কালের কন্ঠের চেক এবং আমার লেখালেখির গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আজ কালের কণ্ঠে ছাপানো সেই লেখাটির সম্মানীর চেক পেলাম। পত্রিকায় ছোট্ট একটি লেখা লিখে ৬০০ টাকা। খারাপ না। মনে পড়ছে সেই ১৯৯১ সালের কথা। সেবারই আমি প্রথম কোন পত্রিকায় লিখে সম্মানী পাই ২০ টাকা।
১৯৯০ সালের কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তির পর আমার হঠাৎ করেই আশা ভঙ্গ হলো। আগে স্বপ্ন দেখতাম ভার্সটিতে ভর্তি হলে ক্লাশে থাকবে অনেক মেয়ে। তাদের কারো সাথে জমিয়ে প্রেম করবো। কিন্তু দু:খের কথা বিবিএ তে ভর্তি হবার পর দেখি ক্লাশ কেনো পুরো ডিপার্টমেন্টেই মেয়ের আকাল। আমার ক্লাশে ৭৫ জনের মধ্যে ৫ জন ছাত্রী। এর মধ্য একজন বিবাহিত, একজন এনগেজড, একজন উপজাতি। লে হালুয়া। প্রেমতো দুরের কথা। ৭০ জনের কাড়াকাড়িতে বন্ধুত্বের সুযোগও পেলাম না। আমার অন্য ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা যখন সুন্দরীদের বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াতে লাগলো আমরা তখন শুকনো মুখে লাইব্রেরীতে বসে থাকতাম।
একদিন লাইব্রেবরীতে বসে কি একটা বিদেশী ম্যাগাজিন দেখছি। হঠাৎ একটা ফিচার চোখে পড়লো- প্রিন্সেস ডায়ানা প্রতিদিন কি কি খান। শসা, গাজর, সালাদ এইসব। তখন চলছে ডায়ানা ক্রেজ। আমি লেখাটির সার সংক্ষেপ নিয়ে একটি রচনার মতো লিখলাম- মিডিয়া ডালিং ডায়ানা "জেনে নিন তার রূপ রহস্য।" এরপর লেখাটা দৈনিক পূর্বকোণ এর ডাক বাক্সে ফেলে এলাম। ঠিক ৩-৪ দিন পরেই অবাক হয়ে দেখলাম পূর্বকোণ এর "শৈলী" পৃষ্ঠায় (নকশার মতো আলাদা সাপ্লিমেন্ট) আমার লেখাটা বেশ বড় করে ছাপা হয়েছে। আমি একসাথে ১০-১২ কপি কিনে নিলাম পেপারটা।
একদিন সাহস করে সে পাতার সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর (বর্তমানে প্রথম আলো চট্টগ্রাম এর ব্যুরো প্রধান) সাথে দেখা করলাম। তিনি অনেক উতসাৎ দিলেন এবং আরো লিখতে বললেন। আসার সময় আমাকে সাথে নিয়ে একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে থেকে ২০ টাকা সম্মানী দিলেন। আমি কাপা কাপা হাতে সাইন করে গোবিন্দ দার হাত থেকে টাকাটা নিলাম। সেই আমার লেখালেখি থেকে প্রথম আয়। লেখালেখি বলি কেনো যে কোন জায়গা থেকে প্রথম আয়। এর আগে আব্বার পকেট থকে চুরি ছাড়া আর কোন আয় করে দেখিনি।
এই ২০ টাকায় আমি এত উৎসাহিত হলাম যে প্রতিদিন লাইব্রেরীতে গিয়ে নানান ধরনের ইংরেজী লেখা অনুবাদ করে জমা দিতে লাগলাম এবং তা ছাপাও হতে লাগলো। প্রতি সপ্তাহে ৫-৮ টা লেখা ছাপা হতো। এমনও দিন আছে যেদিন মাহমুদ হাসান খান নামে ছাপা হতো একটা লেখা, শাহীন ইকবাল নামে ছাপা হতো আরেকটা। কত ধরনের সাবজেক্ট নিয়ে যে লিখেছি তার ঠিক নেই। ইতিহাস, যুদ্ধ, বিনোদন, নাটক, ভ্রমণ, ব্যাবসা-সব।
"সোমবার" নামে একটা পাতা চালাতেন শিশিরদা। তিনি দায়িত্ব দিলেন ফুল পেজ একটা লেখার জন্য। আমি লিখলাম- কি করে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। এখানে একটা ব্যাবসা শুরু করার বিস্তারিত দেয়া হয় এবং এক সোমবারে তা পত্রিকার পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে প্রকাশিত হয়। সে কি আনন্দ আমার। বিল পেয়েছিলাম ১০০ টাকা। গোবিন্দ দা রাগারাগি করলেন ম্যানেজমেন্টের ওপর- এত বড় লেখা, বিল মাত্র ১০০ টাকা! আমি কিন্তু ওতেই খুশি।
