somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাউডোব এ সন্ধ্যা নামে...............

০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিলেতের ফটোগ্রাফার এলান এসেছিলো ছবি তুলতে, তার ভাষায় "গ্রীন বেংলাদেশের" ছবি। তুলেছেও লাখ খানেক। ৫০০ জিবির হার্ড ডিস্ক নিয়ে এসেছিলো সাথে শুধু ছবি নেবার জন্য। তো সারা বাংলাদেশ ঘুরে ছবি তুলে তুলে ভরেছে সেটায়। যাবার ঠিক দুদিন আগে জানালো-এত জায়গায় গেলাম, সুন্দরবনতো গেলাম না। বটে....আমি ফোড়ন কাটলাম- বেংলাদেশের সব 'গ্রীণ'ইতো ওখানে আর তুমি গেলেনা। এলান ক্ষেপে উঠলো- মেমুড....চলোনা ভাই, দেশে ফেরত যাবার আগে একবার ঢু মেরে মেরে আসি। এমন রিকোয়েষ্ট ফেলা যায়না, তাই দৌড়ালাম সোহাগ বাস কাউন্টারে। সেদিন রাত সাড়ে ১০ টার বাসের টিকেট কাটলাম।


বনরক্ষী এবং মিজান

খুব ভোরে খুলনা পৌছালাম। নাস্তা করে মংলার লোকাল বাস ধরে ঘন্টাখানেক পরই মংলা। মংলা পর্যটন মোটেল পশুর এর ম্যানেজার সদাহাস্যময়ী ফেরদৌস ভাইয়ের সহায়তায় একটা বোট ঠিক করে নিলাম। যতটা ভেতরে যাওয়া যায় ততটাই যাবার প্লান করি। সাড়ে ১১ টার দিকে যাত্রা শুরু হলো। ভড়া নদী পশুরের বুক চিরে মিজানের বোট চলতে লাগলো পুর্ব দনি কোণে। ভাব জমালাম মিজানের সাথে। বাঘ দেখেছেন কখোনো? কতো....মিজানের নিরুত্তাপ উত্তর। সুন্দরবনে অনেকে নাকি বাঘ দেখতে চায়না কারন বাঘ যে দেখেছে সেটা নাকি গল্প করার সুযোগ পায়না। সেটা জানাই মিজানকে। মিজানও বলে আমরা তো ভ্রমণকারী। অনেক সাবধানে দুর থেকে বাঘ দেখি। বাঘের হাতে যারা মারা যায় তাদের বেশিরভাগই জেলে বা বাওয়ালী।


করমজল

মংলা বন্দর পার হবার পরই পাল্টে গেলো দৃশ্যপট। নদীর দুপাশে ঘন গাছপালা, নদীতে একটু পরপরই গোলপাতা বোঝাই নৌকা। এসব দৃশ্যই বলে দেয় সুন্দরবন আসন্ন। ভাটার সময় বলে নদীর পানি অনেকটা কমে বের হয়ে এসেছে নদী লাগোয়া কিছু গাছের শেকড়।


লাউডোব টহল ফাড়ি

ঘন্টাখানেক লাগলো করমজল পয়েন্টে পৌছাতে। মিজান গেলো ফরেষ্ট অফিসে পারমিশন নিতে যদিও তার খুব একটা প্রয়োজন ছিলোনা কারন আমরা সুন্দরবনের ভেতের যাবার মতো সময় পাবো না। তবু যতোটা এসেছি এর জন্যই হয়তো ফি দিতে হবে।সেখানে নির্ধারিত ফি দিয়ে স্লিপ নিয়ে আর একজন বনরী সাথে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম। এই করমজলই মুলত সুন্দরবনের এন্ট্রি পয়েন্ট। আমরা বোট থেকে নেমে সামনে হাটতে লাগলাম। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি প্রকৃতি পর্যবেন কেন্দ্র। টুরিষ্টদের হাটার সুবিধার নদীর তীর থেকে ভেতরের দিকে কাঠের ব্রিজের মতো করে রাস্তা। দুপাশে ঘন বন। এখানকার গাছগুলো বেশ বড় বড়। গোল, সুন্দরী ছাড়াও আছে চাম্বল, মেহগিনি জাতীয় গাছ। এসব গাছে নানারকম পাখি। পাখি খুব একটি চিনিনা এক কাঠঠোকরা ছাড়া। একটু পরই একপাল হরিনের পাল ঘুরে বেড়াতে দেখলাম। মানুষ দেখে এরা হয়তো অভ্যস্ত তাই ছুটে পালালো না। এখানে একটি ছোট চিড়িয়াখানাও করা হয়েছে।


এলান এবং মিজানের বোট
এখানকার হাটাপর্ব শেষ করে আবার বোট এ। এবার মিজান বল্লো চলেন একটু অন্যরকম সুন্দরবন দেখাই। এই বলে সে আবার একটু পেছন ফিরে চললো মানে মংলার দকে। কিছুদুর যাবার পরই ছোট একটা খালের মতো নদীতে ঢোকালো নৌকা। আমি আগেও দুয়েকবার এসেছি সুন্দরবন কিন্তু এ খালটায় ঢোকা হয়নি। ছোট খাল, দুধারে ঘন বন। অনেক গাছের পাতা খালের পানিতে এসে মিতালী করেছে। এনাকোন্ডা মুভিতে দেখা আমাজন ফরেষ্টের সেই খালটার সাথে কোথায় যেন মিল আছে। অনভ্যস্ত আমি কিছুটা নির্জনতা আর কিছুটা বাঘের ভয়ে তটস্থ হই। বিশাল গোফওয়ালা বনরী তার সাথের গাদা বন্দুকটা দেখিয়ে চোখের ইশারায় অভয় দেয় যদিও জানি কাজের সময় দেখা যাবে বন্দুক থেকে গুলি বের হয়না। তবু তার অভয়কানীতে আশ্বস্থ হই। মন দেই প্রকৃতি দর্শনে।

বন ক্রমে ঘন হতে থাকে। একটু পরই লোকালয়ের মতো। খালের একপাশে সুন্দর এক কাঠের বাংলোর পাশে বোট থামালো মিজান। বাংলোর সামনের সাইন বোর্ড এ লেখা " লাউডোব টহল ফাড়ী, চাদপাই রেন্জ"। আমরা সে ফাড়ির বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসি কারো কোন অনুমতি ছাড়াই। ফাড়ির সদস্যদের একজন বের হয়ে এলো আমাদের দেখে। তার অনুমতি না নিয়ে বসাতে রাগতো হলোই না বরং কিছুটা খুশী হলো নির্জন এ অরন্যে মানুষের পদচারনা দেখে।


সন্ধ্যা নামিছে ঐ

বিকেল গড়িয়ে তখন প্রায় সন্ধ্যা। প্রকৃতি আরো নির্জন হয়ে এসেছে। শুধু জোয়ারের পানির কলকল শব্দ আর দুয়েকটা পাখির ডাক ছাড়া কিছু শোনা যায়না। এখানে কোন কথা বলাও যেন অপরাধ। ফাক্সে করে আনা চা নিয়ে আমি আর এলান তাই নির্জন সেই বারান্দায় চুপ করে বসে রইলাম। আহা! এ বারান্দায় এভাবেই যদি বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম! তা বুঝি হবার নয় কারন বনরী তারা লাগায়-চলেন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

আমরা আবার ছোট সেই খালে নামি। ততোক্ষনেসন্ধ্যা নেমে এসেছে লাউডোব এ।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×