লাইফ" ও "সোল্ডার আর্মস" গুরুত্বপূর্ন।
.
তিনি এখানেই থেমে থাকেনি। তৈরি করে গিয়েছেন অনেক সিনেমা যা আজও চির সবুজ। মজার বিষয় হচ্ছে তিনি প্রত্যেক বারে তার স্যালারি বাড়িয়েছেন। তা প্রায় দশগুনের মত।
.
তিনি সব সময় একটা সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি সব সময় বলতেন আমি একজন মানুষ। "দ্য গ্রেট ডিকটেটর" এরপর অনেক কিছু শুনতে হয়েছে। তবে তিনি সেসব কানে তোলেননি। তিনি কাজ করে গিয়েছেন।
.
অনেকে মনে করেন তিনি কমিউনিস্ট। আসলে তা নয়। এর কারণ ছিল তিনি তাদের পক্ষে কিছু ব্যক্তব দিয়েছেন। তিনি তার ব্যক্তবে এও উল্লেখ করেছেন, আমি কমিউনিস্ট নই। একজন সাধারণ মানুষ। আমার হৃদয় কাদে। যেমন কাদে রাশিয়ার মায়ের হৃদয়। আসলে তিনি শান্তি চেয়ে ছিলেন।
.
একটি সিনেমার কথা দিয়ে শেষ করব। "সিটি লাইটস" চার্লির অন্যতম জনপ্রিয় একটি সিনেমা। যারা দেখেছেন তারা জানেন। কি পরিমান একটা আবেগ সেখানে দেখানো হয়ছে। অথচ দেখে আমাদের হাসি আসবে। বিষয়টা এমন ই। তিনি হাসি দিয়ে পৃথিবীকে যেন বলে গেছেন। চাইলেই পৃথিবী সুন্দর করা যায়।
.
বইঃ চার্লি চ্যাপলিন
লেখকঃ অনিন্দ্য আরিফ
প্রকাশনীঃ দ্যু প্রকাশন
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:২৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×