এরপর অন্য পত্রিকায়ও লিখতে শুরু করলাম। ইত্তেফাকের অর্থনীতি পাতাটা চালাতেন জাহিদুজ্জামান ফারুক ভাই (এখন কোন পত্রিকার যেন সম্পাদক উনি)। একদিন সাহস করে ইকোনমিষ্ট থেকে একটা অনুবাদ পাঠালাম। লেখাটা পেয়েই তিনি বাসায় ফোন দিলেন এবং বললেন আগামী মঙ্গলবার লেখাটা যাবে। তিনি আরো লেখা দিতে উৎসাহ দিলেন। আমার উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। ঢাকার পত্রিকায় লেখা!!! আমি নিয়মিত লিখতে লাগলাম। কোন সপ্তাহে লেখা না পাঠালে ফারুক ভাই ফোন করতেন। লেখার ম্যাটারের তো অভাব নাই। ছোট একটা নিউজ পেলে বিরাট লেখা বানিয়ে ফেলতাম। একবার এক লাইনের একটা কথা পড়লাম- বিশ্বে মোট বানিজ্যের ৬০ ই হয় জোটবদ্ধ দেশগুলোর মাঝে। এ লাইনটা জানার পর কিছু তথ্য যোগ করে ইত্তেফাক এ লিখলাম বিরাট ফিচার : বদলে যাচ্ছে বিশ্ব বানিজ্যের গতিধারা : একলা চলোরে নীতি থেকে থেকে সরে যাবার সময় এসেছে।
রেজানুর রহমানের কাছে লেখা পাঠালাম দুটো। তিনি ইত্তেফাকের বিনোদন পাতায় দুটো লেখাই ছাপালেন। একটি আমার নামে আরেকটি প্রতিবেদক নামে। আমি জানতে চাইলাম ভাই আমার লেখায় আমার নাম দিলেন না কেনো? উনি সাথে সাথে বল্লেন আপনার কোন লেখা ছাপাবো না । বড় ত্যাড়া মানুষ উনি। না ছাপালে না ছাপান। পত্রিকার কি অভাব আছে নাকি। আমি ইত্তেফাকের অন্য পাতায় লেখা বাড়িয়ে দিলাম।
এভাবেই বেশ কবছর লিখি ইত্তেফাকে। একবার গেলাম মুক্তকন্ঠে। সেখানকার শাকিল আহমেদ ভাই (এখন কোন একটা টিভিতে আছেন) লিখতে বল্লেন। সেখানেও লেখা শুরু করলাম (এখান থেকে এক টাকাও পাইনি)। এর দুরে কোথাও পাতাটা চালাতেন সম্ভবত শান্তা মারিয়া নামের এক আপু। তিনিও লেখা পাঠাতে বললেন ভ্রমণ নিয়ে। প্রচুর লেখা উঠেছে যুগান্তরে। টাকাও পেয়েছি এখান থেকে অনেক।
এক বার শুরু করলাম যায়যায়দিন এ লেখালেখি। সেকি তুমুল লেখা। এখঅনে লিখতে গিয়েই পরিচয় মোহিত কামাল ভাইয়ের সাথে যিনে এখণ দেশসেরা লেখক এবং মনো চিকিৎসক। শফিক রেহমান ভাইয়ের উৎসাহও পেয়েছি অনেক।
লেখা ছাপা হবার সেকি উত্তেজনা তা যার ছাপা হয়নি তিনি বুঝতে পারবেন না। এমনও হয়েছে কাল লেখা ছাপা হবে, পত্রিকা আসবে সকাল ৭ টায়। আমি ভোররাতে উঠে মোমিন রোডে চলে গেছি পেপার আনতে। সে কি আনন্দ, সি কি আনন্দ!!!
আমার এ লেখায় আজ আমি কজন মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এরা হলেন পূর্বকোন এর বার্তা সম্পাদক নাসির ভাই, শিশিরদা, বিশ্বজিৎ দা, জাহিদ্দুজ্জাজামান ফারুক ভাই, শাকিল ভাই, শফিক রেহমান এবং মোহিত কামাল ভাই। আপনার কে কেমন আছেন জানিনা , তবে ভালো থাকুন সারা জীবন এটাই চাই।
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...
অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা
আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************
যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=
০১।
চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন